‘নাগরিকতন্ত্র’ (সম্পাদকীয়, ২৯-১০) চিলির সাম্প্রতিক গণভোটের কথা সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছে। ১৯৭৩ সালে জেনারেল আউগুস্তো পিনোশের স্বৈরাচারী শাসন শুরু হয়েছিল। সেই সময় চিলির প্রেসিডেন্ট ছিলেন বামপন্থী সালভাদোর আয়েন্দে। আমেরিকার মদতে চিলিতে যে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানো হয়েছিল, তাতে হত্যা করা হয়েছিল দেশের বুদ্ধিজীবী, শিল্পী ও নানা শ্রেণির মানুষজনকে। এর পরের চিলির ইতিহাস শুধু হিংসা, প্রতিহিংসা ও নানা ধরনের অত্যাচারের। এই সময় শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক মিল্টন ফ্রিডম্যান, যিনি উদারনৈতিক পুঁজিবাদের তাত্ত্বিক প্রবক্তা ছিলেন, তাঁর নেতৃত্বে ‘শিকাগো বয়েজ়’-এর তত্ত্বাবধানে চিলি হয়ে ওঠে নয়া উদারনীতির ল্যাবরেটরি। ১৯৮০ সালে এক বিতর্কিত গণভোটে পাশ হয় নতুন সংবিধান। দেশ চালানোর মূল নীতি হয় বেসরকারিকরণ ও মুক্ত বাজারের সমন্বয়শক্তি, যার মধ্যে রাষ্ট্রের প্রায় কোনও হাতই থাকে না। শুরু হয় অবাধ বেসরকারিকরণ, মানুষের অধিকার কেড়ে নিতে দমন-পীড়ন মূলক নীতির প্রবর্তন। এই কাজে পিনোশের ডান হাত ছিলেন উপদেষ্টা হাইমে গুজ়মান। পশ্চিমি দুনিয়ার মদতে পুষ্ট পিনোশে অবশ্য ১৯৯০ সালে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন। এর পর চিলির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন ঘটলেও ১৯৮০ সালে রচিত কুখ্যাত সংবিধানটি এখনও রয়ে গিয়েছে। তবু জনগণ লড়াই চালিয়ে যান। গত বছর মেট্রো রেলের অস্বাভাবিক ভাড়া বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে যে প্রবল বিক্ষোভ হয়, তাতে ৩৬ জনের মৃত্যু হয়। চিলির বর্তমান প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিনিয়েরা গণভোটে রাজি হন। চিলির ৭৮ শতাংশ নাগরিক সংবিধান বদলানোর পক্ষে রায় দিয়েছেন। শীঘ্রই নতুন ভাবে সংবিধান রচনার কাজ শুরু হবে। সব কিছু ঠিকঠাক চললে ২০২২ সালের মধ্যে তাঁরা নতুন সংবিধান পেয়েও যাবেন। আন্দোলনকারীদের ভাষায়, এই গণভোটের অর্থ আসলে ‘স্বৈরতন্ত্রের সমাপ্তি’।
অশোক বসু
বারুইপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
বিপন্ন
‘কোনও প্রশ্ন নহে’ (সম্পাদকীয়, ১৯-১০) নিবন্ধে ঠিকই বলা হয়েছে যে, দলিত, আদিবাসী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বঞ্চনা ও নিপীড়নের প্রতিবাদ করলে রাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী আইন ইউএপিএ প্রয়োগ করে জেলে পুরছে। ফাদার স্ট্যান স্বামীর মতো ৮৩ বছরের মিশনারি ধর্মযাজকও ছাড় পাচ্ছেন না। কারণ, তিনি আদিবাসীদের জমি কেড়ে নেওয়া ও বন্দি নিপীড়নের বিরুদ্ধে এবং রাজনৈতিক বন্দিমুক্তির পক্ষে সরব হয়েছিলেন। তবে সম্পাদকীয়তে কলকাতা-নিবাসী তরুণ বিজ্ঞানী অধ্যাপক পার্থসারথি রায় এবং চিকিৎসক বিনায়ক সেনের উল্লেখ থাকলে ভাল হত। তাঁদেরও ভীমা-কোরেগাঁও মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় এনআইএ। পার্থসারথি ফাদার স্ট্যান স্বামীর সঙ্গে একটি বন্দিমুক্তি সংগঠনের কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন। আদালতে মামলা লড়তে রাজনৈতিক বন্দিদের সহায়তা করাও এই জমানায় ‘অপরাধ’! তাই মহারাষ্ট্রে সুরেন্দ্র গ্যাডলিং এবং অরুণ ফেরেরার মতো আইনজীবীকেও ‘আরবান নকশাল’ নাম দিয়ে জেলে পোরা হয়েছে। মানবাধিকার কর্মী বিনায়ক সেনকে গত ২৯ সেপ্টেম্বর কলকাতায় এনআইএ জেরা করেছে। জেরা করেছে অধ্যাপক মনোরঞ্জন মোহান্তির মতো আরও অনেক বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ও আইনজীবীকে।
ভীমা-কোরেগাঁও মামলার মতো, দিল্লির হিংসার ঘটনাতেও মূল অপরাধীদের না ধরে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার করা হল ১৮-১৯ জন তরুণ ছাত্র-নেতাকে। উমর খালিদ, দেবাঙ্গনা কলিতা, সাফুরা জ়ারগার— উজ্বল এক ঝাঁক তরুণ-তরুণীকে ঘোরানো হচ্ছে জেল আর আদালতের দরজায়। প্রথাগত দলগুলির প্রভাবের বাইরে স্বাধীন ভাবে এনআরসি-সিএএ বিরোধী আন্দোলনের সংগঠক ছিলেন এঁরা, এটাই কি তাঁদের অপরাধ? এই মামলাতেও জড়ানো হয়েছে দিল্লির বহু প্রতিষ্ঠিত বুদ্ধিজীবীকে। তাঁরা নাকি দাঙ্গায় উস্কানি দিয়েছেন। ‘ষড়যন্ত্র মামলা’ সাজানো হচ্ছে হাথরসের ঘটনাতেও। এক সাংবাদিক ও তাঁর তিন সহযোগীকে ইতিমধ্যেই ইউএপিএ-তে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রাষ্ট্রের এই আচরণের সামনে বেশ কিছু বুদ্ধিজীবী বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তাঁদের জোরালো কণ্ঠের সওয়াল থেকে বঞ্চিত হলেন নিপীড়িত মানুষ। এই বুদ্ধিজীবীরা দেশের সম্পদ। উপযুক্ত মর্যাদা ও সুরক্ষা তাঁদের প্রাপ্য। কেন্দ্রের নানা তদন্তকারী সংস্থা ও রাজ্যের পুলিশকে লেলিয়ে, মিডিয়ার ‘বিচার’-এ সম্মানহানি করে এঁদের হেনস্থা, লাঞ্ছনা বন্ধ হোক।
রঞ্জিত শূর
কলকাতা-৭৫
দায়ী কর্মী?
প্রায়ই শোনা যায়, সরকারি ব্যাঙ্কের লোকজন কাজ করে না। সেই জন্য ব্যাঙ্কের ক্ষতি হচ্ছে, তা উঠিয়ে দিয়ে অন্য ব্যাঙ্কের সঙ্গে মিলিয়ে দিতে সরকার বাধ্য হচ্ছে। ১৮০৬ সালে ‘ব্যাঙ্ক অব ক্যালকাটা’ দিয়ে ব্যাঙ্কিং পরিষেবার সূচনা হয়। তার পর প্রেসিডেন্সি ব্যাঙ্ক, ইম্পিরিয়াল ব্যাঙ্ক, কারেন্সি অফিস এবং শেষে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক গঠনের মধ্যে দিয়ে ব্যাঙ্কের কাজকর্ম পুরোদস্তুর শুরু হয়।
সেই সময় প্রতিটা ব্যাঙ্কই ছিল বেসরকারি মালিকানাধীন। লোক নিয়োগ হত প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। তা-ও কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে হত না। নিয়োগের দিন এত লোকের সমাগম হত যে, সামনের রাস্তায় ট্র্যাফিক জ্যাম হয়ে যেত। প্রতি শুক্রবার ব্যালান্সিং হত। সে দিন কর্মচারীদের সাধারণত অফিসে বিছানা নিয়ে আসতে হত। তখনকার এক বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রের পাতায় কার্টুন বেরিয়েছিল, ধুতি-পরিহিত এক ভদ্রলোক ছাতা বগলে হনহন করে হাঁটছেন। নীচে ক্যাপশন — ‘‘ইনি ব্যাঙ্কের কর্মচারী, হিসেব মিলিয়ে অফিসেই রাত কাটাতে হয়েছিল। তাই বাবুঘাটে গঙ্গায় স্নান করে আবার অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছেন।’’
সেই সময় ব্যাঙ্ক পরিচালনার পরিবেশ সম্পূর্ণ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের অনুকূলে ছিল। তবু, ভারতের স্বাধীনতার সময় বা ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ হওয়ার সময় অনেক ব্যাঙ্ক পাততাড়ি গুটিয়ে ফেলে। সব কিছু নিজেদের অনুকূলে থাকা সত্ত্বেও লোকসান হত কেন? তখন তো কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণে রাখার সব ব্যবস্থা ছিল। লড়াই করা দূরের কথা, প্রশ্ন করলেও ছাঁটাই করা যেত। মালিকরা কেন তবু শয়ে শয়ে ব্যাঙ্ক তুলে দিয়ে, সঞ্চয়কারীদের সঞ্চয় আত্মসাৎ করেছিল? এর সদুত্তর পাওয়া না গেলেও ব্যাঙ্কের ক্ষতি হওয়ার পিছনে কর্মচারীদের দায়ী করার প্রবণতা সহজে পাওয়া যায়।
দেবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ
সঙ্কীর্ণ
‘বঙ্গবিদ্বেষ’ (সম্পাদকীয় ৭-১০) এক সঙ্কীর্ণ, প্রাদেশিক মনোভাবের পরিচয় বহন করে। লেখা হয়েছে, উত্তরপ্রদেশে দুর্গাপুজো বন্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু অতীতের মতো এ বছরেও সে রাজ্যে পুজো হয়েছে, অবশ্যই অতিমারির কারণে নিয়ন্ত্রিত ভাবে। দুর্গাপুজোয় বাধা দানের সংবাদ এখনও মেলেনি। দীর্ঘ দিন ধরে বহু বাঙালি উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। বারাণসীকে বলা হয় ‘দ্বিতীয় কলকাতা’। স্থানীয় মানুষ বঙ্গবিদ্বেষী হলে বসবাস বা জীবিকা অর্জন সম্ভব হত না, দুর্গাপুজো তো দূরের কথা।
দেশভাগের পরে কয়েক কোটি উদ্বাস্তু বাঙালির একমাত্র আশ্রয় ভারত। অথচ এই বাংলা থেকেই ‘বঙ্গবিদ্বেষ’-এর গুঞ্জন শোনা যায়। এ সব হতাশা, ব্যর্থতার প্রতিফলন ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা প্রায়ই অন্য প্রদেশের বাসিন্দাদের ‘অবাঙালি’ বলে চিহ্নিত করে থাকি। অথচ ভারতে কোথাও বাঙালিকে কি ‘অপঞ্জাবি’ বা ‘নন-তামিল’ বলে আপ্যায়িত করা হয়? শ্রীহনুমানজি ভারতের অসংখ্য মানুষের আরাধ্য দেবতা, স্বাভাবিক ভাবে এর মধ্যে বাঙালিও থাকবেন। প্রতিবেদনে ‘হনুমানভক্ত বাঙালি’— এই শ্লেষাত্মক উল্লেখ অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
শ্রাবণী স্বপন চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা-৩২
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy