—ফাইল চিত্র।
তৃণমূল যে জনসংযোগ কর্মসূচি গ্ৰহণ করেছে তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘বাংলার গর্ব মমতা’। স্বয়ং মমতা এই কর্মসূচির সূচনা করে দলীয় নেতা-কর্মীদের নম্র ও বিনয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে ধাক্কা খাওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রীর এই বোধোদয় অবশ্যই প্রশংসার্হ। সাধারণ জনগণও উপলব্ধি করছেন, তৃণমূল ঔদ্ধত্য পরিহার করে বিনয়ী হতে চাইছে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে, এই কর্মসূচির নামকরণ একেবারেই যথোপযুক্ত হয়নি। যে কর্মসূচিতে স্বয়ং মমতার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এবং যিনি তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের নম্র ও বিনয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, সেখানে কেন তিনি নিজের নামের সঙ্গে ‘গর্ব’ কথাটি যোগ করবেন? জনগণ এই নামকরণকে যদি ঔদ্ধত্য ও অহঙ্কারের প্রকাশ হিসেবে ধরে নেয়, তা হলে কি খুব অন্যায় হবে? তিনি তাঁর দলের লোকের কাছে গর্বের মানুষ হতেই পারেন, কিন্তু তিনি বাংলার গর্ব কি না— তা বিচারের ভার ছেড়ে দেওয়া হোক জনগণের ওপর। এ ভাবে নিজের ঢাক নিজে পেটালে হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
অচিন্ত্য বিশ্বাস
কলকাতা-৬৭
ভরসা হয়?
দ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যের ‘এই উদ্দীপনাই ভরসা’ (২-৩) শীর্ষক নিবন্ধ পড়ে এই চিঠি। আমার তো মনে হয়, ভরসার চেয়ে আশার সুরের টানই বেশি। ভারতের শাসন যে-ভাবে চলে, এখানে ক্ষমতাকেন্দ্রের রশি জনগণের ভোট নিয়ন্ত্রণ করে। কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ বা মিটিং মিছিল আন্দোলন নয়। তাই জাঁদরেল ছাত্রনেতা কানহাইয়া কুমার, তুখোড় রাজনীতিবিদ গিরিরাজ সিংহের বিরুদ্ধে নির্বাচনে কেবল ১৫০ ভোট পান। অগ্নিবর্ষী হার্দিক পটেল হারিয়ে যান আমদাবাদের ভিড়ে। ঐশী ঘোষ কোনও চমক দেখাবেন— এ আশা করা বাতুলতাই বলা চলে। লেখক তাই সম্ভবত ঝড়ের মুখে খড়কুটোকেই অবলম্বন করতে চাইছেন। বরং আমার মতে, আশার আলো হল এ-ই: কেরল হাইকোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি সম্প্রতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
নবারুণ দে
প্রেমতলা, শিলচর
অনুনয় কেন
অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘শুনব ক্ষমতাহীনের কথা’ পড়ে এই চিঠি। আমার প্রশ্ন, খুশিমতো কিছু লোক দল বেঁধে রাস্তা অবরোধে বসে পড়বে, আর শাসককে তাদের কাছে গিয়ে বোঝাতে হবে, অনুনয়-বিনয় করতে হবে অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য? গৃহীত আইনকে অবৈধ ঘোষণা করে কিছু লোক রাস্তা অবরোধ করবে, আর তাদের কথা শোনার জন্য সেখানে প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে যেতে হবে? এ তো ‘মবোক্রেসি’! অবরোধের প্রতিবাদে যদি দশ গুণ লোক পাল্টা রাস্তা অবরোধ করে বসে পড়ে? তাদের তুলতে আবার মন্ত্রী-আমলারা অনুনয়-বিনয় করবেন?
দ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য ‘এই উদ্দীপনাই ভরসা’ (২-৩) শীর্ষক নিবন্ধে আবেগে ভরপুর হয়ে লিখেছেন, ‘‘এই রাজনীতি বলে, তুমি আমার রক্ত ঝরালে আমি তোমার সঙ্গে তর্ক করব।’’ বাবুল সুপ্রিয় তো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রক্ত ঝরাননি, তবে তাঁকে এই নতুন আলোয় জেগে ওঠা ছাত্রদের হাতে নিগৃহীত হতে হল কেন? কেনই বা প্রেসিডেন্সির উপাচার্যকে ছাত্রদের লাগাতার ঘেরাওয়ের জেরে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হল?
দীপক রঞ্জন কর
কলকাতা-৭৭
ঘোড়াও হাসবে
আক্ষরিক অর্থেই কেন্দ্রীয় সরকারের নাকের ডগায় অর্থাৎ খোদ নতুন দিল্লির বুকে বেশ কয়েক দিন যাবৎ নারকীয় সাম্প্রদায়িকতার আগুন জ্বলল, যা শুধু চল্লিশের অধিক মানুষের অমূল্য প্রাণই কেড়ে নিল না; সঙ্গে সম্পত্তির বিপুল ক্ষতি, বাস্তুচ্যুতি ও আহত-নিহতদের পরিবারের উপর অবর্ণনীয় মানসিক আঘাত ‘উপহার’ দিয়ে গেল! আর দিল্লির পুলিশ কাদের নিয়ন্ত্রণাধীন? অবশ্যই বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের। তা সত্ত্বেও, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দিল্লির আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় চূড়ান্ত ব্যর্থতা প্রদর্শন করার পরও, ন্যূনতম লজ্জিত না হয়ে, দিল্লিবাসীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা না চেয়ে, সাম্প্রদায়িক আগুন রুখতে ব্যর্থ হওয়ার নৈতিক দায় নিয়ে পদত্যাগ না করে, বাংলায় এসে বাগাড়ম্বর করছেন যে এই রাজ্যে ক্ষমতায় এসে তাঁরা আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে ‘সোনার বাংলা’ গড়বেন!
অমিত শাহের এই প্রতিশ্রুতি শ্রবণ করে ‘চমৎকৃত’ বাঙালির ঈশ্বরের কাছে একটাই প্রার্থনা: দয়া করে দিল্লি-গুজরাত-উত্তরপ্রদেশ মার্কা আইনশৃঙ্খলার শাসন থেকে বাংলাকে রক্ষা করুন! আর যে ‘উন্নয়ন’কে ‘ট্রাম্প ওয়াল’-এর আড়ালে লুক্কায়িত রাখতে হয়, সেই অভিনব বিজেপি-মার্কা উন্নয়ন থেকেও বাংলা-বাঙালিকে যেন রক্ষা করা হয়!
কী কলঙ্কজনক ভাবেই না মাসাধিক কাল ধরে ‘গোলি মারো’ স্লোগান তুলে, নির্বাচনী বোতাম টিপে শাহিন বাগে ইলেকট্রিক শক দেওয়ার হুমকি প্রদর্শন করে, সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে ‘দেশদ্রোহী’ তকমা ও অশালীন গালাগালি দিয়ে বিজেপির কেষ্টবিষ্টুরা দিল্লির আকাশ-বাতাসকে কলুষিত করেছে, সাম্প্রদায়িক বারুদ রোপণ করেছে, যা এই ন্যক্কারজনক হানাহানির নেপথ্যে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে। ২০০২-এর গুজরাত বা ২০২০-র দিল্লির শাসক-গোষ্ঠীও ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষা’র বাগাড়ম্বর করে, অন্যদের সমালোচনা করে! ঢাকার কুট্টিদের বিখ্যাত ঘোড়ারাও যে অট্টহাস্যে ফেটে পড়বে!
কাজল চট্টোপাধ্যায়
পিয়ারলেস নগর, সোদপুর
গঙ্গাজল!
অমিত শাহ শহিদ মিনারে সভা করে গেলেন। তাঁর সভা ঘিরে প্রতিবাদ হবে এটা নতুন কিছু নয়। প্রতিবাদ হওয়া অবশ্যই উচিত। এ কথা ঠিক যে নিরলস ভাবে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি। তার মধ্যে অন্যতম এসএফআই। তাই বলে অমিত শাহ যে শহিদ মিনারে বক্তৃতা করে গেলেন, সেটা ‘শোধন’ করতে হবে গঙ্গাজল (এবং কস্টিক সোডা) দিয়ে, এসএফআই-এর এই কর্মসূচি মানতে পারলাম না।
এক সময় বর্ণভেদ বা ধর্মীয় অস্পৃশ্যতার উৎকট ভাবনা থেকে গোবরজল, গঙ্গাজল ছিটিয়ে শোধন করার রীতি খুব প্রচলিত ছিল। সেটা আজও বিজেপির আজেন্ডা হতে পারে। কিন্তু বামপন্থীদের ক্ষেত্রে তা একেবারেই বেমানান।
সোফিয়ার রহমান
অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
প্রতিবন্ধীর আধার
‘প্রাণটুকু থাকলেই আধার কার্ড করা সম্ভব’ (২-৩) শীর্ষক প্রতিবেদনটি সকালবেলা পড়ে আমার ১০০ শতাংশ প্রতিবন্ধী মেয়ে আসিয়ানা খানের জন্য বারাসত হেড পোস্ট অফিসে আধার কার্ড করাতে গিয়েছিলাম। যে মহিলা ফটো তুলছিলেন, তাঁর পছন্দমতো চোখের ছবি না আসায়, আমার মেয়ের আধার কার্ড হল না। কিন্তু সংবাদে প্রকাশ, চোখ-হাত না থাকলেও আধার কার্ড হবে, শুধু প্রাণটুকু থাকলে।
আমাদের পরিবারের যখন অন্য সবার আধার কার্ড হয়েছিল, বলা হয়েছিল, প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে বাড়ি গিয়ে ছবি তোলা হবে। আজ পর্যন্ত কোনও সরকারি আধিকারিক আধার কার্ড করতে আসেননি।
সবাই জানেন এখন আধার কার্ডের জন্য ফর্ম সংগ্রহ কী অমানুষিক ব্যাপার। ফর্ম তোলার আগের দিন রাত্রিতে লাইন দিতে হয়। মাত্র ১০০ জন ফর্ম পান প্রতি দিন। এত কষ্ট সহ্য করেও প্রতিবন্ধী মেয়ের জন্য আধার ফর্ম সংগ্রহ করে, কার্ড করাতে পারলাম না, শুধুমাত্র কাজ না জানা কর্মীদের জন্য। প্রতিবন্ধী বাচ্চারা ও তাদের পিতা-মাতারা আর কত অত্যাচার সহ্য করবে? এখন সমস্ত বিষয়ে, সমস্ত কাজে, আধার কার্ড জরুরি।
ইয়াসমিন খান
কাজিপাড়া, বারাসত
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy