স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর ‘স্মৃতির বইমেলা’ (রবিবাসরীয়, ৬-৩) পড়তে পড়তে ফিরে এল কিছু স্মৃতি। আমার বইমেলা যাওয়ার শুরু স্কুলজীবনের শেষ দিকে, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে। তখন সামর্থ্য ছিল না নতুন বই কিনে পড়ার। কিন্তু যেতাম কয়েকটি কারণে— নতুন বইয়ে হাত বোলানো, স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে যতটা পাওয়া যায় পড়ার সুযোগ, নতুন বইয়ের সুবাস। আর সবচেয়ে উৎসাহ ছিল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় প্রমুখকে চাক্ষুষ দেখার জন্য। ওঁরা একটা স্টলে বসে গল্প করতেন, দূর থেকে দেখতাম। এক বার সুযোগ হয়েছিল বুদ্ধদেব গুহকে দেখার। তার পর চলে যাই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে বাইরে, কলেজে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ছুটি থাকত না বলে প্রচণ্ড অভাব বোধ করতাম বইমেলার। মনের সুখে বইমেলার আস্বাদ নিয়েছি কলকাতাতে চাকরিকালীন। ছোটবেলার বই কিনতে না পারার খেদ মিটিয়েছি তখন। আজও বার বার পড়ি সে সময়ে কেনা শরৎ রচনাবলী, বিভূতি রচনাবলী, পূর্ব-পশ্চিম, সেই সময়, মাধুকরী, হাজার চুরাশির মা, ন হন্যতে, পদ্মা নদীর মাঝি— এমন আরও অনেক বই।
কষ্ট হয় যখন দেখি বই পড়ার অভ্যাস দিন দিন কমে যাচ্ছে। পাঠ্যক্রমের লেখাপড়া শেষ হলে বহু জনের জীবন থেকে বই চিরতরে হারিয়ে যায়। আমরা ছোটবেলায় ভাই-বোনেরা কাড়াকাড়ি করে, হুমড়ি খেয়ে পড়তাম বাঁটুল, নন্টে-ফন্টে, হাঁদা-ভোঁদার কাহিনি। পাড়ার গ্রন্থাগারে গিয়ে কিংবা ধার করে বই পড়ার অভ্যাস ছিল। বইটি হাতে হাতে ঘুরতে ঘুরতে জীর্ণ হয়ে যেত। একই ধারা অব্যাহত ছিল কলেজ হস্টেলেও। আজকের বাচ্চারা অ্যাকাডেমিক বইয়ের ব্যাগের ভারে হিমশিম। বাকি সময় ব্যস্ত ওরা মোবাইলে। কিন্তু এতে কী শিশুদের মেধার বিকাশ ঘটছে? মেধা ও মননের বিকাশে বই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ সম্পদ, খেলাধুলার পাশাপাশি— যেটা অনুপস্থিত এই শিশুদের ক্ষেত্রে। তাই গোড়া থেকেই চেষ্টা করতে হবে যাতে ওদের বই পড়ার আগ্রহ বাড়ে, বই কিনে উপহার দিতে হবে। ছোটবেলাতে আমরা বন্ধুর জন্মদিনে একটা বই উপহার হিসেবে নিয়ে যেতাম। আর এখন আমরা ধরিয়ে দিই একটা চকলেটের বাক্স কিংবা ওই জাতীয় কিছু। ১৯৮০-’৯০ সালে দেখেছি, অনেকেই বন্ধুর বিয়েতে উপহার দিতেন বিখ্যাত লেখকের উপন্যাস। আর এখন আমরা নিয়ে যাই খামের ভিতরে গিফট চেক অথবা কোনও গিফট কার্ড।
বিমল মিত্রের একটি গল্পে পড়েছিলাম, ভাইঝির বিয়ে ঠিক করতে এক পণ্ডিতমশাই গিয়েছিলেন জমিদার বাড়িতে। তাঁর সব পছন্দ, তবু বিয়ে দিতে রাজি হলেন না। কারণ একটাই, এত বড় ঘর, এত বৈভব, কিন্তু ঘরে কোথাও বইয়ের চিহ্ন নেই।
সুপ্রিয় দেবরায়, বরোদা, গুজরাত
লেখকের দর্শন
স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর প্রবন্ধটি পড়ে খুব ভাল লাগল। বইমেলাকে নিয়ে কত যে সুন্দর সুন্দর স্মৃতি মনে পড়ে যাচ্ছিল আমারও! কলকাতা বইমেলার কাছে আমি একটি বিশেষ কারণে কৃতজ্ঞ। কারণটি হল, এই বইমেলাই সুযোগ করে দিয়েছে আমায় বারে বারে আমার প্রিয় সাহিত্যিকদের সঙ্গে কয়েক মিনিট সময় কাটানোর, এবং তাঁদের সঙ্গে কথা বলার।
আমি ছোটবেলা থেকেই ‘অর্জুন’ চরিত্রটির দারুণ ভক্ত। তখন আমি ক্লাস সিক্স কি সেভেনে পড়ি। বইমেলায় গিয়েছি বাবা-মায়ের সঙ্গে। তখন ময়দানে হত বইমেলা। মেলার মাঠে পা দিয়েই সেই বিকেলে আমার বাবা বলেছিলেন, “আজ তোর জন্য একটা সারপ্রাইজ় আছে।” তার পর হাত ধরে সোজা নিয়ে গেলেন একটা স্টলে। মাঝারি মাপের স্টলের ভিতরে বেশ ভিড়। কেনাকাটা চলছে এক দিকে, আর অন্য দিকে এক ভদ্রলোক স্টলের এক পাশে রাখা একটা সোফায় বসে সই করছেন বইয়ে, একের পর এক। বাবা আমাকে ওই ভদ্রলোককে দেখিয়ে বললেন, “উনি কে বল তো? তোর প্রিয় লেখক সমরেশ মজুমদার। অর্জুনের স্রষ্টা।” আমি তো থ বাবার কথা শুনে। ইনিই সমরেশ মজুমদার! আমার হতভম্ব ভাব কাটতে কিছু ক্ষণ সময় লেগেছিল, মনে আছে বেশ। তার পর বাবা ওই স্টল থেকেই একটা বই কিনে দিলেন সমরেশ মজুমদারের লেখা। সেইটাতেই সে দিন সই নিয়েছিলাম সমরেশবাবুর। সেই সই আজও সযত্নে রাখা আছে।
কলকাতা বইমেলাতেই কখনও দেখা পেয়েছি শংকরের, কখনও বা সুচিত্রা ভট্টাচার্যের, আবার কখনও জয় গোস্বামীর। পাঠক-পাঠিকাদের একেবারে সামনা-সামনি প্রিয় লেখক-লেখিকাদের নিয়ে আসার কাজটি করে চলেছে কলকাতা বইমেলা, বছরের পর বছর ধরে। এর জন্য, এই বইমেলার একটি আন্তরিক ধন্যবাদ প্রাপ্য।
সৌরীশ মিশ্র, কলকাতা-৯১
কমিকসের দুনিয়া
কৈশোরে আমরা প্রত্যেকেই কমবেশি কমিকসের প্রেমে পড়েছি। বই পড়া ও বই ভালবাসার শুরু ওই কমিকস হাতে নিয়েই। আমরা যারা আশি বা নব্বইয়ের দশকে জন্মেছি, সেই সময়ে বাড়ির বড়দের থেকে পাওয়া পয়সা, বা টিফিনের পয়সা জমিয়ে সস্তায় রঙিন ঝকঝকে কমিকস কেনা ও পড়া যেন এক নেশা ছিল। এ প্রসঙ্গে প্রথমেই মনে পড়ে নারায়ণ দেবনাথের নাম। নারায়ণ দেবনাথ ছোটদের কথা ভেবে আমাদের বন্ধু করে তুলেছিলেন বাঁটুল, নন্টে-ফন্টে, হাঁদা-ভোদাকে। বিশাল বপুর বাঁটুল ছিল আমাদের কাছে যেন এক ‘আইডল’। নন্টে-ফন্টে, কেল্টুদার খুনসুটি, হাঁদা-ভোঁদার কাণ্ডকারখানা আমরা খুব উপভোগ করতাম। সে সময় মাত্র ৪-৫ টাকায় ওই সাদা-কালো কমিকসের বইগুলি ছিল আমাদের অবসরের পরম বন্ধু। আমাদের বই পড়ার হাতেখড়ি। এই আশি ও নব্বইয়ের দশকে আরও কিছু জনপ্রিয় কমিকস ছিল আমাদের কাছে অতি লোভনীয়, যেমন রঙিন পাতার ইন্দ্রজাল কমিকস, অরণ্যদেব। অরণ্যদেবের অ্যাডভেঞ্চার কিশোর পাঠকদের এক ফ্যান্টাসির জগতে নিয়ে যেত। এ ছাড়া ছিল নীতিকথা বিষয়ক চাঁদমামা। কিশোর পাঠকদের কমিকসের মাধ্যমে নীতিশিক্ষা দেওয়ার দায়িত্বটা নিপুণ ভাবে পালন করত ওই পত্রিকা। ডায়মন্ড কমিকস বার করত শিল্পী প্রাণের অমর সৃষ্টি চাচা চৌধুরীকে। চাচাজি দৈত্যাকার ‘সাবু’কে সঙ্গে নিয়ে সকল সমস্যার সমাধান করে দিতেন। আর ছিল অ্যাডভেঞ্চার জগতের নায়ক টিনটিন। টিনটিনের সঙ্গে অ্যাডভেঞ্চার করতে আমরা কঙ্গো থেকে আমাজ়ন, মিশর থেকে সোভিয়েট কোথায় না গিয়েছি। সহজলভ্য ও সুলভ মূল্যের কমিকসগুলো এক দিকে যেমন আমাদের চাপমুক্ত রাখত , পাশাপাশি একাকিত্ব দূর করত। আর বই পড়ার প্রবণতাও জাগিয়ে তুলত। এইগুলোই ছিল আমাদের শখের লাইব্রেরি গঠনের প্রথম ধাপ। আজকের তথ্যপ্রযুক্তি-নির্ভর জীবনে এই কমিকসগুলো যেন হারিয়ে গিয়েছে। আসলে কৈশোরের সেই সারল্যে ভরা দিনগুলো আর নেই। চার দিকে শুধুই প্রতিযোগিতার চাপ। তারই মাঝে কিছু কমিকস এখনও লড়াই চালাচ্ছে কৈশোরকে আনন্দময় রাখতে।
ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়, হাকিমপাড়া, শিলিগুড়ি
ফ্লেক্স সরান
পশ্চিমবঙ্গে আপাতত পুরনির্বাচন শেষ। অথচ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পোস্টার, ব্যানার, ফ্লেক্স রাস্তাঘাট জুড়ে বিরাজমান। প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের কাছে বিনীত আবেদন, এ বারে এই সব দৃশ্যদূষণকারী পোস্টার খুলে ফেলুন। যদি আপনারা প্রকৃত অর্থে জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা স্বীকার করেন, তা হলে নির্বাচনের পরেও সে দায় ফুরোয় না। ‘নির্মল বাংলা’ বা ‘স্বচ্ছ ভারত’— যে কোনও প্রকল্পের নিরিখে এই সামগ্রীগুলো এখন জঞ্জাল। পারলে বড় ফ্লেক্সগুলো রিকশাওয়ালা বা ফুটপাতবাসী মানুষদের দান করুন। গাড়ির ছাউনি তৈরি করতে, বা ঘরের আচ্ছাদন করতে সুবিধা হবে।
সৌমিত্র বিশ্বাস, কলকাতা-২৮
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy