Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

ভয়ঙ্কর

দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। তর্ক উঠিতেই পারে, দরজা বন্ধ হইবার মুহূর্তে ট্রেনে চাপিবার চেষ্টা না করিলেই এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটিত না। কথাটি সত্য।

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৯ ০০:৫১
Share: Save:

শনিবার সন্ধ্যার ঘটনায় কার্যত সব মেট্রোযাত্রীর শিরদাঁড়া বাহিয়া শীতল স্রোত নামিয়া গিয়াছে। কারণ, সজল কাঞ্জিলালের ন্যায় মর্মান্তিক পরিণতি ঘটিতে পারিত যে কাহারও। ব্যস্ত সময়ের মেট্রো রেল সাক্ষী, শেষ মুহূর্তে ট্রেনে চড়িবার হঠকারিতা যাত্রীরা অনেক সময়ই করিয়া থাকেন। অবচেতনে হয়তো একটি ভরসা থাকে, তেমন কিছু ঘটিলে দরজা আটকাইবে না, ট্রেনও ছাড়িবে না। শনিবারের পার্ক স্ট্রিট সেই ভরসাটি চিরতরে লইয়া গেল। অতঃপর, যাত্রীরা জানিবেন, মেট্রোয় জীবনের দায়িত্ব সম্পূর্ণত— আরোহীর। কেন এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটিল, তাহার তদন্ত হইতেছে। আপাতদৃষ্টিতে বহু বেনিয়ম স্পষ্ট। দরজা না আটকানো সত্ত্বেও চালক বা গার্ড কেহ টের পাইলেন না। দরজার রিলে কাজ করিল না। কামরার মধ্যে থাকা আপৎকালীন সংযোগযন্ত্রও নীরব থাকিল। প্ল্যাটফর্মে কোনও নিরাপত্তাকর্মীও এই ভয়ঙ্কর দৃশ্যটি দেখিতে পাইলেন না। অর্থাৎ, প্রযুক্তি বা মানুষ, কলিকাতার ভূগর্ভস্থ পরিবহণে কাহাকেও আর বিশ্বাস করিবার কারণ থাকিল না। মহানগরীর নাগরিকদের ইহার পরও মেট্রোতেই যাতায়াত করিতে হইবে। কিন্তু, সঙ্গী হইবে প্রাত্যহিক আশঙ্কা— আমার সহিতও একই ঘটনা ঘটিবে না তো? আশঙ্কা দূর করিবার পথ কলিকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষের নাই।

দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। তর্ক উঠিতেই পারে, দরজা বন্ধ হইবার মুহূর্তে ট্রেনে চাপিবার চেষ্টা না করিলেই এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটিত না। কথাটি সত্য। কিন্তু, কাহারও ভুল যেন প্রাণঘাতী না হইয়া উঠে, তাহার জন্যই তো নিরাপত্তাব্যবস্থা। তাহার জন্যই প্রযুক্তির উপর নির্ভর করা। শনিবার যাহা ঘটিল, তাহাতে স্পষ্ট, যাত্রী-নিরাপত্তার অ-আ-ক-খ-টুকুও বিস্মৃত হইয়াছে মেট্রো। নচেৎ এতগুলি স্তরে এত গাফিলতি হইত না। ট্রেনগুলির রক্ষণাবেক্ষণে যে খামতি আছে, তাহা এত দিনে নিশ্চিত। শুধু এই ঘটনাটিই নহে, সাম্প্রতিক অতীতে একাধিক বার প্রমাণ হইয়াছে, কী বিপুল বিপদের সম্ভাবনা লইয়া কলিকাতার মেট্রো চলিতেছে। অথচ সাম্প্রতিক কোনও অভিজ্ঞতার পরই অবস্থা শুধরাইবার ব্যবস্থা হয় নাই। শুধু ট্রেনের খামতিই নহে। ট্রেন চালনার দায়িত্ব যাঁহাদের উপর ন্যস্ত, তাঁহারাও নিজেদের কর্তব্যে চূড়ান্ত অবহেলা করিয়া থাকেন। দরজা বন্ধ হইয়াছে কি না, চালক ও গার্ডের সম্মুখে রাখা সিসিটিভি মনিটরে তাহা দেখা যাইবার কথা— কিন্তু তাঁহারা দেখেন নাই, হয়তো দেখেন না। স্টেশনে নিরাপত্তা রক্ষার দায় যাঁহাদের উপর ন্যস্ত, অভিযোগ, তাঁহারাও কেহ ঘটনাস্থলে ছিলেন না, হয়তো থাকেন না। ফলে দুর্ঘটনা ঠেকাইবার পথগুলি বন্ধ। যাত্রীর গাফিলতির ফলে যে বিপদের সম্ভাবনাটি তৈরি হইয়াছিল, মেট্রোর সর্ব স্তরের ব্যর্থতায় তাহাকে ঠেকাইবার উপায়মাত্র থাকিল না। সজল কাঞ্জিলাল মারা গেলেন। আরও বড় প্রশ্ন থাকিয়া গেল— আগামিকাল ইহার অন্যথা হইবে কি?

কখনও কামরার নীচে আগুন, কখনও বাতানুকূল কামরায় শ্বাসরোধের জোগাড়, কখনও সুড়ঙ্গের মধ্যেই থামিয়া থাকা বা কখনও যাত্রীকে ঝুলন্ত অবস্থায় টানিয়া লইয়া যাওয়া ট্রেন— এত রকমের বিপদ সত্ত্বেও মেট্রো শুধরায় না কেন? উত্তরে অর্থাভাবের প্রসঙ্গটি আসিবে। মেট্রোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যত টাকা প্রয়োজন, তাহা নাই। কিন্তু, অভাবই একমাত্র কারণ বলিলে ভয়ঙ্কর ভুল হইবে। মূল সমস্যা— দায়বদ্ধতার অভাব। হয়তো সজলবাবুর মৃত্যুর ঘটনায় কেহ দোষী সাব্যস্ত হইবেন। কিন্তু, তাহাতে এই প্রশ্নের উত্তর মিলিবে না যে এত দিনের এত রকম গাফিলতির পরও দোষীদের শাস্তি হইল না কেন? দায়িত্বপালনে ব্যর্থতার পরও যেখানে শাস্তি হয় না, সেখানে গোটা ব্যবস্থার উপর নাগরিক ভরসা রাখিবেন কী করিয়া? যত দিন না কর্তৃপক্ষ এই প্রশ্নগুলির সম্মুখে দাঁড়াইতেছেন, বিপদ মাথায় করিয়াই মেট্রো চলিবে, যাত্রীরা যাত্রা করিবেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Death Accident Kolkata Metro
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy