‘সত্তার বহু স্বরই সংবিধানের মন্ত্র...’ (৯-২) শীর্ষক প্রতিবেদনে আশিস নন্দীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে, মনে পড়ে গেল, ও-পার বাংলার প্রথিতযশা রবীন্দ্রসঙ্গীত-শিল্পী কলিম শরাফি-র, ইউটিউবে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের কথা। আশিসবাবু বলেছেন, দেশভাগ-দাঙ্গায় বেঁচে যাওয়া মানুষদের ৪০ শতাংশকেই ভিন্ধর্মীরা বাঁচতে সাহায্য করেছেন।
‘গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং’-এর সময় এক সকালে, হেমন্ত মুখোপাধ্যায় হন্তদন্ত হয়ে দেবব্রত বিশ্বাসের বাড়িতে এসে জানালেন, গত কাল থেকে কলিমের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। দেবব্রত স্বভাবসুলভ রসিকতায় বললেন, ‘‘দেখো কোথায় মরে পড়ে আছে।’’ আসলে কলিম তখন দেবব্রত বিশ্বাসেরই খাটের নীচে শুয়ে। দাঙ্গাবিধ্বস্ত কলকাতায় টানা সাত দিন তিনি এ ভাবেই আত্মগোপন করেছিলেন।
কলিম শরাফি পরে কাজের সন্ধানে ও-পার বাংলায় চলে গেলেও, দেবব্রত বিশ্বাসের বাড়ির নিরাপদ আশ্রয়ের কথা কখনও বিস্মৃত হননি। সাক্ষাৎকারে সেই কথা বলেছেন।
বুদ্ধদেব বিশ্বাস
আসানসোল
জনসংখ্যা বিল
অলকা মালওয়াদে বসুর লেখা ‘সবার ভালর জন্য?’ (১১-২) শীর্ষক রচনাটি পড়ে হাসব না কাঁদব বুঝতে পারলাম না। সৃষ্টির আদি থেকে মানুষ জেনে এসেছে, মাথা গুনতি বাড়লে বরাদ্দ কমে। এই সাদা কথাটা বুঝতে অর্থনীতির গম্ভীর তত্ত্ব বা অঙ্কের সিঁড়িভাঙা সরল করতে লাগে না। কিন্তু এখন যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেনতেন প্রকারেণ ধর্মের সুড়সুড়ি ঢুকিয়ে নিবন্ধ না লিখলে, নম্বর কাটা যাবেই।
কারা হারাধনের দশটি ছেলের গল্প পড়ে বৃদ্ধ বয়সের যষ্টি-স্বরূপ এক কুড়ি সন্তানের আমদানি না করলে মানসিক কষ্ট পাবেন, অথবা কার সংখ্যালঘু হওয়ার আতঙ্কের একমাত্র দাওয়াই সন্তানগুরু হওয়া— তাঁদের কোমল মনে আঘাত দিয়ে জনসংখ্যা বিল আনলে মা ষষ্ঠী পাপ দেবেন, এই যেন লেখকের যুক্তি। লেখিকা এক বার বলছেন, মুসলিম সমাজ মাত্রেই যে লাগামছাড়া জনসংখ্যা বৃদ্ধি নয়, আন্তর্জাতিক সমীক্ষা তার প্রমাণ, অথচ তাঁর মতে এই বিল এলে মুসলিম সমাজ ও দরিদ্র প্রজাতির ‘ব্যক্তিগত’ স্তরে ক্ষতি হবে।
একটা পুকুরে কচুরিপানা বাড়তে বাড়তে একটা নির্দিষ্ট সীমা পেরিয়ে গেলে, তারা নিজেরাই নিজেদের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সারা বিশ্ব জুড়ে তোলপাড় করা এই জনবিস্ফোরণের সমস্যার কোনও অন্য সমাধানও উনি দিতে পারেননি। এ যেন ট্রাম্পের বিশ্ব উষ্ণায়ন সম্বন্ধে তাচ্ছিল্যের চেয়েও বেশি ভয়ানক। উনি চিনের এক সন্তান নীতির সমালোচনা করেছেন, কিন্তু এটা বলেননি দীর্ঘ ৩৫ বছর এক সন্তান নীতি অনুসরণ করার পর সেই নীতির প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়েছে চিনে।
গোটা লেখাটার বক্তব্য: উন্নয়ন, উন্নততর জীবনযাত্রা, পরিমিত জনসংখ্যায় নিয়ন্ত্রিত মানবসম্পদের বিকাশ— সব শিকেয় তুলে দিয়ে, কারও মনে ব্যথা না দিয়ে নির্বিঘ্নে অগুনতি সন্তান উৎপাদনের ব্যবস্থা করাই সরকারের মূল কাজ হওয়া উচিত। বলা যায় না, কালকে হয়তো গার্হস্থ্য হিংসা বিরোধী আইন নিয়ে প্রতিবাদ হবে, কারণ এতে পুরুষ সমাজের মনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে!
বনশ্রী দেব
কলকাতা-৫৫
জনবিস্ফোরণ
‘সবার ভালর জন্য?’ শীর্ষক নিবন্ধটি বিষয়ে এই চিঠি। বর্তমানে জনবিস্ফোরণ ভারতের অন্যতম প্রধান সমস্যা। ‘জনসংখ্যা বিল’ আনা মানেই নিম্নবর্ণ, সংখ্যালঘু, দরিদ্র বা পিছিয়ে পড়া অসহায় জনগোষ্ঠীকে শোষণ; এমন ধারণা একবিংশ শতাব্দীর ভারতকে আরও পিছিয়ে পড়তে সাহায্য করবে। ১২৫ কোটিরও বেশি লোকসংখ্যার বিপুল বোঝা অবশ্যই ভারতের উন্নয়নের অন্তরায়। লোকসংখ্যা কমার লক্ষণ নেই, দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। ট্রেন, বাস, হাট, বাজার, সর্বত্র থিকথিকে ভিড়। না আছে কর্মসংস্থান, না আছে রুটি-রুজির সুষ্ঠু ব্যবস্থা।
২৫ বছর জনস্বাস্থ্য বিভাগে চাকরি করার সুবাদে দেখেছি, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কেবল স্বাস্থ্যকর্মীর দায়িত্বের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এই জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে অন্য কোনও সরকারি দফতরের মাথাব্যথা নেই।
লেখিকা জানিয়েছেন, বৃদ্ধ বয়সে দেখাশোনা বা বিপর্যয় মোকাবিলার স্বার্থে মানুষ বেশি সন্তান কামনা করেন। প্রকৃত পক্ষে মনে হয়, জনগণ জানেই না, জন্মনিয়ন্ত্রণের উপকরণগুলি সরকারি ভাবে বিনামূল্যে পাওয়া যায়। দোকান থেকে কেনা কন্ডোমের পরিসংখ্যান প্রমাণ করে, বহু ধরনের জন্ম-নিরোধক সরকারি ভাবে সুলভ হলেও, কন্ডোম এখনও জনপ্রিয় গর্ভ-নিরোধক। কিন্তু কন্ডোমের ক্রয়ক্ষমতাও এক বৃহৎ জনগোষ্ঠীর নেই।
আর একটি বিষয় নিবন্ধে আলোচিত হতে পারত: পুত্রসন্তানের অতিরিক্ত কামনাও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ। পর পর তিন-চারটি কন্যা হওয়ার পরেও চলে পুত্রকামনায় পুনরায় গর্ভধারণ। গোরে মাটি দেওয়ার জন্য হোক বা স্বর্গে বাতি; পুত্রসন্তান অনগ্রসর জাতির পরম আকাঙ্ক্ষিত ধন।
জনসংখ্যার অধিক চাপে দিন দিন ভেঙে পড়ছে ভারতের উন্নয়নের চাকা। আমেরিকার গবেষণালব্ধ ফলাফল নয়, মানুষের স্বার্থেই অবিলম্বে চালু করা দরকার ‘হম দো হমারা দো’ নীতি।
কেয়া রায়
বলাই বাগ, উত্তর ২৪ পরগনা
দ্বিচারিতা
সরকারি ভাষণে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে রাজ্যপালের ভূয়সী প্রশংসা যে রাজ্যপালের মনের কথা নয়, তা পরে আবার সেই আইনশৃঙ্খলার তীব্র সমালোচনা করে বুঝিয়ে দিলেন রাজ্যপাল। বেশ কিছু বিষয়ে রাজ্যপাল আর রাজ্য সরকারের সংঘাত থাকলেও বলা হয়, সরকারের একপেশে স্তুতি-ভাষণটি সংবিধান মেনে রাজ্যপালকে পাঠ করতে হয়েছে। এটা দ্বিচারিতা নয়? আদালতে যদি ধর্মগ্রন্থে হাত রেখে ‘যাহা বলিব সত্য বলিব’ বলে শপথ নিতে হয়, বিধানসভাতেও সংবিধানে হাত রেখে এই পদ্ধতি চালু হোক।
দেবব্রত সেনগুপ্ত
কোন্নগর, হুগলি
খুশির মিছিল?
ভারত সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন-২০১৯ পাশ করার পর কিছু লোক অখুশি হয়েছেন, কিছু লোক খুশি হয়েছেন।
যাঁরা এই আইনের মধ্যে নিজেদের এবং দেশের বিপদ দেখছেন, তাঁরা মিটিং মিছিল করবেন, তা স্বাভাবিক। গণতন্ত্র এবং দেশের স্বার্থে এবং সরকারের কোনও ভুল হলে তাকে সংশোধনের স্বার্থে তার প্রয়োজন আছে। সেই সব মিটিং মিছিলের যন্ত্রণা আমরা কষ্ট হলেও মুখ বুজে সহ্য করি, কারণ বিপদে পড়লে মানুষ তো চিৎকার করবেই। আমার বিপদ হলেও আমিও করব।
কিন্তু যাঁরা এই অাইনে খুশি, যাঁরা মনে করছেন সরকার তাঁদের সমস্যা সমাধান করে দিয়েছেন, তাঁরা নিশ্চিন্ত হয়ে ঘরে থাকতে পারছেন না কেন? অভিনন্দন যাত্রা করছেন কেন? অভিনন্দন জানাবার ঠেলায় মানুষের চলাফেরার অসুবিধে করার অর্থ কী?
জয়ন্ত পাল
ঘোড়াপীর, মালদহ
তফাত নেই
হলুদ ট্যাক্সি ছেড়ে অ্যাপ-ক্যাবের দিকে আমরা ঝুঁকেছিলাম, কারণ হলুদ ট্যাক্সির চালকেরা প্রায় সব সময়ই জিজ্ঞেস করতেন, ‘কোথায় যাবেন?’ তার পর, গন্তব্য জেনে, স্থির করতেন সওয়ারিকে আদৌ নেবেন কি না। অ্যাপ-ক্যাব এখন হুবহু একই কাজ করছে। অধিকাংশ চালক জিজ্ঞেস করছেন, গন্তব্য কী? পছন্দ না হলে, ক্যানসেল করে দিচ্ছেন। প্রায়ই সে জন্য টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে যাত্রীর!
তিতাস সরকার
কলকাতা-৬৮
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy