গৌতম চক্রবর্তীর ‘যেন রঘু ডাকাত’ (রবিবাসরীয়, ২৪-৫) নিবন্ধ প্রসঙ্গে এই চিঠি। বাংলায় বহু খ্যাত রচনায় উঠে এসেছে ভয়াল প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সামুদ্রিক ঝড়ের কথা। বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ (১৯৫৬) বা সমরেশ বসুর ‘গঙ্গা’ (১৯৫৭) উপন্যাস। প্রফুল্ল রায়ের ‘মাটি আর নেই’ (১৯৮৪) উপন্যাসের জেলে-মাঝিদের নয়া বসত ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় প্রলয়ঙ্কর সামুদ্রিক ঝড়ে। ঘরে ঘরে চিৎকার ওঠে, ‘‘হেই মা গোসানী ঠান্ডা হ, ঠান্ডা হ। পেরানে মারিস নি।’’ আর এক ভয়ঙ্কর ঝড়ে প্রাণে মরে তালসারি অঞ্চলের মাছমারা মালোদের অনেকেই, চিত্তরঞ্জন মাইতির ‘ময়ূরপঙ্খী’ গল্পে। কালবোশেখের ঝড়ে মেতে ওঠা রায়মঙ্গলে নৌকা থেকে ছিটকে পড়া মদন (শক্তিপদ রাজগুরুর ‘সহধর্মিণী’ গল্পে) মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে সঙ্গী ভিখনকে বলেছিল, ‘‘শালা গাঁঙ ইবার আর ফিরি যাতি দেবানি।’’ ফিরতে সে পারেনি। যেমনটি ফিরতে পারেনি সমুদ্রে গিয়ে নিবারণ সাইদার (সমরেশ বসুর ‘গঙ্গা’-র এক চরিত্র)। বড় নদীতে তুফান উঠে সাঁ-সাঁ করে ছুটতে থাকা নৌকা তীরে ধাক্কা খেয়ে প্রাণ নেয় সুবল মালোর (‘তিতাস একটি নদীর নাম’)। নৌকার ধাক্কায় সে চিত হয়ে পড়ে। নৌকা তার বুকখানা মথিয়া পিণ্ড করে দেয়। তবু আজও বাতাসের হিংস্র গর্জন আর গহিন গাঙের তুফানের মধ্যে দাঁড়িয়েও মেহের আলি পাতলা দাড়িতে হাত বুলিয়ে জানায়, ‘‘মস্ত গুনীন বাবু আমাদের শরৎ ভাই, ওর সাহসেই তো বাদাবনে রইছি।’’ শক্তিপদ রাজগুরুর ‘শরৎ গুনীন’ গল্পের মেহের আলিরা ঝড়-জলের মধ্যে এ ভাবেই বাঁচার স্বপ্ন দেখে। সুদেব মাল, তিসা, হুগলি
এখন কী দরকার
জল নেমে গেলে দেখা দিতে পারে রোগের মহামারি। একে তো মানুষ করোনা সংক্রমণের দাপটে অসহায় ছিলেন, এখন দূরত্ববিধি মেনে চলা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তার উপরে জলবাহিত রোগ বেশি করে দেখা দিতে পারে। তাই এই সময়ে দরকার বিশুদ্ধ পানীয় জলের সরবরাহ, গৃহ ও আশপাশের পরিবেশকে নিয়মিত ভাবে ব্লিচিং পাউডার সহযোগে পরিশোধিত করা, নালা-নর্দমায় কীটনাশক তেল ছড়ানো ও পরিবেশকে যতটা সম্ভব পরিচ্ছন্ন রাখা। এ কাজে সরকারি সাহায্যের সঙ্গে সঙ্গে বেসরকারি, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত হতে হবে। গ্রামীণ এলাকায় অনেক জায়গায় ডাক্তারের অভাব আছে। তা পূরণ করা যেতে পারে নিয়মিত স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করে। সরকারি ও বেসরকারি মদতে ওষুধের জোগান দিতে পারলে খুবই ভাল হয়।
প্রদীপ কুমার দাস,শ্রীরামপুর, হুগলি
গাছের সার্ভে
প্রতি তিন মাস অন্তর, শহরের রাস্তার ধারের গাছপালার সার্ভে বা পর্যবেক্ষণ করা দরকার, যাতে দুর্বল ও বিপজ্জনক গাছগুলিকে আগেই সরিয়ে দেওয়া যায়। এই পদক্ষেপটি নিলে বিপর্যয়ের সময় অনেক গাছপালা কম ভেঙে পড়বে, ফলে বাড়িঘরের ক্ষয়ক্ষতি কম হবে, তারও কম ছিঁড়বে, রাস্তাঘাট বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনাও কমবে।
সুভাষ চন্দ্র পাল,কলকাতা-৯৯
কেমন হিসেব
একটি বিখ্যাত সংস্থা থেকে গৃহঋণ নিয়েছিলাম ৮.৩৫% হারে ২০১৭ সালে। কোন এক বার রেপো রেট বাড়ল, তাই সুদের হার বেড়ে প্রথমে ৮.৯০% হয়ে তার পর ৯.০৫% হল। তার পর অন্তত আট বার রিজ়ার্ভ ব্যাংক সুদ কমাল, কিন্তু আমার গৃহঋণের সুদের হার ওই ৯.০৫%-এই থমকে আছে। এটা কেমন হিসেব হল?
স্বপ্নেন্দু মুখোপাধ্যায়, বেলঘরিয়া
গ্রামের বিদ্যুৎ
কলকাতাবাসীর চোখে মুখে চরম বিস্ময়, চার-পাঁচ দিন ধরে ইলেকট্রিসিটি নেই, এ রকম হওয়াও সম্ভব? এ তো গ্রামগঞ্জে হয়। ওদের অভ্যাস আছে। আর গ্রামে চারিদিকে কত গাছপালা, আলো-হাওয়া, পুকুর, রাস্তার মোড়ের টিউবওয়েল। ওদের খুব একটা অসুবিধা নেই। কিন্তু কলকাতা বলে কথা! রাজ্যের রাজধানী! তাই সিইএসসি-র কঠিন সমালোচনা।
তার পর তাদের প্রতি বিরক্তি প্রকাশ খোদ রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের। সঙ্গে সঙ্গে নাগরিক সমাজ যেন খুল্লমখুল্লা লাইসেন্স পেয়ে গেল সিইএসসি-র ফিল্ড-কর্মীদের ওপর গায়ের জোর দেখানোর। সরস্বতী পুজোর পুরুত পাকড়ানোর মতো করে তাদের পেছন পেছন একদল ক্রুদ্ধ মানুষের উত্তেজিত দাপাদাপি বৈধতা পেয়ে গেল।
কলকাতা বাদ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বাকি সব অংশে যে সরকারি বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি আছে, তাদের কর্মকাণ্ডের আলোচনা তুলনামূলক কম হচ্ছে।
আমি ঝড়ের আগে থেকেই তমলুক ও হলদিয়ার মধ্যবর্তী এক গ্রামে অবস্থান করছি, এক পরমাত্মীয়ের বাড়িতে। প্রত্যন্ত তো নয়ই, বরং যথেষ্ট অবস্থাপন্ন গ্রাম। ঝড় তার প্রবল দাপট দেখিয়ে চলে যাওয়ার সপ্তাহ খানেক পরের কথা লিখছি। অনেক উৎপাটিত গাছ এবং ধরাশায়ী খুঁটি একদম একই অবস্থায় পড়ে আছে গত সাত দিন ধরে। সুতরাং বিদ্যুৎ আসার আশু সম্ভাবনা নেই, বোঝা যাচ্ছে।
ফলে পাড়ায় পাড়ায় চড়া দামে শুরু হয়েছে ভাড়া করা, ঝড়তি-পড়তি, কর্ণপটহ-বিদীর্ণকারী, দূষণ প্রদানকারী জেনারেটরের দাপট। বাড়িতে বাড়িতে জেনারেটরের দান অনুজ্জ্বল আলো ও মন্থর গতিতে ঘুরতে থাকা পাখা। পাড়ায় মারণ ভাইরাস ভুলে খাওয়ার জল কেনার লাইন। দশ টাকার মোমবাতি রাতারাতি তিরিশ টাকায় বিকোচ্ছে।
বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি ও স্থানীয় পঞ্চায়েতের উদাসীনতা ও স্থানীয় মানুষের সহনশীলতা— সবই বিস্ময় উদ্রেক করে।
শুভেন্দু দত্ত, কলকাতা-১০১
মূল্যায়ন
সম্প্রতি পঃ বঃ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ নির্দেশ জারি করেছে, এক জন পরীক্ষক নিজেই তাঁর দেখা খাতা স্ক্রুটিনি করে প্রধান পরীক্ষকের কাছে জমা করবেন। পরীক্ষক নিজেই স্ক্রুটিনি করলে, খাতা দেখার ভুল চিহ্নিতকরণ ও সংশোধন করার সম্ভাবনা কম হবে। এ কথা ঠিক যে এ বছর পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। কিন্তু তার মধ্যেও খাতার মূল্যায়ন যথাযথ ভাবে করা অবশ্য প্রয়োজন। যদিও ফল প্রকাশের পরে মূল্যায়নকে চ্যালেঞ্জ করার, এমনকি তথ্যের অধিকার আইনে খাতা দেখার অধিকার পরীক্ষার্থীর থাকবে, তবুও মূল্যায়ন পদ্ধতি শুরুতেই যথাযথ থাকা উচিত। কারণ সব ছাত্রছাত্রী এই সুবিধাগুলো গ্রহণ করতে পারে না।
প্রত্যাশা পাল, রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর
পর্যটন শিল্প
করোনার আক্রমণে পৃথিবী জুড়ে দীর্ঘ লকডাউনের ফলে বিপর্যস্ত দেশের পর্যটন শিল্প। কেন্দ্রীয় সরকারের প্যাকেজে পর্যটন শিল্পের জন্য কোনও বরাদ্দ নেই। সারা দেশে অসংখ্য পর্যটন সংস্থা বা তার সহযোগী সংস্থাগুলোর প্রায় ৪০ শতাংশই বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সারা দেশের প্রায় আড়াই কোটি লোক কাজ হারিয়ে বেকার হবেন। অথচ পর্যটন থেকেই বছরে গড়ে ২.৩ লক্ষ কোটি টাকার বিদেশি মুদ্রা আয় হত দেশের। এখন আমাদের দেশে বিদেশি পর্যটক আসার সম্ভাবনা যেমন কম, তেমনই দেশের অভ্যন্তরেও দেশীয় পর্যটকরা আপাতত যাওয়ার ঝুঁকি নেবেন না। পর্যটন শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি।
রাসমোহন দত্ত
মছলন্দপুর, উত্তর ২৪পরগনা
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy