Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
Jadavpur University Student Death

সম্পাদক সমীপেষু: পৈশাচিক অপরাধ

সিনিয়র দাদা হিসাবে যাদের তাকে ছোট ভাইয়ের মতো আগলে রাখা উচিত ছিল, তাদের নামেই তার উপরে পৈশাচিক অত্যাচারের অভিযোগ উঠল। তারাও কিন্তু নামী প্রতিষ্ঠানটির উচ্চশিক্ষিত ছাত্র।

An image of Ragging

—প্রতীকী চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২৩ ০৪:১৩
Share: Save:

উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন নিয়ে কলকাতা তথা দেশের অন্যতম নামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেছিল নদিয়ার ছেলেটি। সিনিয়র দাদা হিসাবে যাদের তাকে ছোট ভাইয়ের মতো আগলে রাখা উচিত ছিল, তাদের নামেই তার উপরে পৈশাচিক অত্যাচারের অভিযোগ উঠল। তারাও কিন্তু নামী প্রতিষ্ঠানটির উচ্চশিক্ষিত ছাত্র। এই কি তাদের উচ্চশিক্ষার নমুনা? নদিয়ার ছেলেটির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে যে শুধুমাত্র তার, ও তার পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছে, তা নয়। গ্রামের অনেক ছাত্রছাত্রীই হয়তো এর পর কলকাতায় থেকে পড়াশোনা করতে ভয় পাবে। বাবা-মা’কে দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাতে হবে। চার দিকে এত ডিগ্রিধারী লোক, কিন্তু ‘মানুষ’-এর আজ বড়ই অভাব। যাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অংশগ্রহণে ছেলেটিকে প্রাণ দিতে হল, তাদের কী হবে? তারা কি সমাজে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াবে পরবর্তী শিকারের জন্য? ছেলেটি আর ফিরে আসবে না, কিন্তু প্রশাসনের কাছে দাবি, দোষীকে চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। আর কোনও শিক্ষার্থীর জীবনদীপ যেন এ রকম ভাবে নিবে না যায়। আর কোনও বাবা-মায়ের কোল এ রকম ভাবে না খালি হয়ে যায়।

দিগন্ত চক্রবর্তী, জাঙ্গিপাড়া, হুগলি

কমিটি কোথায়?

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত ছাত্রটির মর্মান্তিক পরিণতি তথাকথিত শিক্ষিত সমাজকে একটা অস্বস্তিকর প্রশ্নের সামনে আবারও দাঁড় করিয়ে দিল। এর আগেও র‌্যাগি‌ং-এর শিকার হয়েছে অনেক প্রতিভাবান ছাত্রছাত্রী। তবুও আমরা শিক্ষা নিইনি। কয়েক বছর আগে এই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর প্রতিবাদে দিনের পর দিন ঘেরাও করে রাখা হয়েছিল। এখন জানা যাচ্ছে সিসিটিভি ক্যামেরাগুলোর অধিকাংশই খারাপ, নতুবা বেমালুম খুলে ফেলা হয়েছে। এ কাজ কারা করেছে, ভারপ্রাপ্ত আধিকারিকরা জানতে চাইলেই জানতে পারতেন। সে চেষ্টা তাঁরা করেননি। এক জন ছাত্র, যে সোমবার মা-বাবাকে ফোন করে শিক্ষকদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছে, সে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা হতে না হতেই ইতিহাস হয়ে গেল। নতুন ছাত্রদের জন্য আলাদা হস্টেলের বন্দোবস্ত থাকলেও তাকে থাকতে হল সিনিয়র এবং প্রাক্তন ছাত্রের সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয় ‘অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটি’ আছে, এমনকি ‘ডিন অব স্টুডেন্টস’ আছেন, যিনি ছাত্রছাত্রীদের সুবিধা-অসুবিধার খেয়াল রাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত! তাঁরা এই র‌্যাগিং চক্রের বিন্দুবিসর্গও নাকি জানতে পারেননি। তা হলে এই সব কমিটির মানে কী?

এই প্রসঙ্গে আমার ছাত্রজীবনের কথা মনে পড়ল। নব্বইয়ের দশকে বীরভূম জেলার একটি কলেজে স্নাতক স্তরে পড়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। সেই সময় দেখেছি বহু বছর আগে পাশ করে-যাওয়া ছাত্রনেতারা বছরের পর বছর ‘রিঅ্যাডমিশন’-এর নামে হস্টেলের ঘরগুলি দখল করে রাখতে। তাদের একমাত্র কাজ ছিল কলেজ রাজনীতির সর্বেসর্বা হয়ে নির্বাচিত জিএস, ভিপি বা গেমস সেক্রেটারির উপর খবরদারি চালানো। কেউ কেউ তো আবার হস্টেলের ঘর দখল করেই নিজের ব্যবসা চালাত, এবং সেটা মোটেই লুকিয়ে-চুরিয়ে নয়। শহর জুড়ে বিজ্ঞাপন দিত আর ঠিকানায় কলেজ হস্টেলের রুম নম্বর দিত। কর্তৃপক্ষ বিলক্ষণ জানতেন। কিন্তু হস্টেল সুপারের কিছু করার সাহস ছিল না। সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে।

সুমন মণ্ডল, জিয়াগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ

প্রগতির নমুনা

যাদবপুরের ছাত্ররা তো প্রগতিশীল। অধিকাংশই বামপন্থী বা অতি বামপন্থী। তারা ভাঙড় থেকে ভেনেজ়ুয়েলা— সর্বত্র নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ায়। তাদের নাকের ডগায় দিনের পর দিন র‌্যাগিং নামক একটা নারকীয় প্রথা চলছে, তারা জানত না? এ সব বন্ধ করার জন্য তারা কোনও আন্দোলন তো করেনি। সাধারণ মানুষ হিসাবে দোষীদের কঠোর শাস্তি চাই। তবে ‘প্রভাবশালী’ তত্ত্বের উপরে দোষীদের শাস্তি নির্ভর করবে কি না জানি না। এখন আশা করতেও ভরসা পাই না।

আশিস রায়চৌধুরী, শিলিগুড়ি

আসল অপরাধী

যাদবপুরের পড়ুয়ার মৃত্যু আবার দেখিয়ে দিল, এই রাজ্যে র‌্যাগিং কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে। যাকে বা যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, বিচারে তাদের কী হবে জানি না, কিন্তু আসল অপরাধী ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিরা। প্রতিষ্ঠানে কী ঘটছে, তা জানার ব্যবস্থা বা সদিচ্ছা তাঁদের নেই। তাঁদের গাফিলতিতে একটা প্রাণ গেল, কোনও প্রতিকারের ব্যবস্থা ছিল না। কী করে এক প্রাক্তন ছাত্র হস্টেল দখল করে থাকে? এই প্রাক্তনীরা নিয়ম মেনে থাকে, না কি নিজেদের জমিদার মনে করে, এগুলোর উপর নজর রাখার দায়িত্ব কার? কর্তৃপক্ষ কী করছেন? এক জন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বের মধ্যে এটাও পড়ে। তবে শুধু যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় নয়, প্রায় প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে। একটা প্রাণ গেলে দু’দিন হইচই হয়, পরে ধামাচাপা পড়ে যায়।

প্রদীপ রঞ্জন বিশ্বাস, কলকাতা-২৮

লাগামছাড়া

গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্পন্দিত, সেখানে এক শিক্ষার্থীর অস্বাভাবিক মৃত্যু বিরাট এক প্রশ্নচিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল। তথাকথিত ‘এলিট’ সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ-হেন বিকৃত মানসিকতা দুর্ভাগ্যজনক! আর কত স্বপ্ন-দেখা শিক্ষার্থীর অপমৃত্যু আমরা দেখতেই থাকব শিক্ষাঙ্গনে? এমন ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর নানা ধরনের আলোচনা, উচ্চপর্যায়ের তদন্ত, সভা-সেমিনারের অভাব হয় না। কিছু দিন পর আবার সেই গতানুগতিকতার স্রোতে গা ভাসিয়ে দেওয়া। দুষ্কৃতীদের নিরপেক্ষ ভাবে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে না পারলে আবার কোনও মায়ের কোল খালি হয়ে যাবে।

বিশ্বজিৎ কর, গড়িয়া, কলকাতা

চাই শাস্তি

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের বাংলা বিভাগের ছাত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু খুবই বেদনাদায়ক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিবেশ দীর্ঘ দিন কলুষিত হয়েছে। শুধুমাত্র পড়াশোনার মান নিয়ে গর্ব করা যায় না। কিছু বীরপুঙ্গবের অহেতুক দাদাগিরি দীর্ঘ কাল চলছে দুর্বল প্রশাসনের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয়, বা এড়িয়ে যাওয়ার মানসিকতার সুযোগ নিয়ে। তার জেরে মৃত্যু ঘটে তরতাজা ছাত্রছাত্রীদের, যারা সোনালি স্বপ্ন নিয়ে পড়তে আসে। অপরাধীদের কঠোর সাজা হোক। এরা যেন কোথাও পড়ার সুযোগ না পায়, চাকরি থেকে অবশ্যই বঞ্চিত হয়।

সুনীল কুন্ডু, কলকাতা-৪৭

রাজনীতির ক্ষয়

আজকের র‌্যাগিং সংস্কৃতির পিছনে ক্ষয়িষ্ণু ছাত্র রাজনীতির বড় ভূমিকা রয়েছে। এই দুষ্কৃতীরা ভাবে, পিছনে একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের ‘ব্যাক আপ’ রয়েছে, তাই তারা যা-খুশি-তাই করতে পারে। এমন মানসিকতা থেকেই অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে র‌্যাগিংকে আরও এক ধাপ উপরে নিয়ে গিয়ে নাম দেওয়া হয়েছে ‘গেস্ট-রুম কালচার’। অশ্লীল কথাবার্তা বলতে বাধ্য করা, জোর করে নাচ-গান করানো ইত্যাদি কখনও ‘সুস্থ আচরণ’ বা ‘শিক্ষা’ হতে পারে না। দায় এড়াতে পারেন না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, যাঁরা বিষয়টাকে ‘অদেখা’ করে রেখে এর বৃদ্ধিতে পরোক্ষ মদত জোগাচ্ছেন।

শুভজিৎ বসাক, কলকাতা-৫০

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE