ব্যাপারটা হল, মানুষের যখন যুক্তির জোর কমে যায়, তখন গলার জোর বাড়ে। গলার শির ফোলানো চিৎকার যখন বিরুদ্ধ মতকে দাবিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়, তখন নেমে আসে পেশিশক্তির আস্ফালন। আক্রমণকারী ভেবে নেয়, এই ভাবে স্তব্ধ করে দেওয়া যেতে পারে যাবতীয় চিৎকার, নত করে দেওয়া যেতে পারে যে কোনও উন্নত শির। যুগে যুগে যে ভুল পেশিশক্তিতে বিশ্বাসীরা করে গিয়েছে, সেই একই ভুল আজও তাদের উত্তরাধিকারীরা করে যায়। তারা ভুলে যায়, আক্রান্তের আওয়াজ যত দূর পৌঁছয়, সেখানে হাজারে হাজারে নতুন প্রতিবাদীর জন্ম হয়, সেখান থেকে প্রতিটি স্বর আরও হাজার হাজার স্বরের জন্ম দেয়। এই ভাবে বিরোধিতার স্বর প্রবল ভাবে বাড়তে বাড়তে সংখ্যায় লঘু আক্রমণকারীকে প্রবল জনরোষে কালের করাল গ্রাসে নিক্ষিপ্ত করে তবেই শান্ত হয়। প্রবল প্রতাপশালী নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় জনজীবন থেকে।
একটা অন্যায় সংশোধন না করে, গায়ের জোরে সেই অন্যায়কে প্রতিষ্ঠিত করতে চাওয়া বড় ভুল। সেই ভুলের মাসুল দিতে হয় পরের পর নতুন করে ভুল করে। ক্রমাগত ভুল শুধু বিদায়কে ত্বরান্বিত করে। সেই বিদায়বেলায় কারও এক ফোঁটা সহানুভূতিও অবশিষ্ট থাকে না। তাই পরামর্শ: হয় সংশোধিত হও, নইলে মুছে যাওয়ার জন্য তৈরি হও। বিকল্প কিন্তু থাকে না, কোনও দিন থাকেনি।
পার্থ নন্দী
শেওড়াফুলি, হুগলি
কী অবস্থা(ন)!
এটা ঘটতই। যে কোনও শাসক দল এটাই করত। শাসক শ্রেণি ছাত্রসমাজকে দেশকাল ভেদে একই রকম সন্দেহের চোখে দেখে এসেছে। আর বর্তমান শাসক দল মোটামুটি গণতান্ত্রিক সমস্ত ব্যবস্থাকে মুঠোর মধ্যে নিয়ে এসেছে। জেএনইউ বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো অবস্থান করছে। তার ছাত্রসমাজ ও শিক্ষকবর্গ ঐতিহ্যগত ভাবে প্রতিষ্ঠান ও শাসক বিরোধী। প্রবল শাসক একে কব্জা করতে চাইবেই। এবং এর জন্য সে চিরাচরিত দমনমূলক নীতি নেবে, এতে আশ্চর্যের কিছু নেই।
এবং ছাত্রসমাজ লড়ে নেবে তাদের লড়াই। আগেও লড়েছে, আজ এবং আগামী কালও লড়বে। এবং ইতিহাস বলছে অনেক পরাক্রমী শাসকের পতনের প্রাথমিক কারণ ছাত্রআন্দোলন।
কিন্তু বিপুল নির্বিবাদী জনতা, যারা কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের ধারণা, ভাবনা, চেতনার তল্পিবাহক হয়ে ঘুরছে, তাদের কী হবে! জনতা আজ ভীত, সন্ত্রস্ত। লোহিত, শ্বেত রক্তকণিকার সঙ্গে রক্তে এখন ভয়কণিকা প্রবাহিত হয়ে চলেছে। বহু বছর সব কিছু মানিয়ে নেওয়ার অনুশীলন করতে করতে, প্রতিবাদ তাদের এখন ভীষণ ভয়ের বস্তু। ভয়ে আমরা কেউ নিশ্চুপ থাকছি, কেউ সরাসরি শাসক শ্রেণির ধামাধরা হয়ে যাচ্ছি। সোশ্যাল মিডিয়ায় জেএনইউয়ের ঘটনার কিছু প্রতিক্রিয়া দেখে শিউরে উঠতে হয়। এক বিপুল সংখ্যক মানুষ বিশ্বাস করে যে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশবিরোধী কার্যকলাপ হয়। কোনও প্রমাণ ছাড়াই। প্রতিপ্রশ্ন যদি করা হয়, কিসের ভিত্তিতে তারা এই ধারণায় অবতীর্ণ হল, তার প্রতিক্রিয়ায় দেশদ্রোহী আখ্যা ও অনেক অশালীন বাক্য শুনতে হয়। যদি যুক্তি দেওয়া হয় অতি কঠোর দিল্লি পুুলিশ কেন তদন্ত করে কোনও সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে কাউকে গ্রেফতার করছে না, তখন গালিগালাজ করা হচ্ছে প্রশ্নকর্তাকে।
এ প্রবণতা বিপজ্জনক। গণতান্ত্রিক ভারতের পক্ষে ঘোর অমঙ্গলের বার্তাবাহক ।
শুভেন্দু দত্ত
কলকাতা-১০১
‘সাজানো’?
টিভি চ্যানেলে দেখলাম এবং কাগজেও পড়লাম, দিলীপ ঘোষ জেএনইউ-এর ঘটনাকে নাটক এবং সাজানো ঘটনা বলেছেন। এ রকম ‘সাজানো ঘটনা’র কথা তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ থেকে শুনেছি। মমতা আর দিলীপবাবুর তত্ত্ব তো হুবহু এক! যা আমার পক্ষে অস্বস্তিকর, তা-ই ‘সাজানো’!
এ প্রসঙ্গে মনে পড়ে গেল তথাগত রায়ের প্রায়শ উচ্চারিত একটি কথা: ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিপিএমের সব কিছু গুণ আয়ত্ত করেছেন খুব ভাল ভাবেই। উনি সিপিএমের প্রকৃত মেধাবী ছাত্রী।’
তা-ই যদি হয়, দিলীপবাবুও তো মমতাদিদির এক জন মেধাবী ছাত্রের তকমা পাওয়ার যোগ্য!
সুভাষ চন্দ্র সরকার
কলকাতা-৩৫
তার বেলা?
ভারতবর্ষের সংখ্যালঘু বা কাশ্মীরিদের সম্বন্ধে পাকিস্তান উদ্বেগ প্রকাশ করলে, তৎক্ষণাৎ তাদের স্পষ্টাক্ষরে বলে দেওয়া হয়, আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক না গলানোর জন্য! তা হলে সেই একই ‘যুক্তি’ অনুসারে, পাকিস্তানের সংখ্যালঘুদের সম্বন্ধে উদ্বেগ প্রকাশ করলে বা তাঁদের উপর ‘অত্যাচার’-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শামিল হলে, সে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কি ভারতের নাক গলানো হয়ে যাবে না!
উপরন্তু 'Charity begins at home' প্রবাদবাক্যটাকে স্মরণ করে, আমাদের কি উচিত নয় জাত-ধর্ম নির্বিশেষে সর্বপ্রথমে ভারতের বুকে ক্রন্দন করা অসহায়দের উপর অত্যাচারের তীব্র প্রতিবাদ করা! তার পর বরঞ্চ বিশ্বের স্বনিযুক্ত নৈতিক অভিভাবক সেজে বিদেশি রাষ্ট্রে ঘটে চলা অনাচার সম্বন্ধে অযাচিত জ্ঞানগর্ভ উপদেশ বর্ষণ করব!
অন্যথায় ‘চালনি বলে ছুঁচ তুমি কেন ছেঁদা’ অভিযোগটা সহন করার শক্তি ‘জাতীয়তাবাদী’দের আছে তো! আর কত দিন পাকিস্তান নামক ‘কুমিরছানা’টা বার বার দেখিয়ে দেশের অগণন জ্বলন্ত সমস্যা ও নিজেদের চূড়ান্ত ব্যর্থতাকে ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা চলবে!
কাজল চট্টোপাধ্যায়
ইমেল মারফত
ইন্টারনেট বন্ধ
বেশ কিছু দিন বারাসত সদর-সহ উত্তর চব্বিশ পরগনার জেলায় সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করা হল। তার ফলে কিছু জরুরি কাজকর্ম করতে ছুটতে হচ্ছে শহরের দিকে। শহর অর্থাৎ কিনা যা বিরাটি থেকে শুরু হয় এবং কলকাতায় গিয়ে মেশে। কিছু দিন অন্তর অন্তর এই অভিনব পদক্ষেপ খুবই আশ্চর্যের এবং বিরক্তিকরও বটে। কোথাও কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেই চটজলদি প্রশাসনিক পদক্ষেপের প্রাথমিক কাজটিই হল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া। গুজব ছড়ানোর মাধ্যম হিসেবে ইন্টারনেটই একমাত্র দায়ী? ১৯৯৫ সালের ২১ সেপ্টেম্বর গণেশ ঠাকুরের মূর্তির দুধ খাওয়ার গুজব কয়েকটি শহরে কয়েক মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন তো ইন্টারনেট ছিল না! তা ছাড়া এসএমএস-এর মাধ্যমেও গুজব ছড়াতে পারে, সে জন্য ইন্টারনেট লাগে না। ছোটখাটো ব্যবসায়িক কাজকর্মে, এমনকি ব্যক্তিগত পরিসরে ইন্টারনেট এখন একটি জরুরি পরিষেবা। কর্মীদের বেতনের টাকা ট্রান্সফার, অনলাইন ব্যাঙ্কিং, প্রতি দিন মেল চেক করা, ছাত্রছাত্রীদের ফর্ম ভর্তি, এই সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ সাময়িক ভাবে পঙ্গু হয়ে থাকে ইন্টারনেট বন্ধ রাখলে। যাঁরা মনে করেন ইন্টারনেট-এ মানুষের কাজ শুধু হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টুইটার আর ইনস্টাগ্রাম করা, তাঁদের জানা উচিত, সামগ্রিক ভাবে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ না করেও শুধুমাত্র নির্দিষ্ট এই অ্যাপগুলো বন্ধ করার একটা প্রযুক্তি আছে।
পিনাকী রুদ্র
চৌধুরীপাড়া, বারাসত
কোন স্বর্গরাজ্য
বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি জম্মু-কাশ্মীরের চেয়ে ভয়াবহ। মাসের পর মাস নেটওয়ার্ক পরিষেবা বন্ধ করে রাখছে সরকার। যার ফলে ব্যাঙ্ক, পোস্ট অফিস, আধার কার্ড সংশোধন, ভোটার কার্ড সংশোধন-সহ বিভিন্ন সহায়তা বন্ধ থাকছে মাসে সাত থেকে দশ দিন। ভাবতে অবাক লাগে, আমরা কোন স্বর্গরাজ্যে বাস করছি। সামান্য কিছু ঘটলে সরকার তা মোকাবিলা করতে অক্ষম।
সরবত আলি মণ্ডল
বালকী, উত্তর ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy