চিকিৎসকদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর নবান্নে আলোচনা সভার বিষয়ে অনেকেই বোধ হয় ভেবেছিলেন মাননীয়া ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকেরা ‘শেম, শেম’ ধ্বনিতে ফেটে পড়বেন, ‘বহিরাগত কেন বললেন!’ বলে টেবিল চাপড়ে ঝগড়া করবেন, ক্ষমাপ্রার্থনার দাবি তুলবেন, আর এমন ঘটনা ভবিষ্যতে ঘটলে তাঁর পদত্যাগ দাবি করবেন। কিন্তু এই সব কিছু হল না। হল নিরাপত্তা নিয়ে আর রোগীদের স্বার্থে সুষ্ঠু আলোচনা। শেষে উইথ ডিউ রেসপেক্ট এটাও বলা হল: আমরা রোগীর পদবি দেখে চিকিৎসা করি না।
সমাজের স্বার্থে চিকিৎসকদের নমনীয় মনোভাব দেখানোর দরকার ছিল এবং আলোচনা ইতিবাচক হয়েছে। কিন্তু অদ্ভুত ভাবে এই অবস্থান নেওয়ার জন্য, আপনাদের কাগজে একটি প্রতিবেদনে (‘মানুষের চাপেই গোঁ ছাড়লেন ‘বিপ্লবীরা’’, ১৮-৬) ওই চিকিৎসকদের ‘বিপ্লবী’ বলে এবং নানান ভাবে আন্দোলনটিকে অপমান করা হয়েছে, চিকিৎসকদের কাজে ফেরার আকুতিকে দুর্বলতা হিসাবে দেখানো হয়েছে। খবরের মধ্যে তথ্য দেওয়ার থেকে নিজের মতামত চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতাই যেন বেশি প্রকাশ পেয়েছে।
এক জন চিকিৎসক হিসাবে এই জাতীয় খবর পরিবেশনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাই।
অরিত্র চক্রবর্তী
বাঁকুড়া
দায়বদ্ধ নয়
‘মানুষের চাপেই গোঁ ছাড়লেন ‘বিপ্লবীরা’’ (১৮-৬) প্রতিবেদনটির মাধ্যমে এই পত্রিকা বলতে চেয়েছে: মানুষের চাপের কাছে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা আত্মসমর্পণ করেছেন। এই প্ররোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করে, ডাক্তারদের আন্দোলনকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা হয়েছে। অথচ আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যে ইগোর লড়াইয়ে নেমে ডাক্তারদের হুমকি দিয়ে সমাধানসূত্রের ধারেকাছে যেতে চাননি, সে ব্যাপারে লিখতে গিয়ে এই পত্রিকা প্রথম থেকেই দ্বিধাগ্রস্ত। তার মানে, সঠিক এবং গঠনমূলক সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে দায়বদ্ধতা স্বীকার করতে এই পত্রিকা অপারগ।
শশাঙ্ক শেখর মণ্ডল
কৃষ্ণনগর, নদিয়া
শাপমোচন
প্রিয় বাংলার চিকিৎসক ভাইয়েরা, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তোমাদের আলোচনা দেখলাম এবং অভূতপূর্ব আনন্দ পেলাম। কিন্তু মনে একটা প্রশ্ন ভীষণ খচখচ করছে। এই কল্পতরু মেলায় শুধু নিজেদের আর রোগীদের কথাই ভাবলে? বিগত কয়েক বছরে তোমাদের যাঁরা অগ্রজ সহযোদ্ধা, যাঁদের মধ্যে অনেকেই আজও অহল্যার মত শাপগ্রস্ত পাথরের জীবন যাপন করছেন, বা অপমানে অনটনে প্রায় অজ্ঞাতবাসে আছেন, তাঁদের শাপমুক্তি চাইলে না? কে জানে হয়তো এই মাহেন্দ্রলগ্নে তাঁদেরও শাপমোচন ঘটে যেত। শাসক বা শিকারী কখনও যূথবদ্ধ শিকারের পিছু ধাওয়া করে না, শিকার বিচ্ছিন্ন বা একা হয়ে পড়লেই থাবা নেমে আসে। সারা জীবন ধরে অকৃত্রিম সেবা করার পরে শেষ বয়সে অপমান অসম্মানের আঘাত নেমে এলে, আহত একাকী বজ্রাহতের মত পড়ে থাকে। উঠে দাঁড়ানোর শক্তি থাকে না। প্রত্যাশা, প্রত্যাঘাত বা আন্দোলন তো দূরের কথা!
মলয় কুমার দাশগুপ্ত
কলকাতা-১৩
মৃত্যু না হত্যা
১৪-৬ তারিখে আনন্দবাজারের প্রথম পাতায় প্রকাশিত এক জন বাবার কোলে ধরা মৃত শিশুটির মৃত্যু আমার বিবেচনায় স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, এটি পরিকল্পিত বা অপরিকল্পিত, ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত যা-ই হোক না কেন, এটি একটি হত্যা। এবং গত ক’দিনে যত মৃত্যু বিনা চিকিৎসায় হয়েছে, সে সবগুলিই হত্যা।
অশোককুমার দাস
কলকাতা-৭৮
প্রশ্ন করলেই
সারা বিশ্বে রোগীর পরিবারকে রোগ, তার চিকিৎসা-পদ্ধতি, খরচ, ওষুধের প্রভাব— সমস্ত পরিষ্কার ভাবে বুঝিয়ে, তাঁদের সম্মতি নিয়ে চিকিৎসা চলে। এ রাজ্যে চলে না। গম্ভীর মুখে খসখস করে প্রেসক্রিপশন লিখে দিলেই কাজ শেষ, বড়জোর সহকারী এসে কোন ওষুধটা কখন খাবেন বুঝিয়ে দেবেন। যদি বেশি প্রশ্ন করেন, ভুরু কুঁচকে যাবে। আর একটু বাদেই সেই অমোঘ প্রশ্ন, ‘‘আপনি ডাক্তার?’’
আপনি একটি বিশেষ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে মোটা টাকা নিয়ে পরিষেবা দিচ্ছেন, কিন্তু তার মানে এটা দাঁড়ায় কি, রোগীদের কিছুই জানার অধিকার নেই, প্রশ্ন করার অধিকার নেই! হাজার টাকার একটা জিনিস কিনতে গেলে মধ্যবিত্তকে আজও পাঁচ বার ভাবতে হয়, কিন্তু সেই হাজার টাকাই ডাক্তারকে দিলে, রোগীকে পাঁচ মিনিটও সময় দেন না অধিকাংশ ডাক্তার। ব্যতিক্রম হাতে-গোনা! কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করানো রোগীরা সংগঠিত নন, তাঁদের জরুরি পরিষেবা অচল করার ক্ষমতা নেই, তাই তাঁদের কথা শোনারও কেউ নেই! ব্যবসা চলছে, চলবে! যে শ্রদ্ধা আর বিশ্বাস সমগ্র ডাক্তার সম্প্রদায় হারিয়েছেন, তা আইন করে ফিরিয়ে আনা যায় না।
কমলিকা চক্রবর্তী
ইমেল মারফত
কার জয়
অবশেষে ডাক্তারবাবুদের জয় হল, কিন্তু সাধারণ মানুষের কি জয় হল? সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারবাবুরা রোগীদের ও তাঁদের পরিজনদের প্রতি কী ভয়ঙ্কর খারাপ ব্যবহার করেন, সে অভিজ্ঞতা আমার অাছে। ডাক্তারবাবুরা বলেছেন, কত চাপ তাঁদের সহ্য করতে হয়। দক্ষিণ ভারতের ডাক্তারবাবুরাও চাপ নিয়ে রোগী দেখেন, কিন্তু এমন দুর্ব্যবহার করেন না। আর এই সাত দিনের কর্মবিরতির জন্য যে শিশুগুলি, যে মানুষগুলি মারা গেলেন, তাঁদের মৃত্যুর দায় এখন ডাক্তারবাবুরা নেবেন তো?
সুপ্রকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়
রঘুদেবপুর, হাওড়া
অমানবিক ছবি
জুনিয়র ডাক্তারদের উপর যে অন্যায় হয়েছে তা ন্যক্কারজনক, শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু আমার ৬২ বছরের জীবনে কখনও দেখিনি, হাসপাতালের গেটে তালা দিয়ে কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে, আর দূরদূরান্ত থেকে রোগীরা এসে কেউ রাস্তায় শুয়ে কাঁদছেন, কেউ মারা যাচ্ছেন। এই সব অমানবিক দৃশ্য দেখে, বা এমন অভিজ্ঞতার শরিক হয়ে, কেউ যদি সজল নয়নে হিংস্র হয়ে ওঠে, অপরাধ হবে কি?
দেবপ্রসাদ মিত্র
বারাসত, উত্তর ২৪ পরগনা
এখন দরকার
এখন প্রয়োজন মুখ্যমন্ত্রী যে প্রতিশ্রুতিগুলি দিয়েছেন সেগুলি দ্রুত কার্যকর করা। চিকিৎসকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা ও চিকিৎসা পরিকাঠামোর উন্নয়ন দরকার। পরিকাঠামোর উন্নয়ন মানে ইমার্জেন্সিতে কিছু কোলাপসিব্ল গেট বসানো কিংবা পুলিশের সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া নয়। এর মানে হাসপাতালগুলিতে বেড, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, অপারেশন থিয়েটার, ল্যাবরেটরির সংখ্যা বাড়ানো, ওষুধের পরিমাণ বাড়ানো। এগুলি যদি না হয়, তবে একই পরিস্থিতি কিছু দিন পরে আবার তৈরি হবে, ক্ষোভ আবার ফেটে পড়বে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে।
সমরেন্দ্র প্রতিহার
কলকাতা-৪
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
ভ্রম সংশোধন
‘‘‘তোষণ চাই না’, চিঠি মমতাকে’’ প্রতিবেদনে (পৃ ১, ২০-৬) মইদুল ইসলামকে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বলে পরিচয় দেওয়া হয়েছে। পরিচয়টি ভুল। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ওঁর প্রাক্তন কর্মস্থল। বর্তমানে উনি কলকাতার সেন্টার ফর স্টাডিজ় ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস-এ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy