‘শতবর্ষে অখিলবন্ধু’ (রবিবাসরীয়, ১৮-১০) প্রবন্ধটির জন্য অভীক চট্টোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ। চুঁচুড়ায়, স্কুলে পড়ার সময়, অনুরোধের আসরে ‘পিয়াল শাখার ফাঁকে ওঠে’ গানটি শুনতাম। পরে জেনেছিলাম, গায়ক অখিলবন্ধু ঘোষ। তাঁর গাওয়া ‘শিপ্রানদীর তীরে’ও খুব ভাল লেগেছিল। কলকাতায় মেডিক্যাল কলেজে পড়তে আসার পর তাঁর গান অনেক শুনেছি। ভি বালসারার অক্রূর দত্ত লেনের জলসায় ‘মায়ামৃগসম’ এবং ‘ও দয়াল বিচার করো’ শুনেছি। জেনেছি, ‘ও দয়াল’ গানটি তিনি এক স্টেশনের ভিখারির কাছে শুনেছেন এবং তাঁর থেকেই শিখেছেন।
‘তোমার ভুবনে ফুলের মেলা’ গানটি নিয়ে একটা গল্প আছে। মাঝ-খাম্বাজ নিয়ে সতীনাথ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হল, দু’জনে দু’টি গান করার। প্রাপ্তি হিসেবে বাংলা গানের শ্রোতারা পেলেন দু’টি স্মরণীয় গান, ‘তোমার ভুবনে ফুলের মেলা’ আর ‘তোমারে ভুলিতে ওগো।’ (তথ্যটি জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের জলছবি রং বই থেকে পাওয়া)।
লেখক ঠিকই লিখেছেন, প্রাপ্য মর্যাদা অখিলবাবু পাননি। ভোর রাতে জলসা শেষ করে হেঁটে কসবা থেকে ভবানীপুর এসেছিলেন, উদ্যোক্তারা গাড়ির ব্যবস্থা করে তাঁকে সম্মানটুকু জানাননি। তাই ‘সারাটা জীবন কী যে পেলাম/ এই মায়াভরা পৃথিবীতে’ গানটি গেয়ে নিজের বেদনা প্রকাশ করেছেন তিনি। শতবর্ষে তাঁকে শ্রদ্ধা।
পরাগ রঞ্জন ঘোষ
কলকাতা-৯১
স্বর্ণযুগের শিল্পী
স্বর্ণযুগের শিল্পীদের কথা মনে পড়লে স্মৃতিতে ভেসে আসে রবিবারের দুপুরে অনুরোধের আসরে সেই সুরেলা গলায় ‘ও দয়াল বিচার করো’ কিংবা ‘শূন্য এ বুকে পাখি মোর ফিরে আয়’। অখিলবন্ধু ঘোষ বুঝেছিলেন যে, গলা এবং গায়কি তৈরি করতে গেলে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালিম থাকা দরকার। পৌঁছেছিলেন চিন্ময় লাহিড়ির কাছেও। তাঁর মেজাজ ছিল রাগপ্রধানের পক্ষে উপযুক্ত।
১৯২০ সালের ২০ অগস্ট ভবানীপুরে জন্মেছিলেন অখিলবন্ধু। ছোটবেলা থেকেই গানের ভক্ত ছিলেন। ম্যাট্রিক পাশ করার পর আর পড়াশোনার চেষ্টা করেননি। তখন থেকেই মনোনিবেশ করেছিলেন সঙ্গীতচর্চায়। মামার কাছে হাতেখড়ি, পরবর্তী কালে তালিম নেন তারাপদ চক্রবর্তীর কাছে। তাল নিয়ে অত্যন্ত খুঁতখুঁতে ছিলেন। অখিলবন্ধুর সঙ্গীত জীবনে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা জোগিয়েছিলেন তাঁর ছাত্রী দীপালি ঘোষ, যাঁর সঙ্গে ১৯৪৭ সালে তিনি বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন। ১৯৮৮ সালের ২০ মার্চ জীবনদীপ নিবে গেল অখিলবন্ধু ঘোষের। জীবনে যিনি উপযুক্ত সম্মান পাননি, তিনি চলেও গেলেন অবহেলায়।
উৎপল মুখোপাধ্যায়
চন্দননগর, হুগলি
প্রথম গান
অভীক চট্টোপাধ্যায় এক জায়গায় লিখেছেন, ১৯৪৭ সালে অখিলবন্ধু ঘোষের প্রথম রেকর্ডে সন্তোষ মুখোপাধ্যায়ের সুরে গান দু’টি ছিল, ‘একটি কুসুম যবে’ এবং ‘আমার কাননে ফুটেছিল ফুল’। একটির গীতিকার ছিলেন অখিলবন্ধু ঘোষ নিজে, অন্যটির গীতিকার ছিলেন ব্যোমকেশ লাহিড়ি। যতটুকু জানি, অখিলবন্ধুর জীবদ্দশায় এই দু’টি গান প্রকাশিত হয়নি। তাঁর মৃত্যুর ২২ বছর পর, অর্থাৎ ২০১০ সালের শেষ দিকে এই দু’টি গান সঙ্কলিত করে প্রকাশ করে একটি সংস্থা।
তপনকুমার বিদ
বেগুনকোদর, পুরুলিয়া
ঘনাদা ৭৫
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সবে শেষ হয়েছে। ১৯৪৫ সালে দেব সাহিত্য কুটির-এর আলপনা পূজাবার্ষিকী সঙ্কলনে প্রকাশিত হল প্রেমেন্দ্র মিত্রের ছোট গল্প, ‘মশা’। বাংলা সাহিত্যে ঘনাদার সেই প্রথম প্রকাশ। এ বছর সেই আবির্ভাবের ৭৫ বছর পূর্ণ হল। গল্পের পটভূমি সাখালীন দ্বীপ, যার মালিকানা নিয়ে রাশিয়া ও জাপানের দ্বন্দ্ব ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম কারণ। সেই দুর্গম জায়গায় গিয়ে ঘনাদা এক জাপানি বৈজ্ঞানিকের গোপন ল্যাবরেটরিতে তাঁর আবিষ্কৃত ঘাতক মশা এবং বৈজ্ঞানিক, দু’জনকে বিনাশ করলেন। প্রথম আবির্ভাবেই সাম্রাজ্যবাদী জাপানের বিপক্ষে প্রতিবাদী চরিত্র হয়ে দাঁড়ালেন ঘনাদা।
চিত্তাকর্ষক এই কল্পবিজ্ঞান গল্পে ঘনাদার সাদা-কালো আর রঙিন ছবি আঁকলেন শিল্পী প্রতুল বন্দ্যোপাধ্যায়। এর পরে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন বই এবং পত্রপত্রিকা মিলিয়ে প্রায় দু’ডজন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী ঘনাদাকে এঁকেছেন। কিন্তু সবচেয়ে বেশি ঘনাদার ছবি প্রতুলবাবুই এঁকেছেন।
১৯৪৮-এ ‘নুড়ি’ নামে একটি কল্পবিজ্ঞানের গল্প বার হয়। ঘনাদা দেখালেন, পৃথিবীর অস্তিত্ব রক্ষা করতে নুড়ির মতো তুচ্ছ এক জড় পদার্থের ভূমিকাও কত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। সেই থেকে প্রতি বছর বেরিয়েছে ঘনাদার গল্প। প্রথমে বছরে একটাই ঘনাদার গল্প লিখতেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। পরে প্রবল চাহিদায় বছরে একই সঙ্গে তিনটি পত্রিকার পূজাবার্ষিকীতে তিনটি গল্পও লিখেছেন। একই পত্রিকায় মাসিক ও পূজাবার্ষিকীতে দুটো আলাদা ঘনাদার গল্প প্রকাশিত হয়েছে। গল্প ছাড়াও ৪টি উপন্যাসও ঘনাদাকে নিয়ে লিখেছেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। দৈনিক পত্রিকার কমিক্সে, সাপ্তাহিকে, বাংলা কল্পবিজ্ঞান পত্রিকায় অপ্রতিহত ভাবে চলেছে ঘনাদার বিজয়রথ। বিশেষ ঘনাদা সংখ্যাও প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৭৩ সালে পূজাবার্ষিকী আনন্দমেলা-য় প্রকাশিত হয় ঘনাদার গল্প ‘পৃথিবী বাড়ল না কেন’।
কলকাতার ৭২ নম্বর বনমালী নস্কর লেনের একটি মেসবাড়িতে ছিল ঘনাদার আস্তানা। ১৯৪৫ থেকে শুরু করে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত স্বকীয় মর্যাদায় ঘনাদার পথচলা। ১৯৮৮ সালের শারদীয়া পূজাবার্ষিকী আসার আগেই ঘনাদা চলে গিয়েছেন, তাঁর স্রষ্টার সঙ্গেই। ঘনাদার ৫০ বছর কবেই বিস্মরণের আবহে পার হয়ে গিয়েছে। তাই বলে ৭৫-এও কি আমরা ঘনাদাকে ভুলে থাকতে পারি?
গিরিধারী সরকার
বর্ধমান
চোদ্দো শাক
স্মার্ত ভট্টাচার্য রঘুনন্দনের খাদ্যতত্ত্বে বলা হয়েছে, কার্তিকী অমাবস্যার আগের দিন, অর্থাৎ ভূতচতুর্দশীর দিনে চোদ্দো শাক খেলে কার্তিকের অসুখ থেকে রেহাই পাওয়া যায়। প্রাচীন কালে ঋতুজ ব্যাধি প্রতিরোধক কালোপযোগী ব্যবস্থা ছিল। চোদ্দো শাকের প্রচলিত নাম, ওল, কেঁউ, বেতো, কালকাসুন্দে, সরিষা, নিম, জয়ন্তী, শালিঞ্চ বা শাঞ্চে, গুড়ুচি বা গুলঞ্চ পাতা, পটল পাতা, শেলুকা, হিঞ্চে, ঘেঁটু বা ভাঁট ও শুষনি শাক। প্রতিটি শাক গুণসম্পন্ন ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভূতচতুর্দশীর দিন চোদ্দো শাক খাওয়ার সূচনা হলেও, ওই একটি দিন খেলেই হয় না। প্রতি দিন দু’তিনটি বা কয়েকটি মিলিয়ে অগ্রহায়ণ মাসেও খাওয়া উচিত।
অচিন্ত্যরতন দেবতীর্থ
দেউলটি, হাওড়া
ফেলুদা
আমার চিঠিতে লিখেছিলাম, ‘ফেলুডা কোভিড-১ কিট’ এবং সত্যজিৎ রায় সৃষ্ট গোয়েন্দা চরিত্র ফেলুদার মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই (২৬-১০)। ইন্টারনেট সংস্করণে চিঠিটি প্রকাশের পর ওই ‘কিট’-এর অন্যতম আবিষ্কারক দেবজ্যোতি চক্রবর্তী জানান, এই কিটের নামকরণ সচেতন ভাবে ফেলুদার নামেই করা হয়েছে। এই পরীক্ষা-সংক্রান্ত একটি ওয়েব টুলের নামকরণ আদ্যক্ষর জুড়ে করা হয়েছিল ‘জটায়ু’ এবং অন্য একটি স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশনের নাম রাখা হয় ‘তোপসে’ (ট্রু আউটকাম প্রেডিক্টেড ভায়া স্ট্রিপ ইভ্যালুয়েশন)। আমার ধারণা ভুল ছিল।
দেবাশিস মুখোপাধ্যায়
চন্দননগর, হুগলি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy