সুনসান শিকাগো শহর।
মার্চের শুরুতে এক বিকেলে আমি ডাউনটাউন শিকাগো থেকে ফিরছিলাম। আমার উবর ড্রাইভার ছিলেন এক প্রৌঢ়। দিনের শেষে উবর চালান, ডায়াবেটিসের সমস্যা আছে। করোনার জন্য তখনই খুব উদ্বেগে ছিলেন। আমি তাঁকে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিলাম, সব খুব শীঘ্রই ঠিক হয়ে যাবে, বাড়াবাড়ি হবে না।
এক মাসের মধ্যেই কিন্তু পরিস্থিতিটা অনেক বদলে গিয়েছে। শিকাগোতে বসন্ত এসেছে ঠিকই, তবে এ বড়ই ভিন্ন বসন্ত। সাধারণত শীত শেষ হওয়ার অপেক্ষায় মানুষ অনেক দিন ধরে বসে থাকেন। এপ্রিলে গাছে গাছে ফুল আসে। লেক মিশিগানের এর তীরে সবাই পিকনিক করেন, সাইকেল চালান। তবে এখন সব শান্ত। রাস্তাঘাট নির্জন, সাকুল্যে দু’-তিন জন ভয়ে ভয়ে দোকানে যাচ্ছেন। জনবহুল নর্থওয়েস্টার্ন ক্যাম্পাস প্রায় এক মাস বন্ধ। বেশ কয়েক দিন বাড়ি থেকে বেরইনি। কোনও মানুষের সঙ্গে সামনাসামনি কথা হয়নি। মানুষ যে সামাজিক জীব, তা এ বার প্রথম অনুভব করেছি। তবে অনেক পুরোনো বন্ধুরা ফোন করছে, যে সম্পর্কগুলো আলগা হয়ে এসেছিল, সেগুলোও যেন নতুন প্রাণ পেয়েছে!
কলেজে করোনা ধরা পড়ার পর দু’সপ্তাহ সেলফ আইসোলেশন করে আমি এসেছি আমার দাদা, বৌদির বাড়িতে, ব্লুমিংটনে। এখানে আমার আনাগোনা লেগেই থাকে। তবে এ বার শিকাগো ছেড়ে আসতে একটু অন্য রকমের দুঃখ পেলাম। কবে ফিরতে পারব ঠিক নেই। যে বন্ধুদের সঙ্গে রোজ দেখা হত, তারা আজ সব স্কাইপের স্ক্রিনে আবদ্ধ। আমার রিসার্চ অবশ্য বন্ধ হয়নি। গণিতের জন্য খাতাকলম ছাড়া আর কিছুই লাগে না। গরমকালে চার-পাঁচটি কনফারেন্স ছিল। সব ক্যান্সেল হয়ে গিয়েছে, কবে যে জীবন স্বাভাবিক হবে, জানি না! অবশ্য প্রবাসী বাঙালি হিসেবে আমি যথেষ্ট ভাগ্যবান। দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে আমেরিকাতে গত চার বছর থাকা সত্ত্বেও কোনও দিন মনে হয়নি বাড়ি থেকে দূরে আছি। কাছেই পরিবার আছে বলে. আমার ছোট্ট ভাইপো খুব আনন্দ পেয়েছে। বাড়িতে বাবা, মা, পিসি সকলেই আছেন, ওর বড় হয়ে ওঠাটা চোখের সামনে দেখতে পাওয়াটাও আমার সৌভাগ্য।
ব্লুমিংটন ইন্ডিয়ানার একটি ছোট্ট কলেজ-টাউন। জনবহুল শিকাগোর থেকে অনেকটাই আলাদা। বাড়ির পাশেই ছোট্ট একটি পুকুর আছে, ওখানে রোজ বিকেলে হাটতে যাই। কেউ আসেন না। মনে হয় যেন শহরের মাঝে একটি নিঝুম কোণ শুধু আমার জন্য রয়েছে. তখন নিজেকে বড় ভাগ্যবান মনে হয় যে, এত কিছুর মধ্যেও আমার জীবন-জীবিকা নিয়ে চিন্তা করতে হয়নি! যে বীর মানুষরা এই ভয়াল শত্রুর সঙ্গে সামনাসামনি মোকাবিলা করছেন, তাঁদের জন্যে চিন্তা হয়। আমার এক পরিচিত ডাক্তার এখানে দিনরাত কাজ করছেন, ষাটোর্ধ হওয়া সত্ত্বেও! সেই উবর ড্রাইভারের কথাও মনে প়ড়ে! আশা করি, ভদ্রলোক ভালো আছেন। ঈশ্বর ওঁদের ভাল রাখুন। আমাদের সকলকে শক্তি দিন!
কৌশিকী সরকার, ব্লুমিংটন, আমেরিকা
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy