বেশ কয়েক বছর পর বাংলায় এ বার ভরা বর্ষা। আষাঢ়েই গ্রামবাংলার ডোবানালা-খালবিল বৃষ্টির জলে টইটম্বুর। চার দিকে সবুজে সবুজ, বহু দিনের তৃষ্ণা মিটিয়ে গাছেরা যেন হাসছে। আর আমরা দু’-এক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই জমা জলে ভাসছি। কারণ গ্রামীণ জলাশয়গুলোর অধিকাংশই মাটি ভরাটের দৌরাত্ম্যে অবলুপ্ত হয়েছে। আজ কোথায় ডোবার ব্যাঙের কোলাহল? সেই ডোবাই তো নেই! আবর্জনা, প্লাস্টিকের প্যাকেট জলের উপর ভাসছে। সেগুলি ডেঙ্গি মশার স্বর্গ। এক দিকে যত্রতত্র পয়ঃপ্রণালী-বিহীন ঢালাই রাস্তা নির্মাণ, অন্য দিকে সরু অলিগলিকে ইচ্ছেমতো জবরদখল করে নির্মাণকাজ চলছে। এই সবের ফলে প্রাকৃতিক জলনিকাশি ব্যবস্থা ধ্বংস হতে বসেছে।
গৃহস্থের বাড়ির পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা— সেপটিক ট্যাঙ্ক বা জল শুষে নেওয়ার পিট-এর জলধারণ ক্ষমতা আর নেই। ভূর্গভস্থ জলের স্তর অনেক উপরে চলে এসেছে! বাড়তি জল এ বার যাবেটা কোথায়? সব পথই তো আমরা দখল করেছি। স্বাভাবিক গতিপথ হারিয়ে জল এখন আমাদেরকেই গ্রাস করতে ধেয়ে আসছে। পঞ্চায়েতের মাধ্যমে গ্রামীণ উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রকৃতি-পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী সমস্ত সম্পদকে বাঁচাতে হবে। তা না হলে ব্যাকটিরিয়া ও ভাইরাস-জনিত নানা রকম অসুখ থেকে গ্রামবাংলাকে বাঁচানো যাবে না।
সাবির চাঁদ, রেজিনগর, মুর্শিদাবাদ
গাছের জমি
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত বাদাবনকে পূর্বাবস্থায় ফেরাতে তিনি পাঁচ কোটি ম্যানগ্রোভ পুঁতবেন, তা-ও এক মাসের মধ্যে। সুন্দরবনে কাজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কয়েকটি কথা বলতে চাই। প্রথমত, গাছের নির্বাচনে সতর্ক হওয়া দরকার। সাধারণত সুন্দরবনে লাগানো হয় গরান, গর্জন, কাঁকড়া, বকুল কাঁকড়া, অল্প পরিমাণে সুন্দরী। কিন্তু কোথায় কোন গাছ লাগানো হবে? জমির এক-এক রকম ঢালে এক-এক ধরনের প্রজাতির গাছ হয়। কোন দিক থেকে হাওয়া আসে দেখতে হবে। মাটিতে বালির পরিমাণ, এবং জোয়ার-ভাটা খেলা করে কি না, সেটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সমস্ত পরীক্ষা করে দেখে স্থান অনুসারে বাদাবনের গাছের প্রজাতি যথাযথ নির্বাচন করতেই মাস ছয়েক লাগার কথা।
দ্বিতীয়ত, লাগানো গাছ বাঁচিয়ে রাখতে হলে হেক্টর-প্রতি সাড়ে তিন হাজারের বেশি গাছ লাগানো চলবে না। এটাই বিজ্ঞানসম্মত। পাঁচ কোটি গাছ লাগাতে যে জমি দরকার, তার তিন ভাগের এক ভাগ সুন্দরবনে রয়েছে কি না সন্দেহ। বাদাবন সৃজনের উপযুক্ত জমি খুঁজে পাওয়াও সহজ নয়। নতুন গজিয়ে-ওঠা চর কখনওই বাদাবনের উপযুক্ত নয়। নতুন চর বাদাবনের উপযুক্ত হতে অন্তত তিন বছর লাগে। চরে ধানিঘাস না জন্মালে তা বাদাবনের উপযুক্ত হয় না। বাঁধ বরাবর বাদাবন লাগালে ঝড়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে ঠিকই, কিন্তু গত দশ বছরে বিভিন্ন এনজিও বাঁধে বনসৃজনের কাজ অনেকটাই করে ফেলেছে।
তাই চিন্তা হচ্ছে, পাঁচ কোটি ম্যানগ্রোভ লাগানোর জায়গা কোথায় পাওয়া যাবে?
স্বপ্না চৌধুরী, কলকাতা-২৫
চাই পরিচর্যা
পশ্চিমবঙ্গ সরকার ১৪-২০ জুলাই রাজ্যে ‘অরণ্য সপ্তাহ’ হিসেবে পালন করে আসছে। এই সময়ে বৃক্ষরোপণ, সভাসমিতি হয়ে থাকে। আরও বৃক্ষরোপণের শপথ নেওয়া হয়। মুশকিল হল, বাকি সময়ে নিয়মনীতি না মেনে অরণ্য ধ্বংস করার প্রবণতা দেখা যায়। অরণ্য সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে নানা আইন তৈরি হয়েছে, কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি। কৃষিকাজ, ব্যবসা, পশুপালন, জ্বালানি সংগ্রহ ইত্যাদির জন্য বন নষ্ট করা হচ্ছে। বিশেষ বিশেষ সময়ে বৃক্ষরোপণ করলেই হবে না, তার পরিচর্যা, নজরদারিও করতে হবে। বাড়ির কাছাকাছি গাছগুলির যত্ন নেওয়া, গাছ কাটা ও পাচার প্রতিরোধ করা, বন্যপ্রাণী ও বনরক্ষায় সচেষ্ট হওয়া, জলাভূমি ভরাটের কাজ বন্ধ করার জন্য নাগরিকদেরও সক্রিয় হতে হবে।
সজল কুমার গুহ, শিবমন্দির, শিলিগুড়ি
কৃতজ্ঞ বাঘ
কাজিরাঙা জাতীয় উদ্যানে জীবজন্তুদের প্রতি বর্ষায় মর্মান্তিক সঙ্কটে পড়তে হয়। বন্যা থেকে রক্ষা পেতে প্রতি বছরই কিছু বাঘ আশ্রয়ের খোঁজে জনপদে ঢুকে পড়ে (‘রাঁধতে গিয়ে দেখেন, রান্নাঘরে বাঘিনি’, ১৬-৭)। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এরা কাউকে আক্রমণ করে না। একটু বিশ্রাম নিয়ে ফিরে যায়। অগরাতুলি রেঞ্জের কান্ধুলিমারির রয়্যাল বেঙ্গল রাতটুকু ছাগলের ঘরে কাটিয়ে ভোরবেলা নিজের পিঠে অনুভব করেছিল ঠাকুমার হাত বোলানো। মনে হয়, খুশি মনে নিজেই বিদায় নিয়েছিল। অন্তত পাল্টা হাত বোলানোর চেষ্টা করেনি।
৩৭ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে আশ্রয় নেওয়া অপর রয়্যাল বেঙ্গলটি সবাইকে একটু উদ্বিগ্ন রেখেছিল। যান চলাচল বন্ধ রাখতে বাধ্য করেছিল। অবশেষে ভোর হতে কার্বি পাহাড়ে পাড়ি দেয়। কিন্তু তৃতীয় বাঘিনিটি বাগরি রেঞ্জ-লাগোয়া বান্দরডুবি গ্রামের একটি বাড়ির রান্নাঘরে আশ্রয় নেয়। হয়তো রান্না চাখার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু খেতে হল বন দফতরের কর্মীদের ঘুমপাড়ানি গুলি। গত বছরেও জুলাই মাসে একটি রয়্যাল বেঙ্গল কাজিরাঙা থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে হারমুটি গ্রামের সফিউল আলির বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। ঘুমিয়ে পড়েছিল ঘরের বিছানায়। সকালে আলিকে দেখে বাঘিনি কিন্তু আক্রমণ করেনি। যথারীতি বন দফতরের কর্মীরা তার দায়িত্ব নিয়েছিল।
বন্যার সময়ে কাজিরাঙায় প্রায় ৯০-৯৫ শতাংশ পার্ক জলে ডুবে যায়। বহু প্রাণী মারা যায়। এই বছরও প্রায় ১০০-র ওপর বন্যপ্রাণী এবং ৮-৯টি বিরল প্রজাতির গন্ডার বন্যায় প্রাণ হারিয়েছে। কর্তৃপক্ষ কি পারেন না পার্কের মধ্যে কিছু স্থানে উঁচু ঢিবির মতো আশ্রয়স্থল বানিয়ে দিতে? আর বন্যার সময়ে ওই ঢিবিগুলোতে ওদের জন্য একটু খাবার দিতে?
প্রমথরঞ্জন ভট্টাচার্য, কলকাতা-৮৪
বাঁচতে হলে
‘মানুষ প্রকৃতিকে কী ভাবে দেখে’ (১১-৭) প্রবন্ধের গোড়াতেই অর্ঘ্য মান্না বলেছেন, ‘‘প্রকৃতিকে বাঁচানো নয়, নিজেদের বাঁচাতেই তৎপর হয়েছে মানুষ।’’ মানুষ না পেরেছে নিজেকে ঠিকমতো বাঁচাতে, না পেরেছে প্রকৃতিকে তার মতো করে বাঁচতে দিতে। একচেটিয়া ভাবে নিজের লোভ ও প্রয়োজনের কথাই মানুষ ভেবেছে। মানুষের সঙ্গে প্রকৃতির ভারসাম্যের সম্পর্ক জেনেবুঝেও অবহেলা করেছে। ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’ যখন থেকে বিজ্ঞানীদের নজরে এল, তখন থেকে মানুষের টনক নড়তে শুরু করল। কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সারের ব্যবহার, কলকারখানা-যানবাহনের বিষাক্ত ধোঁয়া, ট্যানারির বর্জ্য, রকেট উৎক্ষেপণ, অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র থেকে নির্গত নাইট্রাস অক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড, সালফারের কণা— এগুলি বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রধান কারণ।
এক দিকে বাতাসে বিষ, অপর দিকে বনাঞ্চল ধ্বংস করে শহর নির্মাণ— এই দ্বিমুখী আক্রমণে প্রকৃতি ক্রমশ বিপন্ন হয়ে পড়ছে। প্রকৃতির নিয়মশৃঙ্খলাতেও দেখা যাচ্ছে ব্যতিক্রমী আচরণ। অধিকাংশ মানুষের ভাবনায় প্রকৃতির বিমূর্ত ভাবমূর্তি ক্রমশ চিড় খেতে শুরু করেছে। যে ভাবনায় মানুষ প্রকৃতিকে নির্মল সৌন্দর্যের আধার হিসেবে কল্পনা করে এসেছে, সাহিত্য রচনার আশ্রয় মেনে এসেছে, তার ওপরও পড়েছে সংশয়ের ছায়া।
প্রকৃতির অসুস্থতা মানুষকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে অসুস্থ করে তুলেছে। প্রকৃতির সুস্থতার জন্য মানুষের প্রয়োজন পড়ে না, কিন্তু মানুষের সুস্থতার জন্য প্রকৃতির প্রয়োজন অপরিহার্য।
শ্যামল সাহা, কলকাতা-৩৫
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy