Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
NEP 2020

সম্পাদক সমীপেষু: সমন্বয়ের নীতি

তৎকালীন অর্থনীতি, সমাজ এবং রাজনীতির আলোকে সে বিবরণ লিপিবদ্ধ করার আগে খননকার্য পরিচালনা করেছে প্রত্নতত্ত্ব।

শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:২৪
Share: Save:

নতুন শিক্ষানীতি স্কুলশিক্ষার স্তরে যে সব পরিবর্তন এনেছে, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বোধ হয় কলা, বিজ্ঞান এবং বাণিজ্যের বিভাজন দূর করার চেষ্টা। ভারতের মতো দেশে, যেখানে বিজ্ঞানশিক্ষা খুবই অবৈজ্ঞানিক ভাবে মেধার (অনেক ক্ষেত্রে পৌরুষেরও) মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হয়, সেখানে নীতির এই পরিবর্তনের প্রভাব সুদূরপ্রসারী।

উদাহরণ হিসেবে ভূগোলে পড়া কোনও নদীর কথা ধরা যাক। মোহনা থেকে উজানে এগোলে পথে পড়বে আদিম জনপদ, যাদের নাম দেখেছি ইতিহাসের পাতায়। তৎকালীন অর্থনীতি, সমাজ এবং রাজনীতির আলোকে সে বিবরণ লিপিবদ্ধ করার আগে খননকার্য পরিচালনা করেছে প্রত্নতত্ত্ব। খননে উদ্ধার হওয়া বস্তুর বয়স আর উপাদান জেনে তাদের হারানো পরিচয় ফিরিয়ে দিয়ে সংরক্ষণের কাজে এসেছে রসায়নবিদ্যা। নদীর পার্বত্য উৎসে ভূতত্ত্ববিদদের জন্য লুকিয়ে থাকে জীবাশ্ম। পর্বতের মূলে চ্যুতিদের অস্থির বিচরণের ফলে ভূমিকম্পের পূর্বাভাস দেয় অঙ্ক আর কম্পিউটার সায়েন্স। কাজেই ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এক বিষয়কে বাদ দিয়ে আর এক বিষয়ে এগোনো অসম্ভব। সংখ্যাতত্ত্ব গবেষণার প্রাণপুরুষ প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ এই ভেবেই বিজ্ঞানের সঙ্গে সমান গুরুত্ব দিয়েছিলেন অর্থনীতি বা ভাষাতত্ত্বের মতো বিষয়গুলির উপরেও।

শঙ্খশুভ্র মল্লিক

কলকাতা-১০৮

এই আদর্শ?

বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী তাঁর নিবন্ধে (‘নতুন পথ, নতুন চিন্তা’, ২৫-৮) অনেকগুলি তথ্য দিয়েছেন, যা অসত্য। শিক্ষানীতিতে স্পষ্ট বলা আছে, সরকারের উদ্দেশ্য, সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ থেকে শিক্ষাখাতে মোট ৬% জিডিপি আনা। একদম মার্কেট মডেল। অথচ তিনি লিখলেন, শিক্ষাখাতে সরকারি বরাদ্দকে জিডিপি-র ৬%-এ নিয়ে যাওয়া হবে। এর পর বেসরকারিকরণের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অস্থিরতাকে টেনে সরকারি শিক্ষার অধোগতি হয়েছে বলে উল্লেখ করলেন। পশ্চিমবঙ্গে বেশির ভাগ সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং বা ম্যানেজমেন্ট কলেজ, বেসরকারিগুলোর তুলনায় র‌্যাঙ্কিংয়ে অনেক ওপরে। কারণ সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনও অবধি প্রকৃত মূল্যায়ন হয়, টাকার বিনিময়ে পাশ করিয়ে দেওয়া হয় না। ওঁর সঙ্গে আমি এক জায়গায় একমত। তা হল, বেসরকারিকরণ করতে হলে পিপিপি মডেলেই করা উচিত। এতে শিক্ষা ও শিক্ষার্থী— দুইয়ের স্বার্থই বজায় থাকে।

উনি লিখেছেন, শিক্ষা কখনওই টাকা কামানোর উপায় হতে পারে না। এই আদর্শের ওপর ভিত্তি করেই নাকি নতুন এই শিক্ষানীতি তৈরি হয়েছে। এটাই সত্যি হলে, এই নতুন শিক্ষানীতি কেন বলেছে যে, ২০২৫-এর ভেতর ক্লাস সিক্স থেকেই বাচ্চারা বৃত্তিমূলক শিক্ষা পেতে শুরু করবে? কেন বলেছে, এর জন্য স্কুলগুলো স্থানীয় কলকারখানা, আইটিআই, কুটিরশিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করবে ও শিশুদের কিছু দিনের জন্য সেখানে হাতেকলমে কাজ শিখতে পাঠাবে? এই মনোভাব দেখে কী মনে হয়— এই শিক্ষানীতি শিশুদের প্রকৃত শিক্ষা দেওয়ার উদ্দেশ্যে তৈরি, না কি তাদের বৃত্তিমূলক শিক্ষার ফাঁদে ফেলে যে কোনও জীবিকার জন্য তৈরি করার উদ্দেশ্য নিয়ে?

কী ভাবব সেটার বদলে যদি কী ভাবে ভাবব, সেটায় জোর দেওয়া হয়, তা হলে বিজ্ঞান মেনে চলা মানুষরা খুশি হন। কিন্তু তার জন্য ছোটবেলা থেকেই শিশুদের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে প্রাকৃতিক বিষয় শেখানো উচিত। সূর্য পূর্ব দিকে কেন ওঠে? ফুল সকালে কেন ফোটে? হাওয়া দিলে পাতা কেন নড়ে— এই রকম ছোট ছোট সহজ ঘটনার ভেতর দিয়ে বাচ্চা যখন বিজ্ঞান শেখে, সে কার্য আর কারণ বুঝতে শেখে। বড় হয়ে প্রশ্ন করতে শেখে। কাঁসর বাজিয়ে, মন্দিরে ইট গেঁথে আর ভজন গেয়ে করোনা দেশ ছেড়ে চলে গেল— এটা ধরে নেয় না। এই নতুন শিক্ষানীতিতে তেমন বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখতে পেলাম বলে তো মনে হল না।

অভিজিৎ মিত্র

অধ্যক্ষ, ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি

ছেলেখেলা

এক রাজাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি তাঁর রাজ্যের প্রতিরক্ষার জন্য কী করেছেন? রাজার জবাব, আমি প্রচুর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছি। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিরক্ষার কোন কাজে লাগবে? রাজার জবাব, মানুষ যথার্থ শিক্ষিত হলে সচেতন হয়ে ওঠে। আর সচেতন মানুষই প্রতিরক্ষার সবচেয়ে শক্তিশালী উপাদান।

বাস্তবের রাজা অবশ্য চিরকাল উল্টো কাজটাই করে। সেই ধারাবাহিকতা, বিশেষত জনশিক্ষার ক্ষেত্রে, পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলি সযত্নে বহন করছে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘শিক্ষা সংস্কার’ নিবন্ধ শেষ করেছেন মহান রুশ সাহিত্যিক লিও টলস্টয়ের একটি বক্তব্য দিয়ে— সরকারের শক্তি মানুষের অজ্ঞতায়। সরকার তা জানে, তাই সব সময়েই যথার্থ শিক্ষার বিরোধিতা করে। ভারতের বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারও এই ‘যথার্থ শিক্ষা’-র পথ বন্ধ করতে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ আনল অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়।

সাধারণ শ্রমজীবী মানুষের ওপর ধর্মের নামে সামন্ততান্ত্রিক শোষণ-নিপীড়ন-অত্যাচারের প্রতিবাদে ইউরোপীয় নবজাগরণের মনীষীরা দাবি তুলেছিলেন ১) শিক্ষাব্যবস্থাকে রাখতে হবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কর্তৃত্বের বাইরে, ২) শিক্ষার পাঠ্যসূচি হবে বিজ্ঞানসম্মত, ৩) রাষ্ট্র ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা করবে না, ৪) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যাবতীয় খরচ দেবে সরকার এবং শিক্ষাব্যবস্থা পরিচালনা করবেন শিক্ষাবিদরা। সরকার হস্তক্ষেপ করবে না। জন স্টুয়ার্ট মিল গণতন্ত্রের প্রধান দু’টি শর্ত হিসেবে শিক্ষা ও উন্নত চরিত্র গঠনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। সেই নবজাগরণের উন্নত চিন্তাকে এ দেশের কুসংস্কারাচ্ছন্ন, পশ্চাদপদ জনজীবনের প্রয়োজনে প্রয়োগ করতে গিয়ে বিদ্যাসাগর বলেছিলেন, ‘‘ভারতবর্ষীয় সর্বসাধারণ লোক বিদ্যানুশীলনের ফলভোগী না হইলে তাহাদিগের চিত্তক্ষেত্র হইতে চিরপ্ররূঢ় কুসংস্কারের সমূলে উন্মূলন হইবে না।” (সংস্কৃত ভাষা ও সংস্কৃত সাহিত্য বিষয়ক প্রস্তাব)।

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০-তে শিক্ষাকে ছেলেখেলায় পর্যবসিত করা হয়েছে। শিক্ষার প্রকৃত মর্মবস্তু যথাসম্ভব ছেঁটে নিষ্ফলা রোজগারমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজন আছে। কিন্তু মানুষ হওয়ার শিক্ষাকে একেবারে গৌণ করে দেওয়া কখনও কাম্য নয়।

সুব্রত দাস

কলকাতা-৭৭

গাড়ির আওয়াজ

এখন ট্রেন বন্ধ থাকায় বাস ও গাড়ি চলাচল বেড়ে গিয়েছে। আমি চন্দননগরে জি টি রোডের ধারে (ছবিঘর মোড়ের কাছে) থাকি ও রোজ শব্দদূষণের শিকার হই। বাসগুলি এয়ারহর্ন বাজাতে বাজাতে যায়। সেই বিকট আওয়াজে প্রাণ ও কান দুই-ই বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।

রাঘবেন্দ্র ঘোষ

চন্দননগর, হুগলি

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

অন্য বিষয়গুলি:

NEP 2020 National Education Policy Education
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy