বিশ্বভারতীর প্রাক্তন ও বর্তমান ছাত্রছাত্রী, কর্মী, অধ্যাপকদের কাছে পৌষমেলার আলাদা গুরুত্ব। এ বছর পৌষমেলা বন্ধ। স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের মন বিষণ্ণ।
শান্তিনিকেতনের ছাত্রাবস্থায় আমাদের পরীক্ষা শেষ হতেই পৌষমেলা শুরু হত। ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে লরি করে বড় বড় নাগরদোলা আসত। বিশ্বভারতীর বিভিন্ন বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের স্বেচ্ছাসেবকেরা দায়িত্বে থাকত। মাঠ পরিষ্কার, প্লাস্টিক ব্যবহার করতে নিষেধ করা, নানা কাজে দিন কেটে যেত। গত কয়েক বছরে বদলেছে শান্তিনিকেতনের পরিবেশ। পৌষমেলায় নগরকেন্দ্রিক আধুনিকতা প্রবেশ করলেও, গ্রামীণ পসরা নিয়ে হাজির হতেন অনেক মানুষ। রকমারি দোকানের পাশেও মাটির তৈরি জিনিস, হাঁড়ি, কলসি, বেতের ধামা, পটের কাজ, লোহা ও কাঠের জিনিস— সবই বিক্রি হত। সারা বছর এই সব গ্রামীণ হস্তশিল্পী পৌষমেলার জন্য অপেক্ষায় থাকতেন। মেলার মাঠে মঞ্চে যাত্রাপালা, লোকগান, লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করা হত।
এ বছর সেই সব কিছু নেই। মেলার মাঠ জুড়ে কেবল শূন্যতা। পৌষমেলা না হওয়ার কারণে বাউল ও লোকশিল্পীদেরও মন খারাপ। তবে ২৩-২৫ ডিসেম্বর ‘বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ’ নিজেদের উদ্যোগে ডাকবাংলো ময়দানে হস্তশিল্প প্রদর্শন, বাউল ও লোকশিল্পীদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘পৌষ পার্বণ’-এর আয়োজন করেছিল। বাংলার সংস্কৃতি রক্ষায় নিঃসন্দেহে এটি একটি ভাল উদ্যোগ ছিল। রবীন্দ্রনাথ চাইতেন তাঁর শান্তিনিকেতনের সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ুক চার দিকে। এটা তার নিদর্শন।
সুকমল দালাল
খণ্ডঘোষ, পূর্ব বর্ধমান
গাত্রদাহের কারণ
‘ব্রাত্য প্রাক্তনী’ (২০-১২) শীর্ষক চিঠির অর্থ উর্দু শায়র, মির্জা গালিব বহু আগেই বুঝতে পেরেছিলেন। তাই তিনি লিখেছিলেন, “উমর ভর গালিব ওহি ভুল করতা রহা; ধুল চেহরে পর থি, অউর আইনা সাফ করতা রহা।” অর্থাৎ, আত্মোপলব্ধি না করলে কোনও বিষয়ে সঠিক জ্ঞানার্জন সম্ভব হয় না। আরও সাদামাটা ভাষায় বললে, গালিবের সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু সেই সমস্ত মানুষজন, যাঁরা দায়িত্ব ব্যতিরেকে অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঢাক-ঢোল পেটানো পছন্দ করেন। তথাকথিত ‘ঐতিহ্য’-এর নামে বিশ্বভারতীকে শোষণ করে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের প্রেম-ভালবাসা প্রকাশ করা হয় এখানে। তাই যখন বর্তমান পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠান করার জন্য বা তথাকথিত ঐতিহ্য বজায় রাখার জন্য আর্থিক সাহায্য চাওয়া হয়, তখন বেশির ভাগ ‘রাবীন্দ্রিক’, ‘আশ্রমিক’ এবং ‘প্রাক্তনী’-রা পিছপা হতে দ্বিধা করেন না। অর্থাৎ, অধিকার চাই, কিন্তু দায়িত্ব নেব না। অতিমারির পরিস্থিতির জন্য বিশ্বভারতীর পৌষমেলা বন্ধ হল। এযাবৎ পৌষমেলা থেকে পাওয়া উদ্বৃত্ত অর্থ থেকে পৌষ-উৎসবের খরচাপাতি করা হত। এ বছর সেই উদ্বৃত্ত নেই। তাই বিশ্বভারতী আশ্রমিক সংঘের সদস্যদের গাত্রদাহের কারণ। এ ছাড়া ১৯৫১ সালে বিশ্বভারতী স্থাপনের আইন পাশের সময় আশ্রমিক সংঘের কোনও আইনগত অস্তিত্ব নেই। অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের কথা ১৯৫১ সালে বলা হয়েছে। অতএব বিশ্বভারতীর আশ্রমিক সংঘের প্রতি কোনও আইনগত দায়বদ্ধতা নেই। তবুও বিশ্বভারতী আশ্রমিক সংঘের অনুষ্ঠান করতে রাজি ছিল, যদি সংঘের সদস্যবৃন্দ এই অনুষ্ঠান করার জন্য খরচ বাবদ যে অর্থ ধার্য করা হয়েছিল, তা দিতেন। যদিও এটা আশা করা ভুল, কারণ যাঁরা তথাকথিত ঐতিহ্য রক্ষার নামে নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করেন, তাঁরা যে দায়িত্ব নেবেন না, এটা আমরা জানতাম। কিন্তু বিশ্বভারতী নিজের দায়িত্ব সম্বন্ধে সচেতন, তাই চলে যাওয়া আশ্রমিকদের প্রতি উপাচার্য আনুষ্ঠানিক ভাবে শ্রদ্ধা জানাবেন এ বছরের পৌষ উৎসবের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হিসেবে।
দ্বিতীয়ত, হবিষ্যান্ন নিয়ে আশ্রমিক সংঘ বিরূপ মত প্রকাশ করেছে, কারণ ১৫০ টাকা দিতে হবে হবিষ্যান্ন খাওয়ার জন্য। এখানেই সমস্যা। অধিকার চাই, কিন্তু ১৫০ টাকা দেওয়ার দায়িত্ব নেব না। যাঁরা আশ্রমিক, তাঁরা জানেন, হবিষ্যান্ন খাওয়ার জন্য (বিনাপয়সায় ভোজন) এক সময় মানুষ কেমন হ্যাংলাপনা করতেন। হাজার হাজার মেলা দর্শনার্থী বিনাপয়সায় হবিষ্যান্ন (বা দুপুরের ভোজন) খাওয়ার জন্য লাইন দিতেন এবং অনেক সময় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করতেন। সেটা বন্ধ করা হয়েছে। গত বছর ৩২টা খাবার নষ্ট হয়েছে, যা কখনওই মানা যায় না। এ জন্য আশ্রমিক সংঘের কোনও দুঃখ নেই। কারণ, তাঁরা তো অধিকার বোঝেন, তা হলে দায়িত্বের কথা আসে কোথা থেকে? এ ছাড়া, ১৫০ টাকা হবিষ্যান্নের জন্য ধার্য করা হয় যে মিটিংয়ে, সেখানে আশ্রমিক সংঘের প্রতিনিধিস্বরূপ শ্রী সুব্রত সেন মজুমদার মহাশয় ছিলেন। তিনি এই প্রস্তাবে সায় দিয়েছিলেন। তাই এখন আশ্রমিক সংঘ কেন জনসমক্ষে এই বক্তব্য নিয়ে এল, আমরা বুঝলাম না। আমরা বলতে চাই, যে পরিস্থিতির চাপে বিশ্বভারতীকে ফান্ড বৃদ্ধির কাজে মনোনিবেশ করতে হয়েছে— যেমন, উপাসনাগৃহ বা কাচমন্দির সংস্কার কাজের জন্য পয়সা তোলার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে, তাতে কিন্তু তেমন সাড়া এখনও পাওয়া যায়নি। আশ্রমিক সংঘ, প্রাক্তনী বা যাঁরা রাবীন্দ্রিক বলে নিজেদের পরিচয় দিতে ভালবাসেন নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য, তাঁরা কেন নির্লিপ্ত, তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। কারণ, উপাসনাগৃহ রাবীন্দ্রিক আদর্শের একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। উপাসনাগৃহের সংস্কার এবং আরও ঐতিহ্যমণ্ডিত ইমারতের আশু সংস্কারের প্রয়োজন। যার জন্য প্রয়োজন প্রচুর অর্থের। তাই আমরা সবার কাছে আবেদন রাখছি অর্থদানের জন্য। আমাদের ওয়েবসাইটে জানানো আছে, কী ভাবে এই অর্থ দান করা যেতে পারে। আমরা খুশি হব, যদি রাবীন্দ্রিক বা রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি বিশ্বভারতীর জন্য স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে সবাই এগিয়ে আসেন। তবেই আমরা খুব দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারব, “আমরা সবাই রাজা, আমাদের এই রাজার রাজত্বে।”
অনির্বাণ সরকার
জনসংযোগ আধিকারিক, বিশ্বভারতী
ছবির রাজনীতি
বিবেকানন্দ চৌধুরীর ‘যে যেখানে’ শীর্ষক চিঠির (২০-১২) প্রসঙ্গে জানাই, বিজেপির ব্যানারে অমিত শাহের ছবির নীচে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবি সত্যিই অপমানজনক। বাঙালি হিসেবে ক্ষুব্ধ হতেই হবে। তবে এই সংস্কৃতি বঙ্গ রাজনীতিতে নতুন নয়। মনীষীদের জন্ম ও মৃত্যুদিনে তৃণমূল কংগ্রেস বা রাজ্য সরকারের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করার ব্যানারে বা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত শ্রদ্ধার্ঘ্যতে ‘মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর অনুপ্রেরণায়’ লেখা ও মুখ্যমন্ত্রীর ছবি মনীষীদের ছবির সঙ্গে থাকছে প্রায় এক দশক ধরে। আমরা বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলে হয়তো বিজেপির এই স্পর্ধা হত না। আজ শান্তিনিকেতন কবিগুরুর জন্মস্থান বলে বিজেপি লিখছে। তৃণমূল অমিত শাহের ব্যানারের প্রতিবাদে মিছিল বার করলেও, নিজেদের দায় ঝেড়ে ফেলতে পারবে না। মনীষীদের ছবি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ব্যবহার না করাই বাঞ্ছনীয়।
অভিজিৎ ঘোষ
শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
বই ও জলসা
দু’দিন আগের কাগজে সরকারি বিজ্ঞাপন দেখে রবীন্দ্র রচনাবলী-র নতুন প্রকাশিত এক খণ্ড কিনতে গেলাম বিধাননগরের ঠিকানায়। গিয়ে দেখি, সেখানে জলসার আয়োজন হচ্ছে। বইয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করায় এক কর্মী বললেন, বই আসেনি। আগের খণ্ডগুলি কেনার আগ্রহ প্রকাশ করলে বললেন, এখন কিছু দিন জলসা হবে, বই বিক্রি হবে না গোটা ডিসেম্বর।
সৌগত বাগচি
কলকাতা-১৫৭
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy