এলমহার্স্ট হাসপাতালের বাইরে করোনাভাইরাসের পরীক্ষার জন্য তৈরি করা হয়েছে অস্থায়ী টেন্ট।
নিউইয়র্ক মানেই ছিল একসময় স্ট্যাচু অব লিবার্টি, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, টাইমস স্কয়ার, রকফেলার সেন্টার, সেন্ট্রাল পার্ক, অ্যাম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং, ব্রুকলিন ব্রিজ, মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম, জাতিসংঘের প্রধান কার্যালয়। এর কোনও একটি বাদ পড়লেও বাঙালিদের চলে। কিন্তু তাদের কাছে জ্যাকসন হাইট্সের নাম বাদ পড়লে নিউইয়র্কের পরিচয় যেন পূর্ণ হয় না। জ্যাকসন হাইট্সকে নিউ ইয়র্ক নগরীর বাঙালিদের তীর্থস্থান বললেও ভুল হবে না। বলা যেতে পারে, জ্যাকসন হাইট্সের গুরুত্ব তাঁদের কাছে তার চেয়েও বেশি। মহাকাশের যাত্রী ভারতীয় বংশোদ্ভুত কল্পনা চাওলার নামানুসারে ৭৪ স্ট্রিট এবং ৩৭ অ্যাভিনিউ-এর নামকরণ হয় কল্পনা চাওলা ওয়ে। এই জ্যাকসন হাইট্সকে ঘিরে বাংলাদেশি, ভারতীয়, পাকিস্তানি ও নেপালিদের এক বিশাল বাজার। শাড়ি-গহনা-রেশমি চুড়ি থেকে পাটা-পুতা— কী নেই সেখানে! একটা সময় ছিল যখন ৭৪ স্ট্রিটকেই জ্যাকসন হাইট্স বলা হতো।
অভিবাসী গ্রিকদের কাছ থেকে নিয়ে ৭০ দশকে ভারতীয় ও পাকিস্তনিরা ওই এলাকায় ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন। এখন ৭২, ৭৩, ৭৪ ও ৭৫ স্ট্রিট জুড়েই বাঙালিদের রাজত্ব। ৯০ দশকের শুরুতে ওপি ওয়ান ও ডাইভারসিটি ভিসায় আগত বাংলাদেশি অভিবাসীদের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে বাড়তে এখন ৩ লক্ষের উপরে। বাঙালিদের কোন খাবার নেই জ্যাকসন হাইট্সে? ইত্যাদি, প্রিমিয়াম, জ্যাকসন ডিনার, হাটবাজার, খাবার বাড়ি, কাবাব কিং, ডেরা রেস্টুরেন্ট, রাজভোগ, ইন্ডয়ান তাজ, প্রিন্স, সাগর চায়নিজ— এই সব নাম প্রতিটি বাঙালি অভিবাসীর কাছে পরিচিত। সরিষা ইলিশ, গলদা চিংড়ি আর মাছের পাতুড়ি-সহ অসংখ্য বাঙালি খাবার এসব দোকানে পাওয়া যায়। তাই পৃথিবীর যে কোনও জায়গা থেকে বাঙালি নিউইয়র্কে ভ্রমণে আসুক না কেন, তাঁদের একবার জ্যাকসন হাইটসে আসা চাইই। তার মধ্যে বছর খানেক হলো নিউইয়র্ক সিটি যোগ করেছে ৭৪ স্ট্রিট, ৩৭ রোড ও ব্রডওয়ের মাঝে একটি নয়নাভিরাম প্লাজা। সে প্লাজায় মানুষে গিজ গিজ করে সর্বক্ষণ।
শত শত বাঙালির কলরবে মুখর জ্যাকসন হাইটস এখন করোনায় আক্রান্ত। পুরো জ্যাকসন হাইটস যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। কোনও লোক-জন নেই। রেস্তোরাঁ, দোকানপাট— সব বন্ধ। প্যাটেল ব্রাদার্স আর সবজিমান্ডি খোলা ছিল-জনসাধারণের নিত্যনৈমত্তিক বাজারের জন্য। সেই দুটি বিশাল স্টোরও গত ৭দিন ধরে বন্ধ। শুধু শোনা যায় অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের আওয়াজ। কেননা দুই ব্লক দূরেই রয়েছে এলমহার্স্ট হাসপাতাল। সেই হাসপাতাল এখন মৃত্যুর খোঁয়াড়। সংকুলান হচ্ছে না স্থানের। তাই গেটের সামনে তাঁবু খাটিয়ে করোনা ভাইরাসের পরীক্ষা চলছে। প্রতিদিনই শ’খানেক করোনা রোগী মারা যাচ্ছে এই হাসপাতালে। হাসপাতালের সামনেই সারি সারি লাশ। সামনে ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে সর্বক্ষণ। লাশ উঠছে আর উঠছে। আমেরিকার মূল ধারার সংবাদ মাধ্যমগুলোর কর্মীরা প্রায় সারাদিনই এই হাসপাতালটির সামনে রয়েছেন। অদ্ভুত এক ভয়ংকর স্থানে পরিণত হয়েছে জায়গাটি। আশে-পাশের অ্যাপার্টমেন্টগুলো ভয়ে জানালা পর্যন্ত খুলছে না। আরোগ্য লাভের আশা নিয়ে পরিবারের সদস্যকে গাড়ি বা অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত। অনেকের ক্ষেত্রে সেটাই শেষ দেখা। এরপর শুধু একটি নম্বর। আবার সে নম্বরটি ধরে মরদেহ খুঁজতে হবে। তার জন্য আবার অপেক্ষা। কারো কারো ক্ষেত্রে এক থেকে দুদিন দেরি হচ্ছে মরদেহ পেতে। শেষ দেখাটি দেখারও সুযোগ নেই। পুরো শরীর সিল করা। যাদের আত্মীয়-স্বজন রয়েছে, তাঁদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হচ্ছে। নতুবা সিটি গণকবরে সমাহিত করছে হাজার হাজার লাশ। শুধু এলমহাস্ট হাসপাতাল নয় নিউইয়র্ক নগরীর জ্যামাইকার কুইন্স হাসপাতাল, ব্রুকলিনের কনি আইল্যান্ড হাসপাতাল, ফ্ল্যাশিং হাসপাতাল ও ম্যানহাটানের বেলভিউসহ সব হাসপাতালের একই চিত্র।
নিউইয়র্ক বাংলাদেশ সোসাইটির প্রেসিডেন্ট কামাল আহমেদ থেকে শুরু করে চিকিৎসক, পুলিশ, সাংবাদিক, ছাত্র-ছাত্রী, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, মসজিদের ইমাম থেকে শুরু করে প্রায় শতাধিক বাঙালি মারণব্যাধি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রাণ হারিয়েছেন। এর অধিকাংশই নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশের বাঙালি। এ নিয়ে ৩ জন পশ্চিম বাংলার বাঙালি ও ১৮ জন ভারতীয় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন বলে কমিউনিটির পত্র-পত্রিকার খবর। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই একজন বাঙালির মৃত্যুর খবর আসছে। মৃত্যুর তালিকায় রয়েছেন ১৮ বছর থেকে ৭০ বছর। করোনার হাত থেকে নিউইয়র্কে কেউই নিস্তার পাচ্ছেন না। করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালের কর্মীরাই কাজ করে যাচ্ছেন। ওঁদের জন্যও বরাদ্দ নেই টেস্ট কিট। সাধারণ ফ্লুতে যে ধরনের পিপিই দেওয়া হতো, অনেক ক্ষেত্রেই এখন সেটাও নেই। সিক (ছুটি) কল দেবার তেমন সুযোগ নেই। দিবা-রাত্রি কাজ করছেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।
এর মধ্যে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে নিউইয়র্কে ২ জন বাঙালি চিকিৎসক চলে গেলেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে। নিজের জীবন দান করে গেলেন করোনা রোগীদের বাঁচাতে গিয়ে। তাঁদের একজন হলেন মোহম্মদ ইফতেখার উদ্দিন। ৬ এপ্রিল নিউইয়র্কের নর্থ সেন্ট্রাল ব্রঙ্কস হাসপাতালে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার ৫ম দিন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি নিউইয়র্কের ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ-এর এপিডেমোলজিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
চিকিৎসক রেজা চৌধুরির মৃত্যু আরও নির্মম। ঘটেছে গত ৮ এপ্রিল রাত ১১টা ৩০ মিনিটে নিউইয়র্কের লাং আইল্যান্ডে অবস্থিত নর্থশোর হাসপাতালে। হাসপাতালে যাওয়ার ৫ দিন আগেও রোগীদের চিকিৎসা করছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে নিউইয়র্ক সিটির ব্রঙ্কসের বাঙালি কমিউনিটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। এভাবে দুইজন চিকিৎসককে হারাল নিউইয়র্কের বাঙালি কমিউনিটি। যারা দিন নেই রাত নেই ৪ সপ্তাহ ধরে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করে গেছেন। তাঁরাই এক এক করে এই মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে চলে যাচ্ছেন। আরো কত বাঙালি চিকিৎসক যে আইসিইউ-তে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন তার হিসেব নেই।
বহু জানা-অজানা বাঙালি চিকিৎসক শুধু নিউইয়র্ক নয়, রোগী সামলাচ্ছেন পুরো আমেরিকায়। ডেট্রয়েট, বস্টন, নিউ জার্সি, লস এঞ্জেলেস, বাল্টিমোর, ওয়াশিংটন, আটলান্টা, টেনেসি-সহ আমেরিকার বেশিরভাগ স্টেটেই বাঙালি চিকিৎসকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানবতার সেবায় নিয়োজিত। প্রত্যেকেই আমেরিকার মূলধারায় রাখছেন তাদের নিজেদের অবদান। এটি বাঙালি হিসেবে অনেক গর্বের। এই গর্বের মানুষগুলো এক এক করে বিদায় নিচ্ছেন।
বহু জাতিগোষ্ঠীর নিউইয়র্কে প্রতিদিন কোনও না কোন বাঙালির মৃত্যুর খবর আসছে। অভিবাসী সমাজের মধ্যে বাংলাদেশি বাঙালিরাই বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। করোনায় এত বাংলাদেশি বাঙালির আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা বাংলাদেশি অভিবাসীদের করে তুলেছে আতঙ্কগ্রস্ত। শুরুর দিকে অনেকেই আক্রান্ত হয়েছেন ক্যাব চালাতে গিয়ে। নগদ অর্থের লেনদেন থেকে আক্রান্ত কোনও যাত্রীর সংস্পর্শে এসে। ভাইরাসের প্রথম আক্রমণের শিকার বাংলাদেশি কর্মজীবীদের মাধ্যমে তাদের পরিবারের লোকজন আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। প্রবাসেও আমাদের অনেক পরিবারই একান্নবর্তী। অনেকেই একই বাসায় সন্তান, মা-বাবা, শ্বশুর-শাশুড়ি নিয়ে থাকেন। আবার অনেক ব্যাচেলর গাদাগাদি করে থাকেন এক সাথে। চলমান সঙ্কটে এ বিষয়টিকেও বাংলাদেশিদের বেশি আক্রান্ত হওয়ার একটা কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। লকডাউন শুরু হওয়ার পর নিজেদের ঘরে অনেকের পক্ষে পৃথক থাকা সম্ভব হয়নি। অনেক লোকজনের বাস এক ঘরে। রান্নাঘর থেকে বাথরুম তাঁদের শেয়ার করতে হয়। নিউইয়র্কে বাংলাদেশি প্রায় তিন শতাধিক চিকিৎসক-সহ পাঁচ শতাধিক স্বাস্থ্যসেবী (নার্স, ইএমএস) সামনের সারির কর্মজীবী। তাঁরাও আক্রান্ত হয়েছেন এক এক করে। নিউইয়র্কের পুলিশে, ট্রাফিকে কাজ করা বাংলাদেশিরাও করোনার প্রথম ধাপের আক্রমণের শিকার।
নিউইয়র্ক সিটির হাসপাতালগুলো এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর অভিবাসী সমাজের ছিল ব্যাপক আস্থা। অনেক বাঙালিই মনে করতেন, ৯১১ কল করে অ্যাম্বু্লেন্স পৌঁছাতে পারা মানে বেঁচে যাওয়া। এবার হৃদরোগ থেকে শুরু করে যত কঠিন রোগই হোক না কেন, নিরাময় হয়েই ফিরতেন বেশিরভাগ রোগী। নিউইয়র্কের হাসপাতালগুলো যে কতটা অরক্ষিত রয়েছে, তা এ বার করোনা ভাইরাস চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। আমাদের এক বন্ধুর অবস্থা খুব খারাপ। থাকেন উডসাইডে। তাঁর স্ত্রী ৯১১ কল করলে অ্যাম্বুলেন্স এসে নিয়ে গিয়েছে। জ্বর কমার জন্য টাইলানল দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। এবার রোগী বাড়ি ফিরলেন নিজ দায়িত্বে। ৩ দিন পর করোনা টেস্টের রেজাল্ট জানলেন— পজেটিভ। ফোনে বলেছেন শ্বাস-প্রশ্বাস কষ্ট হলেই হাসপাতালে যেতে। মৃত্যুর কাছাকাছি না পৌঁছানো পর্যন্ত টেস্ট কিংবা ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না।
এটি আরো প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে নিউইয়র্ক স্টেটের গভর্নর এন্ড্রু কু্মো নিউইয়র্ক সিটির মেয়র ব্লাজিওর মতদ্বৈততা। ডেমোক্রেটিক পার্টির এই দুই নেতার বিরোধ অনেকদিন ধরেই চলছিল। লক ডাউন থেকে শুরু করে স্কুল ছুটি-সহ কোনও কিছুতেই তাঁদের ঐকমত্য ছিল না। মানুষের জীবন-মরণ প্রশ্নেও তাঁদের এই বিরোধের নিষ্পত্তি হয়নি। নিউইয়র্কের এই করুণ অবস্থার জন্য এটাও অনেকাংশে দায়ী। তাছাড়া আরেকটি বিষয় এখন স্পষ্ট যে, নিউইয়র্ক সিটি বা স্টেট কখনোই ভাবেনি একসঙ্গে দেড় লক্ষ রোগীকে তাদের সামলাতে হবে।
আসলে নিউইয়র্কের মেয়র বা গভর্নর কেন, স্বয়ং আমেরিকার প্রেসিডেন্টই করোনার ভয়াবহতা উপলব্ধি করতে পারেননি। উহান-এ ডিসেম্বরের শুরুর দিকে করোনা ভাইরাস ধরা পড়ার পর ৩ মাস সময় পেলেও আমেরিকা কোন প্রতিরোধক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। উহান বা চিন থেকে যারাই আমেরিকায় এসেছেন, তাঁদের যে কোয়রান্টিন করার প্রয়োজন রয়েছে, সে বিষয়টিই প্রশাসন ভাবেনি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেদিনও বলেছেন, সব ঠিক হয়ে যাবে। আর তার মাশুল দিতে হচ্ছে এখন আমেরিকার জনগণকে। নিউইয়র্কের প্রতি প্রত্যেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টেরই এক ধরনের ক্ষোভ থাকে। কেননা ইমিগ্র্যন্ট আধিক্যের এই স্টেটটিতে কখনোই রিপাবলিকানরা জয়ী হতে পারেন না। রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট এবং দুই ডেমোক্রেট নেতার অন্তর্দ্বন্দ্ব নিউইয়র্ককে মৃত্যু নগরী বানিয়ে দিয়েছে।
বিশ্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই প্রথম দেশ, যেখানে এক দিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ২ হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছে। গত ১১ এপ্রিল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র মৃত্যু সংখ্যায়ও পৃথিবীর সকল দেশকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ২ হাজার ১০৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ছাড়িয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ১৯ হাজার। নিউইয়র্কের পর করোনায় আক্রান্ত হয়েছে নিউজার্সি। নিউইয়র্ক-নিউজার্সি মাঝখানে শুধু একটি টানেল। নিউজার্সির অনেকেই নিউইয়র্কে কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে প্রতিদিন যাতায়ত করেন। তাই নিউজার্সির মৃ্ত্যুর সংখ্যা প্রায় দু’হাজারেরও বেশি। ৫০ হাজারের উপরে রয়েছে আক্রান্তের সংখ্যা। এই শহরের দুজন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির করেনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। আরেকজন মারা গিয়েছেন মিশিগানের ডেট্রয়েট শহরে।
শুধু নিউইয়র্কেই মারা গিয়েছেন প্রায় ৯ হাজার। আরও প্রায় ২০ হাজারের অধিক রয়েছেন হসাপাতালের নিবিড় পরিচর্যায়। নিউইয়র্কের গভর্নর এন্ড্রু কু্মো করোনাভাইরাসে নিহতদের স্মরণে নিউইয়র্কের পতাকা অর্ধনমিত রাখার ঘোষণা করেছিলেন। নিউইয়র্কের ক্যাপিটাল হিল আলবেনি-সহ সর্বত্র পতাকা অর্ধনমিত রয়েছে। কিন্তু কোনওভাবেই নিউইয়র্কের মৃত্যুর রাশ টানা যাচ্ছে না। আজও নিউইয়র্কে মৃতের সংখ্যা প্রায় সহস্রাধিক। নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা গত তিন দিন ধরে কিছুটা কমছে। যেখানে আগে ছিল প্রতিদিন ২০ হাজারের উপরে। এখন পনের হাজারের নীচে। এটিই একমাত্র আশার কথা। কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা এখনো কমেনি। প্রতিদিন গড়ে ৮০০ থেকে ১০০০ রয়েছেই।
নিউইয়র্কের হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের শুশ্রূষায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও নার্সদের অবস্থা কতটা করুণ, তা ফেসবুকের বিভিন্ন স্টেটাসেই স্পষ্ট। হাসপাতালগুলোর ভলান্টিয়ার সার্ভিসগুলো বিজ্ঞাপন দিয়ে সংগ্রহ করছে নানান সরঞ্জামাদি। মাস্ক, গ্লাভস, প্রটেক্টিভ হেড শিল্ড বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা তৈরি করে ডোনেট করছে হাসপাতালগুলোতে। উহানে পুরো শরীরকে রক্ষা করার জন্য চায়না যে গাউন ব্যবহার করেছে, আজ পর্যন্ত আমেরিকার কোন হাসপাতালে এটি চোখে পড়েনি। প্রশ্ন উঠেছে আমেরিকার করোনায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় ব্যর্থতার পাশাপাশি সুরক্ষাকারীদের রক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও নেই।
তবে অন্ধকারের মধ্যে একমাত্র আশার আলো নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রে নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমছে। সেই আশায় নিউইয়র্ক তথা আমেরিকাবাসী কোয়রান্টিনে বসে দিন গুনছেন।
বিশ্বজিত সাহা (এলমহাস্ট, নিউইয়র্ক)
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy