Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
India-China

পথান্তর

অগ্রসর হইতে হইবে আরও একটি সরল শর্ত মাথায় রাখিয়া যে— প্রকৃত যুদ্ধ কোনও পথ হইতে পারে না।

ছবি এএফপি।

ছবি এএফপি।

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২০ ২৩:২৮
Share: Save:

ভারত ও চিন সীমান্ত সংঘর্ষ দ্বিতীয় মাসে পড়িল। উত্তাপ এখনও গনগনে। দুই দেশের সীমান্তে এখনও প্রাত্যহিক অনিশ্চয়তা। চিনের অস্বচ্ছ মনোভাব ও কূটনৈতিক স্থিতাবস্থা না মানিবার প্রবণতা লইয়া ভারতের উদ্বেগ এখনও নিরন্তর। অর্থাৎ বলা চলে, দ্বিতীয় মাসে পা দিয়াও সঙ্কট একই পর্যায়ে। দুই দেশের বিশেষ প্রতিনিধি (এসআর) লাইন অব অ্যাকচুয়াল কনট্রোল বা এলএসি বরাবর ‘ডি-এসকালেশন’ বা উত্তেজনা-হ্রাস লইয়া আলোচনা করিলেও তাহার বাস্তবায়ন লইয়া সংশয়মেঘ মোটেই মিলায় নাই। দুই পা আগাইয়া এক পা পিছাইবার অসামান্য কূটনৈতিক দক্ষতা চিনের অনেক কাল অধিগত। গালওয়ানে চিন কিছু পশ্চাদপসরণ করিয়াছে বলিয়া ভারত সরকার প্রসন্ন বোধ করিলে সঙ্গে সঙ্গেই প্যাংগং এলাকার দর-কষাকষি কিংবা সীমান্তের অন্যত্র জমি হারাইবার আশঙ্কা দিল্লির সেই প্রসন্নতা নিমেষে হাওয়া করিয়া দিতেছে। এমনই দুর্দশা যে এখন মধ্যবর্তী নিরপেক্ষ ভূমি বা বাফার জ়োনটুকু নিশ্চিত করাই যেন ভারতীয় পক্ষের কাছে পরম সুসংবাদ। প্রধানমন্ত্রী মোদী যাহাই বলুন, ভারতের এই কূটনৈতিক ও সামরিক পরাভবের মধ্যে লক্ষ্য এখন একটিই: যে কোনও ভাবে চিনকে সীমান্ত অঞ্চলে তাহার মে মাসের আগের অবস্থিতিতে ফিরিয়া যাইতে বাধ্য করা— যাহা এই মুহূর্তে অসম্ভব না হইলেও দুঃসাধ্য একটি প্রকল্প বলা চলে। দুই দেশের সামরিক সংঘর্ষের অপেক্ষা স্নায়ুর যুদ্ধ এই পর্বে এতটুকুও কম গুরুতর নহে। সেই মানস-যুদ্ধের কথা মনে রাখিয়া অগ্রসর হওয়া ছাড়া দিল্লির গত্যন্তর নাই।

অগ্রসর হইতে হইবে আরও একটি সরল শর্ত মাথায় রাখিয়া যে— প্রকৃত যুদ্ধ কোনও পথ হইতে পারে না। এমনিতেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পরমাণু-অস্ত্রায়িত বিশ্বে যুদ্ধ কোনও বিবেচনাসাপেক্ষ বিষয় নয়। তদুপরি, কিছু কিছু প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সামরিক সংঘর্ষের প্রশ্নই উঠে না। ভারতের কাছে চিন তেমনই এক প্রতিপক্ষ। দিল্লির বেজিং-কূটনীতি এই জন্যই অত্যন্ত দুরূহ অঙ্গন, যেখানে আক্রমণপরায়ণ, অবিশ্বাসভাজন, শত্রুভাবাপন্ন এক বলশালী ও প্রভাবশালী প্রতিবেশীর মুখোমুখি হইতে হয় প্রথম ও প্রধান শর্ত মাথায় রাখিয়া যে, যুদ্ধ কোনও পথ নহে। এ বারেও সীমান্তে যাহা ঘটিয়াছে, তাহা কত বড় মাপের অপ্রত্যাশিত আন্তর্জাতিক সঙ্কট, মার্কিন বিদেশসচিব মাইক পম্পেয়োর স্পষ্টোক্তিই বলিয়া দেয়। কোনও রাখঢাক ছাড়াই তিনি বলিয়াছেন, চিনের দিক হইতে ভারতের বিরুদ্ধে ইহা একেবারে অভাবনীয় রকমের আগ্রাসী পদক্ষেপ। বলিয়াছেন, অবশিষ্ট বিশ্ব এই নগ্ন আক্রমণ কিছুতেই বরদাস্ত করিতে পারে না। বলিয়াছেন, ভারত যে ভাবে যতখানি প্রত্যুত্তর দিয়াছে, ঠিক করিয়াছে।

এই শেষ কথাগুলির মধ্যেই দিশা খুঁজিতে পারে দিল্লি। বিশ্ব-কূটনীতির মঞ্চে নিজের প্রতিটি পদক্ষেপ যাহাতে একাধারে স্বচ্ছ ও সবল হিসাবে প্রতিভাত হয়, এই মুহূর্তে ইহাই দিল্লির উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। চিনের বিদেশনীতির অনৈতিকতা লইয়া প্রায় সকল দেশ একমত— এবং সেখানেই ভারতের সর্বাপেক্ষা বড় জোর। একবিংশ শতকে যে যুদ্ধ আসলে এক পর্যায়ের পর আর আগাইয়া লওয়া সম্ভব নয়, তাহা তো শুধুমাত্র ভারতের স্বার্থ নহে, বিশ্বেরই একান্ত স্বার্থ। সেখানে ভারতের পদক্ষেপ যদি ‘ঠিক’ বলিয়া আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রতিভাত হয়, তাহা সাফল্যের জরুরি ধাপ। বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্প দিয়া চিন প্রমাণ করিয়া দিয়াছে তাহার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ ক্ষমতার ছক: ইউরোপ ও আফ্রিকায় পা বাড়াইবার সিঁড়ি হিসাবে এশিয়ায় নিজের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ বিস্তার। চিনের সেই বিস্তার পরিকল্পনার সামনে ভারত বাধাস্বরূপ, এবং সেই কারণেই বিশ্ব-কূটনীতিতে ভারতের একটি নিজের জায়গা প্রস্তুত— এই প্রত্যয়টি ভুলিলে চলিবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

India-China India China Galwan Ladakh LAC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy