নির্জন হ্যালে।
ছয় বছর হল জার্মানিতে আছি। কিন্তু এমন আড়ষ্ট, উৎসাহহীন ইস্টার হলিডে এর আগে কখনও দেখিনি। এই দেশের লোকেরা কাজ পাগল ও খুব অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়। বছরের এই সময়টা পরিবারের সবাই মিলে কোথাও বেড়াতে যায় অথবা নিখাদ পারিবারিক আড্ডাতে সবাই ডুব দেয়। করোনার প্রকোপে সেই আনন্দটুকু এ বছর একটুও নেই। এর মধ্যেই প্রকৃতি আস্তে আস্তে সবুজ ফিরে পাচ্ছে, চারদিকে টিউলিপ, ড্যাফোডিল, চেরি ফুলের রঙের বাহার। কিন্তু সেটা উপভোগ করার সময় এটা নয়। আজ সারা দেশের লোক ঘরবন্দি।
জার্মানির পূর্বভাগের ছোট একটা শহর হ্যালেতে আমি থাকি। বিখ্যাত কম্পোজার ও মিউজিসিয়ান জর্জ ফ্রেডরিখ হ্যান্ডলের জন্মভিটা। প্রায় ২.৫ লক্ষ লোকের বাস এখানে। এই মুহূর্তে করোনা পরিস্থিতিতে সারা দেশের মানুষ আতঙ্কিত। আক্রান্তের সংখ্যা লক্ষাধিক। প্রতিবেশী ফ্রান্স, ইটালি, স্পেনের অবস্থা শোচনীয়।
আমার শহরে মার্টিন লুথার ইউনিভার্সিটি, ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইউনিভার্সিটি, লিবনিতজ ইউনিভার্সিটি। এ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকার কারণে বহু দেশের ছাত্রছাত্রী ও গবেষকের বাস। এখানকার জনজীবন এখনও পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে যায়নি। যদিও মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই কিন্ডারগার্ডেন স্কুল ও সমস্ত অফিস বন্ধ করে দিয়েছিল প্রশাসন। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস ও পরিষেবা ছাড়া প্রায় সবকিছুই বন্ধ।
সেইসঙ্গে শুরু হয়েছে খাবার, ডাক পরিষেবা ও স্থানীয় শপিং সেন্টারের হোম ডেলিভারি। এখানে বয়স্ক লোকের সংখ্যা যথেষ্ট বেশি। তাঁরা চাইলে বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়া বা অন্যান্য কাজের জন্য স্থানীয় প্রশাসন এর সাহায্য নিতে পারেন। প্রাথমিক ভাবে করোনা আতঙ্ক কাটিয়ে শহরে পণ্য সরবরাহ এখন স্বাভাবিক। মানুষ নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে, মাস্ক ও গ্লাভস পরে বাজারে যান। স্থানীয় পরিবহণ এই শহরে স্বাভাবিক। যদিও একই পরিবারের দু’জনের বেশি একসঙ্গে চলা বা মেলামেশা করার ক্ষেত্রে প্রশাসন থেকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। না মানলে কয়েশো ইউরো জরিমানা পর্যন্ত করতে পরে সিটি অফিস। আশার কথা, মানুষ সেটা মেনেও চলছেন।
এখানকার চিকিৎসাব্যবস্থা খুব উন্নত। তাই করোনায় মৃত্যুহার বেশ কম। জার্মানিতে বসবাসকারী প্রত্যেক মানুষের স্বাস্থ্যবিমা অত্যাবশ্যকীয়। সিটি অফিস থেকে মানুষকে সবসময় সাহায্য করার জন্য স্পেশাল কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এই শহরে বসবাসকারী ভারতীয় গবেষক ও পড়ুয়ারা ঘরে থেকে নিজেদের মধ্যে সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ রেখে চলছে। আমি নিজেও ঘরবন্দি। ঘরেতে বসেই চলছে সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলা, গ্রুপ মিটিং বা ডিসকাশন। ইউনিভার্সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন ও ভারতীয় দূতাবাস থেকে ইমেল পাই প্রতিনিয়ত। জরুরি পরিস্থিতিতে যাতে কেউ নিজেকে একা না ভাবে সে জন্য ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ শুরু হয়েছে।
জানতে পারলাম, ভারতে লকডাউন আরও দীর্ঘ হবে। কারণ এটাই বোধহায় সংক্রমণ প্রতিহত করার একমাত্র পথ। আশা করি সবকিছু আবার তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হবে। একসঙ্গে সবাইকে এই যুদ্ধে জিততে হবেই।
প্রদ্যুত মণ্ডল
হ্যালে, জার্মানি
ইমেল- mondalprodyut0@gmail.com
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy