সতর্কীকরণ: ‘জীবন বিপন্ন হতে পারে’
পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভার নির্বাচনের চতুর্থ দফায় (২১ এপ্রিল ২০১৬) মুর্শিদাবাদ জেলার ডোমকলে একটি মানুষের প্রাণ চলে গেল। সংবাদমাধ্যম থেকে জানতে পারছি, ভোটের দিন নিরাপত্তাবাহিনীর উপস্থিতিতেই ভোটের বুথ থেকে টেনে বার করে মানুষটিকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়েছে। টিভির পর্দায় দেখলাম, বুথের অদূরে পড়ে থাকা মানুষটির প্রাণহীন শরীর আগলে বসে আছেন এক বৃদ্ধা, হয়তো তাঁর মা, আর কাছেই খ্যাপার মতো ছটফট করে পায়চারি করছে ব্যক্তিটির কিশোরী কন্যা। কখনও তার আব্বার খুনিদের উদ্দেশে নিষ্ফল আক্রোশ ছুড়ে দিচ্ছে, কখনও বা অসহায় কান্নায় ভেঙে পড়ছে।
এই দৃশ্যের মর্মান্তিকতার কথা থাক। কথা হল, এই নির্বাচন শুরুর বেশ কিছু দিন আগে থেকে নির্বাচন কমিশন মানুষকে ভোটপ্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করে প্রচার-অভিযান শুরু করেছে। এখন ভাবলে এটা আমার কাছে গভীর গ্লানির বিষয় বলে মনে হচ্ছে যে, কলকাতা দূরদর্শনের পক্ষ থেকে সেই প্রচারে আমিও অংশ নিয়েছি। কারণ, নির্বাচন কমিশন যদি মানুষের জীবনের সুরক্ষাটুকুও না দিতে পারে, তা হলে সাধারণ মানুষকে ভোটদানে উৎসাহিত করে কোনও ধরনের প্রচার করার নৈতিক অধিকার আমাদের থাকে কি? ওই প্রচারের সঙ্গে ‘ভোট দিতে গেলে জীবন বিপন্ন হতে পারে’ বলে বিধিসম্মত সতর্কীকরণের প্রয়োজন ছিল। আমাদের আবেদন, হয় এই ভাবে বিধিসম্মত সতর্কীকরণ হোক অথবা এই ধরনের যাবতীয় প্রচার বন্ধ হোক।
মানছি, এমন একটি মৃত্যু, তার ফলে গ্রামের একটি দরিদ্র পরিবারের ভেসে যাওয়া— গণতন্ত্রের বিপুল মহোৎসবে ‘সামান্য ক্ষতি’। তাই এই ক্ষতির দায় স্বীকার করে ভারতের মুখ্য নির্বাচন কমিশনারকে পদত্যাগ করতে বলছি না। কিন্তু ওই হতভাগ্য মেয়েটির উদ্দেশে অন্তত এক বার ‘সরি’ বলবেন না!
সর্বানন্দ চৌধুরী। কলকাতা-৯২
শুধু সরকারি সম্মান নয়
কৃষ্ণা বসুর (‘কমিশনের দায়ও... ’, ১৯-৪) লেখায় ফণীভূষণ চক্রবর্তীর উল্লেখ অনেক পুরনো স্মৃতি মনে আনল। সম্পর্কে তিনি আমার দাদু। শুধু আইনশাস্ত্র নয়, ইংরেজি এবং বাংলা সাহিত্যেও ওঁর অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল। বিধানচন্দ্র রায় যে অল্প ক’জন মানুষকে সমীহ করতেন ফণীদাদু তাঁদের অন্যতম। তিনি স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধান বিচারপতি। রাজ্যপাল হরেন্দ্রকুমার মুখোপাধ্যায় কর্মরত অবস্থায় ১৯৫৬ সালে মারা যান। প্রধান বিচারপতি হওয়ায় ফণীদাদু কার্যনির্বাহী রাজ্যপাল হয়েছিলেন এবং পদ্মজা নাইডুকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া পর্যন্ত সেই পদে ছিলেন। শুধু সরকারি সম্মানই নয়, চিরকুমার ফণীদাদু সামাজিক অনুষ্ঠানও এড়িয়ে চলতেন, যাতে কেউ আত্মীয়তার সুযোগ না নিতে পারে।
সমরেন্দ্র মৌলিক।
শকুন্তলা পার্ক, বেহালা
আমরাই দায়ী
বড়িশা বিবেকানন্দ গার্লস কলেজের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে কিছু ছাত্রীর হাতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুগত মার্জিতের নিগ্রহের ঘটনায় প্রতিফলিত আমাদের সামাজিক অবক্ষয়ের চেহারা যে ভয়ানক পরিণতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে তাতে দিশেহারা বোধ করছি।
কলেজের অধ্যক্ষা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় জানিয়েছেন যে গত বছর অবধিও তাঁরা টেস্টে অনুত্তীর্ণ ছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় বসতে দেননি। অর্থাৎ পরীক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ন্যূনতম যোগত্যামান নিয়ে ছাত্রীদের কোনও সংশয়ের অবকাশ ছিল না। তা সত্ত্বেও যে সব ছাত্রীর ফল ন্যূনতম যোগ্যতামানের অনেক নীচে এবং অনেক ক্ষেত্রেই একটি বা দুটি সাপ্লিমেন্টারি আছে তারা এই অনৈতিক দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদাধিকারীকে নিগ্রহ করতেও দ্বিধাবোধ করল না।
কেউ বলতে পারে, তাদের রাজনৈতিক দাদা-দিদিরা নিজেদের দলীয় স্বার্থে তাঁদের অবাস্তব প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভুল পথে পরিচালিত করেছিল। কিন্তু টিভিতে বার বার এই ছাত্রীদের চেহারা, ভাবভঙ্গি দেখে আমার মনে হয়েছে, এরা যথেষ্ট সচেতন। বিশ্ববিদ্যালয় নামক প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ বা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার অস্তিত্বই আর তাদের কাছে নেই। তারা বাস করে এক নৈরাজ্যের জগতে। যে জগৎটিকে বাস্তবায়িত করার জন্য রাজনৈতিক নেতা থেকে পুলিশ, আমলা, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, ডাক্তার, করণিক, এবং অন্যান্য নানা কাজে নিযুক্ত আমরা সবাই দায়ী।
কয়েকটি কলেজছাত্রী, যারা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের প্রতিনিধি, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে একটি অন্যায় দাবিতে নিগ্রহ করেছে, এটি অত্যন্ত নিন্দনীয় সন্দেহ নেই। আমার বক্তব্য হল, প্রতিষ্ঠানের ‘কর্তৃত্ব বা নিয়ন্ত্রণে (অথরিটি)’ অনাস্থা এর চেয়ে অনেক উদ্বেগজনক অসুখ।
শ্রাবণী সেনগুপ্ত। কলকাতা-১০
তিনি সাবধান করেছিলেন
পর পর দুটি লেখা (‘কী সৌভাগ্য...’, অশোক মিত্র, ১২-৪ এবং ‘ঘড়ির কাঁটা...’, সুকান্ত চৌধুরী, ১৩-৪) পড়ে অম্লান দত্তের কথা মনে এল। সুনন্দ সান্যালের নেতৃত্বে আমাদের ‘গণমুক্তি পরিষদ’-এর হয়ে যখন সিপিএম সরকারের অপসারণের জন্য দৌড়াদৌড়ি করছিলাম তখন আমাদের পরামর্শদাতা অম্লান দত্ত কিন্তু আমাদের মতো ছাত্রদের একান্তে সাবধানবাণী শোনাতেন। বলতেন, সিপিএমের পরিবর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শাসনক্ষমতায় এলে কিন্তু সুশাসন মিলবে না। কারণ, তাঁর চরিত্রে পরমতসহিষ্ণুতার অভাব স্পষ্ট।
বলাইচন্দ্র চক্রবর্তী। কলকাতা-৬৪
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy