‘সংস্কার এবং বিজ্ঞানী’ (এষণা, ১৮-১১) নিবন্ধে পার্থ ঘোষ আক্ষেপ করেছেন, মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলার আশা বিফলে যাচ্ছে। এই আক্ষেপ লেখকের একার নয়। তা সত্ত্বেও এখনও কিছু মানুষ ও সংগঠন জনগণকে বিজ্ঞানমনস্ক করার অতি কঠিন কাজটা সাধ্যমতো করে যাচ্ছেন। লেখকের অভিমত, যাঁর যা বিশ্বাস তা নিয়ে শান্তি পেলে পান, তাঁদের ঘাঁটানোর দরকার নেই। এই যুক্তি মেনে নিলে তো সাপে-কাটা মানুষের উপর ওঝার ঝাড়ফুঁককেও মেনে নিতে হয়, পাছে অ্যান্টিভেনম ইঞ্জেকশন দিতে বললে ওঝার শান্তি বিঘ্নিত হয়। হোমিয়োপ্যাথি নিয়ে প্রখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী অমলকুমার রায়চৌধুরী তাঁর আত্মজিজ্ঞাসা ও অন্যান্য রচনা বইতে লিখছেন, (পৃ ৪১) “হোমিওপ্যাথি যতদূর জানি ঠিক বিজ্ঞানের অনুবর্তী নয়। কোনও বস্তুর তুলনামূলক পরিমাণ কমিয়ে আনলে, তার ক্রিয়াশীলতা বাড়ে বলে হোমিওপ্যাথির যে দাবি, বিজ্ঞান তা সমর্থন করে না। এ হিসেবে হোমিওপ্যাথি ও জ্যোতিষের অবস্থান অনেকটা এক রকম। সম্প্রতি কোনও কোনও মহল থেকে চেষ্টা হয়েছিল জ্যোতিষকে একটি বিজ্ঞানের বিভাগ বলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে প্রতিষ্ঠা করা। আমার মতে তার বিরুদ্ধে বিজ্ঞানী মহল যে দৃঢ় আপত্তি তুলেছিলেন, তা খুবই সঙ্গত হয়েছিল।”
পার্থবাবুর নিবন্ধটিকে অপবিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষকরা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করলে অবাক হব না। নিবন্ধে আবদুস সালামের হোমিয়োপ্যাথি নিয়ে নেচার পত্রিকায় যে লেখাটির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা ৩০ জুন, ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত জে বেনভেনিস্তে ও তাঁর সহযোগীদের গবেষণাপত্র। নেচার-এর সংখ্যাটি শুরু হয়েছে এই ভাবে— “কখন অবিশ্বাস্যকেও বিশ্বাস করবে” (হোয়েন উই বিলিভ দি আনবিলিভেবল) শীর্ষক সম্পাদকীয় দিয়ে। কী বলা হল তাতে? “এ সপ্তাহের সংখ্যায় একটা প্রবন্ধ এমন কিছু পর্যবেক্ষণের বর্ণনা দিচ্ছে, এখনও পর্যন্ত যার কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই। সঙ্গত কারণেই বিচক্ষণ লোকেদের এ মুহূর্তে রায় মুলতুবি রাখা উচিত...।”
বরুণ ভট্টাচার্য, কলকাতা-৩৯
মুক্ত কে?
সংস্কার অথবা অন্ধবিশ্বাস থেকে অনেক বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ, এমনকি বৈজ্ঞানিকরাও মুক্ত থাকতে পারেন না। এর একটা কারণ পরিবেশের প্রভাব। এই প্রসঙ্গে আইনস্টাইন লিখছেন— সাবেক শিক্ষা-যন্ত্র অতি শৈশব থেকে ধর্মকে প্রতিটি শিশুর মধ্যে প্রোথিত করে। তাঁর মধ্যেও এক গভীর ধর্মানুবর্তিতা তৈরি হয়েছিল, যা ১২ বছর বয়সে এসে হঠাৎ শেষ হয়ে যায় (অটোবায়োগ্রাফিক্যাল নোটস)। পার্থবাবু তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে তিন জন বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানীর ব্যক্তিজীবনের ঘটনার কথা উল্লেখ করেছেন, যা যুক্তি হিসেবে খুবই দুর্বল বলে মনে হয়। বৈজ্ঞানিক মুক্তমনা না-ও হতে পারেন। অধ্যাপক অমল রায়চৌধুরী ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট ফর কাল্টিভেশন অব সায়েন্স-এ কর্মরত থাকতেই তাঁর ‘রায়চৌধুরী ইকোয়েশন’ মেঘনাদ সাহাকে দেখিয়েছিলেন। মেঘনাদ সাহা তাঁকে পরামর্শ দেন, সময় নষ্ট না করে মেটিরিয়াল সায়েন্স নিয়ে কাজ করতে। সত্যেন বসুও গুরুত্ব দেননি। পরবর্তী কালে তা ফিজ়িক্যাল রিভিউ-তে প্রকাশিত হয় এবং বিখ্যাত হয়।
তবে একটি বিষয়ে আমি তাঁর সঙ্গে একমত। আজন্মলালিত বিশ্বাস নিয়ে বৃদ্ধ বয়সে যিনি পুজোআচ্চা করেন, বিজ্ঞানের যুক্তি দেখিয়ে তাঁর শান্তি নষ্ট করে কী লাভ? বিজ্ঞানমনস্ক হওয়া মানে যুক্তি দিয়ে বিচার না করে কোনও কিছু মেনে না নেওয়া। তাই প্রকৃত অর্থে কেউ বিজ্ঞানমনস্ক হলে তিনি ধর্ম, ঈশ্বর ইত্যাদিতে বিশ্বাস করতে পারেন না। আবার তাঁর অবোধ্য কিছু দেখলেই তাকে উড়িয়ে না দিয়ে অপেক্ষায় থাকা উচিত সেই দিনের, যখন বিজ্ঞান তার কার্য-কারণ সম্পর্কে জানাতে পারবে মানুষকে।
অনিলেশ গোস্বামী, শ্রীরামপুর, হুগলি
পরিহাস নয়
2 খুব কম মানুষ আছেন, যাঁরা পুরোপুরি কুসংস্কারমুক্ত। আবার খুব কম মানুষ আছেন, যিনি সম্পূর্ণ সংস্কারাচ্ছন্ন। এ ব্যাপারে কাউকেই বিদ্রুপ করা যায় না। এটাই মানব চরিত্র। আমার জানাশোনা অনেক চিকিৎসক পুজো না করে কাজে হাত দেন না। তা বলে কি তাঁরা বিজ্ঞানমনস্ক নন? বিজ্ঞানে আস্থা রাখলেও শেষে কোথাও যেন মানুষ ঈশ্বরের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এ ব্যাপারে পরিহাস করা উচিত নয়।
পঙ্কজ সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি
বিজ্ঞানই পারে
‘সংস্কার এবং বিজ্ঞানী’ নিবন্ধে লেখক বিজ্ঞানমনস্কতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সমাজে প্রচলিত অনেক অন্ধবিশ্বাস এবং কার্য-কারণহীন আচরণকে তিনি নস্যাৎ না করে সহানুভূতির দৃষ্টিতে দেখতে চেয়েছেন। এই পর্যন্ত ঠিক আছে। এতে বৈজ্ঞানিক কর্মকাণ্ড এবং বিজ্ঞানমনস্কতাকে খাটো করা হয় না। কিন্তু তিনি এ-ও বলেছেন, বিজ্ঞান মানুষের মননশীলতা এবং যুক্তিহীন কর্মকাণ্ডে পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ।
ব্যাপারটি ঠিক উল্টো। বিজ্ঞানই একমাত্র বিষয়, যা মানুষের মননশীলতায় ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছে। মানুষের চিন্তায় নৈতিকতা এবং যুক্তিগ্রাহ্যতা এনেছে, তার কর্মকাণ্ডকে পরিশীলিত করেছে। বিজ্ঞান পরীক্ষাগারে প্রমাণ করল, অধিকাংশ রোগ জলবাহিত। এখন মানুষ পরিস্রুত পানীয় জল বিষয়ে সচেতন। তার ব্যবহারে এই বৈজ্ঞানিক ধারণারই প্রতিফলন।
তবে মানুষের মন পরিচালিত হয় অশিক্ষা এবং অপরাধপ্রবণতা দিয়েও। তার জন্য বিজ্ঞান দায়ী হতে পারে না। যে ঘটনা দু’টি বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা হিসেবে লেখক উল্লেখ করেছেন, বিশেষ করে আবদুস সালামের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রসঙ্গে, সেই রকম অহরহ ঘটত অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের পূর্বে। মারণ রোগের বিপন্নতা মানুষ অতিক্রম করেছে একমাত্র বিজ্ঞান গবেষণার ফলে। বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা এবং অনিশ্চয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অন্ধবিশ্বাসকে প্রশ্রয় দেওয়া যুক্তিগ্রাহ্য হতে পারে না।
অশেষ দাস, কলকাতা-১১০
বিসর্জন
‘নীরবে দূষিত হচ্ছে ঝিল...’ এবং ‘তোলা হয়নি কাঠামো, দিঘিতে মৃত বহু লক্ষ টাকার মাছ’ (১৯-১১) প্রসঙ্গে বলতে চাই, দূষণ হচ্ছে জেনেও আমরা প্রতিমা বিসর্জন দিই স্থানীয় জলাশয়ে। ওটাই প্রথা! দেবদেবীর পুজোয় আমরা বিজ্ঞানের সাহায্য নিই, যেমন প্রদীপ-মোমবাতির জায়গায় ব্যবহার করি বাহারি বৈদ্যুতিক আলো, প্রাকৃতিক ফুলের বদলে প্লাস্টিকের ফুল, মাটির বদলে প্লাস্টিকের অলঙ্কার। কিন্তু বিসর্জনের বেলায় বহু পিছিয়ে আছি।
কিছু পুজো কমিটি পরিবেশ-বান্ধব বিসর্জনের ব্যবস্থা করলেও তারা সংখ্যায় নগণ্য। আমরা ভেবে দেখি না, পুজোর যে ধর্মীয় বিধান রয়েছে, সে শাস্ত্র গঠিত হয়েছে বহু শতাব্দী পূর্বে। তখনকার শাস্ত্রকাররা ভেবে দেখেননি, ভবিষ্যতে পুজোর উপকরণ হিসেবে দূষণকারী কৃত্রিম দ্রব্যের বহুল ব্যবহার ঘটবে। তা হলে নিশ্চয়ই তাঁরা বিসর্জনের জন্য অন্য বিধান দিয়ে যেতেন।
সুশীলকুমার বর্মন, উত্তর জগাছা, হাওড়া
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy