Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: চুপ, গণতন্ত্র চলছে!

আমরা রাজস্থানের কিছু মানুষ মহারাষ্ট্রের মানুষকে ফোন করে বলছি, বধাই হো বধাই! ৩৭০ খতম হো গয়ি! দিল্লির কিছু মানুষ কর্নাটকের মানুষকে ফোন করে বলছি, আপনা টাইম আ গইল ভাই।

শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

এই তো আমরা নাচতে নাচতে পথে নেমে পড়েছি। আবির মাখছি। ঢোল বাজাচ্ছি। ৩৭০ ধারা উঠে গিয়েছে কাশ্মীর থেকে। আজ পথে নেমে দেশের জন্য গর্ব করার দিন। যারা বিরোধিতা করছে তাদের ‘দেশদ্রোহী’ দাগিয়ে দেওয়ার দিন।

আমরা রাজস্থানের কিছু মানুষ মহারাষ্ট্রের মানুষকে ফোন করে বলছি, বধাই হো বধাই! ৩৭০ খতম হো গয়ি! দিল্লির কিছু মানুষ কর্নাটকের মানুষকে ফোন করে বলছি, আপনা টাইম আ গইল ভাই। কাশ্মীর মুদ্দে সুলঝ গইল ভাই! পশ্চিমবঙ্গের কিছু মানুষ অসমের মানুষকে ফোন করে বলছি, ভারতে এক রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আবির্ভূত হয়েছেন। এক দিনেই কাশ্মীর সমস্যা সমাধান করে দিয়েছেন।

শুধু কাশ্মীরের কোনও মানুষকে দেখতে পাচ্ছি না। তাঁদের কোনও কথা শুনতে পাচ্ছি না। আর যাতে না পাই, সে জন্যই বুঝি ইন্টারনেট বন্ধ সেখানে, ল্যান্ডলাইন আর মুঠোফোনের পরিষেবা বন্ধ। মানুষ গৃহবন্দি। গৃহবন্দি মূল ধারার রাজনৈতিক দলের নেতারাও।

এখন শুধু শ্মশানের নীরবতা সারা কাশ্মীর জুড়ে। মাঝেমধ্যে ভারতীয় জওয়ানদের বুটের শব্দ খানখান করে দিচ্ছে সেই নীরবতাকে। পথেঘাটে কাশ্মীরিদের দেখা যাচ্ছে না। টিভি অন করলেই দেখতে পাচ্ছি, জনমানবহীন পথে ভারতীয় জওয়ানদের টহলদারি।

আমরা এক বারও বলছি না, কেন কাশ্মীরের মানুষের ভাগ্য নির্ধারিত হল দিল্লিতে, কাশ্মীরের মানুষের মতামত না নিয়েই? কেন তাঁদের বাক্‌স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হল নিরাপত্তার নামে?

কাল যদি অন্য রাজ্যের ক্ষেত্রে নতুন কোনও প্রশাসনিক পদক্ষেপ করার সময় একই ব্যাপার ঘটে? প্রতিটি গলিতে সেনা মোতায়েন করে টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে মানুষকে গৃহবন্দি করে তার গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়? সে দিনও কি এ ভাবেই উল্লাস করে বলব, ‘চোপ! গণতন্ত্র চলছে!’?

পিন্টু পোহান

কলকাতা-৮

স্বাধীনতাকামী

‘সমাধান?’ (৬-৮) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে বলা হইয়াছে, ‘‘এত গুরুতর একটি পরিবর্তনের জন্য, কাশ্মীরিদের সহিত না হউক, অন্তত উপস্থিত সকল সাংসদের আলোচনার জন্য কিছু সময় কি ধার্য রাখা জরুরি নয়?’’ আমার প্রশ্ন, কেন এত গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্তের জন্য কাশ্মীরিদের মতও লওয়া হইবে না? এই অনুচ্ছেদদ্বয় আকাশ হইতে পড়ে নাই। ১৯৪৭ সালেই কাশ্মীরিরা ভারতের সহিত যুক্ত হইতে চান নাই। ভারত রাষ্ট্রের সহিত ইহা লইয়া মতপার্থক্য হওয়াতে শেষে গণভোটের কথাও উঠিয়াছিল, গণ-আন্দোলনের চাপে ভারত তাহাতে সম্মতি দিয়াছিল, কিন্তু নানা অছিলায় আজ অবধি উহা এড়াইয়া চলিয়াছে। কারণ, একই প্রশ্নে নাগাল্যান্ডবাসীও যখন ভারত হইতে বিযুক্ত হইতে চাহিয়াছিলেন তখনও গণভোটের প্রশ্ন ওঠে। ভারতের তাহাতে সায় ছিল না। অতঃপর ১৯৫১-র ১৬ মে নাগাল্যান্ডবাসী নিজস্ব উদ্যোগে গণভোট সংগঠিত করিয়াছিলেন এবং বিচ্ছিন্নতার পক্ষে রায় ছিল ৯৯.৯%। কাশ্মীরে গণভোটের ফল কী হইতে পারে অনুমান করিয়া ভারত সেই পথ মাড়ায় নাই। ইহার পর কাশ্মীরিদের প্রতি সান্ত্বনা পুরস্কারস্বরূপ কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা প্রদান করে ভারত ওই দুই অনুচ্ছেদ অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে। অতএব এই চুক্তি বাতিলের পূর্বে কেন কাশ্মীরিদের মত লওয়া হইবে না?

ভারত জোরের সহিত বলিয়া আসিয়াছে, কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং যাহারা কাশ্মীরকে ছিনাইয়া লইবার লক্ষ্যে অশান্তি সৃষ্টি করিতেছে তাহারা জঙ্গি, বিচ্ছিন্নতাবাদী, পাকিস্তানের মদতেপুষ্ট। কিন্তু দিন যত অতিবাহিত হইয়াছে, তত আমরা দেখিয়াছি, কাশ্মীরের মানুষ ভারতীয় সেনাবাহিনীর অত্যাচারের মোকাবিলায় মারমুখী হইয়া উঠিয়াছেন, তাঁহাদের চিৎকারে, স্লোগানে, ফেস্টুনে বুঝাইয়া দিয়াছেন তাঁহারা না পাকিস্তানপন্থী, না ভারতপন্থী, তাঁহারা স্বাধীনতাকামী। পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের মানুষের কণ্ঠস্বরে কান পাতিলেও একই আকাঙ্ক্ষা শোনা যায়।

যদিও কেন্দ্রীয় সরকার বর্তমানে কাশ্মীরের সংবাদ যাহাতে বাহিরে না আসিতে পারে তাহার জন্য সর্বপ্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়াছে, তৎসত্ত্বেও দু’একটি খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছিটকাইয়া আসিয়াছে। দেখা যাইতেছে, কাশ্মীরিরা নতুন উদ্যমে মারমুখী হইয়া উঠিয়াছেন, পথে পথে বিক্ষোভ মিছিল চলিতেছে। কারণ কাশ্মীরিদের স্বাধীনতা অর্জনের যে সামান্যতম আশা ছিল, তাহা ধূলিসাৎ করা হইল।

সমীর সাহা পোদ্দার

কলকাতা-৪২

অস্বাভাবিক

‘স্বাভাবিক’ (৭-৮) শীর্ষক সম্পাদকীয়টি নিতান্ত অস্বাভাবিক। লেখা হয়েছে ‘‘কাশ্মীর উপত্যকায় সত্যিই ইতিহাস রচিত হইল কি না, অনুমান করা চলে যে তাহাই উপত্যকার সাধারণ মানুষের নিকট সর্বাগ্রগণ্য প্রশ্ন নহে। বরং দূরের গ্রামে থাকা পরিজনের খোঁজ খবর বা ভিন্‌রাজ্য হইতে প্রেরিত পার্সেল হাতে পাওয়া তাঁদের প্রাত্যহিকতায় জরুরিতর প্রশ্ন।’’ কথা হল এই প্রশ্ন তোলার আগে যে প্রশ্নটি আরও জরুরি, তা হল, ৭০ বছর ধরে কাশ্মীরে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার জন্য কে বা কারা দায়ী? উপত্যকার সাধারণ মানুষ কি কোনও দিন এ বিষয়ে সরব হয়েছেন, না কি তালে তাল মিলিয়ে এ পরিস্থিতি তৈরি করতে সাহায্য করেছেন? আজ যদি ইতিহাস রচিত না হয়ে থাকে (যদিও দেশের বিরাট সংখ্যার মানুষ মনে করেন ইতিহাস রচিত হয়েছে) তবে এই সত্যই কী প্রতিষ্ঠিত হয়নি যে আগুন নিয়ে খেললে তার পরিণামও ভয়ানক হয়ে উঠতে বাধ্য?

লেখা হয়েছে, ‘‘৩৭০ বিলুপ্তির সিদ্ধান্তটি কাশ্মীরের মানুষের নিকট বিশ্বাসঘাতকতা হিসাবে প্রতিভাত হইতে পারে। তাহাতে ভারতীয় রাষ্ট্রের প্রতি কাশ্মীরিদের আনুগত্য বাড়িবে বলিয়া আশা করা কঠিন।’’ পৃথিবীর ইতিহাসে যখনই দেশবিরোধী কাজে লিপ্ত থাকা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে, সেটা তাদের বিশ্বাস অর্জন করবে মনে করে কি করা হয়েছে? জরুরি বিষয় হল দেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। আর আনুগত্য? দীর্ঘ ৭০ বছর ধরে ৩৭০ ধারার দৌলতে ভারতের সংবিধানের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা তিলে তিলে উপভোগ করার পরেও কি ভারতের প্রতি কাশ্মীরের এতটুকু আনুগত্য বেড়েছে? কেন বুরহান ওয়ানি-র মতো জঙ্গির কার্যকলাপ কাশ্মীরের যুবসমাজকে অনুপ্রাণিত করে ভারতের বীর সেনাদের দিকে পাথর ছুড়তে? ৩৭০ ধারায় বলীয়ান থেকে দেশবিরোধিতা বুঝি বিশ্বাসঘাতকতা নয়, স্বেচ্ছা-আনুগত্য প্রকাশ?

মিহির কানুনগো

কলকাতা-৮১

রক্তচক্ষু

৩৭০ তুলে দেওয়ার পর যে অমিত বীরত্বের ভজনা ও তথাকথিত ভারতীয় একাত্মবোধের উল্লাস তা কতটা সাম্প্রদায়িক অসূয়াযুক্ত আর কতটা যুক্তিনির্ভর? প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীদের বন্দি করা হল। কাশ্মীরকে সবক শেখানোর জন্য প্রতিরক্ষা খাতে রেকর্ড খরচ করে, কাশ্মীরবাসীদের অবশিষ্ট স্বাভিমানকে ‘কাঁটামারা জুতোর তলায় বীভৎস কাদার পিণ্ড’ বানানো হল। তাঁদের আর্থিক স্বাবলম্বিতা দেওয়ার এ হেন ‘মহান’ প্রয়াস আমজনতার ‘ওদের টাইট দেওয়া’র ইচ্ছা পূরণ করে সত্য, কিন্তু গণতন্ত্র, মানবিকতার কী হয়? কাশ্মীরের ভারতভুক্তির শর্তই ছিল গণভোট ও ৩৭০ ধারা। আর নাগাল্যান্ড, মণিপুর ও উত্তর-পূর্বের বহু রাজ্যেই ভিন্‌রাজ্যবাসীরা জমি ক্রয় করতে পারেন না। তথাপি পেলেট গানের আওতায় থাকা কাশ্মীরিদের ‘বিশেষ সুবিধা’ আমাদের সাম্য-চেতনাকে বড্ডই বিঘ্নিত করছিল। এই ‘এক ভারত’-এর পূজারিরা পিটিয়ে মারার শতাধিক ঘটনায় মৌনব্রত পালন করেন। গত পাঁচ বছরের যে বিদেশনীতি রেকর্ড সংখ্যক জওয়ানের মৃত্যু ঘটায় সেই নীতিও তাঁদের ক্ষোভের স্ক্যানারে ধরা পড়ে না। একমুখী রাষ্ট্রভজা সাম্প্রদায়িক বিচারধারা এখন সরকার-বিরোধী যে কোনও যুক্তিকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ দাগিয়ে দিচ্ছে। ইয়ার্কির ছলে নয়। রক্তচক্ষু দেশপ্রেম নিয়েই।

শোভন সেন

সাঁতরাগাছি, হাওড়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

অন্য বিষয়গুলি:

Article 370 Jammu and Kashmir
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy