‘রাম ও রহিমের ইতিহাস’ (২১-৯) মুছে ফেলা যাবে না, এ কথা সীমান্ত গুহঠাকুরতা সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক ইতিহাস থেকে মোগল যুগের ইতিবাচক দিকগুলি সযত্নে মুছে দিয়েছে। ওই যুগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শাসক, যাঁকে বাদ দিলে মোগল ইতিহাসই অসম্পূর্ণ, সেই আকবরের নাম পর্যন্ত নতুন ইতিহাসে উচ্চারিত হয়নি। বাবরকে রেখেছে শুধু বহিরাগত এবং আক্রমণকারী হিসাবে দেখানোর জন্য। আর ঔরঙ্গজেবকে রেখেছে শিবাজির সঙ্গে তাঁর সংঘর্ষ এবং শিবাজির মহিমা প্রচারের উদ্দেশ্যে। শিবাজি যে আদর্শ রাজা, এটা দেখানোর জন্য। অথচ, শিবাজির সুরাত লুণ্ঠনের মর্মান্তিক কাহিনি যাঁরা পড়েছেন, তাঁরা শিউরে ওঠেন। সেই তিন দিনে লুটপাট, ঘরে আগুন দেওয়াই শুধু নয়, হাজার হাজার মানুষের হাত, মাথা কেটে দেওয়া, নারীদের উপর চরম নির্যাতন ইত্যাদির কথা সমসাময়িক লেখা থেকে পাওয়া যায়।
হিন্দু-মুসলমানের মিলিত সাধনাই যে মধ্যযুগের ইতিহাস, সেটা জাতীয় শিক্ষানীতিতে (২০২০) নস্যাৎ করার চেষ্টা হয়েছে। আকবরের ‘দিন-ই-ইলাহি’ ধর্মের কথা কে না জানে। তখনকার স্থাপত্য, ভাস্কর্য, চিত্রকলা ইত্যাদি যে হিন্দু-মুসলমানের মিলিত চেষ্টা এবং শ্রমের ফল, তা আবুল ফজলের লেখাতে পাওয়া যায়। লেখক যে রহিমের কথা বলেছেন, সেই আব্দুর রহিম, যিনি আকবরের মন্ত্রী ও সেনাপতি, তিনি শ্রীকৃষ্ণের ‘মদনাষ্টক’ মন্ত্রের স্রষ্টা। পরাগল খাঁ নিজে মুসলমান ছিলেন। তা সত্ত্বেও তিনি মালাধর বসুকে দিয়ে বাংলায় মহাভারত লিখিয়েছিলেন। এ ধরনের বহু ঘটনা আছে। শিক্ষানীতিতে মোগল সম্রাটদের বহিরাগত আক্রমণকারী হিসাবে দেখানো হল। অথচ রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “মুসলমানরা পুরুষানুক্রমে জন্মিয়া ও মরিয়া এদেশের মাটিকে আপন করিয়া লইল। মুসলমান রাজত্ব ভারতবর্ষেই প্রতিষ্ঠিত ছিল, বাইরে তার মূল ছিল না। তাই মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায় পরস্পর জড়িত হইয়াছিল এবং পরস্পরের আদান-প্রদানের সহস্র পথ ছিল।” জাতীয় শিক্ষানীতি রবীন্দ্র-ভাবনার বিরোধী। তাই হয়তো উত্তরপ্রদেশের পাঠ্যক্রম থেকে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
ঋষভ কবিরাজ, কল্যাণী, নদিয়া
এক শিকড়
‘রাম ও রহিমের ইতিহাস’ শীর্ষক প্রবন্ধে সীমান্ত গুহঠাকুরতা যথার্থ লিখেছেন, “সনাতন ভারতীয় সংস্কৃতি সেটাই যেখানে বহু ধর্মের ও সংস্কৃতির অজস্র ধারা এসে মিশে তৈরি করেছে একটি সভ্যতা।” বস্তুত বহু শতাব্দী ধরে ভারতীয় সাহিত্য বহু ধর্মের কবি ও লেখকদের রচনায় সমৃদ্ধ হয়েছে। সেখানে ইসলাম ধর্মাবলম্বী কবি, সাহিত্যিকদের অবদানও অনস্বীকার্য। কবীর, রহিম প্রমুখ মুসলিম কবির নাম উল্লেখ করেছেন লেখক, যাঁরা ইসলাম ধর্মাবলম্বী হলেও হিন্দুধর্মের পৌরাণিক দেবদেবীদের কথা, হিন্দুধর্মের সনাতন ঐতিহ্যের কথা তাঁদের কবিতায় তুলে ধরতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেননি। এই সব মরমি কবি বিখ্যাত হয়ে আছেন তাঁদের মানবতাবোধের জন্য, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানুষে মানুষে সাম্য, মৈত্রী, ও ভালবাসার বন্ধন গড়ে তোলার জন্য। কে কোন ধর্মের, সেটা কখনও তাঁদের কাছে বিবেচ্য হয়ে ওঠেনি। কবি নজরুলের কথা কি আমরা ভুলে গেলাম! তিনি যে শুধু তাঁর বিভিন্ন কবিতায় সাম্যের কথা, মৈত্রীর কথা, ঐক্যের কথা তুলে ধরেছেন, তা-ই নয়, লিখেছেন অসংখ্য শ্যামাসঙ্গীতও। আমাদের দেশ যখন মুসলিম শাসনাধীন, তখনও অনেক মুসলিম কবির কণ্ঠে উঠে এসেছে সাম্য ও মৈত্রীর কথা।
অথচ আশ্চর্য এই, বর্তমান কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের উদ্যোগে নতুন করে ইতিহাসের যে পাঠ্যবই রচিত হতে চলেছে, সেখানে ইসলাম ধর্মাবলম্বী কবিদের সাহিত্যকীর্তিকে অস্বীকার করে, তাঁদের সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে, মোগলদের শুধুমাত্র অত্যাচারী ও আক্রমণকারী হিসাবেই চিহ্নিত করার প্রয়াস চালানো
হচ্ছে, যা শুধু নিন্দনীয়ই নয়, ধিক্কারযোগ্যও বটে।
সমীর কুমার ঘোষ, কলকাতা-৬৫
প্রতিবেশী
সীমান্ত গুহঠাকুরতার প্রবন্ধ প্রসঙ্গে বলতে চাই, সে যুগে আর্যরা দ্রাবিড় সংস্কৃতির মানুষকে ‘রাক্ষস’, ‘দানব’, ‘অসুর’— কত না অভিধা দিয়েছে। ধীরে ধীরে তারা সবাই একই দেশের জনজীবন গঠন করে। সেই ভেদ ক্রমশ মুছে যেতে থাকে। পরে আবার অনেক ধর্ম বিভাজিত হয়ে চলতে থাকে, ভিন্ন সংস্কৃতির প্রবাহ চলতে থাকে পাশাপাশি। ইসলাম ধর্মের সুফি, সহজিয়া, আউল, বাউল, মারফতি, পির, দরবেশ, নানা ওঠাপড়ার মধ্যে দিয়ে চলে আসছে এত দিন। আকবর-মান সিংহ-তুলসীদাস-কবীর-মীরাবাই-রূপমতীরা আজ ইতিহাস, তবু তাঁদের কাছে শিক্ষণীয় আছে অনেক কিছু। জনসংস্কৃতির অংশ হিসাবে এক সময়ে চালু ছিল শিবলিঙ্গের সামনে ইসলামধর্মী মানুষদের আগরবাতি জ্বালানোর প্রথা। লোকমুখে চালু ছিল, মক্কায় বাঁধা আছেন শিব। হিন্দু বাড়িতে অনেক নারকেল গাছ লাগানো ছিল জমিতে। মানত ছিল, ফল রক্ষা করলে ডাবের পানি রাখা হবে বছরে দু’বার পিরের দরগায়। গ্রামের শেষ সীমানায় একমাত্র নলকূপে ভূতের উপদ্রব। জল আনতে যাওয়া মেয়েদের রক্ষা করলে ডিম-বাতাসা মানসিক ‘বরকন’ সাহেবের কাছে। বুড়ো ঘোড়া নিয়ে ফকির সাহেব ‘মুশকিল আসান করে বাবা মানিক পির’ বলে গেয়ে বেড়াতেন পাড়ায় পাড়ায়। খয়রাত করলে মাথায় চামর বুলিয়ে দোয়া দিতেন। কাওয়ালি শুনতে যেতেন হিন্দু পাড়ার মাস্টার, দলবল সঙ্গে নিয়ে। একটা সময় পর্যন্ত মনসা শীতলার থানে জল ঢালতে আসতেন মুসলিম মহিলারাও। ফুরফুরা শরিফে পিরজাদার দোয়া মাগতে যান বাংলার সব দলের নেতারা। এখনও বেশ কিছু স্কুলে সরস্বতী পুজোয় মুখ্য ভূমিকায় থাকে মুসলিম ছাত্রছাত্রীরা। আজকের দিনে তো নানা মোগলাই খানা, লাচ্চা, সিমুই, ফিরনি, বিরিয়ানির পরম সমাদর ঘরে ঘরে। তারাশঙ্করের এক গল্পে প্রান্তবাসী এক ইসলামি মহিলাকে সিঁদুর পরতে দেখা যায়।
সমন্বয়ের গতি ব্যাহত হল দেশভাগ, শাহবানু মামলা, বাবরি মসজিদ ধ্বংস, সংসদে জঙ্গি হানা, গুজরাত দাঙ্গা প্রভৃতি অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য। বেশ কিছু মানুষ নিরাপত্তার অভাব বোধ করতে শুরু করলেন। উস্কানি দিল ভুল রাজনীতি। দেশবাসীর মধ্যে মেলামেশা, চেনাজানার অভাবের জন্য যে দূরত্ব আজ ভয়ানক ভাবে বেড়ে গিয়েছে, তা দূর করতে সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।
রঘুনাথ প্রামাণিক, কালীনগর, হাওড়া
অধরা স্বপ্ন
বালুরঘাট জেলা হাসপাতাল গড়ার সময় ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের আমলে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল করার লক্ষ্য নিয়ে উত্তরবঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই হাসপাতাল আজও হয়নি। মিলেছে শুধু প্রতিশ্রুতির পর প্রতিশ্রুতি। হয়েছে শুধু নীল-সাদা রঙের বিল্ডিং। সাধারণ মানুষের হাত-পা ভাঙলে দৌড়তে হয় রায়গঞ্জের প্রাইভেট নার্সিংহোমে!
কত ধানের খেত অধিগ্রহণের নোটিস দেওয়া হয়েছে, আত্রেয়ী নদীর বুক চিরে সেতুর পিলার তোলা হয়েছে, কোটি কোটি টাকা খরচ করে কত কালভার্ট করা হয়েছে! কিন্তু জেলাবাসীর বহু দিনের স্বপ্ন ‘বালুরঘাট-হিলি’ রেল সম্প্রসারণ মুখের কথা হয়েই রয়ে গিয়েছে! বুনিয়াদপুরে রেলের ওয়াগন তৈরির কারখানার কথা সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল এবং বলা হয়েছিল ‘বুনিয়াদপুর-কালিয়াগঞ্জ’ রেল সম্প্রসারণের কথা। সে দিন জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ হাজির হয়েছিলেন বুনিয়াদপুরের মাঠে। কেউ জানতেন না যে, কাজের কাজ কিছুই হবে না। এই রেল প্রকল্প নিয়ে সাংসদ, বিধায়কদের মুখে আর কোনও কথা নেই।
সনাতন পাল, বালুরঘাট, দক্ষিণ দিনাজপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy