পিয়াস মজিদের ‘রত্নগর্ভা মসূয়া গ্রামের মাটি’ (২-১১) লেখাটি পড়লাম। সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে অপু যে ভাবে গ্রামের জীবন ছেড়ে এক আশ্চর্য পথের দেবতার সন্ধানে শিল্পোন্নত কলকাতার দিকে এগিয়েছিল, প্রায় সেই একই কাজটি করেছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীরাও। তাঁরা মসূয়া গ্রাম ছেড়ে চলে এসেছিলেন কলকাতায়। কলকাতা তাঁদের কাজের জায়গা, ‘দেশ’ হল মসূয়া গ্রাম। প্রশ্ন হল, এই দেশের বাড়ির নিজস্ব দুঃখ, যন্ত্রণা, বা সেখানকার নিজস্ব, মৌলিক গল্পগুলোকে কী ভাবে দেখেছেন উপেন্দ্রকিশোররা? মৃণাল সেনের আকালের সন্ধানে ছবিতে দেখি, গোটা গ্রামটাই হয়ে ওঠে সিনেমার প্রয়োজনে বাবুদের কাছে একটা ইউনিট বা উপাদান। উপেন্দ্রকিশোরের মতো লেখকের রচনাতেও কি মসূয়া গ্রাম হয়ে উঠেছিল সেই রকমই এক উপাদান?
মসূয়া গ্রামের মাটির মহিমাকে তুলে ধরতে গিয়ে পিয়াস মজিদ এক বারও বললেন না, পরাধীন ভারতের উত্তাল সময়ে সেই গ্রাম কি শুধুমাত্র উর্বর জমি, আম-জাম-কাঁঠালের বন আর বাঘেদের চলাফেরার জায়গা ছিল? না কি সেখানকার মানুষের ভিতরেও সঞ্চারিত হয়েছিল কোনও উত্তাপ, যা উপেন্দ্রকিশোরকে প্রভাবিত করেছিল? গ্রামীণ জীবনের গল্পের ভুবনকে নিয়ে হয়তো অন্য এক সমাজ ও রাষ্ট্র তৈরির ভিত্তি গঠন করতে থাকে উপেন্দ্রকিশোরের কলম। ফলে আমরা দেখি তাঁর কাহিনিতে বনের রাজা বাঘকে হারিয়ে দেয় শেয়াল। গ্রাম্যজীবনের সঙ্গে যে শেয়ালের যোগ সব সময় থাকে, সেই শেয়ালের কাছেই যুক্তি-তক্কো গল্পের খেলায় হেরে যায় ‘সুপারহিরো’ বাঘ। এ ভাবেই উপেন্দ্রকিশোরের লেখা জুড়ে ভারতীয় গণতন্ত্রের এক প্রাণবন্ত কাহিনি ভাষাময় হতে থাকে, যেখানে গরিব মানুষ সহজে হেরে যান না। আজও আমরা উপেন্দ্রকিশোরকে শিশুসাহিত্যের গণ্ডি দিয়ে বেঁধে রাখি।
দেবাশিস চক্রবর্তী
কলকাতা-৬১
কমিকসেও
‘‘প্রয়াত প্রথম ‘বন্ড’ শন কনরি’’ (১-১১) প্রসঙ্গে এই লেখা। শুধু বড় পর্দা কাঁপানোই নয়, শন কনরি ১৯৮১ সালে প্রকাশিত অ্যাসটেরিক্স অ্যান্ড দ্য ব্ল্যাক গোল্ড কমিকস-এ একটি চরিত্রেও আবির্ভূত হয়েছিলেন— জেমস বন্ডের আদলে তৈরি এজেন্ট ‘ডাবলোসিক্স’। অ্যাসটেরিক্সের অন্যতম স্রষ্টা, লেখক ও চিত্রশিল্পী অ্যালবার্ট ইউদেরজ়ো চরিত্রের নামকরণে নিজের মুনশিয়ানা দেখান! এমআই সিক্স এজেন্ট ০০৭ জেমস বন্ডকে ‘ডাবল ও সেভেন’ বলে ডাকা হয়, ইউদেরজ়ো তাকে খানিক বদলে ডাবলোসিক্স বানিয়ে দেন। তফাত এটাই, এখানে শন কনরির ক্যারিকেচারে তিনি সরু গোঁফ লাগিয়েছিলেন। ডাবলোসিক্স-এর বস এমআই সিক্স-এর কর্ণধার সারেপ্টিশিয়াস-এর চেহারায়ও বন্ডের বস ‘এম’ চরিত্রের অভিনেতা বার্নার্ড লি এবং রবার্ট ব্রাউনের মিল ছিল!
শঙ্খশুভ্র চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা-৭৮
গানের ভুবন
দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সে কোন সাধনা’ (সম্পাদক সমীপেষু, ১-১১) স্মৃতি উস্কে দিল। গত শতকের পঞ্চাশের দশকের প্রথম দিকে বৈজু বাওরা নামে একটি হিন্দি ছবি তৈরি হয়। এতে অসাধারণ কথা, সুর আর কণ্ঠের বেশ কিছু গান ছিল। ষাটের দশকের মধ্যভাগ থেকে আকাশবাণীর বিবিধ ভারতীতে গানগুলো শুনতে শুরু করি। বার বার শুনেও সে গান পুরনো মনে হয়নি। অধিকাংশ গান ছিল ভক্তিরসের এবং হিন্দু ভাবধারার। গানগুলির স্রষ্টা মুসলিম গীতিকার শাকিল বদায়ুনি, সুরকার নৌশাদ আর কণ্ঠশিল্পী মহম্মদ রফি। যথার্থ শিল্পে ধর্মের ভেদাভেদ নেই, আছে সব ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা।
সুদর্শন মুখটি
শ্রীরামপুর, হুগলি
পুরস্কার
‘মানুষই বড়’ (১-১১) শীর্ষক চিঠিতে সপ্তপদী ছায়াছবির উল্লেখ করে পৃথা কুন্ডু জানিয়েছেন, সুচিত্রা সেন ওই ছবিতে অভিনয়ের জন্য মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছিলেন। ওই উৎসবে সুচিত্রা সেন পুরস্কার পেয়েছিলেন সাত পাকে বাঁধা ছবিতে অভিনয়ের জন্য, সপ্তপদী-র জন্য নয়।
মানস কুমার সেনগুপ্ত
কলকাতা-৭৪
বড় হিংস্র
এখন প্রতি মাসে কোনও না কোনও ওয়েব সিরিজ় মুক্তি পায়। কিন্তু তাদের এক-একটিতে এত বেশি হিংস্রতা থাকে, যা আপত্তিকর। মির্জাপুর নামে একটি ওয়েব সিরিজ় দেখে মনে হল, যদি এই রকম সিরিজ় নিয়মিত মুক্তিলাভ করে, তা হলে এই দেশ খুন, গুন্ডামির তালিকায় প্রথমে আসতে বাধ্য। সিজ়ন-২’তে মোট ১০টি অংশে খুনের সংখ্যা প্রচুর। প্রথম সিজ়নেও বেশি ছিল। বন্দুক, বোমা, তরোয়াল প্রভৃতি অস্ত্রের দ্বারা মানুষ খুন বা বলিকে নগণ্য হিসেবে দেখানো হয়েছে, যেন খুবই সাধারণ, নিত্য দিনের ব্যাপার। বন্দুকের ব্যবসা যেন সব সেরা কাজ। আইন বা আদালতের কোনও বালাই নেই কাহিনির মধ্যে।
সুমন সরকার
মেটেডাঙা কলোনি, পূর্ব বর্ধমান
কবিতার শ্রোতা
অর্ঘ্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘লেখকদের বিচিত্র অভ্যেস’ (রবিবাসরীয়, ১-১১) প্রসঙ্গে আমার সংযোজন, ফরাসি লেখক আলেকজ়ান্দ্র দুমা উপন্যাসের জন্য নীল, প্রবন্ধের জন্য গোলাপি আর কবিতার জন্য হলুদ কালি ব্যবহার করতেন। কবি উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ তাঁর লেখা কবিতা কুকুরের সামনে জোরে জোরে আবৃত্তি করতেন। যদি কুকুর চুপ করে সে কবিতা শুনত, তা হলে কবি বুঝতেন কবিতা ঠিক হয়েছে। আর ঘেউ ঘেউ করলে বুঝতেন কবিতার কিছুই হয়নি। নিজের মেরুন গদিওয়ালা চেয়ারে না বসলে লেখার কোনও ভাবনাই নাকি আসত না সত্যজিৎ রায়ের। টেবিলে লেখা পছন্দ করতেন না। অক্সফোর্ডের বড় খাতা আর কালি-কলম ছিল তাঁর পছন্দের। একটানা লিখতে লিখতে পা ছড়িয়ে দিতেন লম্বা খাটে।
উৎপল মুখোপাধ্যায়
চন্দননগর, হুগলি
বলেন্দ্রনাথ
দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর বিষয়ক নিবন্ধটি (‘শরীরের কষ্ট কখনও ক্লান্ত করেনি তাঁকে’, রবিবাসরীয়, ১-১১) অত্যন্ত সময়োপযোগী। সার্ধশতবর্ষের আলোকে তাঁর রচিত কাব্য, প্রবন্ধ এবং রচনাশৈলী বিষয়ে পুনরালোচনার মাধ্যমে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা দরকার।
বলেন্দ্রনাথচর্চা আজও প্রাসঙ্গিক। ব্রাহ্মসমাজ, আর্যসমাজ ও প্রার্থনাসমাজের ভিতরে ঐক্য স্থাপনের চেষ্টা, এবং শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা— এই দু’টি কাজ তাঁকে বঙ্গ সমাজে অবিস্মরণীয় করে রেখেছে। তাঁর প্রবন্ধে অতীত ঐতিহ্যের প্রতি প্রীতি এবং স্বদেশানুরাগ প্রবল। সমকালীন সমাজ, রাজনীতি, ধর্মের সঙ্গে প্রাচীন সাহিত্য, স্থাপত্য, ভাস্কর্য ও চিত্রকলা, এমন বিচিত্র বিষয় পাওয়া গিয়েছে তাঁর লেখনী থেকে। তাঁর রচিত ‘উত্তরচরিত’, ‘জয়দেব’, ‘মৃচ্ছকটিক’, ‘রবি বর্মা’ প্রভৃতি প্রবন্ধের মধ্যে সমালোচনামূলক সাহিত্য রচনায় তাঁর পারদর্শিতা এবং মননশীলতার নিদর্শন মেলে। সংস্কৃত সাহিত্য সম্পর্কে তাঁর শ্রদ্ধাশীল রচনা আজকের সংস্কৃত চর্চার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া ‘নিমন্ত্রণ সভা’, ‘প্রণাম’ ও নানা ধরনের সামাজিক ও আত্মিক মূল্যবোধ তাঁর লেখনীতে ফুটে উঠেছে। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তাঁর অবদানের কথা মাথায় রেখে পাঠ্যক্রমে তাঁকে ও তাঁর রচনাকে স্থান দিতে পারলে তাঁকে যথাযথ সম্মান করা হবে।
লোপা মুখোপাধ্যায়
ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy