‘অস্তিত্বের কাটাকুটি খেলা’ (১০-১২) শীর্ষক বিশ্বজিৎ রায়ের প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু কথা। সঙ্গীতশিল্পী আশা ভোঁসলে একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, এখনকার মিউজ়িক কম্পোজ়ারদের ‘কাট-কপি-পাঞ্চ’-এর কল্যাণে গান রেকর্ডিং অনেক সহজতর হলেও আগের গান রেকর্ড করার অভিজ্ঞতা অনেক রোমাঞ্চকর ছিল, যদিও সেখানে ভুল হলে সেই ভুল শোধরানোর কোনও উপায় ছিল না। ছবি সম্পাদনার ক্ষেত্রেও এই ‘কাট-কপি-পেস্ট’ ছাড়া ছবি তৈরি যে প্রায় অসম্ভব, সেটিও সকলেরই জানা। টুকরো যাপন শুধুমাত্র কোনও দৃশ্যের বা মুহূর্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এই টুকরো যাপন শব্দ এবং অক্ষরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বরং বলা ভাল, ডিজিটাল ফরম্যাট-এ যা কিছু, তার সমস্তটাই টুকরো করে নেওয়া, জোড়া দেওয়া কিংবা রূপান্তরিত করে নেওয়া যায় নিজের মতো করে। কে সমুদ্রতটের ছবি থেকে চায়ের দোকান বাদ দেবে, আর কে দোকানটিকে রাখবে, সেটি ব্যক্তির মনস্তাত্ত্বিক প্রেক্ষিতের উপর অনেকটা নির্ভরশীল। কিন্তু এই টুকরো যাপনের জন্যে প্রযুক্তির মাধ্যমকে দায়ী করা যায় না। কোনও সফটওয়্যার মানুষকে তা শেখায়নি। আমরাই একঘেয়ে জীবনের ওয়ালপেপার বদলে ফেলেছি! আশপাশের নিম্নমানের জীবনশৈলীর মানুষদের অনেক দিন আগে থেকেই বাদ দেওয়ার অভ্যাস রপ্ত করেছি। বৃদ্ধ বাবা-মা এবং পরিবারের সদস্যদেরও ছাড়িনি! তখন ফোটোশপ প্রযুক্তি কোথায়? পরিসংখ্যানের হিসাবে হয়তো এই টুকরো যাপনের মানুষগুলোর সংখ্যা বেশি, কিন্তু সেখানে গুণগত বুদ্ধিমত্তা এবং শিক্ষার মান খুঁজতে গেলে অনেককেই হতাশ হতে হবে। দুৰ্ভাগ্যজনক হলেও এই মূল্যবোধহীন জীবনশৈলীকেই মানুষ ‘কপি’ করতে চেয়েছে বারংবার। প্রতিটি মানুষই পরিপূর্ণ হতে চান, সেটাই স্বাভাবিক। কত জনের পক্ষে তা হওয়া সম্ভব? কিন্তু নিজেকে অন্যের মতো দেখার ইচ্ছাটুকু তো প্রতিটি মানুষেরই থাকতে পারে। মুঠোফোনে কোনও প্রযুক্তির মাধ্যমে যদি তার সুযোগ মেলে, তা হলে সেটিতে তার আত্মমগ্ন হয়ে যাওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।
শুরু থেকেই কলা এবং বিজ্ঞানের চলার পথটি ভিন্ন। একটিতে হৃদয়ের আবেগ এবং অনুভূতির প্রকাশ, আর একটিতে মস্তিষ্কের উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তি এবং যুক্তির ছন্দ। সাহিত্য এবং শিল্পকলার সঙ্গে মস্তিষ্কের ধূসর বস্তুর সম্পর্ক যে একেবারেই নেই, তা বলা যায় না। কিন্তু অনুভূতি আর আবেগ ছাড়া মানুষ নস্ট্যালজিক হতে পারে না। একটা সময় প্রত্যেকে তাঁর ফেলে আসা শৈশবের দিনগুলি স্মৃতির ক্যালাইডোস্কোপে দেখতে শুরু করেন। যাঁরা টুকরো যাপন করছেন, সফটওয়্যার-এ এডিট করা ছবি সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছেন, তাঁরাও যে খুব সুখে আছেন, তা নয়। তাঁরাও হয়তো অপেক্ষায় আছেন সেই ফোটোগ্রাফারের, যিনি সকলকে নিয়ে পারিবারিক অনুষ্ঠানের ছবি তুলতেন, টুকরো হয়ে যাওয়া জীবনগুলোকে যিনি একটি ফ্রেম-এর মধ্যে এক দিন নিয়ে আসবেন। আমরা বরং সেই দিনটির অপেক্ষা করতে পারি।
পিনাকী রুদ্র, কলকাতা-১২৪
স্মৃতিহীন টুকরো
‘অস্তিত্বের কাটাকুটি খেলা’ শীর্ষক প্রবন্ধটির প্রেক্ষিতে কিছু কথা। ‘সম্পর্কের হিমঘরে টুকরো টুকরো আপনি’ কথাগুলিতে সাম্প্রতিক খবরের কাগজের পাতায় স্থান করে নেওয়া ঘটনাগুলির বীভৎসতা মনে পড়ে গা শিউরে ওঠে। বাসের জানলা গলে চোখ চলে যায় সদ্যসমাপ্ত কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের বড় হোর্ডিংগুলির দিকে। বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই সত্যজিৎ রায়ের নায়ক সিনেমায় রেলগাড়ির ভিতর টেবিলে উত্তমকুমারের বিপরীতে বসে থাকা নায়িকাটিকে দেখে। সে দৃশ্যে স্বয়ং শর্মিলা ঠাকুরই অন্তর্হিত! ভারতীয় সিনেমার সঙ্গে বিশ্বকে জুড়তে গিয়ে হলিউডি এক নায়িকাকে উত্তমকুমারের বিপরীতে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রযুক্তির সূক্ষ্ম কারুকাজে বিস্ময়ের নিখুঁত বোধটুকু শুধুমাত্র হৃদয়ে জেগে ওঠে।
সরকারি বিজ্ঞাপনের চমকের ঘোর কাটতে না কাটতেই মানবিক অস্তিত্বের কাটাকুটি খেলা মনের কোণে ভিড় করে আসে। সত্যিই, সম্পর্ক এখন হিমঘরে স্মৃতিহীন টুকরোয় পর্যবসিত। বিজ্ঞান আশীর্বাদের সঙ্গে কোনও একখানে অভিশাপেও পর্যবসিত হয়! স্মৃতি-সত্তা-ভবিষ্যতের খেলায় মেতে ওঠা মানবিক গুণগুলি কখন যে আমরা প্রযুক্তির হাতে সঁপে দিই, নিজেরাও বুঝতে পারি না। খণ্ডিত জীবনদর্শনে ‘প্রাণের অস্তিত্ব’টুকুকে নিয়ত সম্পাদনায় ব্যস্ত আমরা এখন এক-এক জন দক্ষ সম্পাদক। ‘হায়ার অ্যান্ড ফায়ার’-এর সংস্কৃতি মনে রেখে অপছন্দের জিনিস সরিয়ে দিতে ব্যস্ত মানবমন এখন যান্ত্রিক। কাছের জনও এখন তাই টুকরো টুকরো হয়ে যান্ত্রিক হিমকুঠুরিতেই ঠাঁই করে নেয়। অভাবনীয় মানবমনের সূক্ষ্ম অস্তিত্বগুলিকে নিয়ে অবিরত কাজ করে চলা মন-গবেষকদেরও হতচকিত করে দেয়। মানুষের অবয়বে অজানতেই আমরা কখন যেন ‘অমানুষ’ হয়ে উঠি।
ভাল-মন্দ, সুশ্রী-কুৎসিত উভয়কে নিয়েই যে জীবন তরণীর দোলাচলে ভেসে চলা— সেই সরল সত্যটিকে আমরা যেন উপলব্ধি করতে ভুলে না যাই। এর পরিণতিতে এই সময় জুড়ে মানবমনের অস্তিত্বহীন গভীর সঙ্কটগুলি যেন জীবনটাকে সম্পাদিত ছায়াছবির এক একটি মুহূর্ত হিসেবে মনের কোটরে তুলে না রাখে।
সঞ্জয় রায়, হাওড়া
কাটাকুটি খেলা
বিশ্বজিৎ রায়ের প্রবন্ধটি বিশেষ মনোযোগ দাবি করে। স্বভাবে, জীবন যাপনে, মননে আপন অস্তিত্ব ও সত্তা নিয়ে মানুষের প্রশ্ন ও পর্যবেক্ষণ বহু প্রাচীন। ফলে এই প্রশ্নতাড়িত বিশ্লেষণ ও অনুসারী সিদ্ধান্তও বহু যুগ থেকেই বহমান। মহাবিশ্বের ব্যাপ্তি ও গভীরতা আয়ত্ত করার ইচ্ছে যতখানি মানুষকে প্রণোদিত করেছে, নিজেকে জানা ও বোঝার চেষ্টাও চলেছে অবিরত। আবহমান এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই উদ্ভূত হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি, যার প্রয়োগে স্মৃতি, সত্তা ও আপন শরীরিক অস্তিত্ব নিয়ে কাটাকুটি খেলায় মগ্ন হয়েছে মানুষ। প্রবন্ধকার ইঙ্গিত করেছেন এই খেলার দানবীয় পরিণতির দিকে, যেখানে মানুষই হয়ে উঠছে খেলার উপকরণ; প্রযুক্তির মিশেলে স্মৃতি ও সত্তার নির্মাণ-বিনির্মাণের আপাত নিরীহ যে খেলায় আমরা মৃত্যুরও মৃত্যু ঘটতে দেখব।
জয়ন্ত আচার্য, কলকাতা-১৫৬
মাটির স্বাস্থ্য
চাষের জমির গুণাগুণের সঙ্গে খাদ্যের পুষ্টিও জড়িত। অধিক পরিমাণ রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারে মাটির গুণ ও পুষ্টি নষ্ট হয়। চাষিরা অধিক ফসল পেতে জমিতে বেশি পরিমাণ ও নানান ধরনের রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেন। ফলে জমির স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। রোগ ও পোকার আক্রমণে ফসলও কমছে। আবার অন্য দিকে, মানবশরীরে বিষ ঢুকছে।
রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমাতে ‘মাটির স্বাস্থ্য কার্ড’ প্রকল্প চালু করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৫ সালে। চাষিরা এর মাধ্যমে জানতে পারবেন নিজের জমির পুষ্টিমান ও গুণ। এবং তাই দেখে ঠিক করবেন রাসায়নিক সারের সুষম ব্যবহার ও শস্য উৎপাদন। মাটি পরীক্ষা করে সার প্রয়োগ করলে ১০ শতাংশ রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমে ও চাষের খরচ বাঁচে। ফলন বৃদ্ধির মাধ্যমে কৃষকের আয়ও বাড়ে।
ভারত সরকারের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রকের অধীনে কৃষি ও সমবায় বিভাগ মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে কার্ড বিতরণের প্রকল্প চালু করেছিল। কিন্তু কৃষকের হাতে মাটির স্বাস্থ্য কার্ড তো দূরের কথা, প্রায় ৯৫ শতাংশ কৃষকের মাটির নমুনাই সংগ্রহ করা হয়নি। এই তথ্য উঠে এসেছে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার ১২০টি গ্রামের ৩২০০ জন কৃষক পরিবারের ক্ষেত্র সমীক্ষা থেকে। যাঁদের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, তাঁরাও রেজ়াল্ট হাতে পাননি। অবিলম্বে এই বিষয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা করা হোক।
প্রভাত কুমার শীট, মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy