Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Contractual Labourers

সম্পাদক সমীপেষু: চুক্তির বিপদ

আইনের শাসন অচল। হতভাগ্য নাগরিকের শেষ আশ্রয় আদালত। তাতেও বিলম্ব হয়। এ যেন দোয়াত আছে কালি নেই-এর মতো, আইন আছে, প্রয়োগ নেই।

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৫:৫৯
Share: Save:

উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা আদালতে পেশকার-সহ নানা পদে চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগ নিয়ে মামলা করেছিল আদালত কর্মচারী সমিতি। ‘রাজ্যে সর্বত্র চুক্তিভিত্তিক কর্মী, অসন্তুষ্ট আদালত’ (৪-৯) শীর্ষক প্রতিবেদনে প্রকাশ, সেই মামলায় চুক্তিতে নিয়োগের আধিক্য দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করে আদালত। এই নজরদারি ও সমীক্ষার কাজ তো করার কথা সরকারে আসীন দলের, এবং বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধিদের। অথচ দেখা যাচ্ছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থ, প্রশাসন— সর্বত্র দুর্নীতি ও অনিয়ম রুখতে এরা ব্যর্থ। কেন্দ্র থেকে রাজ্য হয়ে পঞ্চায়েত-পুরসভা অবধি একই চিত্র। আইনের শাসন অচল। হতভাগ্য নাগরিকের শেষ আশ্রয় আদালত। তাতেও বিলম্ব হয়। এ যেন দোয়াত আছে কালি নেই-এর মতো, আইন আছে, প্রয়োগ নেই। চুক্তিভিত্তিক কর্মী ও স্থায়ী কর্মীর দায়িত্ব-কর্তব্যের মধ্যে অনেক ফারাক। কেন্দ্র, রাজ্য বা পুর সরকার এ সব বিলক্ষণ জানে। সাংসদ, বিধায়ক, পুরপ্রতিনিধিরাও ভালই জানেন সরকারি শূন্যপদের সংখ্যা কোথায় কত, ও কী ভাবে বেড়েই চলেছে। এই সব শূন্য স্থানে অস্থায়ী, অদক্ষ, চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের দুর্বলতা, বঞ্চনা, অসহায়তার কথাও জানেন। এই ফাঁক ও ফাঁকিতেই ফাইল হারায়, সময়ে কাজ হয় না, উৎকোচ-উপরি ইত্যাদি অবৈধ কাজ শুরু হয়।

বিচারপতি বলেছেন, “এত কর্মীর অভাব নিয়ে জেলা কোর্ট চলতে পারে না।” সরকারি দফতরও এ ভাবে চলতে পারে না। কর্মী সংগঠনগুলি নিরুপায় হয়ে যখন ধর্মঘট করে, তখন সব দোষ বর্তায় ধর্মঘটীদের উপর। নাগরিক উপযুক্ত পরিষেবায় বঞ্চিত থেকেই যান, যার ক্ষতিপূরণ কোনও দিন হয় না। আর, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের গয়ংগচ্ছ কর্মপদ্ধতি, দেশ-দশের দুরবস্থায় তাঁদের নির্বিকার ভাব দেখে প্রশ্ন জাগে, এঁরাও কি রাষ্ট্রের চুক্তিভিত্তিক কর্মী?

শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি

জাগুক বিবেক

ঈশা দাশগুপ্তের ‘কেমন আছেন মেয়ে ডাক্তাররা’ (২৬-৮) প্রবন্ধ থেকে স্পষ্ট যে, ডাক্তার, নার্স, কর্মী বা রোগী, যে কোনও ভূমিকাতেই মেয়েরা কার্যত অসুরক্ষিত। চিকিৎসকরা আজও ধনী-দরিদ্র, ধর্ম ও জাতপাত নির্বিশেষে সকল মানুষের কাছে শ্রদ্ধেয়। এক জন আশি বছর বয়স্ক মানুষও কনিষ্ঠ চিকিৎসককে ‘ডাক্তারবাবু’ বলে সম্বোধন করেন। অথচ, পরিসংখ্যান অনুযায়ী, কতিপয় চিকিৎসক— তাঁরা বিশ্বের যে প্রান্তেরই হোন না কেন— অপারেশন থিয়েটারের মতো জায়গায় রোগীর অসহায়তার সুযোগ নেন। পশুবৎ মনোবৃত্তি নিয়ে সহকর্মী মহিলা-চিকিৎসক, নার্স বা রোগীদের যৌন হেনস্থা করেন। এটা সত্যিই সাধারণ মানুষ, বিশেষত ডাক্তারি ছাত্রীদের অভিভাবকদের চিন্তার কারণ। এই কি আমাদের সমাজের অগ্রগতির লক্ষণ?

শুধু চিকিৎসাক্ষেত্রে নয়, যে কোনও দেশের সরকারি বা বেসরকারি কার্যালয়ে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, ক্রীড়াঙ্গনে বা চলচ্চিত্রশিল্পের মতো নানা ক্ষেত্রেও এমন কদর্য ঘটনার সংখ্যা খুব কম নয়। এর প্রতিকার কী ভাবে হবে? প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম বলেছিলেন, বিবেক হল আত্মার আলোক, আর আত্মসম্মান অর্জনের ক্ষেত্রে শিক্ষা হল সর্বপ্রধান। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি বক্তব্য রাখতে গিয়ে বারে বারে আহ্বান করেছেন, আমরা যেন নিজেদের প্রতি সৎ হই। মহিলাদের সুরক্ষা ও সম্মানের জন্য তাঁর এই কথাগুলি আত্মস্থ করতে হবে। সর্বক্ষেত্রে মহিলাদের প্রতি যৌন হেনস্থাকারী, বা ধর্ষণকারী, বা নির্যাতনকারী পুরুষদের মধ্যেও বিবেক ও সুস্থ রুচির জাগরণ সম্ভব বলেই মনে হয়।

স্বরাজ সাহা,কলকাতা-১৫০

কথার প্রহার

দেবশ্রী সরকার তাঁর ‘মেয়ে, অতএব দোষী’ (১-৯) শীর্ষক প্রবন্ধে সঠিক ভাবেই লিখেছেন যে, কোনও যৌন হেনস্থার ক্ষেত্রে সাধারণ ভাবে আমাদের সমাজ মেয়েটিকেই দায়ী বলে চিহিত করে। এমনকি আদালতের বিচারের ক্ষেত্রেও অনেক সময় একই প্রবণতা লক্ষ করা গিয়েছে। আমাদের সমাজে প্রবল ভাবে লিঙ্গবৈষম্য বর্তমান, তাই সমাজ তথা পরিবারের মধ্যেই মেয়েরা নানা ভাবে নির্যাতিত হয় প্রতিনিয়ত। এর মধ্যে প্রবন্ধকার একটি শব্দ উল্লেখ করেছেন, ‘বাচিক হিংসা’। এই বাচিক হিংসা যে কত নিষ্ঠুর এবং অপমানজনক হতে পারে, তা নিয়েই একটা গোটা প্রবন্ধ লেখা যেতে পারে। আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বহু মেয়ে, বিশেষত গৃহবধূরা কটূক্তি, তুচ্ছতাচ্ছিল্য, অবহেলার শিকার হন। প্রতিবাদ করলেই তাঁদের উপর নেমে আসে আরও বেশি করে মানসিক পীড়ন। তথাকথিত শহুরে ভদ্রলোকও স্ত্রীর প্রতি যে ভাষা ব্যবহার করেন, তা যে কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে, যাঁরা নিয়মিত ভাবে এই অসহনীয় পরিস্থিতিতে থাকেন তাঁরাই জানেন।

দিনের পর দিন এই বাচিক হিংসার শিকার হয়ে বহু মেয়েই জীবনের সমস্ত আনন্দ হারিয়ে কোনও রকমে বেঁচে থাকে। খুব বড় কিছু না হলে সাধারণ ভাবে মেয়েরা কাউকে কিছু জানাতেও চায় না। কিন্তু দিনের পর দিন কটূক্তি, অবহেলা একটা মানুষকে মানসিক ভাবে শেষ করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। প্রবন্ধকার উল্লেখ করেছেন যে, এই সর্বব্যাপী পুরুষতান্ত্রিক কাঠামো মেয়েদের দুর্বল ও নিষ্ক্রিয় করে রাখতে চায়। পরিবারে ছোট থেকেই শিক্ষা দেওয়া হয় মেয়েদের রাতে বেরোতে নেই, সে কী পোশাক পরবে, কেমন করে কথা বলবে— সবই তাকে শেখানো হয়। এর বাইরে গেলেই সে ‘খারাপ মেয়ে’, তাকে অপমান করলে কোনও দোষ নেই। দুঃখের বিষয়, এই লিঙ্গবৈষম্য সহজে যাওয়ার নয়, তাই তো মেয়েদের সুরক্ষা দিতে না পেরে তাদের রাতে কাজের সময় কমিয়ে দেওয়ার কথা বলা হয় সরকারি ইস্তাহারে। হয়তো আরও একশো বছর লাগবে এই লিঙ্গবৈষম্য দূর হতে— কিন্তু তত দিন এই লড়াই চালিয়ে যেতে হবে।

দেবযানী চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৮৬

অসম্মান

আর জি কর কাণ্ডের বিরুদ্ধে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন সত্যিই বেনজির, ঐতিহাসিক। আমরা বিশ্বাস করি, এই আন্দোলনে ডাক্তার ছাত্রছাত্রীরাই শেষ পর্যন্ত জয়ী হবেন। কিন্তু একটা বিষয়ে ধাক্কা খেলাম। প্রাক্তন বিচারপতি ও বর্তমান সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন। তাঁরা ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিতে থাকেন। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় অসম্মানিত হয়ে ফিরে যান। ডাক্তাররা বলেছেন, তাঁরা আন্দোলনকে রাজনীতিমুক্ত রাখতে চান। প্রশ্ন হল, অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কি সেই অর্থে কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব? বিচারপতির আসনটি ছেড়ে কেন তিনি রাজনীতির আসরে নেমেছিলেন, আমরা সকলেই জানি। তিনি সরকারের নিয়োগ দুর্নীতি, কর্মপ্রার্থীদের নৈরাশ্য ও রাজনৈতিক অবক্ষয় দেখে ভাল কিছু করার তাগিদ থেকে রাজনীতিতে এসেছিলেন। ভাল মানুষেরা যত বেশি আসবেন, রাজনীতি তত দূষণমুক্ত হবে। সেই লক্ষ্যে তিনি কোনও একটি দলকে বেছে নিয়েছেন, নির্বাচনে জয়ী হয়ে সাংসদও হয়েছেন। আর পাঁচ জন রাজনীতিকের সঙ্গে তাঁকে এক সারিতে ফেলা যায় কি? বিশেষত তিনি নিজেই যখন নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছিলেন। কর্মপ্রার্থী ছাত্রছাত্রীদের কাছে তিনিই ছিলেন ভরসাস্থল। তাঁর অবদানকে আন্দোলনকারীরা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন? আন্দোলনকারীরা সমাজের সম্মাননীয় ব্যক্তিত্ব। তাঁরা প্রাক্তন বিচারপতির ভাবমূর্তি ও অবদানের কথা মাথায় রেখে বিনীত ভাবে অনুরোধ করলে নিশ্চয়ই তিনি ফিরে যেতেন।

চিকিৎসকদের আন্দোলন যতই অরাজনৈতিক হোক, রাজনৈতিক দলগুলির সমর্থন না থাকলে তা দীর্ঘ দিন চলা সম্ভব নয়। রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের তাচ্ছিল্য না করে বরং তাঁদের বিনীত ভাবে দূরে থাকার অনুরোধ করুন।

মৃণাল মাইতি, ডিভিসি, বাঁকুড়া

অন্য বিষয়গুলি:

Contractual Labourers contractual workers Contracts District Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy