Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus Lockdown

সুড়ঙ্গ শেষের আলোর দেখা এখনও পাচ্ছি না

এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।

পাষাণের নীরবতা কেমব্রিজ শহর জুড়ে। —নিজস্ব চিত্র।

পাষাণের নীরবতা কেমব্রিজ শহর জুড়ে। —নিজস্ব চিত্র।

শেষ আপডেট: ০২ মে ২০২০ ১৫:৫০
Share: Save:

রোদ ঝলমলে দিন, ছবির মত বাড়িঘর, ঝকঝকে রাস্তা, সব মিলিয়ে ঘুম থেকে উঠে এক ঝলক বাইরে তাকালে প্রাক-গ্রীষ্মের এই আবহাওয়ায় মন ভাল হয়ে যাওয়ারই কথা। কিন্তু না, সব কিছু থেকেও এখন সেই প্রাণের ছোঁয়া নেই এই শহর তথা সমগ্র ব্রিটেনে

করোনা-আতঙ্কে এক মাসেরও বেশি হয়ে গেল কেমব্রিজ শহরে আমরা লকডাউনে বন্দি। এখন পরিসংখ্যানে চোখ রাখতেই ভয় করছে। লক্ষাধিক আক্রান্ত এবং ২১ হাজারের বেশি মৃত্যু হওয়ায় মে মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত লকডাউন জারি থাকবে। সারা বছর যে শহর দেশ-বিদেশের পড়ুয়া, পর্যটকদের ভিড়ে গমগম করে এখন সেখানে পাষাণের নীরবতা। টিউলিপ, ড‍্যাফোডিল চারিদিক আলো করে রেখেছে, কিন্তু দেখবে কে? রাস্তায় দেখা মিলছে হাতে গোনা মাস্ক পরা মানুষ, পুলিশ, অ‍্যাম্বুলেন্স আর ডেলিভারি ভ‍্যানের। যতই মনকে অন্য দিকে ব‍্যস্ত রাখার চেষ্টা করি না কেন, কখনও সামনের বাড়ি, কখনও দুটো বাড়ি পরে এসে দাঁড়ানো অ‍্যাম্বুলেন্স মনটাকে ভয়ে আচ্ছন্ন করে দিচ্ছে।

শীত-প্রধান দেশে সারা বছরের অপেক্ষা থাকে এই সময়টার জন্য। আমরাও এপ্রিলে সমুদ্র আর জুনে পাহাড় দেখার ‍‍সব বুকিং সেরে ফেলেছিলাম। কে জানত এক ধাক্কায় সব স্তদ্ধ করে দেবে এই অতিমারি। ইস্টার, নববর্ষ, রমজান সব খুশির দিনগুলো এবার ঘরবন্দি হয়েই রইল। এক লহমায় প্রকৃতি বুঝিয়ে দিল কত ঠুনকো আমাদের অহংকার, ঔদ্ধত‍্য। বুঝিয়ে দিল তাকে সমঝে না চললে আমাদের সব পরিকল্পনা মুহূর্তে বানচাল করে দেওয়ার ক্ষমতা তার আছে।

আরও পড়ুন: বুঝতে পারছি এই লড়াই খুব স্বল্পস্থায়ী হবে না​

বেশ কয়েক বছর হয়ে গেল এই শহরে আমাদের বাস। সুন্দরী ক‍্যাম নদী আর তার ধার ঘেঁষে শতাব্দী-প্রাচীন কলেজগুলির দিকে তাকালে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে। আমার স্বামীর তথ্যপ্রযুক্তি জগতের কাজ এখন চলছে ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’ নিয়মে। পড়াশোনা এদেশে সবই এখন অনলাইনে চলছে। সাধারণ ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়ার জন্যও ফোনে যোগাযোগ করছি। আমার ছোট্ট ছেলের দুধের কৌটো থেকে শুরু করে জরুরি গ্রসারি— সব কেনাকাটা চলছে হোমডেলিভারির মাধ্যমে। বিপদের দিনে দাম বাড়ার অসুবিধা আমরা পাইনি। লকডাউনের শুরুতে দেখা সুপারমার্কেটের ফাঁকা তাক এখন আবার ভরা। মাস্ক আর স‍্যানিটাইজার বাদে সবই পাওয়া যাচ্ছে, যদিও জরুরি জিনিসের রেশনিং জারি রয়েছে।

সামনের দিনগুলো এখন অনিশ্চয়তায় ভরা। কবে যে মানুষের ছোঁয়া বাঁচিয়ে ভয়ে-ভয়ে চলার অভিশপ্ত দিন শেষ হবে জানি না। কলকাতায় থাকা বয়স্ক মা-বাবা, পরিবারের চিন্তা মনটাকে ভারি করে রেখেছে। ভিডিও চ‍্যাট করে, বই পড়ে পজিটিভ থাকার চেষ্টা করছি। তবুও গরিব দিন-আনা দিন-খাওয়া মানুষদের বিপদের কথা মনে আসলে আর কিছু ভাল লাগছে না। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে আমরা কেউ একদম ভাল নেই।

আরও পড়ুন: একের পর এক বৃদ্ধাশ্রমগুলো থেকে পাচ্ছি মর্মান্তিক মৃত্যুমিছিলের খবর​

ব্রিটিশ সরকার এই মুহূর্তে যে তৎপরতা নিয়ে চলেছে তা বোধহয় শুরু থেকে হলে ভাল হতো। সংক্রমণ শুরু হওয়ার পরও অবাধে আকাশপথে যোগাযোগ থেকে লন্ডনে ভিড়ে ঠাসা টিউব-রেল চলেছে। বাস ইত্যাদি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট এখনও চালু আছে। অনেক প্রতিকূলতা নিয়েও ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা ‘এনএইচএস’-এর ডাক্তার-নার্সরা অসাধ‍্যসাধন করে চলেছেন। আশা জাগিয়ে অক্সফোর্ডের বিশেষজ্ঞরা গত সপ্তাহে শুরু করেছেন করোনা ভ‍্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল। করোনা-পরবর্তী বিপর্যয় সামলাতে সরকার এখানে আর্থিক প‍্যাকেজ থেকে শুরু করে সহজে ঋণ পাওয়া, বেশ কিছু ভাল পদক্ষেপ নিয়েছেন।

বন্দিজীবন শিখিয়ে দিচ্ছে জীবনের চাহিদা অনেক কম, আমরাই তাকে প্রাচুর্যে ভারাক্রান্ত করি। চিড়িয়াখানার প্রাণীদের কষ্টটাও জীবনে প্রথম বুঝলাম। জানুয়ারির মাঝামাঝি যখন কলকাতা থেকে এ বার ফিরলাম তখনও জানি না সামনে কী দিন আসতে চলেছে। যদিও জানি প্রকৃতির দরকার ছিল এই বিশ্রাম, তবুও বলব খুব তাড়াতাড়ি সেরে ওঠো পৃথিবী। তোমার কোলে নিশ্চিন্ত মনে বুকভরা নিঃশ্বাস নিতে মন বড্ড চাইছে।

সোমা ভট্টাচার্য, কেমব্রিজ, ইংল্যান্ড

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy