Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
CRPF in schools

“কবে স্কুল খুলবে?”

স্বাধীনতার ৭৬ বছর পরও আমাদের দেশে ভোটের জন্য আলাদা করে সরকারি কোনও পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। তাই ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হলেই জেলায় জেলায় সু-পরিকাঠামোযুক্ত স্কুলগুলির কপালে ভাঁজ পড়ে যায়।

Empty classroom
শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০২৩ ০৭:১১
Share: Save:

‘পাঠশালা বন্ধ’ (২৯-৭) সম্পাদকীয়তে পশ্চিমবঙ্গে এ বারের পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধের ছবি স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। দেশের, রাজ্যের গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের জন্য দেখা গেছে, প্রায় দু’বছর অন্তর পর্যায়ক্রমে পঞ্চায়েত, লোকসভা, বিধানসভার ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ভোটের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া— ভোটের ট্রেনিং, ভোট-গ্ৰহণ, ভোট গণনা, বাহিনীর থাকা— এই সব কিছুর জন্য স্কুলগুলির উপরই নির্ভর করতে হয় নির্বাচন কমিশনকে। স্বাধীনতার ৭৬ বছর পরও আমাদের দেশে ভোটের জন্য আলাদা করে সরকারি কোনও পরিকাঠামো তৈরি হয়নি। তাই ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হলেই জেলায় জেলায় সু-পরিকাঠামোযুক্ত স্কুলগুলির কপালে ভাঁজ পড়ে যায়। প্রশাসনিক নির্দেশিকায় কোনও স্কুলবাড়ির প্রতিটি ক্লাসরুম সেনাবাহিনীর আশ্রয় শিবিরে পরিণত হয়, কোথাও চলতে থাকে ভোটের ট্রেনিং, ভোটের সময় ডিসিআরসি সেন্টার, ভোট গণনাও। এর ফলে স্কুলের পঠনপাঠন বন্ধ রাখতে হয় অনেক দিন।

এ বছর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হল দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের, যারা আগামী বছরের পরীক্ষার্থী। এমনিতেই, আগামী বছরের দশম ও দ্বাদশের চূড়ান্ত পরীক্ষা এক মাস এগিয়ে এসেছে। এ বছর সেশনের শুরুতেই দেড় মাস গরমের ছুটির কারণে ক্লাস হয়নি। এ বার পঞ্চায়েত ভোটের জন্য আরও এক মাস ক্লাস বন্ধ। তা হলে সিলেবাস শেষ হবে কী ভাবে? অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা হলেও পড়ুয়াদের এই ক্লাসে তীব্র অনীহা দেখা গেছে। বেশির ভাগ পড়ুয়াই এই ক্লাসে অনুপস্থিত থাকে। তারা আমাদের ফোন করে বার বার জানতে চেয়েছে, “কবে স্কুল খুলবে, স্যর?” এই সব ছাত্রছাত্রীর পড়াশোনায় যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল, তা পূরণ হবে কি? অন্যান্য ছুটি বাদ দিলেও একটি শিক্ষাবর্ষে প্রায় সাড়ে তিন মাস ক্লাস না হওয়ার কারণে পড়ুয়াদের পড়াশোনায় যে ঘাটতি তৈরি হল, তা মেটানোর জন্য কোনও স্তরেই আলোচনা নেই। অথচ গ্ৰাম থেকে শহরের রাস্তা-ঘাট, চায়ের দোকানে কান পাতলেই শোনা যায় শুধু রাজনীতির মুখরোচক আলোচনা।

যে শিক্ষা একটা জাতির মেরুদণ্ড, তা আজ ভাঙতে বসেছে। পড়ুয়াদের শিক্ষার অধিকারকে বাঁচিয়ে রাখতে রাজ্যের সরকারকেই সদর্থক ভূমিকা পালন করতে হবে। নয়তো সরকারি স্কুল থেকে ছাত্রছাত্রীরা এক সময় মুখ ফিরিয়ে নেবে।

অরুণ মালাকার, কলকাতা-১০৩

প্রশিক্ষণ চাই

‘থেরাপির ক্লাসে নিগ্রহ অটিস্টিক শিশুকে, অভিযুক্ত স্পিচ থেরাপিস্ট’ (৬-৭) শীর্ষক সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে এই পত্রের অবতারণা। অটিজ়ম হল বিকাশের অক্ষমতার দরুন আজীবন অসমর্থতা, যা স্নায়বিক বিশৃঙ্খলার কুফল এবং যা স্নায়বিক ক্রিয়াকে ব্যাহত করে। গড়ে প্রতি ১০০০০ শিশুর মধ্যে ৪ জনের অটিজ়ম এবং তার আচরণগত লক্ষণ দেখা যায়। অটিজ়মের নির্দিষ্ট ভাবে প্রমাণিত কোনও কারণ জানা নেই, এর চিকিৎসা হল— অটিস্টিক শিশুদের সংগঠিত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেওয়া। এটা তাদের স্বনির্ভরতা ও উপযুক্ত পুনর্বাসনে বিবিধ ভাবে সাহায্য করে, যাতে তারা যতটা সম্ভব অন্যের সাহায্য না নিয়ে আত্মনির্ভর জীবনযাপন করতে পারে। অটিজ়মের মাত্রা ঠিক করে ‘চাইল্ডহুড অটিজ়ম রেটিং স্কেল’, যা একে তিন ভাগে ভাগ করে, মৃদু, মাঝারি এবং প্রবল। একমাত্র খুব মৃদু অটিজ়ম-এ আক্রান্তরাই সাধারণ বা প্রথাগত স্কুলে নিজেদের কিছুটা মানিয়ে নিতে পারে। নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা বা বিশেষজ্ঞদের মতামত সম্যক ভাবে জেনে বলছি, মৃদু থেকে মাঝারি, মাঝারি এবং প্রবল— এই তিন ধরনের অটিস্টিক শিশুদের জন্য সাধারণ বা প্রথাগত স্কুলের পড়াশোনা তাদের বিকাশকে আরও ব্যাহত করে। কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা, ন্যাশনাল ট্রাস্ট আয়োজিত গবেষণায় প্রমাণিত যে, অটিস্টিক শিশুরা উপকৃত হয় শুধুমাত্র সেই সব বিশেষ স্কুল বা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে, যেখানে অতি পরিকল্পিত ও এই শিশুদের জন্য বিশেষ ভাবে তৈরি কর্মমুখী প্রশিক্ষণের পাঠ্যসূচি থাকে। সিংহভাগ অটিস্টিকদের শেখার ধরন সাধারণ শিশুদের থেকে আলাদা। শুধুমাত্র তাদের জন্য উপযুক্ত ও সঠিক প্রশিক্ষণ পদ্ধতি তাদের পূর্ণ সাফল্য সম্ভাবনায় পৌঁছে দিতে পারে। দুর্ভাগ্যের কথা, এই রকম বিশেষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আমাদের দেশে শহরাঞ্চলে কিছু সংখ্যায় থাকলেও গ্রামাঞ্চলে প্রায় কিছুই নেই। তাই গ্রামের অটিস্টিক শিশুদের অভিভাবকদের জন্য পড়ে থাকে সারা জীবনের এক অসম লড়াই।

আরও দুর্ভাগ্যের কথা, বর্তমানে শহরাঞ্চলে এই রকম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বহু সংখ্যায় স্থাপিত হচ্ছে। কিন্তু এই সব কেন্দ্রের প্রশিক্ষকদের অধিকাংশই ঠিকমতো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন। ফলে পরিস্থিতি হয়ে উঠেছে ভয়াবহ। অনেকের আরসিআই রেজিস্ট্রেশন পর্যন্ত নেই। খবরে প্রকাশ, যে কেন্দ্রে নিগ্রহের ঘটনাটি ঘটেছে, তার প্রধান এবং এক আধিকারিক ঘটনার পর পুলিশের দ্বারস্থ হয়ে দায়িত্ব সেরেছেন। খবরে আরও প্রকাশ যে, নিগ্রহকারী প্রশিক্ষক অপ্রতিম দাসের আরসিআই রেজিস্ট্রেশন এবং এই গুরুত্বপূর্ণ কাজের ঠিকমতো প্রশিক্ষণ পর্যন্ত ছিল না। এই পরিস্থিতিতে নিয়োগকর্তা হিসাবে ওই কেন্দ্রের প্রধান কী ভাবে তাঁর দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারেন? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই নিগ্রহের ফলে ওই অসহায় নিষ্পাপ শিশুটির যে ভয়াবহ মানসিক এবং শারীরিক ক্ষতি হল, তার দায় কে নেবে? অটিস্টিক সন্তানের পিতা হিসাবে এই যন্ত্রণা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছি।

তাই অনুরোধ যে, এই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে এই সব শিশুর আর যাতে কোনও ক্ষতিসাধন না হয়, তার প্রতি সকলে সজাগ হন। বিখ্যাত অটিজ়ম বিশেষজ্ঞ টেম্পল গ্র্যানডিন বলেছেন, এক জন অটিস্টিক শিশু কী পারে না-র চেয়েও সে কী পারে তার উপর আরও বেশি জোর দেওয়া উচিত। পরিশেষে জানাই, একটি জার্নালে এক অটিস্টিক শিশুর মায়ের স্বীকারোক্তি— একটি ছোট্ট শব্দ অটিজ়ম। শব্দটির মধ্যে যে কত ভালবাসা, কত ব্যথা ও গভীরতা আছে তা বুঝতাম না, যদি না আমার ছেলেটি অটিস্টিক হত। মানুষের ও সমাজের সচেতনতা একটু বৃদ্ধি পেলে এই সব যন্ত্রণাক্লিষ্ট অভিভাবক মরুভূমিতে মরূদ্যানের দেখা পাবেন এবং এই সব শিশুর হাতের প্রদীপশিখা সারা জীবন ঠিক জ্বলে থাকবে।

সোমনাথ দেব, কলকাতা-১০

নেই সদিচ্ছা

অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় ও কুমার রাণার সঙ্গে অধ্যাপক সুকান্ত চৌধুরীর কথোপকথনটি (শিক্ষার সর্বনাশ রুখতেই হবে, ২১-৬) গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক। যে ভাবে শিক্ষার অবনমন ঘটছে, তাতে আগামী দিনে সমাজের অবস্থা কেমন হবে, সহজেই অনুমেয়। সকলেই জানে উপযুক্ত শিক্ষা ছাড়া দেশ বা সমাজ গঠন অসম্ভব। কিন্তু এই দুরূহ কাজটি করবে কে? সরকার যদি উঠেপড়ে লাগে, অনেক কাজই সম্ভব। দেশে শিক্ষা বিশেষজ্ঞের অভাব নেই। অভাব সদিচ্ছার, কর্তব্য পালনের। সুকান্তবাবু ঠিকই বলেছেন— শুধু আমার ছেলের ভাল করতে পারলেই হল, এটা কোনও দায়িত্বশীল সচেতন নাগরিকের কাজ হতে পারে না। কেননা সমাজ তৈরি হয় সকলকে নিয়ে। কাজেই সকলেই যদি কমবেশি শিক্ষা না পায়, দেশ তথা সমাজের উন্নতি কি সম্ভব? মাঝেমাঝে মনে হয়, আমরা ভাবের ঘরে চুরি করছি। ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে, প্রাকৃতিক সম্পদ, মানব সম্পদ, খনিজ সম্পদ বা মেধার অভাব নেই। অভাব উপযুক্ত পরিকল্পনার ও সদিচ্ছার। কাজেই উপযুক্ত শিক্ষা আন্দোলন বা সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষার উন্নতি নিয়ে আন্দোলন হয় না কেন— এটা আমারও জিজ্ঞাসা। পাশাপাশি, শিক্ষাক্ষেত্রে কেন বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হচ্ছে না, বা স্কুলগুলিতে শূন্যপদগুলি পূরণ করা হচ্ছে না, সেই প্রশ্নও তুলতে হবে।

অভিজিৎ দত্ত, জিয়াগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ

অন্য বিষয়গুলি:

Election Commission
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy