গৌতম চক্রবর্তীর ‘সাধনা ও পাণ্ডিত্য’ নিবন্ধে (১৫-১১) কিছু সংযোজন করতে চাই। গোপীনাথ কবিরাজের জীবনের প্রথম পনেরো বছর কেটেছে কাঁঠালিয়া (টাঙ্গাইল মহকুমা) ও ধামরাই গ্রামে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠে তাঁর সংস্কৃত পাঠ গ্রহণ শুরু হয়। সংস্কৃত শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় পাণিনির প্রতি আকৃষ্ট হন। পিতা বৈকুণ্ঠনাথের গ্রন্থসংগ্রহ থেকে পান তারানাথ তর্কবাচস্পতির সরল টীকাযুক্ত সিদ্ধান্ত কৌমুদী, লঘুকৌমুদী ও রমানাথ সরস্বতীকৃত ছাত্রবোধ ব্যাকরণ। এতে পাণিনির সূত্র ও সূত্রের ব্যাখ্যা ছিল। এ সব তিনি পড়েন। পিতার সহপাঠী ও ঢাকা কলেজের সংস্কৃতের প্রধান অধ্যাপক বিধুভূষণ গোস্বামীর কাছে সিদ্ধান্ত কৌমুদী-র পাঠ নেন। ১৯০৫ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে এন্ট্রান্স পাশ করেন। বার বার ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হওয়ায় তিনি স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন।
১৯০৬ সালের জুলাই মাসে কলকাতায় আসেন কলেজে পড়বেন বলে। কিন্তু ভিড়, কোলাহল, অতিরিক্ত খরচ এবং ম্যালেরিয়ার ভয়ে তিনি কলকাতায় পড়াশোনা করেননি। গ্রামে থাকতে ধর্মানন্দ ভারতীর লেখা বান্ধব কাগজে জয়পুরের উপরে একটা লেখা পড়েছিলেন, এ ছাড়া টডের রাজস্থান পড়ে রাজপুতানার উপরে তাঁর এক আকর্ষণ জন্মেছিল। গোপীনাথ রাজস্থানে যান ও জয়পুর স্টেটের প্রধানমন্ত্রী সংসারচন্দ্র সেনের দুই নাতি ক্ষিতীন্দ্র ও অভয়পদের গৃহশিক্ষকরূপে তাঁর বাড়িতে থাকার সুযোগ পান। পাশ করে ১৯১০ সালে কাশীতে কুইন্স কলেজে এম এ পড়ার জন্য এলেন ঠিকই, কিন্তু কোন বিষয়ে পড়বেন, মন স্থির করতে পারেননি। জয়পুরে বই ঘেঁটে প্রত্নতত্ত্বের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন, ইংরেজি সাহিত্যের প্রতি টান ছিল, আর স্কুলের হেডপণ্ডিতের শিক্ষার জন্য দর্শনেও আগ্রহ ছিল। শেষ পর্যন্ত কলেজের অধ্যাপক ভেনিস তাঁকে সংস্কৃত নিয়ে পড়তে বলেন। ১৯১৩ সালে ইলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে প্রথম হন তিনি।
স্বপনকুমার ব্রহ্ম
কলকাতা-৭৫
জ্যোতিষ্ক
গোপীনাথ কবিরাজের লেখা সাধুদর্শন ও সৎপ্রসঙ্গ, জ্ঞানগঞ্জ, শ্রীকৃষ্ণ, বিশুদ্ধানন্দ প্রসঙ্গ, স্বসংবেদন, সূর্যবিজ্ঞান, কাশীর সারস্বত সাধনা (প্রাচী) আজও পাওয়া যায়। তাঁর গুরু বিশুদ্ধানন্দ পরমহংস মহারাজের জীবন ও সাধনা নিয়ে লেখা বিশুদ্ধানন্দ প্রসঙ্গ এক অসামান্য বই। তাঁর ভারতীয় সাধনা ধারা (সংস্কৃত কলেজ প্রকাশিত) বইতে পাওয়া যায় তাঁর চিন্তার গভীরতা ও বিস্তার। ভারতীয় দর্শনের মূল সুরটিকে তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর এই গ্রন্থে। ইংরেজ কবি বায়রন ও ব্রাউনিংকে নিয়ে লিখেছিলেন সাহিত্যচিন্তা। বইটিতে রবীন্দ্রনাথের বলাকা নিয়েও গভীর আলোচনা করেছেন। এই বইটি বিষয়ে দার্শনিক কালিদাস ভট্টাচার্য বলছেন “সাহিত্যচিন্তা গ্রন্থের প্রবন্ধগুলিতে সৌন্দর্য ও প্রেমজগৎ সম্বন্ধে তাঁর এই সমন্বয়বাদ তিনি অপূর্ব ভাষায় সুনিপুণ পদ্ধতিতে বিস্তার করেছেন।” গোপীনাথ কবিরাজ তান্ত্রিক সাধনা ও সিদ্ধান্ত বইয়ের দুই খণ্ডে দেখিয়েছেন, এই বাংলায় শক্তি সাধনা ও তন্ত্রের ধারা আজও অব্যাহত।
১৬ জুন ১৯৪৯ সালে লেখা এক চিঠিতে (পত্রাবলী ১ম খণ্ড, পৃ ১৯৯) গোপীনাথজি বলছেন, “কালের প্রভাবে লোকের চিত্ত বহির্মুখী হইলেও অন্তর্জগতে চুম্বকের সন্ধান দিতে পারলে উহাকে অন্তর্মুখ করিতে বেশী দিন লাগে না ... তবে চাই সম্মুখে মহান লক্ষ্য স্থাপন এবং উহাকে সর্বত্র প্রকাশিত করিবার অক্লান্ত উদ্যম।”সেই চেষ্টাই তিনি আজীবন করেছেন।
শৈবাল মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-২৬
অন্য সাধনা
অধ্যাপক ভেনিস ছাড়াও গোপীনাথ কবিরাজের আর এক শিক্ষাগুরু ছিলেন সুবিশাল আর্যশাস্ত্র প্রদীপ গ্রন্থের রচয়িতা শশীভূষণ সান্যাল (শিবরামকিঙ্কর যোগত্রয়ানন্দ)। তাঁর সম্বন্ধে গোপীনাথের উচ্ছ্বসিত উক্তি, ‘‘বুদ্ধিসংক্রান্ত জ্ঞানের বিকাশের ক্ষেত্রে তাঁহার সাহায্য অতুলনীয়। বুদ্ধির অতীত অধ্যাত্মক্ষেত্রে তাঁহার অবদান আমি নতশিরে স্বীকার করিতে বাধ্য।’’
১৯৭৮ সালে গোপীনাথের জীবন ও দর্শনের উপর রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচারে তিন দিনের একটি সেমিনার হয়েছিল। সেটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পুস্তক হিসেবে প্রকাশিত হয়। সাধক গোপীনাথের অভিনব সাধনা ছিল— ব্যক্তিগত ঈশ্বরপ্রাপ্তি নয়, ‘অখণ্ড মহাযোগ’-এর মাধ্যমে এই মর্তভূমির সার্বিক দিব্য রূপান্তর। আর এক বাঙালিও এই পথের দিশারি— শ্রীঅরবিন্দ। যিনি সাবিত্রী গ্রন্থে এর রূপরেখা এঁকে গিয়েছেন। এঁরা অবশ্য বাঙালির সুদীপ্ত পরিমণ্ডলে ব্রাত্য।
অমিত ঘোষ
পান্ডুয়া, হুগলি
রোজ দশটা
আজকের কাশীতে সম্পূর্ণানন্দ সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয় নামে যে প্রতিষ্ঠান সর্বত্র পরিচিত, সেটি ছিল বারাণসীর সংস্কৃত কলেজ। গোপীনাথ কবিরাজ এখানকার স্নাতকোত্তরের ছাত্র হিসেবে প্রতি দিন লাইব্রেরি থেকে দশটা বই নিয়ে যেতেন, এবং পর দিন এসে সেগুলো ফেরত দিতেন। এক দিন লাইব্রেরিয়ান জানতে চাইলেন, তিনি কি মশকরা করতে বই নিয়ে যান? গোপীনাথ জানিয়েছিলেন, তিনি বইগুলো অধ্যয়ন শেষেই ফেরত দেন। লাইব্রেরিয়ান চাইলে দশটা বইয়ের যে কোনও পাতা থেকে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দেবেন। সত্যতা যাচাইয়ে সে দিন লাইব্রেরিয়ান ফেরত-দেওয়া বইগুলোর মধ্যে থেকে গোপীনাথকে কিছু প্রশ্ন করেছিলেন। যথাযথ উত্তরও পেয়েছিলেন।
পরেশনাথ কর্মকার
রানাঘাট, নদিয়া
রসের দিন
কুয়াশার চাদরে মোড়া শীত এলেই মনে হয় খেজুর রস খাওয়ার কথা। প্রাকৃতিক এই রসের গুণ প্রচুর। শহরে এ রস বিরল, গ্রামাঞ্চলেও আজকাল সহজে দেখা মেলে না। কয়েক দশক আগে পর্যন্ত গ্রামে এবং শহরে শীতের সকালে কাঁধে বাঁক নিয়ে কলসি-ভর্তি খেজুর রস বিক্রি করতে আসতেন অনেকেই। বনভূমির উপর কোপ পড়ায় খেজুর গাছের সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। সাধারণত আশ্বিন মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে শুরু করে বৈশাখ মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এই রস সংগ্রহ করা হয়। ঠান্ডা আবহাওয়া, মেঘলা আকাশ ও কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল পর্যাপ্ত রসের জন্য উপযোগী। এই সময়ে রসের স্বাদও ভাল হয়। তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রসের পরিমাণ ও গুণমান কমতে থাকে।
খেজুরের রসে গ্লুকোজ় রয়েছে, তাই একে প্রাকৃতিক ‘এনার্জি ড্রিঙ্ক’ বলা যেতে পারে। খেজুর রস কাঁচা খাওয়া যায়, আবার জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করেও খাওয়া যায়। গুড়ে আয়রন বেশি থাকে, যা হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে। খেজুরের রস প্রচুর খনিজ ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। তবে যাঁদের ডায়াবিটিস আছে, তাঁদের খেজুর রস না খাওয়াই ভাল।
খেজুরের রস ভোরবেলায় খাওয়া ভাল। সারা রাত ধরে রস জমে থাকার পর সকালেই রস খেলে উপকার পাওয়া যায়। তবে সময় যত গড়াতে থাকে, খেজুর রসে ‘ফার্মেন্টেশন’ হতে থাকে। এর ফলে রসের স্বাদ নষ্ট হয় এবং অম্লতা বাড়ে। অন্ধকারে এই প্রক্রিয়া কম হয়, দিনের আলোতে বেশি হয়। তাই সকালবেলা খালি পেটে এক থেকে দুই গ্লাস রস খাওয়া যেতে পারে। বেলা বাড়ার পরে এই রস খেলে বমি-সহ পেটের নানা সমস্যা হতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে, খেজুর রসে যেন কোনও পোকামাকড় মুখ না দেয়। বাদুড় বা পাখির মুখ-দেওয়া রস খেলে রোগ হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, খেজুর রস যে হেতু গাছের উপরের দিকের কাণ্ডের বাকল কেটে মাটির হাঁড়িতে খোলা অবস্থায় সংগ্রহ করা হয়, তাই জীবাণুমুক্ত করতে রস হালকা আঁচে ফুটিয়ে খাওয়া ভাল।
নরসিংহ দাস
রবীন্দ্রনগর, মেদিনীপুর শহর
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy