সুদেষ্ণা বসুর লেখা ‘গায়ক-নায়ক সহজিয়া অভিনেতা অসিতবরণ’ (পত্রিকা, ১১-৯) প্রবন্ধটি অসিতবরণকে নিয়ে এক তথ্যসমৃদ্ধ জীবন আলেখ্য। সিনেমায় প্লে-ব্যাক পূর্ব যুগে স্বাভাবিক কারণেই অভিনয়ের সঙ্গে গানটা নিজেকেই গাইতে হত। প্লে-ব্যাক জমানা শুরু হতেই প্রেক্ষাপট পাল্টে গেল। রুমা গুহঠাকুরতা বরাবর নিজের গাওয়া গান রেকর্ড করে নিজেই লিপ দিয়েছেন। হরিসাধন মুখোপাধ্যায়ও তা-ই। অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি সিনেমা মূলত গানকেন্দ্রিক। এখানে অ্যান্টনির ভূমিকায় উত্তমকুমার, আর ভোলা ময়রার ভূমিকায় অসিতবরণ। উনি লিপ দিলেন অধীর বাগচির গাওয়া গানে। আবার অ্যান্টনি কবিয়াল নাটকেও অসিতবরণ ভোলা ময়রা। তবে এখানে তিনি গায়ক-অভিনেতা। নাটকে অ্যান্টনির ভূমিকায় দরাজ গলার গায়ক-নায়ক সবিতাব্রত। দু’টি মন সিনেমায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সুরে, মান্না দে-র গাওয়া ‘জাগো নতুন প্রভাত’ গানে অসিতবরণ লিপ দিয়েছেন। তপন সিংহ পরিচালিত ছবিতে অনুপ ঘোষালের কণ্ঠে ‘সে ভালো বাসিলে জীবন মম’ গানে হারমোনিয়াম বাজিয়ে লিপ দেওয়া অসিতবরণকে দেখা যায়। এই সিনেমাতেই ছায়া দেবীর নিজের কণ্ঠে গাওয়া দুটো গান আছে। অরুন্ধতী দেবীরও স্বকণ্ঠে গাওয়া দুটো গান ‘মন বলে আমি’ ও ‘কেন বঞ্চিত তবে চরণে’। শুধু অভিনয় নয়, তাঁদের যে গানের চর্চা ও তালিম ছিল, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। তাঁদের অপ্রকাশিত প্রতিভা সেলুলয়েডে বন্দি হল। আফসোস রয়ে গেল অসিতবরণকে হারমোনিয়াম বাজাতে দেখা গেল দুটো দৃশ্যে, কিন্তু স্বকণ্ঠে গানে পাওয়া গেল না।
অঞ্জন কুমার শেঠ, কলকাতা-১৩৬
তবলাবাদক
‘গায়ক-নায়ক সহজিয়া অভিনেতা অসিতবরণ’ প্রবন্ধে কয়েকটি বিষয় অনুচ্চারিত থেকে গিয়েছে। অসিতবরণ গাস্টিন প্লেসে রেডিয়োতে তবলাবাদক হিসাবে নিজের জীবন শুরু করেন। সেই সময় নবীন গায়ক হেমন্ত মুখোপাধ্যায় রেডিয়োতে অডিশনের সুযোগ পাচ্ছিলেন না। বন্ধু কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁকে নিয়ে রেডিয়ো অফিসে যান এবং অসিতবরণের সহায়তায় হেমন্ত রেডিয়োয় গান গাওয়ার সুযোগ পান। সেটা হেমন্ত আজীবন মনে রেখেছিলেন। অসিতবরণ জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের কাছে তবলার তামিল নেন। বন্ধু ছবিতে হেমন্তের কণ্ঠে উত্তমকুমারের লিপে একটি গানে তবলায় সঙ্গত দিতে দেখা যায় তাঁকে— ‘মালতি ভ্রমরে করে ওই কানাকানি’। নচিকেতা ঘোষের সুরে গানটি জনপ্রিয় হওয়ার পিছনে অসিতবরণের তবলার অবদান কম নয়।
পরাগ রঞ্জন ঘোষ, কলকাতা-৯১
ধ্রুবতারা
এণাক্ষী রায় মিত্রের লেখা ‘চিরন্তন তরুণ বিবাগির স্বর’ শীর্ষক প্রবন্ধের (২৫-৯) পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। মৃণাল সেন নীল আকাশের নীচে সিনেমা তৈরির ইতিহাস সম্পর্কে বলেছিলেন, “ছবির গানের বিষয়বস্তু আর সিচুয়েশন পড়ে যাচ্ছিলাম, গৌরীবাবু কয়েক মিনিটের মধ্যে গানটা লিখে ফেললেন। হেমন্তবাবু সুর দিতে সময় নিলেন মাত্র পাঁচ মিনিট। মিনিট দশেকের মধ্যে একটা অসাধারণ গান তৈরি করে ফেললেন হেমন্তবাবু, ‘নীল আকাশের নীচে এই পৃথিবী’। শান্তিদেব ঘোষ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের রবীন্দ্রনাথের গান সম্বন্ধে বলেছেন, “ওঁর গান আমি আগেও শুনেছি। তার পরেও শুনেছি বহু বার বহু অনুষ্ঠানে রেডিয়োতে রেকর্ডে। বার বার একটা জিনিস বিশেষ ভাবে লক্ষ্য করেছি ওঁর গানে। সেটা হল একটা স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ, গুরুদেবের বাণীকে যা অর্থবহ করে তুলত।” সলিল চৌধুরী কালজয়ী ‘অবাক পৃথিবী’ গানটি সম্বন্ধে বলেছেন, “১৯৫০ সালেই ‘অবাক পৃথিবী’ গানটার সুর করি। গানটা প্রথমে গাইতেন জর্জদা আর প্রীতি সরকার। জর্জদার বাড়িতেই এক দিন হেমন্তদা গানটা শুনলেন। আমিও সেখানে উপস্থিত ছিলাম। জর্জদাই বললেন, ‘হেমন্ত তুমিই এই গানটা রেকর্ড করো। আমাকে তো ওরা (রেকর্ড কোম্পানি) গাইতে দেবে না।’ হেমন্তদা সে দিনই গানটা শুনে তুলে নিলেন এবং রেকর্ড হয়ে বাজারে বেরোল।” ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য বলেছেন, “শিল্পীর ক্ষেত্রে তিনি এক জন ভার্সেটাইল, বিরল প্রতিভা। এবং এ সবই তাঁর নিজের প্রচেষ্টায়। নিজেই জমির মাটি কুপিয়েছেন, জমি উর্বর করে তাতে বীজ ছড়িয়ে ফসল ফলিয়েছেন।”
বাংলা ছায়াছবিতে উত্তম ঠোঁটে হেমন্ত কণ্ঠের রোম্যান্টিকতায় ছুঁয়ে থাকে বঙ্গজীবন। ‘বসে আছি পথ চেয়ে’, ‘এ পথ যদি না শেষ হয়’, ‘আজ দু’জনার দু’টি পথ’, ‘কাছে রবে, কাছে রবে’, ‘স্বপ্ন জাগানো রাত’, ‘ঝড় উঠেছে বাউল বাতাস’— এ সমস্ত গানে উত্তম-সুচিত্রার রোম্যান্টিকতাকে ব্যাকুল ভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তোলার দক্ষতায় অবিসংবাদী হেমন্ত কণ্ঠ। প্রকৃতির শীতল রুক্ষ শুষ্কতার প্রান্তর পেরিয়ে সোনালি ধানের অঙ্গনে হেমন্ত সুরেই ফুটে উঠত বাঙালির বর্ণময় জীবনের উদ্যাপন। ‘আমার গানের স্বরলিপি’, ‘আমায় প্রশ্ন করে নীল ধ্রুবতারা’, ‘পথ হারাবো বলেই এবার’, ‘ধিতাং ধিতাং’, ‘রানার’, ‘গাঁয়ের বধূ’— বেসিক ডিস্কের অবিস্মরণীয় সৃষ্টিগুলিকে মনে রেখেই বম্বের (অধুনা মুম্বই) চলচ্চিত্র জগতের অন্যতম সফল বাঙালি হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ধ্রুবতারা হয়েই আমাদের মধ্যে বেঁচে থাকবেন।
সঞ্জয় রায়, দানেশ শেখ লেন, হাওড়া
উল্লেখ নেই
‘চিরন্তন তরুণ বিবাগির স্বর’ (২৫-৯) নিবন্ধে লেখিকা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কয়েকটি আধুনিক গানের প্রসঙ্গে সলিল চৌধুরীর সুরের কথা বলেছেন। কিন্তু হেমন্তের ‘মেঘ কালো আঁধার কালো’, ‘আমার গানের স্বরলিপি’ বা ‘এক গোছা রজনীগন্ধা’ গানের কথা বললেও সুরকার সম্পর্কে কিছু বলেননি। এই গানগুলির সুরকার ছিলেন নচিকেতা ঘোষ।
স্বপন সোম, কলকাতা-৩৭
ঠিকাদারির ব্যাধি
প্রতিবাদ করায় প্রৌঢ়কে পিটিয়ে খুন হুগলিতে (৪-৯) খবরটি ভোলা কঠিন। রাস্তার কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ৫০ বছরের রিয়াজুল হক। হুগলির চণ্ডীতলায় ভগবতপুরে রিয়াজুলের বাড়ির সামনে দিয়ে পঞ্চায়েতের তরফে এক কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা তৈরি হচ্ছে। কাজের মান নিয়ে এবং রাস্তাটি যতটা পুরু হওয়ার কথা, তা হচ্ছে না দেখে প্রতিবাদ করেছিলেন রিয়াজুল। পিটিয়ে খুন করা হল তাঁকে।
তার আগেই চোখে পড়েছিল ‘প্রোমোটিং সামাজিক ব্যাধি: হাই কোর্ট’ (১-৯) খবরটি। যেখানে বলা হয়েছে, কলকাতা হাই কোর্ট মনে করছে যে, প্রোমোটিং ব্যবসা ও প্রোমোটারদের দৌরাত্ম্য সামাজিক ব্যাধির আকার নিয়েছে। এই ঠিকাদাররাজ বা প্রোমোটাররাজ-এর শুরু সিপিএম আমলে। সরকারি ঠিকাদাররা রাস্তা তৈরি করতে শুরু করল, সেই সঙ্গে শুরু হয়ে গেল কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি। প্রোমোটারদের শ্যেন দৃষ্টি পড়ল একটু পুরনো হয়ে যাওয়া বাড়ির দিকে। বাড়ি দখল করে প্রোমোটারি শুরু হল, অবশ্যই বাড়ির মালিককে ভয় দেখিয়ে। এরা বাহুবলী প্রোমোটার, এদের হাতে রয়েছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা।
রোড কনট্রাক্টরি করার ফর্মুলাও একই রকম প্রায়। রাস্তাঘাট তৈরি হচ্ছে। সরকারি ঠিকাদাররা কোটি কোটি টাকা নয়-ছয় করছে। আর তৈরি হওয়ার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই সেই রাস্তার কঙ্কাল বেরিয়ে পড়ছে। কারণ, অত্যন্ত নিম্নমানের এবং অল্প মালমশলা দিয়ে তৈরি ওই রাস্তা। আর কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ যাচ্ছে রাজনৈতিক নেতাদের পকেটে। মনে পড়ছে আমার দেখা একটি ক্রাইম সিরিয়ালের কথা, যেখানে তদন্তকারী পুলিশ অফিসার অভিযুক্ত ঠিকাদারকে জিজ্ঞেস করছেন, “আপনি তো সরকারি কন্ট্রাকটার, এত মুনাফা করলেন কী করে?”
বড় রাস্তাই হোক বা অলিগলি— যেখানে নতুন রাস্তা তৈরি হয়েছে, কিছু দিন পরেই যদি তার বেহাল দশা হয়ে যায়, তা হলে ঠিকাদারের নাম খুঁজে বার করে, অঞ্চলের সকলে মিলে তার কাছে গিয়ে কৈফিয়ত চাইতে পারি না আমরা? ভেঙে দিতে পারি না দুর্নীতিপরায়ণ ঠিকাদারদের ঘুঘুর বাসা? না কি, যে-সরকারই আসুক না কেন, অসৎ প্রোমোটার আর ঠিকাদাররা বহাল তবিয়তেই রাজত্ব করে যাবে।
জয় সেনগুপ্ত, কাসুন্দিয়া রোড, হাওড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy