বাংলা শিল্পসাহিত্যে কোনও দিনই মহামারি বা অতিমারিকে খুব একটা স্থান দেওয়া হয়নি। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যজীবনে ভারতে মহামারির সংখ্যা কম নয়। কলেরার মহামারি হয়েছিল দু’বার: ১৮৮১-১৮৯৬ আর ১৮৯৯-১৯২৩। ১৮৯১ সালের কুম্ভ মেলায় প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার লোকের মৃত্যু হয়েছিল কলেরায়। ১৯০৫ থেকে ১৯০৮-এর মধ্যে ভারতে কলেরায় প্রায় পাঁচ লাখ লোকের মৃত্যু হয়েছিল প্রতি বছর। তৃতীয় প্লেগ অতিমারি শুরু হয়েছিল ১৮৯৬ সালে। ১৯২০ সালের মধ্যে ভারতে প্রায় এক কোটি লোকের মৃত্যু হয়েছিল এই প্লেগ মহামারিতে। কলকাতায় স্মলপক্সের মহামারি হয়েছিল ১৮৭৪-৭৫ এবং ১৮৯৪-৯৫ সালে। এ ছাড়া তো ছিলই ম্যালেরিয়া এবং টিবি। কিন্তু রবীন্দ্রসাহিত্যে তৎকালীন এই সব মহামারির বিবরণ প্রায় নেই বললেই চলে। সেই ‘চতুরঙ্গ’ উপন্যাসে প্লেগ, তাও সামান্য কয়েক লাইন।
সেই সময়ের অন্যান্য সাহিত্যিকের লেখাতেও মহামারি সে রকম প্রভাব ফেলেনি। কখনও উল্লেখ থাকলেও, সেটা কাহিনির ক্ষেত্রে গৌণ। যেমন শরৎচন্দ্রের ‘শেষ প্রশ্ন’ উপন্যাসে ইনফ্লুয়েঞ্জার উল্লেখ বা শ্রীকান্তের দ্বিতীয় ভাগে রেঙ্গুনে প্লেগ মহামারির উল্লেখ। বনফুল নিজে চিকিৎসক হওয়া সত্ত্বেও তাঁর উপন্যাসেও সে ভাবে মহামারির উল্লেখ নেই, ‘জঙ্গম’ উপন্যাসের শেষাংশে এক গ্রামে কলেরার উল্লেখ ছাড়া।
কিন্তু এই অনুল্লেখ সত্যিই বিস্ময়ের। সেই সময়ে বিশ্বযুদ্ধে যত মৃত্যু হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি লোক মারা গিয়েছিলেন মহামারিতে। আর বিশ্বযুদ্ধ হয়েছিল ৫০০০ মাইল দূরে। কলেরায় মৃত্যু হয়েছিল ঘরের সামনে, বা ঘরের মধ্যেই। তাও বাংলা সাহিত্যে বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে যত আলোচনা, মহামারি নিয়ে তার এক শতাংশও নেই।
এবং এখনও সেই ধারা সমানে চলছে। ১৯৭৪-৭৫ সালে কলকাতা এবং পশ্চিমবঙ্গে এক ভয়াবহ স্মলপক্সের মহামারি হয়। হাজারে হাজারে লোকের মৃত্যু হয়। সারা পৃথিবী থেকে বিশেষজ্ঞরা ছুটে আসেন। কিন্তু সত্তরের বাংলা উপন্যাস বা সিনেমায় সেই প্রতিফলন কোথায়? নেই বললেই চলে।
আর ১৯৮০ সালে পৃথিবীতে শুরু হয় এইচআইভি মহামারি। তখনও তার প্রভাব বঙ্গসাহিত্যে নেই। এই মহামারি শুরু হওয়ার পর সত্যজিৎ রায় প্রায় ১২ বছর বেঁচে ছিলেন। ‘গণশত্রু’র মতো সিনেমা বানিয়েছেন। অনেক আন্তর্জাতিক ঘটনা নিয়ে লিখেছেন। কিন্তু এইচআইভি-র মতো, সভ্যতার ধারা পাল্টে দেওয়া মহামারি নিয়ে নীরব।
অসুখ বা চিকিৎসাবিজ্ঞান কোনও দিনই বাংলার সাহিত্যিকদের কাছে অগ্রাধিকার পায়নি। আমি কয়েকটা উদাহরণ মাত্র দিলাম।
রুদ্রজিৎ পাল
কলকাতা-৩৯
ভেদাভেদ নেই
আমি হাওড়া জেলার সাঁতরাগাছির সুলতানপুর নামে একটি গ্রামের বাসিন্দা। আমাদের এই অঞ্চলে পঞ্চাশ শতাংশ মানুষ মুসলিম, বাকি পঞ্চাশ শতাংশ হিন্দু ও (কয়েক জন) খ্রিস্টান। আমার ৪৪ বছর বয়সের ৩৫ বছর এখানেই কাটিয়েছি। কোনও দিন কোনও সম্প্রদায়গত মারপিট বা ঝগড়াঝাঁটি এই অঞ্চলে আমরা দেখিনি। অতিমারির এই সময়ে সম্প্রদায় নির্বিশেষে অঞ্চলের বহু মানুষ ও সংস্থা এগিয়ে এসেছেন সাধ্যমতো সাহায্য নিয়ে। সেই ত্রাণ দুই সম্প্রদায়ের মানুষ একই লাইনে দাঁড়িয়ে গ্রহণ করছেন। হঠাৎ মুরগির মাংসের দোকান দিয়েছেন দুই বন্ধু। এক জনের নাম রনিত, অন্য জনের নাম মফিজুল। আমাদের নিকটস্থ গির্জা থেকে যেমন খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে, তেমন মসজিদ কমিটি থেকে ১০০ পরিবারকে সাপ্তাহিক খাদ্যসামগ্রী ও অর্থসাহায্য দেওয়া হচ্ছে। সেই সাহায্যপ্রাপক পরিবারের মধ্যে ৩০-৩৫টি হিন্দু পরিবার। এই ভারতে, যেখানে বিজয়ী দলের নেতা নিদান হাঁকেন, অন্য সম্প্রদায়ের কাছ থেকে খাদ্যদ্রব্য না কেনার; আড্ডায়, ফোনে ধ্বনিভোটের সমর্থনও পেয়ে যায় সেই বর্বর মানসিকতা, সেখানে সাধারণ মানুষের মানসিকতার এই উত্তরণের গল্পও উল্লেখ্য বলেই মনে হল।
শোভন সেন
সাঁতরাগাছি, হাওড়া
পুষ্পে দোষ কী
‘পুষ্প হইতে সাবধান’ (৫-৫) শীর্ষক সম্পাদকীয় পড়ে এই চিঠি। করোনা-যুদ্ধের সামনের সারিতে আছেন চিকিৎসক ও নার্স। এঁদের সম্মান জানাতে সেনাবাহিনী হেলিকপ্টার থেকে চিকিৎসাকেন্দ্রের উপর পুষ্পবৃষ্টি করেছেন। আপনারা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘সেনাবাহিনী করোনা- যোদ্ধাদের শুভেচ্ছা জানাইবে কেন?’’ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তাঁর অপরাধ, তিনি প্রতিরক্ষাবাহিনীর সৌজন্য প্রকাশের প্রশংসা করেছেন। কিন্তু দেশের বীর সেনারা বা দেশের প্রধানমন্ত্রী তো চোর-ডাকাতদের উদ্দেশে পুষ্পবৃষ্টি করেননি, বা সেই কাজের প্রশংসা করেননি। কাউকে সম্মান জানাতে, শুভেচ্ছা জানাতে, প্রশংসা করার ক্ষেত্রে এক্তিয়ারের প্রশ্ন উঠবে কেন?
সত্যকিঙ্কর প্রতিহার
যমুনা দেশড়া, বাঁকুড়া
বহু দিন আগে
বিশাখাপত্তনমে গ্যাস দুর্ঘটনায় আহত ও মৃতদের জন্য সকলের সঙ্গে আমিও দুঃখিত। ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের অনেক সাহায্য করা হয়েছে। গোধরা দাঙ্গায় মানুষদের হয়ে বাংলার মানুষ অনেক কথা বলেছে। ইদানীং কিছু ক্ষেত্রে মদ খেয়ে মানুষ মারা গেলেও, পরিবারকে সরকারি সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। আশ্চর্য, আজ থেকে ৫০ বছরের আগে লেকটাউনে বরাট কলোনিতে সরষের তেল খেয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষদের কথা কেউ কখনও ভাবেনি। ১৯৭২ থেকে আজ পর্যন্ত কত সরকার এল আর গেল। কিন্তু তাঁদের কথা কেউ ভাবল না। না কোনও রাজনৈতিক দল, না কোনও বেসরকারি সংস্থা।
তদানীন্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অজিত পাঁজার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। যশোর রোড অবরোধ হয়েছিল। কলকাতার সব কাগজে ছবি সহ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। প্রতিবন্ধীদের অধিকার রক্ষার জন্য গড়ে ওঠা সংস্থাকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। সংবাদপত্রেও চিঠি দিয়েছিলাম, তা প্রকাশিতও হয়েছিল। কোনও সাড়া মেলেনি।
আমাদের কোনও রাজনৈতিক সংগঠন নেই। মোট ১০০০ থেকে ১২০০ মানুষ, জীবন আর জীবিকার তাগিদে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছি। আজও আমরা ছ’সাত জন অন্তত বেঁচে আছি (বেশিও হতে পারে)। কিন্তু কেমন আছি?
চতুর্ভুজ দাস
রঘুদেববাটি, হাওড়া
চিনাদের অবস্থা
মহা মহা তারকা থেকে প্রাক্তন ছোট তারকা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট থেকে রাওয়ালপিন্ডি এক্সপ্রেস। সবার মুখেই এক রা। করোনার জন্য দায়ী চিন। ওরা রসায়নাগারে এই ভাইরাস তৈরি করেছে, সারা পৃথিবীতে তা ছড়িয়ে দিয়েছে। ওদের খাদ্যাভ্যাস থেকে (বাদুড়) এই ভাইরাস এসেছে, ইত্যাদি। কোনও স্বীকৃত সংস্থা, গবেষক, বিজ্ঞানী, বা গোয়েন্দা এ বিষয়ে নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ এখনও দিতে পারেননি। অথচ পৃথিবীর মানুষ এখন চিনাদের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত। সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা চিনারা ভীষণ বিপন্ন এখন। মানবাধিকার হরণকারী এক যজ্ঞ চলছে। হেনস্থা, টিটকিরি থেকে শুরু করে লাঞ্ছনা, বয়কট, সবই জুটছে অন্য দেশে থাকা চিনাদের ভাগ্যে। ভীতসন্ত্রস্ত একঘরে হয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁদের। আশ্চর্য হলেও সত্যি, উদার, শিক্ষিত পাশ্চাত্য পৃথিবীও এই যজ্ঞে রীতিমতো অংশীদার। উদগ্র মানুষরা এক বার ভেবে দেখলেন না, নিরীহ সাধারণ চিনাদের এই মারণ রোগের সঙ্গে কোনও লেনাদেনা থাকতে পারে না। মানবসভ্যতার এক কলঙ্কময় অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে আমরা চলেছি। পৃথিবীর সমস্ত শিক্ষিত, উদার, মানবতাবাদী মানুষের হাতেই এখন চিনাদের রক্ষা করার চাবিকাঠি।
স্বপন কুমার ঘোষ
কলকাতা-৩৪
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy