Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Education

হঠাৎ সুযোগ

এ যাবৎ কাল প্রশ্ন উঠিত, সেরা মেধা দেশ ছাড়িয়া চলিয়া গেলে ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি হইবে কী প্রকারে?

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

অতিমারি দেশের শিক্ষাক্ষেত্রকে কতখানি পাল্টাইয়া দিতেছে, তাহা ক্রমে ক্রমে স্পষ্ট হইবে। বহু দিন যাবৎ দেশের সেরা মেধা বহির্মুখী; স্কুলশিক্ষা বা উচ্চশিক্ষার প্রথম ধাপ সম্পন্ন করিবার পরেই সর্বাধিক নম্বর পাওয়া ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই বিদেশযাত্রা করেন। শ্রেষ্ঠ শিক্ষাক্রম এবং সর্বোৎকৃষ্ট শিক্ষার পরিমণ্ডল লাভের উদ্দেশ্যেই ইউরোপ বা আমেরিকায় লেখাপড়া করিতে যান ভারতের সেরা পড়ুয়ারা। অতিমারি মানুষকে গণ্ডিবদ্ধ করিয়া ফেলিবার পর বিদেশে পাঠগ্রহণ করিতে যাইবার সুযোগ বহুলাংশে হ্রাস পাইয়াছে, বিদেশযাত্রা লইয়া ভীতিরও সঞ্চার হইয়াছে। এমতাবস্থায় যাহা স্বাভাবিক, ছাত্রছাত্রীরা তাহাই করিতেছেন— পছন্দমতো দেশীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাছিয়া লইতেছেন। দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বলিতেছে, বিগত শিক্ষাবর্ষগুলি অপেক্ষা এই বৎসর ভর্তির আবেদনপত্র অধিক সংখ্যায় জমা পড়িতেছে। বিগত বৎসরের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি আবেদন জমা পড়িয়াছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ছাত্রছাত্রীদের মত, আপাতত বহু বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়েই অনলাইন মাধ্যমে লেখাপড়া হইতেছে। সেইখানে ক্লাস লেকচার থাকিলেও শিক্ষার সামগ্রিক পরিমণ্ডলটি অনুপস্থিত, বিদেশি পড়ুয়ার পক্ষে উৎকৃষ্ট জল-হাওয়া লাভ করা অসম্ভব। এই জরুরি অংশটি বিনা যে হেতু শ্রেষ্ঠ উচ্চশিক্ষার নির্যাস পাওয়া যাইবে না, অতএব বিদেশযাত্রাও অর্থহীন। উপরন্তু, বর্তমানে দেশের নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহিত একাধিক বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নূতন নূতন চুক্তি হইতেছে। শিক্ষাক্রমের যৌথ যাত্রার সৌজন্যে স্বদেশে বসিয়াও বিদেশি শিক্ষার আস্বাদ গ্রহণ অসম্ভব নহে। অতএব পাল্টাইতেছে শিক্ষাক্ষেত্রের চেহারা।

এ যাবৎ কাল প্রশ্ন উঠিত, সেরা মেধা দেশ ছাড়িয়া চলিয়া গেলে ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি হইবে কী প্রকারে? এ ক্ষণে সেই উন্নতির সুযোগের একটি দূরশিখা মিলিয়াছে। ইহা একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা, অপরিকল্পিত ভাবেই আসিয়াছে। উদ্বাহু হইবার প্রয়োজন নাই, কেননা বহু ছাত্রছাত্রী বাধ্যতায় দেশে থাকিয়া গেলেও স্বেচ্ছায় থাকেন নাই। একই কথা চাকুরির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যেখানে দেশের সেরা সম্পদসমূহের বিদেশযাত্রার পথে বাধা হইয়াছে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। তবে উদ্বাহু না হইলেও এই পড়িয়া পাওয়া চৌদ্দ আনাকে তাহার উপযুক্ত মূল্য দেওয়া যায় কি না, তাহাই ভাবিবার। যোগ্য ছাত্রছাত্রীদের যথাযথ যত্ন লইবার পথ কী, তাহাই ভাবিবার। শিক্ষা বা কাজের যে মান ও অভিজ্ঞতার জন্য তাঁহারা বিদেশমুখী হইয়াছিলেন, দেশীয় ব্যবস্থাতে তাহার জোগান দেওয়ার কোনও পথ আছে কি না, তাহাই ভাবিবার। উচ্চশিক্ষার পাঠ্যক্রমের পরিসরকে আরও বিস্তীর্ণ ও জ্ঞানমুখী করিয়া তুলিতে হইবে, যেখানে বিবিধ বিদ্যাচর্চার মিলন ঘটিতে পারে। একমাত্র তাহা হইলেই ভবিষ্যতের শ্রেষ্ঠ সম্পদসমূহ দেশে ধরিয়া রাখিবার উদ্যোগ আবার করা যাইতে পারে। এই মুহূর্তে অনলাইন শিক্ষাক্রম লইয়া ভারতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির নাজেহাল দশা হইয়াছে, পুরা শিক্ষাব্যবস্থা বিশ বাঁও জলে। না ঠিক করা যাইতেছে শিক্ষাক্রম, না হইতেছে পরীক্ষা লইয়া সিদ্ধান্ত। আশঙ্কা, এই গয়ংগচ্ছ ভাব কাটাইতে না পারিলে হয়তো শিক্ষার মানোন্নয়নের আশাটি আবার নিষ্ঠুর কুহকে পরিণত হইবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Education Coronavirus in India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy