খুবই তথ্যসমৃদ্ধ ‘আনাজই চাষিকে বাঁচিয়েছে’ (২৭-৪) নিবন্ধের জন্য স্বাতী ভট্টাচার্যকে ধন্যবাদ। দুটি বিষয় সংযোজন করতে চাই। আনাজের প্রচুর পাইকারি বিক্রেতা কিন্তু রেলপথেও দূর-দূরান্তের গ্রাম থেকে কলকাতা বা হাওড়ায় আসেন। লোকাল ট্রেনের ভেন্ডর কামরায় ঢাউস ঢাউস আনাজের ঝুড়ি নিয়ে ওঠেন এঁরা। এঁদের চলতি নাম ফড়ে। তবে আনাজের বাজারে অন্যান্য মধ্যসত্ত্বভোগীদের তুলনায় এঁদের রোজগার অনেক কম। পরিশ্রমও বেশি। মাঠে মাঠে ঘুরে চাষিদের কাছ থেকে আনাজ কেনেন এঁরা। তার ওপর আছে সেই বিপুল পরিমাণ মাল স্টেশন অবধি টেনে নিয়ে যাওয়া, ট্রেনে তোলা-নামানোর পরিশ্রম। অনেককেই ভোররাতে ট্রেন ধরতে হয় এবং ফিরতে ফিরতে বেলা গড়ায়। এঁদের বেশির ভাগই আবার নিজেরাও ছোট চাষি। ফলে নিজস্ব জমির দেখাশোনাও করতে হয়। রাজপথে পুলিশের মতো রেলপথেও টিকিট কালেক্টর এবং আরপিএফের যৌথ উৎপীড়নের শিকার হন এঁরা। সেখানেও প্রচুর অনৈতিক লেনদেন চলে। স্বভাবতই সেই টাকাটা তাঁরা আনাজ বেচার সময় দাম বাড়িয়ে উসুল করে নেন। আনাজের দাম বাড়ার এটাও একটা বড় কারণ।
দ্বিতীয় বিষয়টি মাছ সংক্রান্ত। জ্যান্ত ছোট মাছ (তিলাপিয়া, পুঁটি ইত্যাদি) এবং মাছের পোনা দুটোই, কিছু আনাজের মতোই দ্রুত পচনশীল। ফলে এই দুটি জিনিসও উৎপাদনস্থল থেকে বিক্রয়স্থলে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বিলম্ব করলে চলে না। নৈহাটির কাছে রাজেন্দ্রপুরে এ রাজ্যের সবচেয়ে বড় পোনা বা চারা মাছের বাজার। বাজার বসে মাঝরাতে। শুধু এ রাজ্যই নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাছ-চাষিরা সেখানে মাছের চারা কিনতে আসেন। মাছ কিনে, হাঁড়িতে ভরে ভোর-ভোর রওনা হন নিজের এলাকার দিকে। এঁদেরও প্রচুর পুলিশি হেনস্থার শিকার হতে হয়। পুলিশ জানে, যে কোনও অজুহাতে এঁদের খানিক ক্ষণ আটকে রাখতে পারলেই মাছ পচে যাওয়ার ভয়ে এঁরা তাড়াতাড়ি দাবিমতো টাকা মিটিয়ে দেবেন। এই কারণেই দেশের মাছ-ব্যবসায়ীরা দীর্ঘ দিন ধরে দুধ বা ওষুধের মতো মাছকেও অত্যাবশ্যক পণ্যের তালিকাভুক্ত করার দাবি জানাচ্ছেন।
সীমান্ত গুহঠাকুরতা
ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
রাজন বললেন
গত ১৩ এপ্রিল আমেরিকার শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বাৎসরিক হার্পার বক্তৃতার আয়োজন করেছিল। বক্তা ছিলেন ভারতের রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন প্রধান রঘুরাম রাজন। শ্রোতা প্রায় ৭৭০০, কিন্তু সবাই অলক্ষ্যে। এই রকম অভিজ্ঞতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম। শ্রোতাদের কাছ থেকে ১০০০-এর বেশি প্রশ্ন আসে। আলোচনায়, আরও অনেক কিছুর সঙ্গে রাজন বলেন, করোনা মানুষকে ঘুরে দাঁড়াবার তিনটে অস্ত্র দিয়েছে এবং এই তিনটেকে একসঙ্গে ব্যবহার করতে হবে।
১) মানুষের মানুষকে কতটা প্রয়োজন, করোনা কঠিন হাতে পৃথিবীকে শিখিয়েছে। অর্থনৈতিক দুর্বলতার দোহাই দিয়ে সমাজ যে সব মানুষকে নীচের দিকে বহু বছর রেখে দিয়েছে, আজকের মহাসঙ্কটকালে তারাই সমাজের ত্রাতা হয়ে উঠেছে। কিন্তু তারাই আবার করোনার সবচেয়ে বড় আশ্রয়। এই স্তরভেদ প্রতিটি দেশের মধ্যেই যেমন আছে, তেমনই আছে এক দেশ থেকে অন্য দেশের মধ্যে। মানুষের এই ভেদাভেদের ভাইরাস অর্থনৈতিক অসাম্য। তা দূর করতে হবে।
২) করোনা আসার আগে বিশ্বব্যাপী দেশাত্মবোধের একটা প্লাবন এসেছিল। ‘আমেরিকানদের জন্যে আমেরিকা’, ‘হিন্দুত্বের ভারত’, এই রকম বিশ্বাস অনেক দেশে শেকড় গাড়ছিল। করোনা দেখাল, কেউ একা বাঁচতে পারবে না। বিশ্বযুদ্ধের সময়ে যত দেশ যোগ দিয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি দেশকে করোনা এক নতুন যুদ্ধে একত্র করেছে। বলা হচ্ছে চিন থেকে এর শুরু। মনে রাখতে হবে, এ রকম বিপদ সবচেয়ে ছোট, সবচেয়ে গরিব দেশ থেকেও একই রকম ভাবে ছড়াতে পারে। তাই অর্থবল ও শক্তি দিয়ে কোনও দেশকে তাচ্ছিল্য করে দূরে রাখা যাবে না, মূলমন্ত্র হবে ‘বাঁচলে সবাই বাঁচব, নইলে সবাই মরব।’
৩) করোনা প্রকৃতির এক ছোট হাতুড়ির আঘাত। মানবজাতি তাতেই হিমশিম খাচ্ছে। এখন থেকে সব দেশকে পরিবেশ নিয়ে ভাবতে হবে। প্রগতির নামে পরিবেশকে যেমন ইচ্ছে নিগ্রহ করা চলবে না। উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ধারা বদলাতে হবেই ।
অজয় কুমার বসু
কলকাতা-৬৮
গুণকীর্তন
‘সিঙ্গুরের ইতিহাস’ (২৮-৪) শীর্ষক চিঠি পড়লাম। ইতিহাস মনগড়া হয় না। বাণভট্ট ‘হর্ষচরিত’ লিখেছিলেন, তা কি ইতিহাস, না কি রাজার গুণকীর্তন? ফরমায়েশি স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা লিখবেন না বলে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র মজুমদার পৃথক ভাবে ভারতের ইতিহাস লিখেছিলেন। ইতিহাস রচনার জন্য চাই ইতিহাস-চেতনা, নিরপেক্ষ অনুসন্ধিৎসু মন আর সত্যানুসন্ধানী দৃষ্টি। সঙ্গে চাই, যে সময়ের ঘটনাকে সামনে আনতে হবে, তার আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকে আত্মস্থ করার মতো হৃদয়বত্তা। এগুলো সম্পূর্ণ অনুপস্থিত রাজ্য সরকার নির্ধারিত অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস বইটিতে। নিঃসন্দেহে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর গুণকীর্তনের প্রকৃষ্ট নমুনা হিসাবে এটি চিহ্নিত হয়ে থাকবে। তিনি ইতিহাস লেখার এমন এক ধারা সৃষ্টি করে গেলেন, যা কিনা পরবর্তী কর্ণধারদের উৎসাহিত করবে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। ইতিহাসের গৈরিকীকরণ ইতিমধ্যে চালু হয়ে গিয়েছে। ইতিহাস বিকৃত করার এই প্রবণতা রুখতে চাই সঙ্ঘবদ্ধ প্রয়াস।
তপনকুমার সামন্ত
খেজুরি, পূর্ব মেদিনীপুর
সবার উপরে?
হয়তো প্রকৃতির এটাই খেয়াল। মানুষকে তার আয়নার সামনে দাঁড় করানো। এখনও কি মানুষ বুঝবে না, মানুষের প্রকৃতিকে দরকার, কিন্তু প্রকৃতির মানুষকে দরকার নেই? কোনও রকমে হয়তো মানুষ এই মহামারিটাকে আটকে দেবে, কিন্তু যদি শিক্ষা না নেয়, পরের বার প্রকৃতির প্রতিশোধ সহ্য করতে পারবে? কারণ যে উন্নত প্রযুক্তিবিদ্যা মানুষের গর্ব, তা নিয়ে উন্নত দেশগুলোও করোনার মোকাবিলা খুব বেশি করে উঠতে পারল না। তাই বুঝতে হবে, সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই/ হয়তো এর থেকে বড় মিথ্যা আর কিছু নাই।
অরুণাংশু পাল
কোন্নগর, হুগলি
টেলিন মাঝি
‘বাঙালির লেনিন’ (রবিবাসরীয়, ১৯-৪) প্রসঙ্গে এই চিঠি। কাটোয়া শহরের এক শিশু চিকিৎসকের চেম্বার। কম্পাউন্ডার রুগ্ন শিশুর নাম লিখবেন। কিন্তু শিশুর মা যে নাম বলছেন, তা উনি বুঝতে পারছেন না। ‘টেলিন মাঝি’? এ আবার কী নাম! দেরি হচ্ছে দেখে ডাক্তারবাবু এলেন। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে হাসলেন। বললেন, কোথায় বাড়ি, কাঁকুড়হাটি কি? তা হলে লেখো, স্টালিন মাঝি। ডাক্তারবাবুর মনে পড়ল, কিছু দিন আগে ওখান থেকে ‘লেনিন মাঝি’ এসেছিল।
ব্যাপারটা হল, অজয়ের এক পাড়ে ছোট্ট দুটি গ্রাম, বেগুনকোলা আর কাঁকুরহাটি। সত্তরের উত্তাল সময়ে বেগুনকোলার এক মার্কসবাদী-লেনিনবাদী বিপ্লবী যুবককে সংগঠনের কাজে, এবং আত্মগোপনের জন্য পাশের গ্রাম কাঁকুরহাটি যেতে হত শুধু নয়, ভূমিহীন খেতমজুরদের বাড়িতে থাকতে, খেতে হত।
সেই সময় সেই মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের পরিবারে যে সব শিশু জন্মেছিল, অনিবার্য ভাবে তাদের নাম হয়েছিল ‘বিপ্লব’, ‘লেনিন’, ‘স্টালিন’ ইত্যাদি ।
সেটা সত্তরের দশকের স্বপ্নমাখা দিন, যখন কাঁকুড়হাটির সর্বহারা বাগদি বাড়িতেও লেনিন ভূমিষ্ঠ হয়েছিলেন।
তপোময় ঘোষ
শিবলুন, পূর্ব বর্ধমান
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy