অন্ধকারের শেষে আলোর রেখা কি দৃশ্যমান? সাম্প্রতিক কিছু পরিসংখ্যানে ইঙ্গিত— ভারতীয় অর্থনীতি ঘুরিয়া দাঁড়াইতেছে। জিএসটি আদায়ের পরিমাণ বাড়িয়াছে, উৎপাদন ক্ষেত্রের সূচক পার্চেজ়িং ম্যানেজার্স ইনডেক্সও ঊর্ধ্বমুখী। বিভিন্ন ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়িয়াছে, গাড়ি বিক্রির পরিমাণেও ঊর্ধ্বগতি। বিদেশি লগ্নি আসিতেছে, বিদ্যুতের চাহিদা বাড়িতেছে। কর্পোরেট ক্ষেত্রও লাভের মুখ দেখিতেছে। কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক স্বভাবতই আশ্বস্ত। অর্থব্যবস্থার পুনরুদ্ধারের পথে দুইটি বাধাও দৃশ্যমান— এক, মূল্যবৃদ্ধির হার বেলাগাম হইতেছে, ফলে সুদের হার কমাইয়া ব্যবসায়িক ক্ষেত্রকে উৎসাহ প্রদানের সম্ভাবনা সীমিত; এবং দুই, কোভিড-১৯’এর আরও একটি ধাক্কা অর্থব্যবস্থার গায়ে লাগিতে পারে। কাজেই, অর্থব্যবস্থার পুনরুজ্জীবন লইয়া উচ্ছ্বসিত হইবার সময় সতর্কতা জরুরি। দিনকয়েক পূর্বেই প্রধানমন্ত্রী জানাইয়াছেন, ২০২৪ সালের মধ্যেই ভারত পাঁচ লক্ষ কোটি ডলার আয়তনের অর্থব্যবস্থা হইয়া উঠিতে পারে। যে দেশের অর্থনৈতিক আয়তন এই বৎসর দশ শতাংশ হ্রাস পাইবার আশঙ্কা, তাহার প্রধানমন্ত্রী যদি এখনও এহেন অলীক স্বপ্ন ফেরি করিয়া বেড়ান, তখন সতর্কতা আরও বেশি জরুরি। আর্থিক পুনরুজ্জীবনের সম্ভাবনাটিকে রাজনীতির ঘোলা জলে ডুবাইয়া দিলে বিপদ বাড়িবে।
ভারতীয় অর্থনীতি যে কেবল অতিমারির দাপটেই ধরাশায়ী হয় নাই, তাহার সমস্যা কাঠামোগত এবং দীর্ঘমেয়াদি, এই কথাটি ভুলিলেও চলিবে না। কর্মসংস্থানহীনতার হারই হউক বা ভোগব্যয় হ্রাসের হার, ভারতের বিপদগুলি অতিমারির পূর্বেই দৃশ্যমান হইতেছিল। চাহিদার সমস্যাটিও সম্পূর্ণ অতিমারি-জনিত নহে। দুইটি ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত— যথাক্রমে নোট বাতিল ও জিএসটি-র অবিবেচনাপ্রসূত প্রবর্তন— ভারতের অসংগঠিত ক্ষেত্রকে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত করিয়াছিল। সংগঠিত ক্ষেত্রও সেই আঁচ হইতে সম্পূর্ণ বাঁচে নাই। ফলে, অতিমারি কাটিয়া গেলেই অর্থব্যবস্থার সুস্বাস্থ্য ফিরিবে, এহেন আশার মধ্যে আত্মপ্রবঞ্চনা প্রবল। ভারতীয় অর্থব্যবস্থাকে যদি বাঁচাইতে হয়, তবে কাঠামোগত শুশ্রূষা জরুরি। সর্বাগ্রে প্রয়োজন আর্থিক অসাম্যের পরিমাণ হ্রাস করা। দেশের অধিকাংশ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা সঙ্কুচিত হইতে থাকিলে বাজারে চাহিদা ফিরিবে কী উপায়ে, অর্থব্যবস্থা ঘুরিয়াই বা দাঁড়াইবে কোন জাদুমন্ত্রে? কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী কিছু দিন পূর্বে জানাইয়াছিলেন, তাঁহারা ‘সময় বুঝিয়া’ সাধারণ মানুষের হাতে টাকার জোগান দিবেন। পুনরুজ্জীবনের কুমিরছানা দেখাইয়া যদি তাঁহারা সেই দায়িত্বটিকে এড়াইতে চাহেন, তবে তাহার ফল বিষম হইবে। কোভিড-আক্রান্ত সময়ের পরিস্থিতির সহিত পরবর্তী ত্রৈমাসিকগুলির তুলনা করিয়া ‘অর্থনীতির হাল ফিরিয়াছে, অতএব সরকারের আর কোনও দায়িত্ব নাই’ বলিয়া দিলেও ঘোর অন্যায় হইবে।
কোভিড-১৯ আসিয়া অর্থনীতির চলনের ভঙ্গিটি পাল্টাইয়া দিয়াছে। ফলে, বৃদ্ধির হার বাড়িলেই যে সব ক্ষেত্র সমান ভাবে ঘুরিয়া দাঁড়াইবে, তাহা নহে। রিয়াল এস্টেট তাহার একটি উদাহরণ। বাড়ি হইতে কাজ করা এখন বৈশ্বিক দস্তুর, সব সংস্থাই তাহাতে অভ্যস্ত হইয়া উঠিয়াছে। অতিমারি মিটিলেও সেই অভ্যাসটি ফের পাল্টাইবে কি? যদি না পাল্টায়, তবে অফিস বাবদ বহু পরিসর উদ্বৃত্ত হইবে— নূতন পরিসরেরও চাহিদা থাকিবে না। হোটেল, বিমান সংস্থা ইত্যাদির ব্যবসাতেও তাহার প্রভাব পড়িবে। ভিন্ন শহর বা ভিন্ন দেশের লোকের সহিত বৈঠক যদি ভিডিয়ো কলের মাধ্যমেই সারিয়া ফেলা যায়, তবে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে সফর করিবার প্রবণতাও কমিবে। ভ্রমণের অভ্যাসও সহজে ফিরিবে না। পর্যটন ক্ষেত্রে দেশের ১২ শতাংশ কর্মসংস্থান হয়। ফলে, এই রকম ক্ষেত্রের কথা পৃথক ভাবে চিন্তা করিতে হইবে। কয়েকটি সূচকের ঊর্ধ্বগতি দেখিয়া আত্মহারা হইলে মুশকিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy