বেপরোয়া গতিতে চলা স্কুলবাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।
দুর্ঘটনা হইলে নিয়ম তৈরি হয়। তাহার স্মৃতি আবছা হইলে নিয়মও ঢিলা হয়। যত দিন না একই কারণে একই দুর্ঘটনা ঘটে। উত্তর কলিকাতায় ছাত্রীবাহী বাসের দুর্ঘটনা তাহার আরও একটি দৃষ্টান্ত। সংবাদে প্রকাশ, স্কুলপড়ুয়াদের পরিবহণ বিষয়ে আদালত ও প্রশাসনের সকল নির্দেশ ভঙ্গ করিয়াছে বাসমালিক ও চালক। নিয়মিত স্কুলে পৌঁছাইবার কাজে ব্যবহৃত হইলেও বাসটি ‘স্কুলবাস’ বলিয়া নথিভুক্ত হয় নাই। তাহার গায়ে শীর্ষ আদালত-নির্দিষ্ট হলুদ রং নাই, ‘স্কুল বাস’ কথাটি লেখা নাই। এমনকি সাধারণ নিয়ম, অর্থাৎ সকল বাসের যে সকল নিয়ম মানিবার কথা, তাহাও মানা হয় নাই। পুলিশ জানাইয়াছে, বাসটি যে রাস্তায় চলিবার উপযোগী, তাহার শংসাপত্রের (‘ফিটনেস সার্টিফিকেট’) মেয়াদ বহু পূর্বে ফুরাইয়াছে। পথকরও বাকি রহিয়াছে। অর্থাৎ বাসটি অবৈধ ভাবে চলিতেছিল। পুলিশের সন্দেহ, বাসটি হয়তো পনেরো বৎসরের অধিক পুরাতন, গায়ে রং লাগাইয়া নূতন সাজিয়াছে। কলিকাতা হাইকোর্ট পনেরো বৎসরের অধিক বয়সের বাস চালাইবার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়াছে এগারো বৎসর পূর্বে। আজও সেই নির্দেশ লঙ্ঘিত হইতেছে। গাড়ির চালক বলিয়াছেন, গাড়ির ব্রেক কাজ করে নাই। তাহাতে আশ্চর্য কী? এমন বাসের ব্রেক কাজ না করিবারই কথা। পুলিশ অবশ্য বলিয়াছে, যন্ত্রাংশে সমস্যা নাই, দোষ চালকের। তিনি গতিসীমা অতিক্রম করিয়াছিলেন। শহরবাসী হামেশাই তীব্র গতিতে দুইটি বাসকে রেষারেষি করিতে দেখেন। যেমন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে বাসটি, তাহাতে ছাত্রী ও অভিভাবকদের যে আরও ভয়ঙ্কর কোনও ক্ষতি হয় নাই, তাহাই বিস্ময়।
কেবল দুইটি প্রশ্ন থাকিয়া যায়। এক, সন্তান সম্পর্কে অতিরিক্ত যত্নবান পিতামাতাও কেন সুরক্ষার প্রাথমিক বিধিগুলি উপেক্ষা করেন? সন্তানের সাফল্য লইয়া যাঁহাদের উদ্বেগের সীমা নাই, তাঁহারা দৈনিক যাতায়াতের সময়ে ন্যূনতম নিরাপত্তার নিয়মগুলি উপেক্ষা করিতে অভ্যস্ত। অপরিচিত কোনও বাসমালিক, অপরীক্ষিত কোনও বাসচালক (প্রায়ই দুর্ঘটনার পরে চালকদের নামে একাধিক মামলা আবিষ্কৃত হয়) অভিভাবকদের ঐকান্তিক ভরসার যোগ্য বিবেচিত হয় কী রূপে? ছাত্র পরিবহণ, তথা যাত্রী পরিবহণের সাধারণ নিয়মগুলি লঙ্ঘিত হইলেও অভিভাবকরা কোনও সমস্যা কেন দেখিতে পান না, ইহা সমাজতত্ত্বের গবেষণার বিষয় হইতে পারে। সম্ভবত ইতিপূর্বেও ওই চালক অতি দ্রুত বাস চালাইয়াছেন। তখন যে তাঁহার বিরুদ্ধে কেহ নালিশ করেন নাই, এই দুর্ঘটনার তাহা অন্যতম কারণ। দ্বিতীয় প্রশ্নটি পুলিশকে। অবৈধ বাস কী করিয়া ছাত্র বহন করিতেছে? পুলিশ জানাইয়াছে, স্কুলের সময়ে স্কুলবাস ধরিয়া জিজ্ঞাসাবাদ সম্ভব নহে। এই যুক্তি কি গ্রহণযোগ্য? অন্তত দুই শত বাণিজ্যিক যান ‘ফিটনেস সার্টিফিকেট’ না থাকা সত্ত্বেও শহরে চলিতেছে, জানিয়াও পুলিশ তাহাদের আটকায় না। ইহা অপারগতা, না কি অনিচ্ছা? পরিবহণের নিয়মগুলি বস্তুত যাত্রী ও পথচারীর নিরাপত্তার বিধি। সেগুলি এমন অবাধে লঙ্ঘন করিতে দিলে দুর্ঘটনা ঘটিতে বাধ্য। বার বার যাত্রীরা বিপন্ন হইবার অন্যতম কারণ, বাসের চালক ও মালিকের বিধিলঙ্ঘনের প্রতি পুলিশের ধারাবাহিক
উপেক্ষা। পুলিশ দুর্নীতিমুক্ত এবং তৎপর না হইলে শিশুরা বার বার বিপন্ন হইবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy