জন্মসূত্রে গলায় যজ্ঞসূত্র থাকলেই কি কেউ পৌরোহিত্যের অধিকারী হয়? বহু সময় দেখা যায় লক্ষ্মী ও সরস্বতী পুজোর দিন এমন কিছু মানুষ ধুতি পরে গায়ে নামাবলি চাপিয়ে পুজো করতে বেরিয়ে পড়েন, যাঁদের শাস্ত্রজ্ঞান নেই, বিদ্যের দৌড়ও তথৈবচ। গৃহস্থেরা প্রথা মেনে এঁদের নিয়ে টানাটানি করেন। অন্য দিকে, অন্য বর্ণের কোনও পুরুষ, বা উচ্চ বর্ণেরও কোনও মহিলা, পৌরোহিত্যে অংশ নিলেই ওঠে প্রশ্ন। আমরা ভুলে যাই বৈদিক যুগের গার্গী, মৈত্রেয়ী, লোপামুদ্রা, অপালার কথা, যাঁরা বেদের একাধিক মন্ত্রের রচয়িতা; ভুলে যাই মধ্যযুগের বৈষ্ণব পরিবারে জন্ম নেওয়া জাহ্নবী দেবী, সীতা দেবী, সুভদ্রা দেবী কিংবা অষ্টাদশ শতাব্দীতে জন্মগ্রহণকারী হটু বিদ্যালঙ্কার, হটী বিদ্যালঙ্কার, দ্রবময়ী প্রমুখ মহিয়সী নারীদের কথা। গৃহস্থ বাড়িতে প্রতি বৃহস্পতিবার নিষ্ঠার সঙ্গে লক্ষ্মীপুজো করেন যে মহিলারা, বিশেষ দিনে তাঁরা হঠাৎই পুজোর অধিকারে হয়ে পড়েন ব্রাত্য, এ কেমন আজব বিধান?
অন্য দিকে সরস্বতী পুজো। সারা বছর কি কেবল ব্রাহ্মণের ঘরে জন্ম নেওয়া পুরুষেরাই বিদ্যাচর্চার সঙ্গে যুক্ত থাকেন? ওই বর্ণের নারীরা বা অন্য বর্ণ এমনকি অন্য ধর্মের নারী-পুরুষ কি বিদ্যাচর্চা করেন না? আমরা কেন ভুলে যাব মনস্বী রেজাউল করিম সাহেবের কথা, প্রথা ভেঙে যে অধ্যাপককে বহরমপুর গার্লস কলেজের মেয়েরা ব্রাহ্মণ হিসেবে বরণ করে নিয়েছিল?
পার্থপ্রতিম চট্টোপাধ্যায়
বড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
নিশিকান্তই
‘নলিনীকান্ত’ (৩০-১) শীর্ষক চিঠির প্রেক্ষিতে জানাই, পত্রলেখকের ধারণাটি ভ্রান্ত। দীপেশ চক্রবর্তী ‘কী জাদু বাংলা গানে’ (ক্রোড়পত্র ‘সপ্তক’, ২২-১) শীর্ষক নিবন্ধে শ্রীঅরবিন্দ আশ্রমের বাসিন্দা হিসেবে দিলীপকুমার রায়ের প্রসঙ্গে যে নিশিকান্তের কথা লিখেছেন, তিনি নিশিকান্তই— নলিনীকান্ত সরকার নন। নিশিকান্তের পুরো নাম নিশিকান্ত রায়চৌধুরী। ছোট থেকেই শান্তিনিকেতনে মানুষ। ১৯৩৪ সালে শ্রীঅরবিন্দ আশ্রমে চলে যান। তাঁর কাব্যগ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘বৈজয়ন্তী’, ‘ভোরের পাখি’, ‘নবদীপন’, ‘দিগন্ত’ ইত্যাদি। শ্রীঅরবিন্দ নিজেও তাঁর কিছু কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন। দিলীপকুমার রায় নিশিকান্তের অনেক কবিতাতেই সুর দিয়ে জনপ্রিয় সঙ্গীতে রূপান্তরিত করেছেন।
দিলীপকুমার রায় নলিনীকান্ত সরকারের লেখা কয়েকটি রচনাতেও সুর দিয়েছেন এবং সেগুলি যথেষ্ট জনপ্রিয়। নিশিকান্ত কিন্তু বাংলা কবিতা ও কাব্যজগতে আজও স্বমহিমায় অধিষ্ঠিত।
বিশ্বজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়
সদস্য, শ্রীঅরবিন্দ ভবন, কলকাতা
নিশিবাবু
নিশিকান্ত রায়চৌধুরী ছিলেন রবীন্দ্রনাথের আদরের ‘চাঁদ কবি’। রবীন্দ্রনাথের সেক্রেটারি সুধাকান্ত রায়চৌধুরীর ছোট ভাই। শান্তিনিকেতনে পড়াশোনা, কলাভবনে নন্দলাল বসুর হাতে অঙ্কন শিক্ষা, সাগরময় ঘোষের সহপাঠী। শান্তিনিকেতনে থাকাকালীন কবিতা ও গান লেখার সূত্রপাত। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘টুকরী’ কবিতাগুলির সংশোধন ও পরিমার্জন করেন। এর পর রবীন্দ্র-আশ্রম থেকে অরবিন্দ আশ্রম— শান্তিনিকেতন থেকে পুদুচেরি।
সেখানে তখন দিলীপকুমার রায়। মণি-কাঞ্চন সংযোগ হল। এই যুগলবন্দিতে সৃষ্টি হল অনেক কালজয়ী গান— গীতিকার নিশিকান্ত, সুরকার ও গায়ক দিলীপ কুমার রায়। প্রথম গানটি ছিল, ‘অধরা দিল ধরা এ ধুলার ধরণীতে/ তারি চরণ চলছে এ জীবন সরণীতে।’— এ গানটি দিলীপকুমার রায় তাঁর দক্ষিণী শিষ্যা শুভলক্ষ্মীকে এবং অনেক সঙ্গীত-শিষ্যকে শেখান। নিজেও গ্রামোফোনে গানটি রেকর্ড করেন। নিশিকান্তকে তিনি আহ্বান জানান—আসুন নিশিকান্তবাবু, আমরা দুজনে কাব্য সঙ্গীতের জুড়ি গাড়ি চালাই। ‘‘আপনি কথা দিয়ে মালা গাঁথুন, আমি সুর দিয়ে তা দোলাব।’’
দ্বিজেন্দ্রলালের ‘একবার গাল ভরা মা ডাকে’ গানটির স্পন্দন নিয়ে নিশিকান্ত গান বাঁধলেন— ‘জ্বলবার মন্ত্র দিলে মোরে, / আমি তাই তো জ্বলি, কেবল জ্বলি, জ্বলি ভুবন ভরে।’
দিলীপকুমার পুণে চলে যাওয়ার পরেও এই যুগলবন্দি অটুট ছিল। পুদুচেরিতে অরবিন্দের শতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে সাহানা দেবী আশ্রমের ছেলেমেয়েদের দিয়ে গাওয়ালেন, ‘অর্ঘ্য’ ও ‘দুঃখ হরণ’ নামে নিশিকান্তের লেখা, দিলীপকুমার রায়ের সুর করা কালজয়ী গান।
নিশিকান্তের জন্ম: ২৪ মার্চ ১৯০৯, বরিশালের উজিরপুর গ্রামে। মৃত্যু: ২০ মে ১৯৭৩, অরবিন্দ আশ্রমে।
শ্যামল রক্ষিত
ভদ্রকালী, হুগলি
বাংলা গান নিয়ে ক্রোড়পত্র ‘সপ্তক’ (২২-১)-এ বিভিন্ন লেখায় কয়েকটি তথ্যগত ভুল চোখে পড়ল। পঙ্কজ কুমার মল্লিক সম্পর্কে ‘নানা রূপে বিকশিত’ নিবন্ধে লেখা হয়েছে, ‘‘সদ্য প্রাপ্তবয়স্কতার গণ্ডি পেরোতেই নামকরা ভিডিয়োফোন কোম্পানিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত রেকর্ডের ডাক— ‘নেমেছে আজ প্রথম বাদল’।’’ কোম্পানির নাম ‘ভিডিয়োফোন’ নয়, ভিয়েলোফোন। গানের কথা— ‘নেমেছে আজ নবীন বাদল’। আর গানটি পঙ্কজ কুমারের প্রথম রেকর্ড হলেও, রবীন্দ্রসঙ্গীত নয়, লেখা বাণীকুমারের, সুর স্বয়ং শিল্পীর। লতা মঙ্গেশকর-আশা ভোঁসলে সম্পর্কিত ‘ভ্রমর দোলে আশালতায়’ নিবন্ধে লেখা হয়েছে, ‘‘আর আশা? প্রথম আধুনিক গানেই নামিয়েছেন বর্ষা। ‘নাচ ময়ূরী নাচ রে’।’’ আশার আধুনিক গানের প্রথম রেকর্ড ‘নাচ ময়ূরী নাচ রে’ নয়। প্রথম রেকর্ডে আশা গেয়েছিলেন পবিত্র মিত্রের কথায়, বিনোদ চট্টোপাধ্যায়ের সুরে ‘আমি সুখে আর দুখে যে মালা গেঁথেছি’ ও ‘আকাশের দু’টি তারা’ (এন ৮২৭৮৬, জুন ১৯৫৮)। ‘টাকডুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল’ প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ‘‘বর্মণদা মান্নাকে দিয়ে ‘উপর গগন বিশাল’ গাওয়ালেন, তাঁর প্রথম একক গান।’’ ১৯৫০-এ ‘মশাল’ ছবিতে শচীনদেবের সুরে, প্রদীপের কথায় এই ‘উপর গগন বিশাল’ গেয়েই মান্না দে হিন্দি ছবির জগতে নেপথ্য সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হন, কিন্তু এটি ‘তাঁর প্রথম একক গান’ নয়। এর আগে অন্তত ৩০টি হিন্দি ছবিতে মান্না নেপথ্যে গেয়েছেন। তাঁর প্রথম একক গান ১৯৪৩-এ, ‘রামরাজ্য’ ছবিতে শঙ্কর রাও ব্যাসের সুরে। তার আগেই অবিশ্যি দ্বৈতকণ্ঠে সুরাইয়ার সঙ্গে গেয়েছেন ‘তমান্না’ (১৯৪২) ছবিতে।
স্বপন সোম
কলকাতা-৩৭
মহঃ আজিজ
‘সপ্তক’ ক্রোড়পত্রে, যে বাঙালি সঙ্গীতশিল্পীরা বলিউডে নাম করেছিলেন, তাঁদের তালিকায় বাদ পড়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া-অশোকনগরের মহঃ আজিজ বা মুন্না। তিনি কলকাতা থেকে মুম্বই যাওয়ার পর, স্বপ্নের উড়ান ঘটে তাঁর কেরিয়ারে। গত শতকের আশির দশকে অমিতাভ বচ্চনের লিপে তাঁর গাওয়া ‘মর্দ’ সিনেমার ‘মর্দ টাঙ্গেওয়ালা’ গানটি (সুরকার অনু মালিক) অসম্ভব জনপ্রিয় হওয়ায় তাঁকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ওই সময় কিশোরকুমার গান গাইছেন। অমিতকুমার বেশ জনপ্রিয়। সাব্বিরকুমার সুরেশ ওয়াদেকরের মতো নামী গায়কেরাও আছেন। তখন বলিউডে একের পর এক সিনেমায় মহঃ আজিজ গান গেয়েছেন, সেগুলো তুমুল জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। বাংলা সিনেমাতেও ওই সময়ের অধিকাংশ হিট গানের গায়ক-তালিকায় তাঁর নাম আছে। লতা মঙ্গেশকর আশা ভোঁসলের মতো শিল্পীদের সঙ্গে জনপ্রিয় বেশ কিছু ডুয়েট গানও তাঁর ঝুলিতে আছে।
পরবর্তীতে ওড়িয়া ভাষায় ভক্তিগীতির গায়ক হিসেবেও দারুণ সফল হয়েছিলেন। আশি বা নব্বইয়ের দশকে শুধু তাঁর নামেই বিক্রি হয়ে যেত জলসার টিকিট।
এই বিখ্যাত শিল্পী বাঙালি হলেও দেখেছি মিডিয়া বরাবর তাঁর সম্পর্কে নিস্পৃহ। আমরা সাধারণ শ্রোতা। কেন এই নিস্পৃহতা, তা অজানা।
তন্ময় দে
কোড়ার বাগান, উত্তর ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy