‘বিবেকী বিদ্রোহী’ (কলকাতার কড়চা, ১৮-১) প্রসঙ্গে আরও জানাই, শিবনারায়ণ রায় ছিলেন অকম্প্র যুক্তিবাদী চিন্তক। আধুনিক সমাজমনস্ক, মানবতাবাদী লেখক। তিনি স্বতন্ত্র ধারার স্রষ্টা। বিদগ্ধ পণ্ডিত। বিশ্বনাগরিকতার চৈতন্যের উদ্বোধকও বটে। এ সব চিন্তা-চেতনার ‘বিবেকী’ প্রয়াসে ঋদ্ধ ছিল তাঁর জিজ্ঞাসা পত্রিকা। সামাজিক অসাম্য তথা জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে তিনি খড়্গহস্ত ছিলেন। এক সময় তিনি মানবেন্দ্রনাথ রায়ের দ্য র্যাডিক্যাল হিউম্যানিস্ট পত্রিকার প্রধান সাহায্যকারী ছিলেন।
শিবনারায়ণ চেয়েছিলেন, ব্যক্তি মানুষের বিকাশ। লিখেছিলেন বেশ কিছু কবিতা, প্রবন্ধ। প্রবাসের জার্নাল তাঁর এক মননশীল গ্রন্থ। তবে স্রোতের বিরুদ্ধে চলাই যেন ছিল তাঁর প্রকৃতি। তাঁর একটি গ্রন্থের নামও স্রোতের বিরুদ্ধে। দেশ পত্রিকায় তাঁর রবীন্দ্রনাথ ও গ্যোটে-কে নিয়ে লেখা প্রবন্ধ প্রকাশিত হলে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। সেখানে তিনি গ্যোটেকে সর্বোচ্চ স্থানে বসিয়েছেন। ফলে তিরস্কৃত হন বহু ভাবে। স্মরণ করা যায় জলপ্রপাত সাহিত্য-এর ‘পত্রসাহিত্য’ সংখ্যায় (২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬) প্রকাশিত সম্পাদককে লেখা শিবনারায়ণের পত্রের একটি উদ্ধৃতি, “রবীন্দ্রনাথ মহাপ্রতিভাধর ব্যক্তি বলে ত্রুটিহীন নন— জীবনের কিছু দিক রবীন্দ্রনাথ সযত্নে এড়িয়ে গেছেন, তাতে সাহিত্যের কিছু ক্ষতি হয়েছে। বাংলা ভাষায় ফাউস্টের সঙ্গে তুলনীয় কিছু আজও লেখা হয়নি।” আবার বিতর্কিত এই মানুষটিই অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে পঠনপাঠনের ব্যবস্থা করেন।
আসলে শিবনারায়ণের চিন্তা কখনও কোনও একটা জায়গায় থেমে থাকেনি। তবে রেনেসাঁস ছিল তাঁর মনে ও মননে। এ জন্যই তো রামমোহন, বিদ্যাসাগর, মধুসূদন, বঙ্কিমচন্দ্রের মতো ‘প্রাতিস্বিকতা’ সম্পন্ন ব্যক্তিত্বের উত্থানে তিনি গর্ব বোধ করতেন। সামনে এনেছেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমাজ বাস্তবতাকে, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহের মানবতন্ত্রকে। আর সম্মান জানিয়েছেন সময়ের থেকে এগিয়ে থাকা শৈলবালা ঘোষজায়ার
স্পর্ধিত কলমকে।
সুদেব মাল, খরসরাই, হুগলি
শতবর্ষে
‘উদ্যাপন: শতবর্ষ উপলক্ষে সেজেছে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল’ (২১-১) ছবিটি দেখে ভাল লাগল। ইংরেজরা ২০০ বছর ধরে ভারতবাসীর উপর অকথ্য অত্যাচার করেছে, লুণ্ঠনও করেছে এ দেশের বহু সম্পদ। তবে কিছু অবদানও রেখে গিয়েছে তারা, যার অন্যতম ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। ২২ জানুয়ারি, ১৯০১ সালে মৃত্যু হয় মহারানি আলেকজ়ান্দ্রিনা ভিক্টোরিয়ার। তাঁর স্মৃতিরক্ষার্থে সে সময়ে ভারতের রাজধানী কলকাতায় স্থাপিত হয় এই স্মৃতি-উদ্যানটি। ২৬টি গ্যালারি এবং প্রায় ৩০,০০০ নিদর্শনমণ্ডিত এক সংগ্রহশালা। এই স্থাপত্য ইংরেজ শাসনের দান— এ ধারণা একেবারেই ভুল। তখনকার সময়ে এই স্মৃতিস্থাপত্য তৈরি করতে খরচ হয়েছিল ভারতীয় মুদ্রায় এক কোটি পাঁচ লক্ষ টাকা। ব্রিটিশ সরকার ও রাজপরিবার খুব সামান্য অর্থ ব্যয় করেছিল। বেশির ভাগটা দিয়েছিলেন ভারতীয় উদ্যোগপতিরাই।
১৯০৬ সালে কলকাতায় এসে ভিক্টোরিয়ার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন মহারানির নাতি রাজা পঞ্চম জর্জ। স্থাপত্যের কাজ শুরু হয় ১৯১০ সালে। দীর্ঘ ১১ বছর পরে ১৯২১-এ সম্পূর্ণ হয় এই মেমোরিয়াল। উদ্যানের ব্রিজ এবং গেটের নকশা ইত্যাদি কাজের পরিসমাপ্তি ঘটেছিল ‘মার্টিন অ্যান্ড কোং’-এর দুই বিশিষ্ট অধিপতি, স্যর টমাস মার্টিন এবং স্যর রাজেন মুখোপাধ্যায়ের হাতে (হাওড়া ব্রিজ-ও তাঁরই নকশায় তৈরি)। এই কাজের জন্য উভয়েই ‘নাইটহুড’ পেয়েছিলেন। স্মৃতিস্থাপত্যের মূল কারিগর তৎকালীন ‘রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ব্রিটিশ আর্কিটেক্টস’।
ভিক্টোরিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকাটি আগে ছিল পাঁচিল-ঘেরা কারাগার। এটিই প্রথম প্রেসিডেন্সি জেল, উদ্যান পরিকল্পনার পর যেটি স্থানান্তরিত হয় ১৯০৬ সালে আলিপুরে। তারও আগে এখানে ছিল নবাব সিরাজউদ্দৌলার চিড়িয়াখানা বা ‘হরিণবাড়ি’। এই স্মৃতিস্থাপত্যের মাথায় বসানো হয়েছিল একটি পরি, তথা অপরাজেয় গ্রিক দেবীর ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য। ১৬ ফুট লম্বা এই পরিকে ১৯২০ সালে ব্রিটেন থেকে জাহাজে করে আনা হয়েছিল। জনশ্রুতি নাকি এটাই, কলকাতার আয়ু বহন করে চলেছে এই ট্রাম্পেট বাজানো বিস্ময়কর পরিটি।
শক্তিশঙ্কর সামন্ত, ধাড়সা, হাওড়া
জঙ্গলে আগুন
শীতের শেষ, বসন্তের শুরু— এই সন্ধিক্ষণে শাল-সেগুন গাছের পাতা ঝরে পড়ে। ঝরাপাতার স্তূপে হামেশাই আগুন জ্বলতে দেখা যায়। জঙ্গলমহলের প্রত্যেকটি জঙ্গলে এই চিত্র ধরা পড়ে। অনেক জঙ্গলের পাশে থাকে বন দফতরের বিট অফিস। তাদের উদাসীনতাও চোখে পড়ে। স্থানীয় মানুষরা আবার বলেন, বন কর্তৃপক্ষের মদতেই এই কাজ চলে। এই সময়ে জঙ্গলের তলদেশ পরিষ্কার করলে জঙ্গলে ঢুকতে, পুরনো গাছ কাটতে সুবিধে। অনেকের ধারণা, পাতা পুড়িয়ে তলদেশ পরিষ্কার করলে বর্ষায় দ্রুত নতুন চারা বার হবে। এটা কতটা বিজ্ঞানসম্মত, সন্দিহান অনেক পরিবেশপ্রেমী।
আগুনে অনেক জীবাণু, পোকামাকড়, ছোট গাছ, বন্যপ্রাণ মারা যায়, যা জঙ্গলের বাস্তুতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকর। প্রতি বছর ধুমধাম করে অরণ্য সংরক্ষণের জন্য নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়। কিন্তু এই জঙ্গল যখন পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে, তখনই কেন বাস্তুতন্ত্র বিনাশের প্রচেষ্টা চলে সর্বত্র? এ ভাবে আগুন লাগানোর সপক্ষে কী বৈজ্ঞানিক যুক্তি রয়েছে? মুক্ত বনাঞ্চলের পরিবেশ মুক্ত থাক, যাতে বিশেষ প্রজাতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য বিশেষ জঙ্গল গঠন করতে না হয়।
মনিকাঞ্চন রায়, মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
আইনের শিক্ষা
‘সবার জন্য সমান আইন হোক’ (১৮-১) নিবন্ধে শাশ্বতী ঘোষ মেয়েদের পৈতৃক সম্পত্তির উপর অধিকার প্রসঙ্গে বলেছেন, “এই দাবি তোলার পথে বাধা কোথায়?” উত্তরটা সহজ। মেয়েদের এক রাতের মধ্যে চিরপরিচিত ‘নিজের’ বাড়ি ‘বাপের’ বাড়িতে পরিণত হয়। শ্বশুরবাড়িতে মানিয়ে নেওয়ার পালা শুরু হয়। এই দুইয়ের মধ্যে মেয়েদের নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ হয় না। ছোট থেকেই মেয়েদের বোঝানো হয় যে, বিয়ের পর পৈতৃক সম্পত্তির উপর তাদের আর কোনও অধিকার থাকে না। তাই সবার আগে চাই শিক্ষা, নিজেদের অধিকার ও প্রাপ্য বিষয়ে মেয়েদের অবগত করা, এবং তা লঙ্ঘিত হলে কি আইনি অধিকার আছে, সেই বিষয়ে জানিয়ে রাখা।
সৃজা মাজি, পুলিশ লাইন, পূর্ব বর্ধমান
যথার্থ সম্মান
বাঙালির শৈশব-কৈশোর জুড়ে রয়েছে হাঁদা-ভোঁদা, নন্টে-ফন্টে, বাঁটুল। এই চরিত্রগুলির স্রষ্টা নারায়ণ দেবনাথকে এ বছর পদ্মশ্রী সম্মান দেওয়া হল। এর আগে পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে বঙ্গবিভূষণ সম্মান দিয়েছে। তাঁর সৃষ্ট প্রত্যেকটি চরিত্র সহজ সরল। সেখানে ‘অ্যাবসার্ড’ হিউমারের মজা বিদ্যমান। অদ্ভুত সব মজাদার শব্দ সহজেই পাঠককে আকৃষ্ট করে। ভাষা সহজ, কথাগুলি সুন্দর অক্ষরে সাজানো। সেই সঙ্গে পরিষ্কার আঁকা ছবি তাঁর সৃষ্টির বৈশিষ্ট্য। ছোটদের মুখে তিনি ছোটদের মতো ভাষা, ও বড়দের জন্য তাঁদের উপযোগী ভাষা ব্যবহার করেছেন।
পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেড় হাজারের বেশি কমিকস স্ট্রিপ সৃষ্টি করেছেন নারায়ণ দেবনাথ। কাহিনি, চিত্রনাট্য, সংলাপ, চিত্ররূপের দায়িত্বও সামলেছেন। বাহাদুর বেড়াল, ব্ল্যাক ডায়মন্ড ইন্দ্রজিৎ রায়, ম্যাজিশিয়ান পটলচাঁদ, ডানপিটে খাঁদু আর তাঁর কেমিক্যাল দাদু, এমন অসামান্য চরিত্রের নির্মাতা তিনি।
সুকমল দালাল খণ্ডঘোষ, পূর্ব বর্ধমান
আরও যোদ্ধা
চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাইকর্মী, পুলিশকর্মীদের আমরা কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি। তবে আরও কিছু মানুষ নীরবে, নিষ্ঠার সঙ্গে তাঁদের কর্তব্য পালন করে গিয়েছেন। এঁরা খবরের কাগজ সরবরাহকারী ও দুধ বিক্রেতা। অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এঁরাও সৈনিক। কুর্নিশ ও কৃতজ্ঞতা এঁদেরও প্রাপ্য।
রাকেশ পাত্র, উলুবেড়িয়া, হাওড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy