দড়ির ফাঁসে আটকানো অবস্থাতেই হিঁচড়ে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হল শব!
এক একটা ঘটনা মারাত্মক একখানা ধাক্কার মতো আসে। বিস্ময় জাগায়! শিউরে উঠতে হয়! তেমন ঘটনা খুব অল্প সময়ের মধ্যে বার বার ঘটলে বেশ বিচলিত হতে হয়। মন বিক্ষিপ্ত হয়। বিহারের বৈশালীর ঘটনার পর তাই বেশ বিচলিতই লাগছে।
গঙ্গায় ভাসছিল দেহ। পুলিশ সে দেহ উদ্ধার করল গলায় দড়ির ফাঁস লাগিয়ে। পাড়ে আনার পর সেই দড়ির ফাঁসে আটকানো অবস্থাতেই হিঁচড়ে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হল শব।
ওই পুলিশ কর্মীদের এক বারও সম্ভবত মনে হয়নি, চরম অসংবেদনশীল এক দৃশ্যের জন্ম দিলেন তাঁরা। ঠিক যে ভাবে চরম অসংবেদনশীলতার নিদর্শন দেখা গিয়েছিল কয়েকটা দিন আগে ওড়িশার এক হাসপাতালেও। বহনের সুবিধার্থে কোমর থেকে ভেঙে দিয়ে ভাঁজ করা হয়েছিল শব। তার পর সেই ভাঙা শব বাঁশে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তারও কিছু দিন আগে আরও এক ভয়াবহতার কথা শুনেছিলাম। সেও শবের সঙ্গেই। মর্গের কর্মী দিনের পর দিন মৃতদেহের সঙ্গে সহবাস করেন বলে জানা গিয়েছিল। নিজেই তিনি অক্লেশে, অম্লান মুখে জানিয়েছিলেন সে কথা।
দেহে যে হেতু প্রাণটা আর নেই, সে হেতু যা খুশি করা যায় দেহকে নিয়ে? যান্ত্রিক উত্তর বলবে, প্রাণহীন দেহ জড়ই, সংবেদন-অসংবেদনের বোধ তার নেই। কিন্তু মানব সভ্যতাটা তো আদ্যন্ত যান্ত্রিক নয়। সভ্যতার দীর্ঘ ইতিহাস তো প্রত্যেকটা মানুষকে মূল্যবোধ, চেতনা, সংবেদনশীলতা, স্পর্শকাতরতার কোমল বারিতে কিছুমাত্র হলেও সিঞ্চিত করেছে। সেই মানুষ একটা প্রাণহীন দেহ দেখলেই কী ভাবে ভুলে যেতে পারে যে কিছু ক্ষণ আগেও ওই দেহটাও তাঁরই মতো এক মানুষই ছিল?
অন্ত্যেষ্টির পর দেহটারও অস্তিত্ব থাকে না আর। কিন্তু, তবু মানুষটার অস্তিত্ব থেকে যায় কোথাও না কোথাও। তাঁকে নিয়ে নানা স্মৃতি, তাঁর জীবন, তাঁর জীবনের নানা অর্জন— এই সব মিলেমিশে বায়বীয় ভাবে হলেও তাঁর অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখে সভ্যতার পরিসরেই। কিন্তু বৈশালীতে যা হল বা ওড়িশায় যা দেখলাম, তাতে সেই ধারণাতেও ধাক্কা লাগল প্রবল। সচল একটা মানুষ নিথর হয়েছেন সবে মাত্র। তাঁর প্রতি প্রযোজ্য মানবিক বোধগুলোও সঙ্গে সঙ্গে লোপ পেয়ে যাবে?
একটু ভাবার সময় হয়েছে বোধ হয়। সবাইকেই ভাবতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy