রাজ্যের ডাকে সাড়া দিয়ে সম্মেলনে উপস্থিত লক্ষ্মী মিত্তল, মুকেশ অম্বানী, সজ্জন জিন্দলের মতো প্রথম সারির শিল্পপতিরা। ছবি: এএফপি।
না আঁচানো পর্যন্ত এ কথা বিশ্বাস করা কঠিন যে, খাওয়া সারা হল। কারণ আমরা ঘরপোড়া গরু। কিন্তু যে ছবিটা এ বার তৈরি হল, তা অবশ্যই বেশ আশাপ্রদ।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বানে শিল্প সম্মেলন এই প্রথম বার নয়। কিন্তু এ বারের সম্মেলনে যে আক্ষরিক অর্থেই নক্ষত্র সমাবেশ ঘটেছে, তা নিয়ে দ্বিমত থাকার কথা নয়। মুকেশ অম্বানী, লক্ষ্মী মিত্তল, সজ্জন জিন্দল, পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়, উদয় কোটাক, কিশোর বিয়ানি, হর্ষ নেওটিয়া, সঞ্জীব গোয়েন্কা এবং আরও অনেক উল্লেখযোগ্য মুখের উজ্জ্বল উপস্থিতি দেখা গেল ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট ২০১৮’-য়। শুধু উপস্থিতি নয়, প্রথম দিনেই মুকেশ অম্বানীর কাছ থেকে বড় অঙ্কের বিনিয়োগের আশ্বাস মিলল, বাংলা এখন শিল্পের জন্য অনুকূল— এমন শংসাবাক্যও শিল্পপতিদের মুখ থেকে শোনা গেল। শিল্প সম্ভাবনার আকাশে বাংলার অস্তিত্ব যে আগের চেয়ে অনেকটাই উজ্জ্বল হয়েছে, তা বেশ স্পষ্ট হল।
পটভূমি প্রস্তুত ছিল অবশ্যই। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের সূচক কয়েক দিন আগেই জানিয়েছে, ২০১৭-র হিসেব অনুযায়ী ‘সেরা বাণিজ্য-বন্ধু’ রাজ্য এখন পশ্চিমবঙ্গ। অর্থাৎ শিল্প বা বাণিজ্যের বিকাশের জন্য পশ্চিমবঙ্গের পরিবেশই সবচেয়ে অনুকূল এখন। শিল্পের জন্য অনুকূল পরিকাঠামো, অনুকূল আইন-কানুন, অনুকূল প্রশাসনিক নীতি এবং অনুকূল ব্যবস্থাপনা রয়েছে কতটা, তা বিচার করেই এই ‘বাণিজ্য-বন্ধু’ শিরোপা দেওয়া হয়। সে মকুট বাংলার মাথায় ওঠার অর্থ কী, তা বুঝতে লগ্নিকারীদের একটুও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। বুঝতে যে অসুবিধা সত্যিই হয়নি, তা বুঝিয়ে দিল বিশ্ব বাংলা কনভেনশন সেন্টারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিল্প সম্মেলনের উদ্বোধনী মঞ্চই।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
বাংলার ভাবমূর্তিকে শিল্প বান্ধব বা বাণিজ্য বান্ধব করে তোলার কৃতিত্ব বর্তমান শাসকরা দাবি করতেই পারেন। সম্মেলনে যাঁরা এলেন, তাঁরা সত্যিই যদি বিনিয়োগ করেন, যে সব সমঝোতাপত্র স্বাক্ষরিত হল বা হবে, সে সব সত্যিই যদি রূপায়িত হয়, যে পরিমাণ বিনিয়োগের আশ্বাস মিলল, দ্রুত যদি তা বাস্তবায়িত হয়, তা হলে সাফল্যের সবচেয়ে বড় হকদার নিঃসন্দেহে হবে বাংলার সরকারই।
ঋণভারে ন্যুব্জ বাংলা। অর্থনৈতিক ভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বড় অঙ্কের বিনিয়োগ সত্যিই খুব জরুরি। বিনিয়োগ জরুরি কর্মসংস্থানের জন্যও। দীর্ঘ বাম রাজত্বে বাংলা সম্পর্কে শিল্প মহলে বিরূপ বার্তা গিয়েছিল বেশ খানিকটা। বামেদের বিদায় যে পথ ধরে এবং যে সব আন্দোলনে সওয়ার হয়ে, সে পথ এবং সে সব আন্দোলন আরও বেশি করে দূরে ঠেলেছিল শিল্প সম্ভাবনাকে। কৃষি আমাদের অগ্রাধিকার, নাকি শিল্প, তা নিয়ে তীব্র বিতণ্ডা শুরু হয়েছিল। বর্তমান শাসকরা যে শেষ পর্যন্ত সেই বিতণ্ডার ঊর্ধ্বে উঠতে পেরেছেন, কৃষি এবং শিল্পের নির্বিঘ্ন সহাবস্থানের তত্ত্বে যে বিশ্বাস রাখতে শিখেছেন, সে অবশ্যই এক সুলক্ষণ।
আরও পড়ুন: দিদির নেতৃত্বে ওয়েস্ট বেঙ্গল ‘বেস্ট বেঙ্গল’ হয়েছে: মুকেশ
এ বাংলার এখন এক ভগীরথ প্রয়োজন। শিল্পের গাঙগুলো সব শুকিয়ে গিয়েছে। সুশীতল, স্বচ্ছ, অফুরান জলের স্রোতকে পুনর্বার আবাহন করতে হবে, পথ দেখাতে হবে। বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট যদি সফল ভাবে সেই আবাহন যজ্ঞ হয়ে উঠতে পারে, তা হলে সে নিঃসন্দেহে অত্যন্ত বড় সুখবর হবে। গোটা বাংলা এখন সে দিকেই তাকিয়ে। গোটা বাংলা আজ হাপিত্যেশে তেমন কোনও সুখবরের পথ চেয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy