Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

মনে হচ্ছে এক দুঃস্বপ্ন দেখছি

এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।

পারথের রাস্তায় এখন এটাই দেখা যাচ্ছে। ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া।

পারথের রাস্তায় এখন এটাই দেখা যাচ্ছে। ছবি ফেসবুক থেকে নেওয়া।

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২০ ১৭:২২
Share: Save:

বিগত চার বছর ধরে আমি আর আমার কর্তা ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার প্রধান শহর পারথের বাসিন্দা। কর্তার চাকরির সূত্রে ছোট ছিমছাম এই শহরটায় আসা হলেও, আস্তে আস্তে শহরটা আপন হয়ে গিয়েছে। এখানে শিক্ষা দপ্তরের তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগে চাকরি করতেও শুরু করেছি।

যতদূর মনে পড়ে জানুয়ারির শেষের দিকে উহান থেকে আসা একজনের দেহে এখানে প্রথম করোনাভাইরাস ধরা পড়ে। তার পর অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ও মেলবোর্ন সংলগ্ন এলাকায় মাঝে-মাঝে কিছু লোকের করোনা পজিটিভ হওয়ার খবর টুক-টাক কানে ভেসে আসছিল। অবশ্য আমাদের এখানে জীবনযাত্রা তখনও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছিল। শুধু অফিসে কাজের ফাঁকে, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় অল্প-বিস্তর আলোচনা হত চিনের পরিস্থিতি নিয়ে। তখনও ভাবিনি সেই ভয়ঙ্কর মারণ ভাইরাস আর কিছুদিনের মধ্যে সারা পৃথিবীতে থাবা বসাবে!

আরও পড়ুন: এই বন্দিদশা কবে কাটবে জানি না!​

প্রথম টনক নড়ে ১ মার্চ যখন পারথে করোনার শিকার হন ৭৮ বছর বয়সী একজন প্রৌঢ়। যিনি অভিশপ্ত জাহাজ ‘ডায়মন্ড প্রিন্সেস’-এর সওয়ারি ছিলেন। আর দেখতে-দেখতে মাত্র এক-দু’সপ্তাহের মধ্যে সারা অস্ট্রেলিয়ায সংখ্যাটা হু-হু করে বাড়তে থাকে। মার্চের মাঝামাঝি গোটা অস্ট্রেলিয়াতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫০০ হয়ে গেল। আমাদের এখানেও সামাজিক মেলামেশার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হল। বেশ কিছু স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে যেতে লাগল, সীমিত করা হল আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবাও। তবে সব থেকে বেশি প্রভাব পড়ল নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের উপর। সরকার শীঘ্র সব বন্ধ করে দিতে পারে, এই আশঙ্কায় লোকে ভয়ে সব কিছু কিনে মজুত করে রাখতে শুরু করল। অবস্থা এমন দাঁড়াল যে দোকান খোলার ঘন্টা খানেকের মধ্যে বেশির ভাগ খাদ্যসামগ্রী, টয়লেট রোল শেষ হয়ে যেত। মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে পারথে বেশির ভাগ অফিস বাড়ি থেকে কাজ করার অনুমতি দিয়ে দিল, যার মধ্যে আমাদের অফিসও ছিল।

আরও পড়ুন: আতঙ্ক কোনটা বেশি, মৃত্যুর, না চাকরি চলে যাওয়ার?

এদিকে আর এক জাহাজ ‘রুবি প্রিন্সেস’ সিডনিতে এসে পৌঁছবার পর যাত্রীদের ‘আইসোলেশন’-এ রাখার পরিবর্তে সরকার বাড়ি যাবার অনুমতি দিল যা পরবর্তীকালে এক ঘাতক সির্দ্ধান্ত রূপে প্রমাণিত হল। কয়েক সপ্তাহ হয়ে গেল, আমরা ঘরে বন্দি। শুধুমাত্র অত্যাবশ্যকীয় জিনিস কেনার জন্য বাইরে বেরনো যায়, তাও দু’জনের বেশি না। ৭০ বয়সের বেশি কারওর বেরনো মানা। এখানে হ্যান্ড-স্যানিটাইজার, মাস্ক— সবই অপ্রতুল। তবু বাইরে গেলে যতটা সম্ভব সাবধানতা বজায় রাখতে চেষ্টা করছি। সত্যি বলতে একটা আতঙ্কের মধ্যে প্রতিটা দিন কাটাচ্ছি। বাইরের পৃথিবীর সাথে যোগাযোগ বলতে খবর শোনা আর ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাছের মানুষগুলোকে দেখা, কথা বলা।

ভারত তথা কলকাতার খবর শুনে বুকটা কেঁপে ওঠে, নিজের দেশ, প্রিয় মানুষগুলোর জন্য বড় চিন্তা হয়। দেরিতে হলেও আশার কথা যে অস্ট্রেলিয়াতে সংক্রমণ একটু কমেছে, কিন্তু সারা পৃথিবীতে সব কিছু স্বাভাবিক হতে কত দিন বা মাস লাগবে জানি না! তবু ভোরে হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে গেলে পাশের জানলা দিয়ে নীল আকাশের গায়ে এক ঝাঁক পাখিদের উড়তে দেখে এক মুহূর্তের জন্য সব কিছু ভুলে যাই। মনে হয় পৃথিবীটা এখনো আগের মতোই আছে, হয়তো একটা দুঃস্বপ্ন দেখছিলাম মাত্র!

সুদেষ্ণা পাল ভট্টাচার্য, পারথ, অস্ট্রেলিয়া

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus COVID-19 Perth Australia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy