প্রতীকী ছবি
জঙ্গলে ভরিয়াছিল শহর। কলিকাতা পুরসভা সম্প্রতি সেই জঙ্গল পরিষ্কারের উদ্যোগ লইয়াছে। বৃক্ষের জঙ্গল নহে, ইহা বিপজ্জনক তারের জঙ্গল। মহানগরে ইন্টারনেট এবং কেবল টিভি পরিষেবা প্রদানের জন্য বাতিস্তম্ভ বা ইলেকট্রিকের খুঁটির সঙ্গে তার বাঁধিয়া রাখিবার অভ্যাসটি পুরাতন। অভ্যাস পরিবর্তনের কথা ইতিপূর্বে বহু বার শুনা গিয়াছে, কিছু জায়গায় মাটির তলা দিয়া কেবল লাইন পাতিবার কাজও শুরু হইয়াছে। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তেমন উদ্যোগ ষৎসামান্য, কাজের গতিও ধীর। টনক নড়িয়াছে আমপানের পর। ঝড় শুধুমাত্র কয়েক হাজার বাতিস্তম্ভ আর ইলেকট্রিকের খুঁটিই উপড়াইয়া ফেলে নাই, তার ছড়াইয়া রাস্তাঘাট চলাচলের অযোগ্য করিয়া তুলিয়াছিল। কোথাও আবার আভূমিনত হইয়া পথচারী এবং দ্বিচক্রযানের আরোহীদের অশেষ দুর্গতির কারণ হইয়াছিল। সম্প্রতি সেই বিপজ্জনক তারগুলির অপসারণের কাজ শুরু হইয়াছে শহরের কিছু রাস্তা হইতে।
কিন্তু ইহার জন্য একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের আগমন পর্যন্ত অপেক্ষা করিতে হইল কেন? পুরসভা কি বিপদের মাত্রাটি পূর্বেই অনুধাবন করিতে পারে নাই? কালবৈশাখী ঝড়েও রাস্তায় খুঁটি উপড়াইয়া তার ছড়াইয়া পড়িবার উদাহরণ এই শহরে অজস্র। তারের স্তূপ দ্বিচক্রযানের চাকায় জড়াইয়া দুর্ঘটনাও ঘটিয়াছে। অথচ প্রশাসনিক কর্তাদের ঘুম ভাঙে নাই। এ দিকে তারগুলির অধিকাংশই অকেজো। পুরসভার হিসাবই বলিতেছে, শহরের মাথায় ঝুলিয়া থাকা তারের মধ্যে মাত্র এক চতুর্থাংশের কিছু অধিক সক্রিয়। কেবল পরিষেবা প্রদানকারীরা তারগুলিকে বাতিস্তম্ভ এবং খুঁটির গাত্রে জড়াইয়া দেন শ্রম এবং উন্নততর প্রযুক্তির খরচ বাঁচাইবার জন্য। কালক্রমে তারগুলি অকেজো হইয়া পড়ে, নূতন তার লাগানো হয় এবং পুরানো তারগুলি অপসারণের কথাটি কাহারও মনে থাকে না। ফলে তারের স্তূপে বাতিস্তম্ভ এবং খুঁটিগুলি ন্যুব্জ হইয়া পড়ে। সাধারণ ঝড়ের ধাক্কাও সহ্য করিবার ক্ষমতা হারায়। বিশেষজ্ঞদের অনুমান, আমপানে শহরে যে বিপুল সংখ্যক বাতিস্তম্ভ এবং ইলেকট্রিকের খুঁটি ভূমিশয্যা লইয়াছিল, তাহার অন্যতম কারণ অকেজো তারের বোঝা।
এবং ইহা দৃশ্যদূষণের কারণও বটে। বিশ্বের কোনও উন্নত শহরে এমন তারের স্তূপ দৃষ্টিপথে বাধা হইয়া দাঁড়ায় না। কলিকাতাকে আন্তর্জাতিক মানের বানাইতে হইলে সর্বাগ্রে তাহাকে এই দৃশ্যদূষণের হাত হইতে বাঁচাইতে হইবে। সঙ্গে প্রস্তুতি লইতে হইবে আগামী দিনের বিপর্যয়েরও। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, উষ্ণায়নের কারণে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরিমাণ ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাইবে। শহর জুড়িয়া ভগ্নপ্রায় বাড়ি, ওভারহেড তারের স্তূপ, বিশাল হোর্ডিং, দুর্বল বাতিস্তম্ভ, রুগ্ণ বৃক্ষরাজি লইয়া সেই বিপর্যয়ের মোকাবিলা সম্ভব হইবে কি? এই পরিবর্তনগুলির একটিও রাতারাতি হইবার নহে। ইহার জন্য সুপরিকল্পনার প্রয়োজন। কিছু ক্ষেত্রে তাহা ব্যয়সাপেক্ষও বটে। কিন্তু সেই খরচটুকু বাঁচাইতে চাহিলে, তাহার মূল্য অন্য ভাবে দিতে হয়। কখনও কখনও নাগরিকের জীবনের বিনিময়েও। বিদ্যুতের খোলা তার জমা জলে পড়িয়া, বিপজ্জনক বাড়ি ভাঙিয়া মানুষের মৃত্যু এই শহর কম দেখে নাই। সভ্য সমাজের উপযুক্ত ঘটনা বলিয়া ইহাকে চালানো মুশকিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy