সঙ্গোপনে ঘটে চলা নিদারুণ সত্যিগুলোকে নিপুণ ভাবে বাস্তবের আলোয় মেলে ধরেছেন রূপালী গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ‘মেয়েরা কেন সয়ে যায়’ (১৬-১২) প্রবন্ধে। বিবাহিত মেয়েদের একটা বড় অংশ অনিচ্ছার সঙ্গে সংসার যাপন করেন, অধিকাংশের শ্বশুরবাড়িতে সুষ্ঠু মানসিক পরিসর থাকে না। দায়িত্ব ও কর্তব্যের নিগড়ে বাঁধা, খোপবন্দি সাংসারিক জীবনে নিরন্তর নিজের সঙ্গে লড়াই করতে করতে শরীরে-মনে ক্রমশ ক্ষয়ে যেতে থাকেন মেয়েরা। তবুও সংসার ছেড়ে বেরিয়ে আসার দুঃসাহস সবাই দেখাতে পারেন না। কারণ সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, একা হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। পাছে মা-বাবার সম্মানহানি হয়, কর্মক্ষেত্রে তাঁকে ঘিরে অকারণ কৌতূহলী চর্চা হয়, তাই অনেক মেয়ে বাধ্য হন সংসারে থাকতে। বাবা-মাও, বুঝিয়ে-সুজিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দিতে চান তাঁরা। শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধ পরিস্থিতির সঙ্গে যুঝতে যুঝতে ক্রমশ অবসাদে তলিয়ে যেতে থাকেন অনেকে। তবুও আইনের দ্বারস্থ হতে কুণ্ঠিত হন মেয়েরা।
অন্য দিকে সমস্যা, স্মার্টফোনে পাতা প্রেমের মায়াফাঁদে ঝাঁকে ঝাঁকে কমবয়সি মেয়েরা আটকা পড়ছে। গ্ৰামাঞ্চলে পাড়ায় পাড়ায় উদয় হয় দালাল গোছের কিছু মাতব্বর, দারিদ্রের সুযোগে কিছু টাকা ও স্মার্টফোন দিয়ে বাড়ির লোকেদের সঙ্গে ভাব জমায়। এর পর বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে, বা প্রেমের সম্পর্ক গড়ে মেয়েটিকে ভুলিয়ে ঘর থেকে বার করে নিয়ে যায়। তার পর সে বেপাত্তা হয়ে যায়। এই একই নাটক বার বার হচ্ছে প্রত্যন্ত এলাকায়। পরিবারের সদস্যরা পুলিশ-প্রশাসনকে ভয় পায়, তাই এড়িয়ে চলে। স্কুলছুট মেয়েদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে এমনই অভিজ্ঞতা আমার।
প্রবন্ধকার আইনের সাহায্য নিতে বলেছেন। আমার বাড়ির কর্মসহায়িকা তাঁর মেয়ের জন্য সুবিচারের আশায় আইনের দ্বারস্থ হয়েছেন প্রায় আট বছর হল। প্রায়ই ধারদেনা করে উকিলের পারিশ্রমিক মেটান। মামলা চলছেই, কবে সুরাহা মিলবে— জানা নেই! এখন মেয়েটি আক্ষেপ করে, সয়ে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে থাকলে মাকে অন্তত ধারদেনা করতে হত না! আইনের সুফল পেতে হলে যথেষ্ট অর্থসংস্থানের প্রয়োজন।
শুভ্রা সামন্তবালিচক, পশ্চিম মেদিনীপুর
বৃথা দুর্নাম
রূপালী গঙ্গোপাধ্যায় বাস্তবচিত্রই বর্ণনা করেছেন। আজও গার্হস্থ বা সামাজিক হিংসা, শরীর-মনের উপর অত্যাচার সহ্য করতে হয় মেয়েদের। কোনও বিবাহিতা মেয়ে তিন-চার দিন বাবার বাড়ি থাকলেই পাড়া-প্রতিবেশী থেকে আত্মীয়স্বজন সকলের প্রশ্ন, “মেয়ে বাপের বাড়ি রয়েছে, শ্বশুরবাড়ি যায়নি?” মা-বাবার সমস্যা হয় না, কিন্তু বাকিদের খুব সমস্যা হয়। ওই সব চিন্তা করে অনেকেই বাড়ির মানুষের সঙ্গেও দুঃখ ভাগ করতে পারেন না। কখনও তার করুণ পরিণতি হয় আত্মহত্যা। কবিগুরু ‘সবলা’ কবিতায় যথার্থই বলেছেন, “নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার, কেন নাহি দিবে অধিকার, হে বিধাতা?” চাকরিরতা, হস্তশিল্পী, ব্যবসায়ী কিংবা হোমমেকার, পরিচয় যা-ই হোক, কেন এক জন মেয়ে সব কিছু সইবেন! অধিকার বুঝে নিয়ে গুছিয়ে সংসার করবেন তাঁরা। মেয়েদেরই নিজেদের অবস্থান বুঝতে হবে, নিজেদের জন্য লড়তে হবে।
তন্দ্রা ধবলকেন্দুয়াডিহি, বাঁকুড়া
ভুল মন্ত্র
‘মেয়েরা কেন সয়ে যায়’ প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। অস্তিত্বের পরপার থেকে শোনা যায় ওই নাবালিকার কান্না “বড্ড যন্ত্রণা মা। আমি বোধ হয় আর বাঁচব না।” রক্তাক্ত বিছানায় যন্ত্রণাবিদ্ধ অবস্থায় সে যখন মৃত্যুর মুখোমুখি, কেউ পারেনি তাকে তখন চিকিৎসার আশ্বাস দিতে, কিংবা বেঁচে থাকার কোনও আশা দেখাতে। ন্যায়ের আশা তখন তার চিন্তার অতীত। স্বজন-পরিজন কিংবা মা-বাবার ভুবন জুড়ে ছিল ভয়ের অন্ধকার। ঘর পুড়ে যাওয়ার ভয়, লজ্জিত হয়ে বেঁচে থাকার ভয়। কারণ, তাঁদের মেয়ে ধর্ষিতা হয়েছে। ধর্ষণকারীদের কোনও ভয় নেই সমাজের অথবা আইনকানুনের। যত ভয়, অপবাদ, লজ্জা, সব কিছু প্রাপ্য ধর্ষিতা এবং তার আত্মীয়-পরিজনদের।
ধর্ষণ কিংবা অগ্নিসংযোগে গণহত্যার ঘটনাগুলি দেখাচ্ছে যে, এ দেশে আইনের শাসন নেই, নারীর নিরাপত্তা নেই, আহতের চিকিৎসা নেই। আছে শুধু সর্বগ্রাসী ভয়। দেহ দাহ হওয়ার পর ধর্ষণের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়, চিকিৎসকের দেওয়া মৃত্যুর নথি ব্যতিরেকে করা হয় দাহ, লোপাট হয় সাক্ষ্যপ্রমাণ, অপরাধ ঘটে পুলিশ-প্রশাসনের সামনে।
সত্তর-আশির দশকে যখন কোনও বালিকা অথবা কিশোরী এসে বাড়িতে নালিশ করত পাড়ার দাদা অথবা কাকার নামে, গুরুজনদের বলতে শোনা যেত, “তোর সঙ্গেই এ সব করে কেন! নিজেকে সাবধানে রাখতে শেখ।” শিখে যেত তারা নিগৃহীত হওয়ার ঘটনাগুলি লুকিয়ে রাখতে। নিপীড়িত-নির্যাতিত কিশোরী অথবা নারীদের আমরা, অভিভাবকরাই পরামর্শ দিই— সামলে চলো, চেষ্টা করো ঝামেলা থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে।
আজ নারী নির্যাতন, ধর্ষণ যে কদর্য রূপ নিয়েছে, তার সঙ্গে অনেকাংশেই রাজনীতি মিশে গিয়েছে। মহাভারতের কালেও যাঁরা বয়োজ্যেষ্ঠ অথবা অভিভাবক ছিলেন, যাঁরা পারতেন নারীর নিগ্রহ, লাঞ্ছনা ঠেকাতে, তাঁরা তা করেননি। ঠিক সেই রকমই আজ আমরা, যারা অনেকেই ঠেকাতে পারি নারী নির্যাতনের ঘটনাগুলি, তারাও বলে চলি ‘রয়ে যাও, সয়ে যাও।’ দরকার— এই মন্ত্রের বিসর্জন।
সুপ্রিয় দেবরায়বরোদা, গুজরাত
ছ’মাসে সেনা?
রঞ্জিত শূরের ‘অগ্নিবীর নিয়ে ধামাচাপা নয়’ (২০-১২) প্রবন্ধটির প্রেক্ষিতে এই পত্র। ২০২২-এ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে এই প্রকল্প চালু হওয়ার পরে তিন জন বীরের অকালমৃত্যু ঘটেছে। প্রকল্প চালুর আগে দেশ জুড়ে যুবসমাজ প্রতিবাদের আগুন জ্বেলেছিল। তা উপেক্ষা করেই প্রকল্প শুরু হয়েছে। কিন্তু অচিরেই এর কুফল দেখা দিতে শুরু করেছে।
মনেপ্রাণে দেশমাতৃকার রক্ষার কাজে সেনা হয়ে ওঠার জন্য ছ’মাসের ট্রেনিং কোনও ট্রেনিং-ই নয়। এ ছাড়াও ট্রেনিং-শেষে চার বছরের জন্যে সেনার কাজে নিযুক্তি কোনও ভাবেই তাকে প্রকৃত সৈনিক করে তুলতে পারে না। অবশ্যই দেশের সরকার এবং সেনাবাহিনী যদি না যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের কেবলমাত্র মানবঢাল হিসাবে ব্যবহার করতে চায়। তৎকালীন সেনাধ্যক্ষও এমন আশঙ্কা করেছিলেন, যা তিনি জানিয়েছেন তাঁর রচিত ফোর স্টারস অব ডেস্টিনি বইতে। তিনি তো প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন, ‘ট্যুর অব ডিউটি’ নামের এক প্রকল্পের প্রস্তাব নিয়ে। সে প্রস্তাব ঘুরে গিয়ে দাঁড়াল অগ্নিবীর প্রকল্পে। এখানেও রাজনীতিকদের জয়!
মানছি, নিয়মিত সৈনিকের অবসরকালীন পেনশন, গ্র্যাচুইটি ইত্যাদির ভার বহন করা সরকারের পক্ষে বোঝা। কিন্তু তাতে তো হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে স্মৃতিসৌধ, নতুন সংসদ ভবন নির্মাণ আটকাচ্ছে না? প্রতিরক্ষা খাতে টাকার সংস্থান করা সরকারের দায়িত্ব। অন্য কোনও দিক কি ভাবা যেত না পেনশন খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য?
রামেশ্বর দত্ত, কলকাতা-৭৪
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy