Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Racial Discrimination

সম্পাদক সমীপেষু: শুধু বৈষম্য নেই

আজ যখন জর্জ ফ্লয়েডের বর্বরোচিত হত্যার প্রতিবাদে গোটা পৃথিবী নিন্দায় ফেটে পড়েছে, তখনও আমেরিকায় তৈরি হচ্ছে কিছু মন ভাল করা দৃশ্য।

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২০ ০০:১২
Share: Save:

আমেরিকায় রাত একটাতেও কোনও মেয়ে হাফপ্যান্ট আর স্লিভলেস টি-শার্ট পরে বাড়ি ফিরতে পারে বিনা টেনশনে, কাজের কোনও ‘ছোট-মেজো-বড়’ শ্রেণিবিভাগ হয় না এই দেশে, বিরাট ব্যাঙ্কের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার আর পিৎজ়ার দোকানের কর্মচারী ডিনার পার্টিতে এক সঙ্গে চিয়ার্স করেন, ওবেসিটিতে আক্রান্ত খুব মোটা ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে রাস্তায় সবাই ‘ভূত দেখা’র মতো করে তাকিয়ে থাকে না।

আজ যখন জর্জ ফ্লয়েডের বর্বরোচিত হত্যার প্রতিবাদে গোটা পৃথিবী নিন্দায় ফেটে পড়েছে, তখনও আমেরিকায় তৈরি হচ্ছে কিছু মন ভাল করা দৃশ্য। কোথাও একদল শ্বেতাঙ্গ আমেরিকান নতজানু হয়ে কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের কাছে ক্ষমা চাইছেন, বহু বছর ধরে কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর ঘটে চলা অন্যায়ের জন্যে। গায়ের বর্ণকে উপেক্ষা করে হাজার হাজার মানুষ কোভিড-১৯’এর আতঙ্ককে মনের মধ্যে নিয়েও মাস্ক পরেই পথে নেমেছেন বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে। কোনও শহরে একদল পুলিশ অফিসার মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে ক্ষমা চাইছেন জর্জ ফ্লয়েডের কাছে। প্রতিবাদের নামে লুটপাটের ঘটনা হয়তো আছে কিছু জায়গায়, তেমনই কোভিড-১৯’এ হাজার হাজার মানুষের কাজ চলে যাওয়ার পরেও সমস্ত হতাশাকে নিয়ন্ত্রণে এনেও মানুষ যে শুধুমাত্র ক্ষমা চেয়েও প্রতিবাদ জানাতে পারেন, তা দেখিয়েছেন আমেরিকার মানুষ।

আমেরিকায় টেম্পোরারি স্টুডেন্ট ভিসায় থাকার সময়কালটা অনিশ্চিত হলেও, একটা কথা নিশ্চিত করে বলতে পারি, এই দেশ আমায় অনেক কিছু শেখাল, যা আমার আগামী দিনের পাথেয়।

কবে দেখব, আমার নিজের দেশে ফর্সা হওয়ার ক্রিমের বিজ্ঞাপন বন্ধ হবে, ফর্সা তন্বী পাত্রী চেয়ে উচ্চশিক্ষিত পুত্রের পিতা ছোটাছুটি করবেন না, বাজারে ভোলা মাছ বিক্রি করা ভোলাকেও সম্মান দিয়ে কথা বলবেন প্রফেসর ক্রেতা, মেধাবী দলিত ছাত্রীকে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে গ্রাম্য উচ্চারণ নিয়ে টিটকিরি শুনতে হবে না?

নিবেদিতা হাজরা

নিউ জার্সি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

কলির সন্ধে

‘কিসের ভুল’ (৩-৬) চিঠিতে লেখক প্রশ্ন করেছেন, ‘‘অতি দক্ষ, সংবেদনশীল সরকার যদি আমাদের থাকত, সেই সরকারও কি পারত জানুয়ারি কি ফেব্রুয়ারিতে লকডাউন ঘোষণা করতে?’’ হয়ত পারত না। কিন্তু যা পারত তা হল, দেশের মানুষকে প্রকৃত পরিস্থিতি বুঝিয়ে বলা। তার পর এই কঠোর ও সুদীর্ঘ তালাবন্দি ঘোষণার আগে যে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিক ও অন্যান্য নাগরিক বাড়ি ফিরতে ইচ্ছুক, তাঁদের ফিরে যাওয়ার সুবন্দোবস্ত করা, তালাবন্দি ঘোষণা হয়ে গেলেও তাঁদের সকলকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া। কাজ হারানো বাকি শ্রমিকদের তাঁদের কর্মস্থলেই থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা। জানুয়ারি থেকে মার্চ-এর মধ্যে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের, এবং দেশে যাঁরা তাঁদের সংস্পর্শে এসেছেন তাঁদের, কোভিড-১৯ সংক্রমণ আছে কি না তা যাচাই করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া; জনসাধারণের সুচিকিৎসার ব্যবস্থার প্রস্তুতি নেওয়া; এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার দিকে নজর দেওয়া।

জনমানসে একটি ধারণা গেঁথে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে (বোধহয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে), অনেক উন্নত দেশ যেখানে করোনার আঘাতে বিপর্যস্ত, সেখানে আমরা তুলনামূলক ভাবে অনেক ভাল আছি। সত্যিটা হল, কোভিড-১৯’এর ব্যাপারে আমাদের এখন সবে কলির সন্ধে! দেশে সংক্রমিতের সংখ্যা এমন ভাবে বাড়ছে, হয়তো এক দিন এ ব্যাপারে প্রথম স্থান অধিকারের ‘গৌরব’ আমরা অর্জন করব! চিন, ‘হু’ বা অন্যকে দোষ দিয়ে পার পাব না।

মানস কুমার লাহা

খড়্গপুর

কিউবায় আটকে

এই মেল লিখছি ৫ জুন। আমি কিউবা-য় আছি। এখানে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি ‘শেফ’ হিসেবে একটা ভারতীয় কোম্পানির হোটেলে যোগ দিয়েছি। আমাদের কোম্পানির এখানে পাশাপাশি তিনটি হোটেল, প্রত্যেকটায় পাঁচ জন করে বিদেশি স্টাফ, বাকি সব স্থানীয়।

মার্চ মাসের মাঝামাঝি হঠাৎ ফরেন স্টাফদের মিটিং ডেকে করোনাভাইরাস সম্বন্ধে আলোচনা হল। পরের দিন আবার মিটিং, বলা হল সবাইকে নিজের দেশে ফিরে যেতে। আমার এক বন্ধু পাশের হোটেলে কাজ করে, দু’জন মিলে ঠিক করলাম, ২৫-২৬ মার্চের টিকিট নেব। কিন্তু তার পরেই খবর পেলাম, ভারত তার সমস্ত সীমা বন্ধ করেছে। অর্থাৎ আমাদের যাওয়ার পথ বন্ধ।

প্রতি ঘণ্টায় আমাদের গ্ৰুপে খবর আপডেট হচ্ছিল, জানতে পারলাম আমরা সবাই ‘হোটেল মেলিয়া’তে থাকব। কেবল যাঁরা মেক্সিকোর নাগরিক তাঁরা চলে যাবেন, তাঁদের সীমা বন্ধ নেই। আর এক স্প্যানিশ মহিলা কানাডা হয়ে লন্ডন গেলেন। তিন হোটেলের ন’জন আমরা ২৩ মার্চ মেলিয়া রিসর্টে পৌঁছলাম।

শুরু হল নতুন এক জীবন। প্রায় ২৫টি হোটেলের সব বিদেশি কর্মীর ঠিকানা হল মেলিয়া। ল্যাটিন আমেরিকান, এশিয়ান, ইউরোপিয়ান আর ক্যারিবিয়ান মিলে প্রায় ৯০ জন মিলে থাকতে শুরু করলাম।

আমরা ভারতীয় তিন জন। আমি আর আমার বন্ধু নিয়মিত সমুদ্রসৈকতে যেতে শুরু করলাম, কারণ সময় আর পার হয় না। সকালে দু’ঘণ্টা শরীরচর্চা, বাড়িতে তিন বার ফোন, তিন-চার ঘণ্টা সমুদ্রের ধারে থাকা। কিন্তু সারা দিন আসলে শুধু একটাই চিন্তা, কী করে বাড়ি ফিরব। তার পর এক দিন দূতাবাসে মেল করলাম, উত্তর এল, সমস্ত নামধাম পাঠালাম। তার পর রেজিস্ট্রেশনের ফর্ম এল, তিন জনেই ফিল আপ করে পাঠালাম।

তার পর জানতে পারলাম ভারত সরকার, এয়ার ইন্ডিয়ার সাহায্যে ‘ইভ্যাকুয়েশন’ করবে ইচ্ছুক ভারতীয়দের। ৫০ দিন পর একটা আশার আলো জাগল। এক দিন হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ এল, হাভানা থেকে দিল্লি, জামাইকা হয়ে যেতে হবে, খরচ পড়বে ভারতীয় মুদ্রায় ১৭৫,০০০ টাকা। অনেক চিন্তাভাবনা করে আমরা স্থির করলাম, যাব। কিন্তু পরে দূতাবাস থেকে জানানো হল, এটা স্রেফ একটা প্রস্তাব, যা তারা পাঠিয়েছে বিদেশ মন্ত্রককে।

বুঝতে পারলাম, যে হেতু ভারতীয় এখানে কম, তাই কোনও ফ্লাইট আসবে না। আজ জানতে পারলাম, এখনও কোনও ফ্লাইট নেই ক্যারিবিয়ান থেকে।

গ্ৰীষ্ম শেষ হয়ে বর্ষা এসেছে এখানে, এখন যে দিকে তাকাই, সবুজ, সতেজ। কিন্তু আমাদের ভাগ্যের কোনও পরিবর্তন নেই। জার্মান, ফরাসি, স্প্যানিশ, পর্তুগিজ, ডোমিনিকান, আর্জেন্টিনীয়, মেক্সিকান, সবাই চলে গিয়েছে। নিজের নিজের দেশের দূতাবাস ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে।

প্রতি দিনের মতো আজকেও বিচে গিয়েছিলাম, কেউ নেই, আমরাই দু’জন। দেখলাম একটা উড়োজাহাজ চলে গেল। বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম , ‘আমাদেরটা কবে আসবে?’ সে বলল, ‘আসবে, অবশ্যই আসবে।’

জয় প্রকাশ মাহাত

কয়ো কোকো, কিউবা

নতুন শব্দ

সম্পাদকীয় ‘কায়া ও ছায়া’ (৩১-৫) প্রসঙ্গে এই চিঠি। দ্বিঘরা (Portmanteau) শব্দ বা শব্দসংক্ষেপের (Acronym) ব্যবহার একটা প্রচলিত রীতি। ২০১৬ থেকে চলে আসা এই রকম দ্বিঘরা শব্দ ‘ব্রেক্সিট’-এর মানে আজ সবাই জানে। ২০২০-র শুরু থেকে লন্ডনের কাগজগুলোতে দুটো দ্বিঘরা শব্দ আর একটা শব্দসংক্ষেপ খুব ব্যবহৃত। একটা হল ‘মেক্সিট’, অর্থাৎ মেগান মার্কেল আর প্রিন্স হ্যারির গ্রেট ব্রিটেন ছেড়ে অনত্র স্থায়ী বসবাসের সিদ্ধান্ত। অন্যটা হল ‘আপস্কার্টিং’— টিউব স্টেশনের এসকালেটরের নীচের সিঁড়ি থেকে লুকিয়ে ওপরের সিঁড়িতে ওঠা মহিলার অল্প উড়ন্ত স্কার্টের ছবি তোলা! লন্ডনে এই কম্মটি কড়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নতুন শব্দবন্ধ কোভিড-১৯ এখন সুপরিচিত। এর পুরো কথাটা হল Corona Virus Disease-2019.

বুদ্ধদেব চট্টোপাধ্যায়

লন্ডন, ইংল্যান্ড

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,

কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Racial Discrimination George Floyd America
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy