Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Plastic wastes

সম্পাদক সমীপেষু: জরিমানাও করতে হবে

আমি হুগলি-চুঁচুড়া পুর এলাকায় বাস করি এবং আমার বাড়ির সামনেই রয়েছে এ রকম একটি পুকুর। পুকুরটির এক-তৃতীয়াংশ কচুরিপানায় পূর্ণ। সেই সঙ্গে সেখানে আটকে রয়েছে জঞ্জাল আর প্লাস্টিক।

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:২৩
Share: Save:

সম্পাদকীয় ‘অ-কাজ’ (২৫-১১)-এর প্রেক্ষিতে এই পত্র। মুখ্যমন্ত্রী কলকাতা শহরের অপরিচ্ছন্নতা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। যত্রতত্র পড়ে থাকা জঞ্জালকে বিশেষজ্ঞরা মশার আঁতুড়ঘর হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। শহরে ডেঙ্গি বাড়ার এটিও একটি কারণ বলে অনেকে মনে করেন। তবে শুধু কলকাতায় নয়, ছোট-বড় সব শহরেই একই চিত্র লক্ষ করা যায়। তা ছাড়া, মফস্‌সলের শহরগুলির আর একটি সমস্যা হল, এখানে একাধিক পুকুর রয়েছে। এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, পুকুর দৃষ্টিনন্দন এবং এলাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধির সহায়ক। কিন্তু বাস্তবটা অন্য রকম। অনেক পুকুরই আবর্জনাময় এবং কচুরিপানায় আকীর্ণ। মশার বংশবৃদ্ধির সহায়ক।

আমি হুগলি-চুঁচুড়া পুর এলাকায় বাস করি এবং আমার বাড়ির সামনেই রয়েছে এ রকম একটি পুকুর। পুকুরটির এক-তৃতীয়াংশ কচুরিপানায় পূর্ণ। সেই সঙ্গে সেখানে আটকে রয়েছে জঞ্জাল আর প্লাস্টিক। মানুষ পুজোর পর ফুলসমেত প্লাস্টিকের ব্যাগ পুকুরে ফেলেন। এই বিষয়টি নিয়ে পুরসভাকে অভিযোগ জানালেও সামান্যই সাড়া পাওয়া গিয়েছে। তা ছাড়া প্লাস্টিক-দূষণ থেকে কিছুতেই মুক্ত হওয়া যাচ্ছে না। অথচ, সরকার এই বছরের ১ জুলাই থেকে ৭৫ মাইক্রনের নীচে প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ-সহ এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের নানাবিধ বস্তুর উৎপাদন এবং বিক্রি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। তা সত্ত্বেও রমরমিয়ে চলছে অনেক কম পুরু বা পাতলা ক্যারিব্যাগ।

অনেক রাজ্যই প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সফল। কারণ, সেখানে উঁচু হারে জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। মহারাষ্ট্রে জরিমানার পরিমাণ ৫০০০ থেকে ২৫০০০ টাকা। শুধুমাত্র সচেতনতার প্রসার ঘটালে চলবে না, সঙ্গে মোটা অঙ্কের জরিমানার কথাও সকলকে জানাতে হবে। সর্বোপরি, প্রশাসনকে সক্রিয় ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। তবেই মিলবে ফল।

তপন কুমার ভট্টাচার্য, ওলাইচণ্ডীতলা, হুগলি

আস্ফালন

‘বিষস্রোতা’ (২৯-১১) শীর্ষক সম্পাদকীয়ের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। ২০০২ সালে গুজরাত দাঙ্গায় আমদাবাদের সংখ্যালঘু মহল্লায় আক্রমণ হানার সময় অনেকটা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই স্লোগান উঠেছিল ‘ইয়ে অন্দর কি বাত হ্যায়/ পুলিশ হমারা সাথ হ্যায়’। শাসক দলের হাতে প্রশাসন থাকলে যে কোনও সংগঠিত অপরাধও যে পার পেয়ে যায়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। গুজরাত দাঙ্গায় পুলিশের একমাত্র ভূমিকা ছিল নীরব দর্শকের। অথচ, পরবর্তী সময়ে আইনব্যবস্থার চোখে সবটুকুই নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছে।

১৯৯৮ এবং ১৯৯৯ সালে গুজরাতের বিভিন্ন এলাকায় বেছে বেছে খ্রিস্টানদের উপর আক্রমণ চালানো হয়েছিল। সেই সময় স্থানীয় জনজাতিদের মধ্যে কয়েক হাজার মানুষকে প্রায় জোর করে হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনা হয়। খ্রিস্টানদের পাশাপাশি মুসলিমদের বিরুদ্ধেও হিন্দুত্ববাদীরা সংগঠিত প্রচার চালিয়ে গিয়েছিলেন। গ্রামে গ্রামে বিলি করা হয়েছিল প্রচারপত্র। সেই সকল প্রচারপত্রে হিন্দু ধর্মের জয়গান আর মুসলিমদের প্রতি বিষোদ্গার করা হয়। প্রচারপত্রের মর্মবাণী ছিল, মুসলিমরা হিন্দু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করতে চাইছে। ওই সম্প্রদায়ের মূল কথাই হল অপরাধ, মাদক এবং সন্ত্রাস।

বরাবরই সাভারকর এবং গোলওয়ালকরের মতবাদে সাম্প্রদায়িক সঙ্কীর্ণতা ঠাঁই করে নিয়েছিল। তাঁদের মূল কথা ছিল— ভারত হিন্দুর দেশ এবং হিন্দু ধর্ম বা সংস্কৃতি থেকেই নিতে হবে তার জাতীয় সত্তার প্রতীক। মুসলমানদের বড় বেশি প্রশ্রয় দেওয়া হয়েছে বলেই দ্বিজাতি-তত্ত্বের উদ্ভব এবং তার থেকে দেশভাগ। এটা ইতিহাসের ভুল ব্যাখ্যা, কিন্তু তাতে পেশিশক্তি জুগিয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ ও পরবর্তী কালে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। তাই হিন্দু ধর্মের ধ্বংসকারীদের যে উচিত শিক্ষা দিতে হবে, সে কথা ভারতীয় জনতা পার্টিতে জন্মলগ্ন থেকেই গাঁথা হয়ে গিয়েছিল। অমিত শাহরা গুজরাত গণহত্যায় যে ‘শিক্ষা’ দিয়েছিলেন, তার পর সেখানে পাকাপাকি ‘শান্তি’ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল এবং শান্তি বিনষ্টকারীরা আর কখনও অশান্তি সৃষ্টি করার দুঃসাহস দেখাননি। সরাসরি সংখ্যালঘুর প্রতি শাসকের এমন বার্তা সংখ্যাগুরুর আধিপত্যবাদকেই সূচিত করে।

ধর্মীয় আবর্তে ভেসে চলা দেশে মানুষের মনে পথচলতি ধারণাগুলোও বদলে যায়। এমন ধর্মীয় আবহে অধিকাংশ মানুষের মুখেই শুনি, আমাদের চার পাশে মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পেলে ভারতই বা কেন সংখ্যাগুরুর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হিন্দু রাষ্ট্র হতে পারবে না! সত্যিই, সহজ সরল যুক্তিতে এ কথা মেনে নেওয়াই স্বাভাবিক। বর্তমান রাজনীতিতে নাগরিক সমাজ দেখে, যে গদির স্থায়িত্ব যত দীর্ঘ হতে থাকে, শাসকের নৈতিক অস্তিত্বগুলিও তত ফিকে হয়ে আসে। আর, সংখ্যাতত্ত্বের বিচারে সংখ্যাগুরুর রাষ্ট্র হিসাবে ভারতকে জাহির করার অভিপ্রায়টুকুও তাই জনসভার মাঝে ঘোষণা করতে অমিত শাহদের কোনও রকম দ্বিধাগ্রস্ততার আশ্রয় নিতে হয় না। ভারতের বহুত্ববাদের ধারণাটি বদলে দিতে বিজেপির দীর্ঘকালীন শাসন যে সক্ষম হয়েছে, তা সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনী জনসভায় দলের শীর্ষ নেতাদের হুঙ্কারেই পরিলক্ষিত হয়। তবু সুপ্রিম কোর্ট এত সবের মাঝেই বলে ওঠে, সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে একের পর এক ঘৃণাভাষণে দেশ জুড়ে এক বিষময় পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। তা সত্ত্বেও ‘ক্ষমা পরম ধর্ম’ এই অছিলায় গুজরাত দাঙ্গার অভিযুক্তদের শাসক দল কারামুক্ত করে। ভোটের টিকিট দেয়। উচ্চবর্ণ হিন্দুরূপে সমস্ত রকমের কুরুচিকর কাজগুলিও ক্ষমার যোগ্য হয়ে যায়। সংখ্যাগুরুর আস্ফালনে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসাবে সংখ্যালঘুরা অঘোষিত প্রতিষ্ঠা পায়। ভারত নামক বৈচিত্রপূর্ণ রাষ্ট্রটির মেরুদণ্ড ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে।

ভারতের ইতিহাসে গুজরাত দাঙ্গার গণহত্যা একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসাবে রচিত হয়েছিল। কালের স্রোতে তাতে পলি জমে রাষ্ট্রের সংখ্যাগুরুর মনে সংখ্যালঘুর প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ বার্তাগুলি যে ভয়ভীতির সঞ্চারে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে, তা বলা বাহুল্য। ‘যারা দাঙ্গা করত তাদের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে’— এই উদ্ধত আধিপত্যবাদের নিরিখে প্রতিষ্ঠিত ‘শান্তিকল্যাণ’ জুড়ে গুজরাতে এখন শুধুই যেন পরিতৃপ্তির বাতাস বয়ে বেড়ায়।

সঞ্জয় রায়, হাওড়া

জোগান নেই

বারুইপুর সার্কেলের অধীনে বোড়াল সাব-পোস্ট অফিসে নানা কাজের সঙ্গে স্বল্প সঞ্চয়ের জন্য একটি সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলি বছর পাঁচেক আগে । আমি সত্তর ছুঁইছুঁই এক নাগরিক। এত দিনে পাসবইটির পাতা শেষ হয়ে গেলেও নতুন পাসবই পোস্ট অফিস দিতে পারছে না। ফলে, টাকা জমা বা তোলায় প্রিন্ট দেওয়া হচ্ছে পাসবইয়ে হিন্দিতে লেখা পিছনের কভার পাতার আগের ছাপা নির্দেশিকার পাতায়। লেখার উপর অস্পষ্ট প্রিন্টারের ছাপ বোঝাও শক্ত। আবার বার্ষিক ট্যাক্স সেভিংস স্কিমের জন্য টাকা রাখতে গিয়ে জেনেছি, সেভিংস অ্যাকাউন্টের থেকে চেক কেটে ওই ট্যাক্স সেভিংস স্কিমে টাকা রাখা যাবে। তখন চেকবই চেয়ে জেনেছি যে, অনেক দিন জোগান নেই চেকবইয়ের। ফলে আমায়কাছাকাছি ব্যাঙ্কে যেতে হয়েছে। প্রতি দিন নতুন অনুষঙ্গ হাজির করা হচ্ছে পোস্ট অফিসে। কখনও ‘সার্ভার ডাউন’, কখনও ‘লিঙ্ক ফেলিয়র’ ইত্যাদি। এতে স্বল্প সঞ্চয়ে নিজের জমানো টাকা প্রয়োজনে তুলতে পারছি না। আমার মতো কত বর্ষীয়ান পেনশনভোগী সাধারণ মানুষ শুধু যাওয়া আসাই করে যাচ্ছেন। পোস্ট অফিসটিতে এটিএম কার্ড চেয়ে আবেদন জমা দিয়েছিলাম। তা-ও দু’মাস হয়ে গেল। স্বল্প সঞ্চয়ের প্রধান জায়গা গ্রামগঞ্জ ও শহরতলির পোস্ট অফিসগুলো। সেখানে যদি এ ভাবে স্টেশনারি জোগানের অবহেলায় উপভোক্তারা ভোগেন ও টাকা তোলায় প্রতি দিন হয়রানির শিকার হন, তা হলে স্বল্প সঞ্চয় উদ্যোগ মার খাবে না কি?

সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা, কলকাতা-১৫৪

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy