আমি ৭৭ বছর বয়স্ক নাগরিক এবং ‘হেড অব দ্য ফ্যামিলি’। প্রতি রাতে ঘুমের বড়ি খেয়ে দশটা নাগাদ ঘুমোতে যাই। বিছানায় শুয়ে নানা চিন্তা এসে যায়। দিন কী ভাবে চলবে, হাটবাজার আগুন, মাছ কিনব না ডিম দিয়ে চালাব। পেনশন নেই, জমা টাকার সুদ ক্রমশ ক্ষীণ। স্ত্রী অসুস্থ, নিকটজনেরা অনেকে মারা যাচ্ছেন, ছেলেরা প্রচণ্ড পরিশ্রম করছে, সামনে নাতি-নাতনির পরীক্ষা— এ সব চিন্তায় প্রায় দু’ঘণ্টা ঘুম আসে না। বারোটা বাজার ঘণ্টা পড়ে, তার পর কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ি।
এ দিকে খবরে প্রকাশ, দেশের ১৩০ কোটি মানুষের ‘হেড অব দ্য ফ্যামিলি’, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শোয়ামাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েন। অভিনব, অসাধারণ। তিনি কী ভাগ্যবান!
বলদেব ঘটক
কলকাতা-৯০
শিক্ষকের বঞ্চনা
বর্তমান মাধ্যমিক/উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়-প্রধানদের কাজের পরিসর অনেক বেশি। বইখাতা, পোশাক, অনুদান, সাহায্য, মিড-ডে মিল, বাংলার শিক্ষা, সমগ্রশিক্ষা, শ্রীযুক্ত প্রকল্প— নানা কর্মকাণ্ডে তাঁরা নাজেহাল। অবিরাম সরকারি নির্দেশনামা বিভাগীয় আদেশনামায় পরিণত হয়ে বিপর্যস্ত করে মানসিক স্বাস্থ্য। সরকারের সকল প্রকার শ্রীবৃদ্ধিতে তাঁদের অবিরাম শ্রম, অথচ সেই শ্রমের মর্যাদা থেকে তাঁরা ক্রমাগত বঞ্চিত। সেই বঞ্চনার কয়েকটি দিক:
১) ১-৪-১৯৮১ ও ১-১-১৯৮৬ তারিখে চালু থাকা বেতনক্রমে ‘উইথ হায়ার ইনিশিয়াল স্টার্ট’ বলে একটি সুযোগ ছিল। ১-১-১৯৯৬ তা অবলুপ্ত হল।
২) ১-৪-১৯৫৭ থেকে ১-১-১৯৮৬ পর্যন্ত চালু বেতনক্রমে স্পেশাল পে ছিল উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের জন্য। এমনকি ১-১-১৯৯৬ সালে চালু বেতনক্রমে দু’টি অতিরিক্ত ইনক্রিমেন্ট ছিল; তা অবলুপ্ত হল রোপা-২০০৯’তে।
৩) প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার শুরু থেকেই প্রধান শিক্ষকদের পৃথক বেতনক্রম ছিল। ১-১-২০০৬ থেকে তা লুপ্ত হল। শুরু হল ব্যান্ড পে, গ্রেড পে ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় স্নাতকোত্তর ও প্রধান শিক্ষকদের একই পে ব্যান্ড-এ রাখা হল—পিবি৪— ৯০০০-৪০,৫০০; পার্থক্য শুধু গ্রেড পে-তে। হল পদমর্যাদার অবনমন।
৪) ১-১-২০১৬’তে চালু থাকা অ্যাডিশনাল গ্রেড পে ২০০ টাকা বাদ গেল। নজিরবিহীন ভাবে বেতন কমিয়ে ৫৪০০ টাকা গ্রেড পে দিয়ে অপশন দিতে হল। এ তো আর্থিক বঞ্চনা।
৫) অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের জন্য মহার্ঘভাতা, ঘরভাড়া, অবসরকালীন সুযোগের সঙ্গে সম্পর্কহীন থোক ৫০০ টাকা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়-প্রধান ও সহ প্রধানদের দেওয়া হল; যেন উভয়ের কাজও দায়িত্ব সমান— এ তো অবিচার পদমর্যাদার প্রতি।
৬) অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের জন্য এক জন প্রাথমিক শিক্ষক পাবেন ৪০০ টাকা, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান পাবেন ৫০০ টাকা। মর্যাদা কমতে কমতে একেবারে প্রাথমিক স্তরে!
৭) মাধ্যমিক বিদ্যালয়-প্রধানগণ কি অতিরিক্ত কোনও কাজ করেন না? কেন এই বঞ্চনা?
কাজ বা দায়িত্ব বাড়লে সুযোগসুবিধা বাড়ে। এ যে বিপরীত গতি। বঞ্চনা ক্রমবর্ধমান, মর্যাদা ক্রমহ্রাসমাণ।
শ্রীদামচন্দ্র মান্না
রাজ্য সাধারণ সম্পাদক
প্রধানশিক্ষক সমিতি
কালো দিন
রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে যাতায়াতের সময় নষ্ট হওয়া এবং শারীরিক ধকল সামলাতে শিক্ষকদের নিজের জেলায় শিক্ষকতার ব্যবস্থা করা হবে। বাস্তবে আদৌ তা সম্ভব কি না, ভেবে দেখা দরকার।
কারণ উচ্চশিক্ষার হার বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন। সেই কারণে শিক্ষক পদে আবেদন করবার সময় আবেদনকারী অনেক সময় নিজের জ়োনের বাইরে গিয়ে আবেদন করেন। তিনি বাড়ির বাইরে থেকে চাকরি করবেন ধরে নিয়েই সেই আবেদন করেন। বাইরে থেকে চাকরি করার জন্য প্রত্যেককে সরকারি চাকুরেদের মতো বাড়ি ভাড়া ভাতাও দেওয়া হয়। তাই সকলকে হঠাৎ নিজ জেলায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ দেখানোর কারণ বোঝা গেল না।
এটা করলে প্রাথমিকের মতো, উচ্চ প্রাথমিক স্তরেও শিক্ষক ছাত্রের অসম বণ্টন হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল হবে। আর স্কুলের পরিচালন সমিতির হাতে শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব ফিরিয়ে দিলে কী হতে পারে, তা ১৯৯৮ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশন গঠনের আগে যে সমস্ত ভুক্তভোগীর ইন্টারভিউ দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে, তাঁরা ভালই জানেন। ইন্টারভিউ হওয়ার পর আর্থিক লেনদেনের অলিখিত চুক্তি সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত প্যানেল প্রকাশিত হত না। সেই কালো দিন পুনরায় আহ্বান না করাই ভাল।
কৃষ্ণা কারফা
বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া
‘প্রযত্ন’ ছুটি
বাচ্চার অসুস্থতা নেহাত আকস্মিক বিষয়, তাই কিছু করার থাকে না। ছুটিটা দিতে হয়। সে সময় শিশু অসুস্থ হওয়ার মনঃকষ্ট ছাড়া আর কোনও চিন্তা থাকে না। তবে যদি বাচ্চার কোনও পরীক্ষা কাছে এল, ব্যস, কাছে থেকে কী ভাবে যত্ন করব কিংবা কোন পদ্ধতি অবলম্বন করলে অল্প আয়াসে বেশি শেখাতে পারব, সে ভাবনা ছেড়ে ভাবতে বসতে হয়, ‘শিশু প্রযত্ন ছুটি’ নেওয়ার প্রস্তাবের অবতারণা ‘মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ’-এর কাছে কী ভাবে করব।
যদি বা আবেদন করলাম, তার পরিণতি জানতে পারি না। তাই প্রায় প্রতি দিনই ‘তাঁদের’ পশ্চাদ্ধাবন করতে হয়। আর নানান অজুহাতে ‘সিদ্ধান্ত হয়নি’ শুনে শুকনো মুখে চুপ করে থাকতে হয়।
অবশেষে ছুটি হয়তো হয়, তবে অনেকখানি সম্মানের সঙ্গে আপস করে। এমনকি সন্তান যদি মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী হয়, পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয় না। অনেক সময় পুরুষ সহকর্মীর অনেক মধুর মন্তব্যও মরমে প্রবেশ করে।
তবে এ সবের জন্য ‘মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ’কে সম্পূর্ণ দায়ী করা যায় না। তাঁদের অনেকেরই এই ছুটির নিয়মাবলি জানা হয়ে ওঠেনি। প্রত্যেকে নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করে থাকেন। তা ছাড়া কিছু প্রশ্ন রয়েই গিয়েছে।
প্রথমত, বিদ্যালয় যদি পর্ষদের মাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্র হয়, একই সঙ্গে সেই বিদ্যালয়ের শিক্ষিকার সন্তানের কেন্দ্রীয় বোর্ডের পরীক্ষা চলে, তা হলে কি তিনি এই ছুটি নিতে পারেন?
দ্বিতীয়ত, পরীক্ষা বা অসুস্থতা ইত্যাদি অনিবার্য কারণ থাকা সত্ত্বেও ছুটি না-মঞ্জুর হতে পারে কি? মাধ্যমিক (সিবিএসই)-র মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা চলাকালীন ‘শিশু প্রযত্ন ছুটি’-র আবেদন খারিজ করে জোর পূর্বক অসুস্থতা জনিত ছুটি লেখা যায় কি?
তৃতীয়ত, ১৫ দিনের বেশি যে-কোনও সংখ্যা, যেমন ৩৫, ৪৯— এ রকম দিনের জন্য আবেদন করা যায় কি না?
‘প্রযত্ন’ তো শুধু ‘পরীক্ষা’ আর ‘অসুস্থতা’ নয়। ‘যত্নের আধিক্য’ বা ‘তত্ত্বাবধান’ বলা যায়। যা আসলে শিশু ‘পালন পোষণ’ বোঝায়। মায়ের সেই পরিষেবা সন্তানের সর্বদা প্রয়োজন। চাকুরিরতা মায়েরা কর্মক্ষেত্রের দায়িত্ব পালন করে, সম্মান বাঁচিয়ে, সন্তানের প্রতি কর্তব্য যেন করতে পারেন, সে জন্য আইন প্রণেতাদের কাছে আইনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে বিনীত অনুরোধ জানাই।
মঞ্জুরকারী কর্তৃপক্ষ যেন বিষয়টি সম্পূর্ণ অবগত থাকেন, সেটি নিশ্চিত করাও জরুরি। না হলে কোথাও কর্তৃপক্ষের মহানুভবতার উপর এর অস্তিত্ব নির্ভর করবে, আর অন্যত্র হেডমাস্টার্স ম্যানুয়াল-এ তা ছাপার অক্ষর হয়েই থেকে যাবে।
বহু শিশু প্রয়োজনের সময় মায়ের অনুপস্থিতির ক্ষোভ তাদের বিকৃত আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ করবে। আর ভবিষ্যৎ সমাজ তার ফল ভোগ করতে বাধ্য থাকবে।
পিয়ালী বৈদ্য
কলকাতা-১৫০
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy