'ডেজার্ট ফুটহিলস পার্ক' আজ যেন সত্যিই মরুভূমি! আরিজোনায়। ছবি- লেখক।
আজ সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ নিয়ে যে গুজব আপনারা দেখছেন বা শুনছেন তার কতটা বাস্তবিক আর কতটা আতঙ্কজনিত সেটা আপনাদের সামনে তুলে ধরার জন্য লিখছি।
এটা ঠিকই, কাজের প্রয়োজনে শহরে মানুষকে যেতে হচ্ছে। জীবনযাত্রা একদম থেমে নেই। তার মানে শখ করে রাস্তায় বেরনো আপাতত বন্ধ।
ভাইরাস খুব ঝামেলার জিনিস, তা-ও আবার একদম নতুন প্রজন্মের ভাইরাস! যাঁদের এ দেশে জন্ম বা যাঁরা বহু বছর ধরে এ দেশে আছেন তাঁদের মানসিক পরিস্থিতি কিন্তু নতুন বাসিন্দাদের চেয়ে অনেক আলাদা। কেন, তার ভিতরে না গিয়ে আসুন, দেখা যাক সত্যি ব্যাপারটা কী?
আমেরিকা এমন একটা দেশ যেখানে মোটামুটি সবাই ছুটছে। আড্ডা দেওয়া বা ফালতু ঘুরঘুর করে বেড়ানোর মতো সময় সারা সপ্তাহে নেই বললেই চলে। তার মাঝখানে এই রকম একটা অদৃশ্য দানব চীন থেকে এসে সকলের জীবন তছনছ করতে শুরু করবে, এটা তো কেউই কল্পনাও করেননি। আর ইন্টারনেটের দাপটে সারা পৃথিবীর খবর চোখে-কানে ২৪ ঘন্টা ধাক্কা মারছে। প্রাণের ভয় সবারই থাকে কম-বেশি।
আমি সপরিবারে অনেক দিন বাদে একটু ছুটি কাটাতে গিয়েছিলাম উত্তর-পূর্ব আরিজোনায় মার্চের মাঝামাঝি। তখন এখানে কোভিড-১৯ নিয়ে কেউ অত ভাবিত হননি। কোথাও আমরা ভিড় পাইনি, তবে সব কিছু অচল ছিল না বা দুরত্ব মেনে চলার ব্যাপার ছিল না। আজ সেগুলো সবই বন্ধ, প্রাণের তাগিদে।
এটা দিনপনেরো আগেকার কথা। যখন ছ’ফুট দূরে থাকার কথা কেউ ভাবেননি। সকলেই একটা ত্রাসে পড়ে দুমদাম প্রাত্যহিক জিনিস কিনতে লাগলেন। যখন সবাই কার্ট ভরে জিনিস কিনে ঘরে মজুত করতে লাগলেন, তখন অনেক কিছুই হঠাৎ অমিল হতে শুরু করল।
প্রশাসন যা করার, তার অনেকটাই করে চলেছে। কিন্তু এটা বলা ভুল যে, তারা চোখ বন্ধ করে ছিল। বা, কিছুই করেনি। ভাবুন, ভারতে ১৩০ কোটি মানুষ কত ঘন জনবসতিতে বাস করেন! কিন্ত সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয় অনেক কম। এর অনেক কারণ।
ফিনিক্সে আজকের কী অবস্থা? ঘরে থাকার নির্দেশ চালু আছে কেন্দ্র আর রাজ্য দুই প্রশাসন থেকেই, চলবে বেশ কিছু দিন মনে হয়। আর্মি আর পুলিশের তত্ত্বাবধানে অনেক নিয়ম মেনে কাজ চলছে আর যাঁদের সাহায্য করা প্রয়োজন, তাঁরা যাতে খাবারদাবার বা প্রাত্যহিক জিনিসপত্র বিনামুল্যে পেয়ে যান সে দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে।
দোকানে ঢোকার মুখে নিয়ম মানা, কার্টগুলো সাবান জলে ধুয়ে বা স্যানিটাইজার দিয়ে মুছে দেওয়া হচ্ছে। ভিতরে গুনে গুনে খদ্দের ঢোকানো আর পয়সা দেওয়ার কাউন্টারে অনেক সাবধানতা নেওয়া হচ্ছে। আমি আর আমার স্ত্রী খুব কম দোকানে যাতায়াত করছি এখন, গেলেও মাস্ক আর গ্লাভস পরে। কাজ কতটা হয় জানি না, তবে একটা মানসিক শক্তি তো আসেই।
দোকানবাজার ছাড়াও তো অনেক কাজ থাকে। সেগুলো দেখা যাক এ বার। একটা বড় শতাংশের মানুষ ঘর থেকে কাজ করছেন, তবে সেই সুযোগ তো সকলের নেই। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি চলছে দূরত্ব বজায় রেখে, অনলাইন ক্লাসই একমাত্র ভরসা।
পাড়ায় পাড়ায় হাঁটাচলা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো অনেক বেড়েছে। খুব স্বাভাবিক, কত ক্ষণ আর মানুষ ঘরে বন্দি হয়ে থাকতে পারেন? আমার ছোট মেয়ে এই মওকায় দু’-চাকায় ব্যালান্স করে দিব্বি সাইকেল চালাচ্ছে।
যেন কোনও প্রাচীন নগরীর ময়দান! আরিজোনায়। ছবি-লেখক।
আমরা এই মহামারীর খারাপ দিকগুলোই শুধু দেখছি, কিন্তু এর কিছু ভালো দিকও আছে যদি গ্লাস অর্ধেক-ভর্তি এই ভাবনাটা মাথায় রাখি। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা অনেক কম, মানে দুর্ঘটনাও কম হচ্ছে। বাতাসে দূষণ কমেছে, মানে যাঁদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা আছে তাঁদের সাময়িক হলেও একটু রেহাই। সবাই মোটামুটি প্রাণের দায়ে স্বাস্থ্য সচেতন, নিয়মিত শারীরিক কিছু চর্চা করছেন, জীবাণু থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যে যা করা দরকার তা করার চেষ্টা করছেন।
দূরত্ব বজায় রাখার তাগিদে সেটা এখন একটু কমেছে। নিয়ম মানার ব্যাপারটা অনেকের হয়তো ভাল লাগে না, কিন্তু না মানলে সমূহ বিপদ ডেকে আনার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
গুটিকতক লোক দেখা যায় দুরত্ব বজায় রেখে খুব সন্দিহান হয়ে চলাফেরা করছেন। তাই অনেকেই পার্কে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন।
সব মিলিয়ে, পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না কেন, এই অদৃশ্য ভাইরাসের গতিবিধি বোঝার আগে নিজের সাবধানতা, চার পাশের মানুষদের সাবধানতা খুব জরুরি। খালি ভাবুন এর আগে ঘটা সব মহামারীর কথা।
আমরা যারা গুটিবসন্ত (স্মল পক্স) দেখেছি সাতের দশকে, একশো বছর আগে স্প্যানিস ফ্লু-এর পরিসংখ্যান দেখি, এর মধ্যে সার্স, মার্স আরও কত ঝড় মানুষের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে, আজকের শঙ্কার কথা ভাবলে এই টুকু বোঝা যায় যে, এর বিরুদ্ধে লড়াই করে যেতে হবে। শরীর-মন দুটোই কী ভাবে সুস্থ রাখা যায়, তার জন্যে বিকল্প ব্যবস্থা আমাদেরকেই নিতে হবে। সরকার কী করল বা না করল, সেই আলোচনা, তর্কবিতর্ক করে ফলাফল কিছু পাওয়া যায় কি না খুব সন্দেহ। আর ওই যে ঈশ্বর বা ঈশ্বরতুল্য কারও উপর ভরসা, নিজের মনের শক্তি, সব কিছু যদি একটা ভারসাম্যে থাকে, বাকিটা তো আপনার-আমার কারও হাতে নেই।
আসুন, আমরা নিয়ম মেনে দুরত্ব বজায় রেখে সকলের জন্যে প্রার্থনা করি, যাতে এই সঙ্কট কিছু দিনের মধ্যেই দূর হয়ে যায়। ‘উই শ্যাল ওভারকাম’!
কোহিনূর কর, অ্যারিজোনা, আমেরিকা।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy