Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

দ্বৈরথভূম

হারিয়াও অবশ্য হার স্বীকার করে নাই গৈরিক বাহিনী। ট্রোল-সেনারা প্রশ্ন করিতেছে, ছাত্র সংসদের নবনির্বাচিত সভাপতি ঐশী ঘোষের ডান হাতে কেন তাগা-পাথর বাঁধা?

জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়

জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ২২:৪০
Share: Save:

রণক্ষেত্রের নাম জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়। ছাত্র সংসদ নির্বাচন হইল, বামপন্থী জোটের নিকট করুণ ভাবে পরাজিত হইল এবিভিপি, ইহা যুদ্ধের অংশমাত্র। যুদ্ধ আসলে নিরন্তর চলিতেছে, ২০১৫ সাল হইতে। সেই যুদ্ধের এক দিকে আছে সরকার এবং সরকারপন্থীরা, অপর দিকে ছাত্র-শিক্ষক-গবেষকদের বৃহদংশ। এম জগদেশ কুমার, যাঁহার সহিত সঙ্ঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠতা লইয়া ঢের আলোচনা হইয়াছে, উপাচার্য পদে নিযুক্ত হইবার পর বারংবার সংঘাতে লিপ্ত হইয়াছে দুই পক্ষ। সর্বাধিক আলোচিত পর্ব নিঃসন্দেহে ২০১৬ সালে কানহাইয়া কুমার, উমর খলিদ ও অনির্বাণ ভট্টাচার্যের গ্রেফতারি। ইহার পর কখনও অভিযুক্ত ‘দেশদ্রোহী’দের দেশপ্রেমের পাঠদান করিতে ক্যাম্পাসে সেনা-ট্যাঙ্ক রাখিবার নিদান দিয়াছেন উপাচার্য, কখনও আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফুর্তির স্রোত ছুটিবার বিস্ময়কর অভিযোগ তুলিয়াছেন শাসক দলের বিধায়ক। ইতিহাসবিদ রোমিলা থাপারের নিকট কাজের খতিয়ান দাবি করিয়াছে জেএনইউ কর্তৃপক্ষ। আবার, পাল্টা আন্দোলনে নামিয়াছেন ছাত্র-গবেষকেরা, আদালতের দ্বারস্থ হইয়াছেন শিক্ষকেরা। নির্বাচনের ফল প্রতিবাদী পক্ষের জয় বলিলে অত্যুক্তি হয় না। ইহা জনসমর্থনের অভিমুখও প্রমাণ করে।

এহ বাহ্য। কিছু বার্তাও দেয় এই ফল। উচ্চশিক্ষার প্রাথমিক এবং সর্বাধিক জরুরি বোধটি হইল প্রশ্ন করিবার অধিকার। বস্তুত বিশ্ববিদ্যালয় হইল সেই পরিসর, যে স্থলে তথ্য মুখস্থ কিংবা নিয়মের প্রশিক্ষণ নহে, সমাজের নিগড়গুলিকে ভাঙিবার পাঠ লাভ করে পড়ুয়ারা। চারিপার্শ্বে যাহা প্রচলিত, উহা যথার্থ কি না জিজ্ঞাসা করিতে না শিখিলে, কোনও পড়ুয়া আর কী-ই বা শিখিবে? সরকার যাহা করিতেছে, যুব সমাজ যদি তাহা নিষ্প্রশ্ন ভাবে মানিয়া চলে, কিংবা তাহার অনুগামী হইয়া ঢক্কানিনাদকেই বহু গুণে বাড়াইয়া তুলে, তাহা হইলে কি নূতন ভাবনার সাধনা সম্ভব? পুরাতনকে স্বীকার করিতে হইবে, গতানুগতিকতাকে নহে। জেএনইউ-এর ইতিহাস বলে, বারংবার সেই শিক্ষার বাতাবরণই তৈয়ারি করিয়াছে দেশের প্রথম সারির এই বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু সর্বাধিপত্যকামী শাসক এই সকল অস্বস্তি মানিতে চাহে না। অতএব আক্রমণ, পাল্টা আক্রমণ, এবং পরিণামে এক চলমান যুদ্ধ। তবে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরাও জানাইয়া দিলেন, প্রশ্ন করিবার অধিকারকে প্রাণভোমরার ন্যায় সযত্নে রক্ষা করিতেই হইবে।

হারিয়াও অবশ্য হার স্বীকার করে নাই গৈরিক বাহিনী। ট্রোল-সেনারা প্রশ্ন করিতেছে, ছাত্র সংসদের নবনির্বাচিত সভাপতি ঐশী ঘোষের ডান হাতে কেন তাগা-পাথর বাঁধা? জানা গিয়াছে ছবিটি পুরাতন। তবু বিতর্কে ইতি পড়ে নাই। ঐশী যে রাজনীতির চর্চা করেন, তাহার সহিত তাঁহার ব্যক্তিগত আচরণ মিলিতেছে না, এই কথাটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন নহে। একদা একাধিক বঙ্গীয় কমিউনিস্ট নেতার ধর্মাচরণ লইয়াও একই প্রশ্ন উঠিয়াছিল। তবে ট্রোল-বাহিনী সেই কথা বলিলে উদ্দেশ্য লইয়া ভাবিতে হয় বইকি। কেননা, যে কোনও বিপরীত স্বরকেই হেনস্থা করিতে তাহারা বদ্ধপরিকর। রাহুল গাঁধী হইতে মনমোহন সিংহ— মাসকয়েক পূর্বে ভোটের বাজারে মিথ্যা ট্রোলের বানে ভাসিয়াছিলেন সকল বিরোধী নেতাই। বস্তুত, প্রবণতাটিই বিপজ্জনক। অবশ্য রণক্ষেত্রে এই কৌশল— ন্যায় হউক বা অন্যায়— চলিবেই।

অন্য বিষয়গুলি:

JNU ABVP Aishe Ghosh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy