Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Delhi Violence

নিষ্ক্রিয়তার (অ)যুক্তি

কেজরীবাল নরেন্দ্র মোদী নহেন— তাঁহার রাজনীতি পরিচিতিভিত্তিক নহে।

শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

পুলি‌শ তাঁহার হাতে নাই। দিল্লির ঘটনাক্রমে অরবিন্দ কেজরীবালের নিষ্ক্রিয়তাকে ঢাকিতে এই যুক্তিটি মাপে খাটো হইতেছে। কয়েক সপ্তাহ পূর্বেও যে উদারবাদীরা কেজরীবালের মধ্যেই বিজেপির উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিকল্প দেখিতেছিলেন, তাঁহাদের একাংশ ক্ষুব্ধ, একাংশ আশাহত। কেহ বলিতেছেন, যে কেজরীবাল নির্ভয়া-কাণ্ডের সময় শীলা দীক্ষিতের অপদার্থতাকে প্রশ্ন করিয়াছিলেন, স্বয়ং তিনিই কেন শীলার ব্যবহৃত যুক্তির আড়াল খুঁজিতেছেন? পুলিশ হাতে নাই, অতএব সত্যই কি তাঁহার কিছু করিবার ছিল না? দিল্লি বিধানসভায় কেজরীবালের বিপুল ভোটে প্রত্যাবর্তনের পিছনে যে তাঁহার দলের অঞ্চলভিত্তিক উপস্থিতির অবদান রহিয়াছে, এই কথাটি তাঁহারাই গর্ব করিয়া বলেন। উত্তর-পূর্ব দিল্লির যে অংশ জ্বলিতেছিল, কেজরীবাল কি সেখানে নিজস্ব সংগঠনকে গণহত্যা ঠেকাইবার কাজে লাগাইতে পারিতেন না? তিনি স্বয়ং পথে নামিতে পারিতেন না? তুলনা করিবার প্রশ্নই নাই, কিন্তু স্মরণ করা যায়, মোহনদাস গাঁধী যখন দাঙ্গাবিধ্বস্ত নোয়াখালির রাস্তায় হাঁটিয়াছিলেন, তাঁহার হাতেও পুলিশের নিয়ন্ত্রণ ছিল না। অতএব, কেজরীবালের নিষ্ক্রিয়তা যে তাঁহার অসহায়তা বা অপারগতা নহে, একটি সচেতন রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, তাহাতে সংশয় নাই।

কেজরীবাল নরেন্দ্র মোদী নহেন— তাঁহার রাজনীতি পরিচিতিভিত্তিক নহে। অর্থাৎ, দাঙ্গা হইতে যে প্রত্যক্ষ রাজনৈতিক লাভ, হিন্দুত্ববাদীদের মারণযজ্ঞে নিষ্ক্রিয় প্রশ্রয় দিলে সেই লাভের সিংহভাগ আপ-এর ঝুলিতে আসিবে, এ আশা করিবারও কারণ নাই। তাঁহার রাজনীতি দাঁড়াইয়া আছে শুধুমাত্র সুশাসনের প্রতিশ্রুতির উপর— সংগঠিত হত্যালীলা দেখিয়াও চুপ করিয়া থাকা সেই প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নহে। তাহা হইলে কি এই নিষ্ক্রিয়তা কেজরীবালের রাজনীতির পক্ষে আত্মঘাতী? না, এমন একটি উপসংহার টানা হয়তো অবিবেচনার পরিচয় হইবে। দেশের যে অঞ্চলগুলি রাজনৈতিক ভাবে কেজরীবালের নিকট তাৎপর্যপূর্ণ, সেখানে ধর্মীয় মেরুকরণ অমোঘ। কিন্তু, ভারতীয় রাজনীতি শুধু হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতির উপরই চলিবে, এমন আশা সম্ভবত অমিত শাহেরাও করেন না। ধর্মীয় মেরুকরণের রাজনৈতিক পরিসরেও অর্থনীতি বা সুশাসনের ন্যায় প্রসঙ্গ উঠিতে পারে। কেজরীবালের গায়ে যদি সংখ্যালঘু-ঘনিষ্ঠতার গন্ধ না লাগে, তবে তিনি এই গোত্রের হিন্দুত্ববাদীদের নিকট বিজেপির বিকল্প হইতেই পারেন। এই যুক্তিতেই বোঝা সম্ভব, দিল্লি বিধানসভার প্রচারপর্বে কেজরীবাল কেন এক বারও শাহিন বাগে যান নাই, কিংবা কেন সেই আন্দোলনের প্রসঙ্গটিকে প্রাণপণ এড়াইয়াছেন। তিনি সচেতন ভাবে ‘মুসলমান’ স্বার্থের সহিত নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখিতে চাহিয়াছেন। দিল্লির হত্যাকাণ্ডে কেজরীবালের নিষ্ক্রিয়তা তাঁহার সেই বৃহত্তর রাজনৈতিক ছকেরই আর একটি অঙ্গ।

সেই ছক ফলপ্রসূ হইবে কি না, তাহা ভিন্নতর প্রশ্ন। কিন্তু আপাতত আর একটি বৃহত্তর প্রশ্ন রহিয়াছে। রাজনীতি কি তাহা হইলে এতটাই নৈতিকতা-বিবর্জিত হইতে পারে? কেজরীবাল যদি তাঁহার সর্বশক্তিতে এই গণহত্যা ঠেকাইতে সক্রিয় হইতেন, যদি নিজে পথে নামিতেন, তাহা হইলে হয়তো একটি বড় রাজনৈতিক ঝুঁকি হইত। কিন্তু, সেই অবস্থানটিতে নৈতিকতা থাকিত— রাজ্যের কোনও একটি জনগোষ্ঠীর মানুষ তাঁহাদের পরিচিতির কারণে সংগঠিত হিংসার মুখে পড়িলে নিজের স্বার্থচিন্তা না করিয়াই তাঁহাদের পার্শ্বে দাঁড়াইবার নৈতিকতা। তাহাতে হয়তো কেজরীবালের সাময়িক ক্ষতি হইত, কিন্তু লাভ হইত ভারতীয় রাজনীতির। এই অকল্পনীয় সময়েও যে নৈতিকতাভিত্তিক রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করা সম্ভব, সেই দৃষ্টান্ত স্থাপিত হইত। দেশটি এখনও গাঁধীর, সেই কথাটি স্মরণ করাইয়া দেওয়া যাইত।

অন্য বিষয়গুলি:

Delhi Violence CAA Protest Arvind Kejriwal AAP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy