ইউবাল নোয়া হারারির সেপিয়েন্স পড়ে অদ্ভুত এক অনুভূতি হয়েছিল। একই সঙ্গে অভিভূত, আশ্চর্য এবং উত্তেজিত হয়েছিলাম। সেই টানেই হাতে এল জিন আওলের লেখা আর্থস্ চিল্ডরেন, ঐতিহাসিক উপন্যাস সিরিজ়। তিরিশ হাজার বছর আগে জন্ম নেওয়া এক গুহামানবী ‘আয়লা’-র গল্প, যা একই সঙ্গে মানবপ্রগতিরও সূচক। সুমন প্রতিহারের ‘আধুনিক মানুষ এল কোথা থেকে?’ (এষণা, ১৩-১) প্রবন্ধের ‘ডেসি’-র কথায় হঠাৎ সেই আয়লার কথা মনে পড়ে গেল, যে হেতু হৃদয়ের খুব কাছেই তার বাস। আর হয়তো অবচেতনে অনেক হারিয়ে-যাওয়া রোমাঞ্চকর স্মৃতি ভিড় করে এল, যেগুলো আমাদের জিনে বোনা রয়ে গিয়েছে।
এইখানেই সুমনবাবুর মতো লেখকের গুরুত্ব! আজ মানুষ জীবনের কঠিন লড়াই লড়তে গিয়ে ইতিহাস ও বিজ্ঞানের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। নতুন কী তথ্য বেরিয়ে এল মহাকালের চাদর সরিয়ে, সে সম্বন্ধে খবর রাখার সময় এবং সাধ্য যৎসামান্য, তাই হয়েও ওঠে না। এ ভাবেই কোনও দিন চোখে পড়ে যায় সুমনবাবুর এই লেখাটির মতো লেখা, আর স্রোত থেকে একটু বিরতি নিয়ে ভাবতে থাকি, কেমন ছিলাম আমরা? কোথা থেকে এলাম, কোথায়ই বা চলেছি! গতানুগতিক জীবন, দিনগত পাপক্ষয়ের মাঝে হঠাৎ থমকে যেতে হয়, নিজেকে আরও ভাল ভাবে জানতে ইচ্ছে হয়।
বিজ্ঞান নিজের গতিতে চলবেই। কিন্তু আমরা থেমে যাব, যদি না বিজ্ঞানীরা এ ভাবে আমাদের ভাষায় আমাদের জানিয়ে দেওয়ার প্রয়াস চালিয়ে যান। মনে গেঁথে যায় সুমনবাবুর নিবন্ধের শেষ বাক্যটি, “কল্পনাশক্তিই তো টিকিয়ে রাখে আধুনিক মানুষকে।”
কল্পনাশক্তিই মিলিয়ে দেয় হারারির সেপিয়েন্স আর জিন আওলের আয়লাকে, জঙ্গুলে বানর আর অসীম ক্ষমতাধর সভ্য মানুষকে।
দেবদত্ত মাইতি
গড়িয়া, কলকাতা
কিসের বিবর্তন?
‘আধুনিক মানুষ এল কোথা থেকে?’ নিবন্ধে ‘আধুনিক মানুষ’-এর সংজ্ঞা কী, এ বিষয়ে লেখক মানব বিবর্তনের বর্ণনা দিয়েছেন। সেখানে মাইটোকনড্রিয়া, ডিএনএ, ক্রোমোজ়োম, জিন ইত্যাদি শারীরিক অংশবিশেষ, তথা শারীরবিদ্যার কথা, সোজা হয়ে দু’পায়ে দাঁড়ানো থেকে আগুন আবিষ্কার, সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়া ইত্যাদি নানা কথা আছে। শরীরের এত কথা আছে, কিন্তু মনের কথা কই? স্বার্থপর, সঙ্কীর্ণ, অসামাজিক মানুষ ‘আধুনিক’ হতে পারে না।
যে মানুষগুলি ঝাঁপিয়ে পড়েছেন বাকি বিপন্ন মানুষের উদ্ধারে, সকলের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, জীবন ও জীবিকার উপকরণের অধিকারের জন্য মরণপণ সংগ্রাম করছেন, তাঁরাই আধুনিক মানুষ। যে মানুষ একা নয়, সবাইকে নিয়ে সুস্থ ভাবে সুখী হতে চায়, সে-ই আধুনিক মানুষ। মানুষের সৃষ্ট দূষণ বুমেরাং হয়ে ফিরছে তার দিকেই। মানুষের অস্তিত্ব মানুষের কারণেই বিপন্ন কি না, প্রশ্ন উঠেছে। এই মানুষ আধুনিক, তা মেনে নিতে অসুবিধা হচ্ছে। প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানে উন্নত মানুষ একাই বাঁচতে চাইছে, যার অন্য নাম অ-সভ্যতা।
লেখক বলেছেন, “কল্পনাশক্তিই তো টিকিয়ে রাখে আধুনিক মানুষকে।” ঠিক কথা। কিন্তু সেই কল্পনাশক্তিতে বাকি মানুষের সঙ্গে স্বস্তি ও শান্তিতে থাকাকে বাস্তবে পরিণত করতে হবে। তাই প্রশ্নটা বদলে নিতে ইচ্ছে হল, ‘আধুনিক মানুষ আসবে কোথা থেকে?’
শুভ্রাংশু কুমার রায়
চন্দননগর, হুগলি
অনন্য জয়
অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ভারতীয় ক্রিকেট দলের এই জয় অভিনব এবং অনন্য একাধিক কারণে। প্রথমত, ভারতীয় দলের প্রথম একাদশের অর্ধেকেরও বেশি প্লেয়ার চোট-আঘাতজনিত কারণে এই সিরিজ়ের শুরু থেকে বাইরে ছিল। অধিনায়ক কোহালির না-থাকাও ভারতীয় দলের পক্ষে বিরাট ক্ষতি। দ্বিতীয়ত, এই দলের বোলিং বিভাগ একেবারে আনকোরা। চতুর্থ টেস্টে যিনি বোলিং ওপেন করলেন, মনে রাখতে হবে এই সিরিজ়টি তাঁর জীবনের প্রথম সিরিজ়। উপরন্তু মহম্মদ সিরাজ সিরিজ় শুরুর আগেই খবর পান তাঁর বাবা প্রয়াত হয়েছেন।
তৃতীয়ত, ভারতীয় দলের খেলোয়াড়দের নেট প্র্যাকটিসে সহায়তা করতে যাঁরা গিয়েছেন তাঁরাই, বিশেষত নটরাজন, ভারতীয় দলের প্রথম একাদশে অন্তর্ভুক্ত হলেন। চতুর্থত, এর আগের সফরে বিরাটের নেতৃত্বে যখন অস্ট্রেলিয়ায় ভারতীয় দল জিতেছিল, সেই দলে স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নাররা ছিলেন না বলে ভারতীয় দলের সেই জয়কে অনেকে হালকা ভাবে দেখিয়েছিলেন, এবং এই বছরের সফরের আগেই অনেকে ভারতীয় দলকে ‘হোয়াইটওয়াশ হয়ে ফিরে আসতে হবে’ বলে ভবিষ্যদ্বাণীও করেছিলেন।
পঞ্চমত, এবং বোধ হয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে, ভারতীয় দলের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলীয় খেলোয়াড়দের মাঠের ভিতরে লাগাতার স্লেজিং ও মাঠের বাইরে দর্শকদের বর্ণবিদ্বেষমূলক আচরণ। এই সব কারণগুলি মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এই জয় ভারতীয়দের অতিমারি-কবলিত সময়ে মরূদ্যানের মতো।
শেখ কামাল উদ্দিন
বারাসত, উত্তর ২৪ পরগনা
রূপকথা
দ্বিতীয় সারির এক অনভিজ্ঞ ক্রিকেট দল নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় বাজিমাত করল ভারত। চতুর্থ টেস্ট জয়ের জন্য ভারতের প্রয়োজন ছিল ৩২৮ রান। সাত উইকেট হারিয়ে তারা সেই রান তুলে নেয়। অসাধারণ খেললেন শুভমন গিল এবং ঋষভ পন্থ। ভারতের এ জয় তারুণ্যের, অসীম সাহসিকতার। এই জয় সব আঘাত, অপমানের জবাব দেওয়ার। সর্বোপরি, এই জয় টেস্ট ক্রিকেটের। টেস্ট ক্রিকেট যে এখনও সবার সেরা, তা আরও এক বার প্রমাণিত হল ব্রিসবেনে। যে ভাবে প্রথম টেস্ট বিশ্রী ভাবে হেরে গিয়ে, চোট-আঘাতে জর্জরিত ভারতীয় দল সিরিজ়ে সমতা ফিরিয়ে, শেষ টেস্ট জিতে সিরিজ় জিতল, তা হার মানায় রূপকথাকে।
শিবব্রত গুহ
কলকাতা-৭৮
এত চোট
সামি, উমেশ থেকে শুরু করে বুমরা, অশ্বিন একের পর এক ভারতীয় ক্রিকেটার অস্ট্রেলিয়া সফরে চোটে জর্জরিত। ফলে সিরিজ় নির্ণায়ক ব্রিসবেন টেস্টে প্রথম একাদশ নামাতেই হিমশিম খেয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট। প্রশ্ন উঠেছে, কেন চোট সমস্যা এত ভোগাচ্ছে ভারতীয় দলকে? অনেকে কারণ হিসেবে আইপিএল-কে কাঠগড়ায় তুলছেন। কিন্তু জাডেজা বা সামির ক্ষেত্রে ‘অন ফিল্ড ইনজুরি’ সেই সম্ভাবনাকে ধূলিসাৎ করেছে। অন্য দিকে, হনুমা বিহারি ও উমেশ যাদব এ বছর গোটা আইপিএল-ই রিজ়ার্ভ বেঞ্চে কাটিয়েছেন। ফলে আইপিএলের চাপের তত্ত্ব তাঁদের ক্ষেত্রেও খাটে না। চোট-আঘাতের এই সমস্যা ঘরের মাঠে আসন্ন ইংল্যান্ড সিরিজ়েও চাপে রাখবে ভারতকে।
সুদীপ সোম
হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
এই কি বাংলা?
একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে বাংলা ধারাভাষ্য-সহকারে আইএসএল ফুটবল দেখছিলাম। এক জন ধারাভাষ্যকারের বাংলা বলার দু’একটা নমুনা দিই। ‘কেন কি’, ‘ডাউন দ্য রাইট’, ‘অ্যাটাকিং’, ‘ভেরি ডিফিকাল্ট টু স্টপ’, ইত্যাদি শুনতে শুনতে স্বর্ণযুগের ধারাভাষ্যকার অজয় বসু, পুষ্পেন সরকার, কমল ভট্টাচার্য প্রমুখের কথা মনে পড়ছিল। কী অসাধারণ ছিল বাচনভঙ্গি আর শব্দচয়ন! বাংলার সঙ্গে হিন্দি, ইংরেজি মিশে যে খিচুড়ি ভাষা তৈরি হয়েছে, তাতে প্রশ্ন জাগে বাংলা শব্দভান্ডারে কি শব্দের আকাল হয়েছে?
তনয় রাউত
কলকাতা-১০৯
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy