গণনাট্য আন্দোলনের মহাশিল্পী, সুরস্রষ্টা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ মৈত্র (বটুকদা) (ছবিতে) প্রগতি লেখক সঙ্ঘের বিশিষ্ট কর্মী অনিল কাঞ্জিলালকে এক চিঠিতে লেখেন: ‘‘...বহু বহুদিন পূর্বে যোশীর সঙ্গেও এই artist’s co-operative colony সম্বন্ধে কথা হয়েছিল— central troupe এর সূত্রে— সে বোধহয় ১৯৪৭-৪৮শে। তারও আগে দীক্ষা নিয়েছিলাম আচার্য পি.সি.রায় এবং গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে। ...এই আদর্শে জীবনকে নিয়ন্ত্রিত ও চালিত করতে পারলে আমাদের দেশের অনেক social, economic, ও political maladies থেকে বাঁচতে আমরা পারতাম। এই সব co-operative cells গুলোই এক একটা বিপ্লবের den ও হতে পারতো।’’ এ চিঠির তারিখ ৫-১০-১৯৭৩। এমন অসাধ্য সাধনের ভাবনা সে দিন ভেবেছিলেন দেশের বড় বড় শিল্পী।
তা সত্ত্বেও জীবনকে সে পথে চালনা করা গেল না, পি সি যোশীর মতো কমিউনিস্ট সংগঠকের নেতৃত্ব থাকা সত্ত্বেও আইপিটিএ-র আন্দোলন প্রত্যাশিত লক্ষ্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হল। কেন? এর কারণ খুঁজতে গিয়ে বটুকদা-সহ অনেক শিল্পী পার্টির সমালোচনায় মুখর হয়েছিলেন। রবিশঙ্কর এ প্রসঙ্গে জানিয়েছিলেন: ‘‘...আই পি টি এর সঙ্গে যুক্ত থাকার সময়টাতেই আমার কম্পোজার মন পুরোপুরি ডানা মেলল। ...তবে ক্রমে আমি টের পেলাম স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ বাধা পাচ্ছে— রাজনৈতিক বিধিনিষেধ, পার্টির আদেশ এসব চেপে বসছে। আমার স্বাধীনভাবে কাজ করার অভ্যেস, এসব রেজিমেন্টেশন আমার ভালো লাগেনি, তাই সরে এসেছি।’’
অতীতে রাজনৈতিক বামপন্থার ভয়ানক দাপট ছিল, সাংস্কৃতিক বামপন্থা মাথা তুলতে পারেনি। শিল্পীসত্তায় আঘাত এসেছিল, অনেক শিল্পী আইপিটিএ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। দিন বদলেছে। রেজিমেন্টেশনের আপদ আজ আর নেই। এ সময় সাংস্কৃতিক বামপন্থার স্বনির্ভর বিকাশ কল্পনা করা যায়। আর এ বিকাশ ঘটলে তার ধাক্কায় রাজনৈতিক বামপন্থার পুনরুত্থান ঘটে যাওয়া অসম্ভব নয়। আইপিটিএ-র ৭৫তম বর্ষপূর্তি উৎসব পালিত হচ্ছে। এ সময় আইপিটিএ-র ঐতিহ্য স্মরণের পাশাপাশি অতীতের ত্রুটিবিচ্যুতি নিয়েও নিশ্চয় আলোচনা হবে। ‘কালচারাল লেফ্ট’ গড়ে তোলার সম্ভাবনাকেও সে আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করা দরকার।
শিবাশিস দত্ত কলকাতা-৮৪
বাম প্রচার
আমরা কলেজে পড়ি, সন ১৯৬৪-র পর— বামপন্থীদের বিরুদ্ধে ছিল শক্তিশালী কংগ্রেস, নকশালপন্থী, বুদ্ধিজীবীদের বিরাট অংশ, সংবাদপত্রের লাগাতার প্রচার বা আক্রমণ। এঁদের আবার দুটো ভাগ ছিল— এক দল সিপিএমের নামেই বিরোধিতা করতেন, অন্যরা বলতেন জ্যোতিবাবু ভাল, কিন্তু প্রমোদবাবু, কোঙারবাবুরা কট্টর ও সমর্থন-অযোগ্য। কিসের জোরে এত বিরোধিতা সত্ত্বেও শক্তি বাড়িয়ে চলেছিল বামেরা? সঠিক রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়াও ছিল, পাল্টা প্রচার। ছোট হোক বড় হোক, যে কোনও ঘটনায়— তাদের দলীয় বক্তব্য মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজ সুসম্পন্ন হয়েছিল। বাজার, অফিস ও কলেজগুলি ছিল রাজনীতি আলোচনার কেন্দ্র। আর পোস্টার, পথসভা, লিফলেট, সেমিনার ইত্যাদির মাধ্যমে লাগাতার প্রচার চলতই। থলে হাতে বাজার, খাতাবই নিয়ে কলেজ বা টিফিন হাতে অফিসে পৌঁছতে জানা হয়ে যেত বামেদের বক্তব্য। প্রচার বাংলার শহর গ্রামগঞ্জে শুধু পৌঁছেছিল বললে ভুল হবে, তা সর্বত্র গ্রহণযোগ্যও হয়েছিল। অনেক বিরোধী নেতা ভেবেছিলেন তাঁদের নামের ভারেই ভোট পাওয়া যাবে, কিন্তু মানুষ নীতিগত দিককে বেশি গুরুত্ব দিলেন।
বেশ কিছু বছর পর, চাকরির ছুটিতে কলকাতা এলাম। ক্ষমতায় মগ্ন বামেরা। দিন বদলেছে। টিভি আর কাগজ ছাড়া, মানুষের কাছে যাওয়ার বা প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পাট চুকে গিয়েছে। সমস্যায় জর্জরিত হয়ে এক দিন ঝড়ে ভেঙে গেল মহীরুহ। যাঁরা ৩৫-৪০ বছর ধরে বামেদের মূল শক্তি ছিলেন, সেই মানুষ এগিয়ে আসেননি মহীরুহের পতন রুখতে। যার কাছ থেকে তোলা আদায়, তাকেই বাম আন্দোলন বোঝাতে লজ্জা লাগল কি?
এখন বিজেপির নানা স্তরের নেতারা গ্রামগঞ্জ ছেয়ে ফেলে প্রচারের বন্যা এনেছেন। শাসক দলের নেত্রী উন্নয়নের সভা প্রত্যেক মাসেই করেন। যা ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়। সেখানে বামেরা প্রচারের তীব্রতা ও ব্যাপকতা দুটোই হারিয়েছে। টিভির সামনে কয়েক লাইন বলা ও কিছু মিছিল যথেষ্ট কি? বাম আন্দোলনের রাজনীতি আর সাধারণ রাজনীতির কথা বোঝানোর দক্ষতার প্রয়োজন আলাদা বোধ হয়।
দীপঙ্কর রায় ডুমুরজোলা, হাওড়া
পালাবার কারণ
কৃতী ছেলেমেয়েদের ‘দেশ থেকে পালিয়ে...’ (২৯-৫) যাওয়ার, বিশেষত কলকাতাকে ত্যাগ করার, এক লক্ষ একটা কারণ আছে। ঈশা দাশগুপ্ত তার একটাকেও যুক্তিসঙ্গত বা বিবেচনাযোগ্য মনে করলেন না! কলকাতায় থাকলে অটোওলার গালাগাল, এমনি মারও খেতে হতে পারে। সরকারি হাসপাতালে গেলে বেডের সুলুকসন্ধানী ফড়েদের হাতে টাকা গুঁজে দিয়ে রোগীকে নরকদর্শন করতে হতে পারে। বেসরকারি হাসপাতালে গেলে কৌশলী ডাক্তারের কেরামতিতে আত্মীয়দের রোগীর মরণোত্তর আইসিইউ-এর ভাড়া গুনতে হতে পারে। স্কুল, কলেজে এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়তে গেলে কোচিং সেন্টারে নাড়া বাঁধতে হবে। ভোট দিতে গেলে সরকারের লেঠেলবাহিনীর লাঠি কিংবা কপাল ভাল হলে সরকারি গোলন্দাজ বাহিনীর গুলি খেয়ে রাজনৈতিক তর্জার সাক্ষী হয়ে ক্যাডারদের কাঁধে চড়ে নগর পরিক্রমায় বেরোতে হবে। রাস্তাঘাটে, মেট্রো-বাসে অযাচিত প্রেম প্রদর্শন করলে পাবলিকের ধোলাই খেতে হবে। আর ইউরোপ বা আমেরিকায় লাঞ্চ কিংবা ডিনারে নিদেনপক্ষে ভাগাড়ের মাংস খেতে হবে না এটা হলফ করে বলতে পারি।
অরবিন্দ সামন্ত দমদম পার্ক
বাংলাদেশ ভিসা
ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ বেড়াতে যাওয়ার আগে ভিসার আবেদনপত্র জমা দিতে গিয়েছিলাম কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের অফিসে। মাঝরাত থেকেই সেই অফিসের সামনে লাইন। ফুটপাতের উপরে আঁকাবাঁকা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকলাম ঘণ্টার পর ঘণ্টা। দীর্ঘ ক্ষণ দাঁড়াতে না পেরে মাটিতেই কাগজ পেতে বসতে হল। রোদবৃষ্টিতে পোড়া এবং ভেজা ছাড়া গতি নেই। সকাল সাড়ে ন’টায় কাউন্টার খুলল। বন্ধ হল দেড়টায়। আধমরা হয়ে কোনও মতে আবেদনপত্র জমা দিতে পেরেছিলাম। দু’টি মাত্র কাউন্টার। এক দিকে বরিষ্ঠ নাগরিক ও বিশিষ্ট মানুষ, অন্য দিকে সাধারণ মানুষ। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হলে, যেতে হবে উল্টো দিকের ফুটপাতে। যা ‘ফেলো কড়ি মাখো তেল’ ব্যবস্থায় চললেও, অপরিচ্ছন্ন। এই সমস্যার সমাধান করা কি খুব কঠিন? এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সেকেলে লাইন ব্যবস্থার বিলুপ্তি ঘটিয়ে অনলাইনে ভিসা মঞ্জুর করা যায় না কি? ভিসার উপর ছাপ মারার কাজটি তো সীমান্তেও করা যেতে পারে। জনগণের হয়রানিতে কিন্তু দালালচক্রই সক্রিয়। দালালরা কানের কাছে শুনিয়ে যাচ্ছিল, হাজার দেড়েক টাকা দিলেই ঘরে বসে ভিসা মিলবে। অথচ প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপাল ভুটানে যেতে হলে ভিসার প্রয়োজন হয় না। শুধু সীমান্তের অনুমতিপত্র নিলেই চলে। আর যদি ভিসার জন্য লাইন ব্যবস্থাই চালু থাকে, তবে প্রস্তাব: কাউন্টারের সংখ্যা বাড়ান। আবেদনপত্র গ্রহণের সময় দশটা-পাঁচটা করা হোক। জল, বিদ্যুৎ এবং শৌচাগারের সুবিধাযুক্ত একটা বড় হলঘরে অপেক্ষা করার ব্যবস্থা হোক। ভিসার জন্য সরকার একটা ফি ধার্য করে, সেই টাকা দিয়ে উন্নত পরিষেবার ব্যবস্থা করুন।
শিপ্রা ভৌমিক খলিসানি, হুগলি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy