Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Lockdown

হাইকিং, বোল্ডারিং ছেড়ে অস্ট্রীয়রা গৃহবন্দি, মনে আতঙ্ক আমাদেরও

এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।

সুনসান রাজপথ। —নিজস্ব চিত্র।

সুনসান রাজপথ। —নিজস্ব চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২০ ১৭:৫৪
Share: Save:

আজ প্রায় এক মাস হল এখানে লকডাউন চলছে। আমরা এখন আছি মধ্য ইউরোপের ছবির মতো সুন্দর দেশ অস্ট্রিয়ার গ্রাৎজ শহরে। আল্পস-এর কোলে অস্ট্রিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর গ্রাৎজ।

গত ১৩ মার্চ থেকে আমরা ঘরে বন্দি। ১২ তারিখ সকালে ছেলেমেয়েকে কিন্ডারগার্টেনে পৌঁছে দিতে গিয়ে জানলাম, সে দিনই ওদের শেষ ক্লাস। কিন্ডারগার্টেন খুলবে একদম ইস্টারের পর ১৫ই এপ্রিল। বাড়ি ফিরে বরের কাছে শুনলাম, ওদের ইউনিভার্সিটি থেকেও ওয়ার্ক-ফ্রম-হোমের মেল এসেছে।

তখন পাশের দেশ ইটালি ছারখার হয়ে যাচ্ছে নভেল করোনাভাইরাসের আক্রমণে। উত্তর ইটালি সংলগ্ন তিরোল প্রদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ। শীতের শেষ বেলায় ওখানকার স্কি-রিসর্টগুলোয় তখনও দেশ-বিদেশের পর্যটকদের ভিড়। তার মধ্যেই ১৫ মার্চ তিরোল-সহ অস্ট্রিয়ার ইতালি-সংলগ্ন সমস্ত প্রদেশ লকডাউন করে দেওয়া হল এক সপ্তাহের জন্য। ঠিক পরের দিনই লকডাউনের আওতায় এল সারা দেশ আর লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হল ৩ এপ্রিল পর্যন্ত। ১৭ মার্চ বন্ধ করে দেওয়া হল ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমস্ত দেশের অভ্যন্তরীণ সীমানা। ইতিপূর্বেই দফায় দফায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইটালি, চেক, হাঙ্গেরি আর স্লোভাকিয়ার সীমান্ত।

আরও পড়ুন: রাজস্থান ৩৫ হাজার, পশ্চিমবঙ্গ ৩১০০, কোন রাজ্যে করোনা টেস্ট কত

নতুন করে নিয়োগ করা হয়েছে প্রচুর স্বাস্থ্যকর্মী। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রস্তুত হয়েছে স্বাস্থ্য পরিষেবা। বয়স্ক নাগরিকদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ইউনিভার্সিটির স্বেচ্ছাসেবী পড়ুয়ার দল, যাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওঁদের কাউকে খাদ্যের সন্ধানে বেরোতে না হয়। ইটালির দুর্দশায় আতঙ্কিত স্থানীয় প্রশাসনের আবেদনে সাড়া দিয়ে এ শহরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত লকডাউন পালন করছে ১৩ মার্চ থেকেই। সুপারমার্কেট আর ওষুধের দোকান ছাড়া বন্ধ রয়েছে সব কিছু। রাস্তা ঘাট সুনসান। যদিও গণপরিবহণ বন্ধ হয়নি। তবে বাস-ট্রাম সব ফাঁকা। প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বেরনো বন্ধ। শিশু ও বৃদ্ধদের বাড়ি থেকে বেরনো সম্পূর্ণ বারণ।

রৌদ্রকরোজ্জ্বল দিনে পার্কের ঘাসে শুয়ে রোদ মাখা, এ দেশের মানুষের ভারী পছন্দের। তবে ওটুকু আলসেমি বাদ দিলে, এরা যথেষ্ট স্বাস্থ্যসচেতন। হাইকিং আর বোল্ডারিং অস্ট্রিয়ানদের প্রিয় নেশা। সকালে, বিকেলে বহু লোককে দেখা যায় পার্কে, মাঠে শরীরচর্চা করতে কিংবা ফুটপাথ ধরে দৌড়তে। তবে লকডাউনের কারণে সে সব আপাতত বন্ধ। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বেরলে এখন পুলিশ ধরছে, মোটা অঙ্কের জরিমানা করছে। তাই সূর্যালোক প্রিয় অস্ট্রিয়ানরা শরীরচর্চা করছে, এখন নিজেদের বাড়ির ব্যাকইয়ার্ডে।

গ্রাৎজ-তে আজ পর্যন্ত আক্রান্ত ৩৮২ জন। নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমছে । কোয়রান্টিনে আছে প্রায় ২০০০ মানুষ। তবে এখানে প্রয়োজনীয় সামগ্রীর কোনও অভাব তৈরি হয়নি। দেশের সরকার সুপার মার্কেটের সামনে মাস্ক আর স্যানিটাইজার দেওয়ার নিয়ম চালু করেছে। সুপারমার্কেটে মাস্ক পরে না থাকলে জরিমানা করা হচ্ছে।

প্রাথমিক ভাবে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করলেও পরে সেটা ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। ৯০ লক্ষ মানুষের দেশ অস্ট্রিয়া। তার মধ্যে আক্রান্ত ১৩,০০০ ছাড়িয়েছে , মৃতের সংখ্যা প্রায় ৩০০। যদিও জার্মানি, ইতালি বা সুইৎ জারল্যান্ডের তুলনায় এখানে সংক্রমণের হার অনেক কম। ভারতের মতোই এখানকার প্রশাসন সঠিক সময়ে তৎপর হওয়ায় এবং দেশবাসী সম্পূর্ণ সহযোগিতা করায় অতিমারির ভয়াবহতা প্রতিবেশী দেশগুলোর মতো প্রভাব ফেলেনি এ দেশে। এই দেশের নতুন আক্রান্ত আর মৃতের পরিসংখ্যানের রেখচিত্র এখন নিম্নগামী।

প্রতিদিন নতুন করে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ১৪ এপ্রিলের পর প্রথম খুলবে ছোট ছোট দোকানগুলো। তারপর পরিস্থিতি বিচার করে ধাপে ধাপে বাকি লকডাউন ওঠানো হতে পারে। তবে পুরো ব্যাপারটাই শুরু হবে সতর্কতা সহযোগে, মাস্ক পরে এবং পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে।

এখানে এখন খুব সুন্দর আবহাওয়া। দিনের বেলা রোদ ঝলমলে আর রাতে বেশ ঠান্ডা। গ্রাৎজ সবুজে ঘেরা শহর। শহরের মাঝে একটা উঁচু টিলা, শ্লসবার্গ। তার মাথায় রয়েছে ক্লক টাওয়ার। শহরের প্রায় সব জায়গা থেকেই এই ক্লক টাওয়ার দৃশ্যমান। কিছু দিনের মধ্যেই শ্লসবার্গ ভরে উঠবে গোলাপি চেরিব্লসমে। বসন্তের সমাগমে চারিদিক সেজে উঠছে নানা রং-এর ফুল আর কচি পাতায়। ছোটরা অস্থির হয়ে যাচ্ছে বাড়ির বাইরে বেরনোর জন্য। পার্কে যাওয়ার জন্য, নিদেনপক্ষে একটু স্কুলে যাওয়ার জন্য। জানলা আর চিলতে ব্যালকনিটুকুই এখন ওদের বহির্জগৎ।

আরও পড়ুন: এ বার করোনা আক্রান্ত ন্যাশনাল মেডিক্যালের চিকিৎসক, কোয়রান্টিনে আরও চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা

অপেক্ষায় আছি আবার সব স্বাভাবিক হওয়ার। বাড়িতে এতদিন সকলে চিন্তা করছিল আমাদের এখানের পরিস্থিতি নিয়ে। এখন ভারতের পরিসংখ্যান দেখে আমাদের দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে। সবাই সুস্থ হয়ে উঠুক , জীবন আবার পুরোনো ছন্দে ফিরুক, এটাই এখন একমাত্র প্রার্থনা।

ঈশিতা সেনগুপ্ত। গ্রাৎজ, অস্ট্রিয়া

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

Lockdown Corona Coronavirus Austria
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy