‘টাট্টু ঘোড়ার গাড়িতে চেপে কল-এ যেতেন’ (পত্রিকা, ১১-৫) শীর্ষক প্রবন্ধের প্রেক্ষিতে কিছু কথা। লেখা হয়েছে, এক নম্বরের জন্য অকৃতকার্য হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত এমবি ডিগ্রির বদলে কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়কে ‘‘দেওয়া হয়েছিল গ্র্যাজুয়েট অব দ্য মেডিক্যাল কলেজ অব বেঙ্গল বা জি এম সি বি উপাধি।’’ ‘সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান’-এ কিন্তু বলা হয়েছে ‘অধ্যক্ষ প্রদত্ত’ উপাধিটি ছিল জিবিএমসি বা গ্র্যাজুয়েট অব বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ। আবার কাদম্বিনীর ঠিক জন্মসাল নিয়ে সবাই একমত না হলেও প্রবন্ধকার বেশ জোরের সঙ্গে জানিয়েছেন ‘রবীন্দ্রনাথের জন্মসালেই’ ১৮৬১-তে তাঁর জন্ম। অনেকে ১৮৬২-ও বলেন। তেমন উল্লেখ থাকলে ভাল হত।
‘হিন্দু মহিলা বিদ্যালয়’ স্থাপনের নেপথ্যে অ্যানেট অ্যাক্রয়েড-এর ভূমিকা প্রবন্ধটিতে খুবই সাদামাটা ভাবে দেখানো হয়েছে। বিদেশ থেকে আসা এই মহিলার অবদান কিন্তু উপেক্ষণীয় নয়। বরং তাঁর আন্তরিক প্রয়াসের ঐতিহাসিক মূল্য অবশ্যই স্বীকার করা উচিত। মনে রাখতে হবে, কেশবচন্দ্র সেনের উৎসাহে প্রাণিত হয়ে নারী শিক্ষা প্রসারের জন্যই তাঁর আগমন। কিন্তু কেশবের সঙ্গে একমত হতে না পারায় তিনি ‘উন্নতিশীল ব্রাহ্ম’দের দলে ভিড়ে যান। কেননা তাঁরাই তখন চেয়েছিলেন, ‘‘বিশ্বের জ্ঞান ভাণ্ডারের সমস্ত শাখায় মেয়েরা বিরাজ করুন।’’ পরে উদারদৃষ্টি দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় দুর্গামোহন দাস মনোমোহন বসু প্রমুখের সঙ্গে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘হিন্দু মহিলা বিদ্যালয়’। বিদ্যালয়টিকে দাঁড় করাবার ব্যাপারে অ্যাক্রয়েড-এর অনুরোধে এগিয়ে আসেন কয়েক জন ইংরেজও— বিচারপতি ফিয়ার, তাঁর স্ত্রী এমিলি ফিয়ার, বরিশালের ম্যাজিস্ট্রেট হেনরি বিভারিজ প্রমুখ। তবে প্রধান শিক্ষিকার পদে আসীন হয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করলেও, আড়াই বছর পর হেনরি বিভারিজকে বিয়ে করে অ্যাক্রয়েড অন্যত্র চলে যান। তখন হাল ধরেন এমিলি ফিয়ার। বছরখানেক স্কুল চালালেও তিনি আর শেষ পর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেননি। এ ভাবে নারীশিক্ষার প্রথম প্রতিষ্ঠানটি একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।
কিন্তু দু’চার মাসের মধ্যেই ‘বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়’ নামে তার পুনর্জীবন ঘটে। এ ব্যাপারে এগিয়ে আসেন মূলত তিন জন— দ্বারকানাথ, দুর্গামোহন আর আনন্দমোহন বসু। তাঁরা টাকা দিয়েও সাহায্য করেন নিয়মিত। তবে পরিশ্রমের দিক থেকে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছেন দ্বারকানাথ। শিবনাথ শাস্ত্রীও সে কথা বলে গিয়েছেন, দ্বারকানাথ ‘‘দিনরাত্রি বিশ্রাম না নিয়ে ঐ স্কুলের উন্নতিসাধনে দেহমন নিয়োগ করিলেন।’’ স্কুলটি সম্বন্ধে বেথুন স্কুল কমিটির সভাপতি বিচারপতি ফিয়ার এতটাই খুশি ছিলেন যে, যাতে আর ‘হিন্দু মহিলা বিদ্যালয়’-এর মতো শোচনীয় দশা না হয়, সে জন্য বিলেত যাওয়ার আগে তিনি নিজে চিঠি লিখে বেথুন স্কুলের সঙ্গে এই ‘উৎকৃষ্ট শিক্ষায়তন’কে যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়ে যান। বলা বাহুল্য, প্রস্তাবটি কার্যকর হয়।
এটা আজ স্বীকৃত সত্য যে, কলকাতার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার সময় থেকেই কাদম্বিনীকে অনেক ব্যঙ্গবিদ্রুপ সহ্য করতে হয়। রক্ষণশীলরা বলত, ক্লাস রুমে উপস্থিত হয়ে শিক্ষকের সমস্ত বক্তৃতা (লেকচার) না শুনলে পরীক্ষায় পাশ করা যায় না— এমনই যখন নিয়ম, তখন বিয়ে হওয়া পড়ুয়া ছাত্রী গর্ভবতী হয়ে পড়লে তো প্রসবকালীন অবস্থায় একেবারেই উপস্থিত থাকতে পারবে না! দ্বারকানাথের সঙ্গে তখন কাদম্বিনীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে, তাই তাঁর উদ্দেশেই যে এমন মন্তব্য বুঝে নিতে অসুবিধে হয় না। সে সময় আর এক মর্যাদাহানিকর বিদ্রুপও ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছিল— বোর্ডিং কলেজে পড়ুয়া ছেলেদের দু’জনকে যখন একঘরে থাকতে হয়, তখন এক ছাত্রের সঙ্গেই কি আর এক পড়ুয়া ছাত্রী রাত্রিবাস করবে? জবাব দিয়েছিল আনন্দবাজার পত্রিকা। ১৮৮৩-র ২ জুলাই লেখা হল, ‘‘আমাদিগের বিবেচনায় স্ত্রীলোকের জন্য স্বতন্ত্র বন্দোবস্ত করা কর্ত্তব্য।’’
পরে স্বাধীন ভাবে প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করলেও, ব্যঙ্গবিদ্রুপ কাদম্বিনীর পিছু ছাড়েনি। অস্বস্তিকর পরিস্থিতির শিকারও হতে হয়েছে তাঁকে। স্ত্রী-রোগী দেখানোর নাম করে অনেক সময়ই তাঁকে ডেকে নিয়ে গিয়ে বাধ্য করা হত যৌন রোগে আক্রান্ত পুরুষ রোগীকে দেখতে। এমনই সব সামাজিক উপদ্রব তাঁকে বার বার ছোবল মেরেছিল।
সমাজসেবাতেও কাদম্বিনী ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। ১৮১৪ শকাব্দ ১ চৈত্রের ‘তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা’ জানিয়েছে, ‘‘আমাদের শ্রদ্ধেয় ভগ্নী শ্রীমতী কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় মহাশয়া চিকাগো প্রদর্শনী উপলক্ষে তথায় গমন করিয়াছেন। এদেশের দুর্দশাগ্রস্ত রমনীকুলের উন্নতির জন্য সেখানে কোনও উপায় করিতে পারেন কিনা এই মহদুদ্দেশ্য হৃদয়ে ধারণ করিয়া তিনি তথায় যাত্রা করিয়াছেন।’’ ‘রাষ্ট্রীয় অধিকার’ সম্বন্ধে মেয়েদের সচেতন করার প্রয়াসও তিনি করেছেন। খনিতে ‘মজুরানি’দের কাজ বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে তিনি নিজে বিহার-ওড়িশার কয়েকটি খনিতে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথাও বলে আসেন।
দেশের মহিলাদের মধ্যে কাদম্বিনী যেমন কংগ্রেসি সভায় প্রথম বক্তৃতা করেন, তেমনই ‘সমাজসংস্কার সমিতি’রও তিনি ছিলেন প্রথম মহিলা বক্তা। প্রাইভেট প্র্যাকটিসে জড়িয়ে পড়লেও ১৮৯৪ সালে তাঁকে ক্যাম্পবেল মেডিক্যাল স্কুলের ছাত্রীদের স্ত্রীরোগ বিষয়ে শিক্ষাদানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর আগে দেশের কোনও মহিলা এমন শিক্ষিকার পদ অলঙ্কৃত করেনি। এ দিক থেকেও কাদম্বিনীর স্বাতন্ত্র্য স্মরণীয়।
বাণীবরণ সেনগুপ্ত
শ্যামনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
মনের ভার?
ব্যাগ যাক ফোন থাক (২৪-৫) শীর্ষক চিঠিতে, স্কুলব্যাগের ভার লাঘব করার উদ্দেশ্যে বইয়ের বদলে স্মার্টফোন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। তা ছাত্রছাত্রীদের পিঠের ভার হয়তো লাঘব করবে, কিন্তু তাদের মন আর মস্তিষ্কের ভার কতটা লাঘব করবে, সন্দেহ আছে। আজকের এই সময়ে, যখন অর্ধেক ছেলেমেয়ে বই পড়া বা লেখার মধ্যে মনে মনে নিজের জগতে কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটাতে অনিচ্ছুক, ভাষার প্রতি অজ্ঞতা যেখানে গর্বের বিষয়, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে স্মার্টফোনের জগৎ তাদের কতটা এগিয়ে দেবে? বহুল ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুকের হাতছানি তখন তাদের প্রিয় বিষয় না হয়ে ওঠে!
জয়ী চৌধুরী
কলকাতা-১১০
এখন পরামর্শ?
মন্ত্রী এখন শিক্ষার উন্নতির জন্য ছাত্র, শিক্ষক ও শিক্ষানুরাগীদের থেকে পরামর্শ চাইছেন। দলের স্বার্থ দেখতে গিয়ে শিক্ষক পেটানো, দলীয় ছাত্রদের আড়াল করা, নির্বাচিত ছাত্র ইউনিয়ন প্রথা তুলে সাজানো ইউনিয়নের ব্যবস্থা করা, ছাত্র ভর্তির সময়ে অসৎ নেতাদের নিরুপায় ছাত্রদের থেকে জোর করে টাকা আদায় করা, যখন তখন যত দিন খুশি কলেজ ও বিদ্যালয়ে ছুটি ঘোষণা করা, এ সব যখন ঘটছিল তখন মন্ত্রীমশায় চোখ বুজে ছিলেন। এখন ছাত্রদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা এমন কায়েম হয়েছে, তারা ফেল করেও পাশ করার বায়নাই শুধু করছে না, অন্যায় আন্দোলন করে চাপ সৃষ্টি করছে।
বিজন ভট্টাচার্য
কলকাতা-২৮
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
ভ্রম সংশোধন
‘ফি-বছর লক্ষ লক্ষ পড়ুয়া কমছে স্কুলে...’ শীর্ষক সংবাদ প্রতিবেদনে (রাজ্য, পৃ ৬, ৩-৬) পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসুর জায়গায় সৌগত রায় লেখা হয়েছে।
‘ছেঁকে ভর্তি হওয়ায় সাফল্য সরকারি স্কুল’ শীর্ষক সংবাদ প্রতিবেদনে (রাজ্য, পৃ ৬, ২৯-৫) টাকি হাউস মাল্টিপারপাস গার্লস হাই স্কুল এবং টাকি হাউস মাল্টিপারপাস স্কুল ফর বয়েজকে সরকারি স্কুলের মধ্যে পড়ে বলে লেখা হয়েছে। এই স্কুল দু’টি সরকার পোষিত স্কুল।
অনিচ্ছাকৃত এই ভুলগুলির জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy